নিউইয়র্ক ০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

স্মরণ: মওলানা ভাসানী : কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৪
  • / ২৬৯৯ বার পঠিত

পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশের ৪ জন নেতাকে আমি বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা করি এবং তাদেরকে নিজের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তারা হলেন মওলনা ভাসানী, নেতাজী সুভাস বোস, শেরে বাংলা এ কে ফজলুর হক ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জ্যোতি বসু।একমাত্র মওলানা ভাসানী ছাড়া অন্য কারো সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আমার হয়নি। যদিও ১৯৬০ সালে শেরে বাংলাকে তার ৮৭ বছর বয়সে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল।
আমার প্রিয় নেতা মওলানা ভাসানীকে প্রথম দেখি ১৯৬৪ সালে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছোট বোন মিস ফাতেমা জিন্নাহকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন নেতারা। ১৯৬৪ সালে ফাতেমা জিন্নাহর সমর্থনে পিরোজপুরে এক বড় জনসভা হয়। জনসভায় খাজা নাজিমুদ্দিন, খান আতাউর রহমানসহ আরো কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন। সবাই নিজ নিজ বক্তৃতায় মোটামুটি আইয়ুবের বিরুদ্ধে এবং ফাতেমা জিন্নাহকে কেন ভোট দেয়া উচিৎ সে বাপারে বললেন। আমি সভা মঞ্চে দেখছিলাম চোস্ত পাজামা পরিহিত খাজা নাজিমুদ্দিনসহ অন্যান্য কেতাদুরস্ত নেতাদের। এদের মাঝে সাদা লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি ও মাথায় তালের টুপি পরিহিত কালো মতো এক বৃদ্ধ বসেছিলেন। আমি তাকে আদৌ আমলে আনছিলাম না। কিন্তু যখন দেখলাম সবার শেষে বক্তব্য রাখার জন্য ভাসানীর নাম ঘোষিত হলো তখন হাজারো জনতা এক সাথে দাঁড়িয়ে মওলানা ভাসানী জিন্দাবাদ, আইয়ুব শাহী নিপাত যাক ইত্যাদি শ্লোগানে পিরোজপুরের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করতে লাগলো। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম এবং আমার মনে হলো ইনিই তো সব নেতাদের বড় নেতা। জনগণের শ্লোগান থামছিল না, তখন তিনি একটু উচ্চস্বরে বললেন ‘খামোশ’। মন্ত্রমুগ্ধের মতো জনতা শ্লোগান বন্ধ করে আস্তে আস্তে বসে পড়লো। মওলানার বক্তৃতা শুরু হলো এবং একটানা দেড় ঘন্টা তার বক্তৃতা চললো। আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম, কি অদ্ভুত তার বাচন ভঙ্গি, কত সহজভাবে তিনি জনগণকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন এদেশে রাজনীতির গতি প্রকৃতি। মনে হচ্ছিল একজন যাদুকর তার সম্মোহনী শক্তির মায়াজালে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন।
৬৪ সালের নির্বাচনে আইয়ুব খান কারচুপি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও জনমত ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে ছিল। এরপর মওলানা ভাসানীকে বহুবার বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন জনসভায় দেখেছি। তারপর থেকে আস্তে আস্তে একদিন আমি মওলানা ভাসানীর রাজনীতির একজন ভক্ত হয়ে গেলাম। ভাসানীর ন্যাপ সমর্থিত পূর্ববাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রীয় কর্মী হিসবে মওলানা ও তার রজানীতিকে আরা বেশী করে জানার প্রচেষ্টা চালালাম।
১৯৬৮ তে আইয়ুব শাহীর পতন ঘটানোর লক্ষ্যে তার ঘেরাও আন্দোলনের ডাক, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব আহুত গোলটেবিল বর্জন, ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ ঘোষণা, ‘ভোটের আগে ভাত চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই’ শ্লোগান প্রবর্তন প্রভৃতির আমরা সক্রিয় সমর্থক ছিলাম। ১৯৭০ এর প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরে পাকিস্তান সরকারের উদাসীনতায় মওলানার মর্মস্পর্শী প্রতিক্রিয়া ‘ওরা কেউ আসেনি’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের সাথে আর এক সাথে থাকা সম্ভব নয়।
‘ওরা আমাদের বন্ধু হতে পারে না, ওদের থেকে আলাদা হয়ে আমাদের স্বাধীন হতে হবে’। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যাপ আয়োজিত ২৮টি জনসভায় তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। ২৫ মার্চ শুরু হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণ। মওলানা ভাসানী তখন রৌমারী সীমান্ত পথে ভারতে চলে যান। ভারতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সমগ্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল মওলানা ভাসানীকে। কিন্তু মওলানাকে এক প্রকার অন্তরীণ করে রেখেছিল তৎকালীন ভারত সরকার। তাকে কারো সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না। কেউ তার খোঁজ জানতো না যে উনি কোথায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দিকে কোলকাতার থিয়েটার রোডে আওয়ামী লীগের দুই নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও ফনিভুষণ মজুমদারকে দেখে মওলানা কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করায় মনে হলো তারা আমার উপর বিরক্ত হলেন। এরপর আমি ভারতের বিহারে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় প্রবেশ করি। ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত মওলানার আর কোনো খোঁজ পাইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারী তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর আমি আবার মওলানাকে দেখি ৭২ সালের মার্চের দিকে বাগেরহাটের এক জনসভায়। আমি তখন পিরোজপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ভাসানী ন্যাপ সমর্থিত বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন পিরোজপুর কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ন্যাপের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেই জনসভায় মওলানার সাথে একই স্টেজে বসার সুযোগ হয়েছিল। মওলনা তার বক্তব্য শেষ করে স্টেজ থেকে নিচে নামার সময় আমার কাঁেধ হাত রেখেছিলেন এবং আমি পিরোজপুরে এসে সেই কথা আমার বন্ধু বান্ধব অনেককে বলেছি। ১৯৭২ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভাসানীর নেতৃত্বে ভূখা মিছিলে অংশগ্রহণ করি। একই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে। উদ্ধোধন করেন মওলানা ভাসানী। সেদিন বেশ কাছে থেকে শুনেছি হাজারো ছাত্র জনতার সাথে মওলানার অনলবর্ষী বক্তৃতা। প্রায় ৮০ মিনিটের বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। বয়স তখন তার ৯২ বছর। সেদিনের সেই ছাত্র সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন হাজী দানেশ, ডা: আলীম আলরাজী, কাজী জাফর আহমেদ, কমরেড অমল সেন, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, সিরাজুল হোসেন খান প্রমুখ। ১৯৭৩ সালের ১৫ মে খাদ্যের দাবীতে মওলানা আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তার অনশনের সমর্থনে বাংলাদেশের সর্বত্র মিছিল ও জন সমাবেশ হয়। তার অনশন ভাঙ্গাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিজি হাসপাতালে আসেন। ন্যাপের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফরের সাথে বঙ্গবন্ধুর বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং তিনি দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপরে কাজী জাফরের নামে হুলিয়া জারি করা হয়।
১৯৭৫ সালে মওলানা সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজে আতœনিয়োগ করেন। ৭৫ এর প্রথম দিকে সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তিনি মনে বড় ব্যাথা পান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মওলানা খুবই ¯েœহ করতেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক সেক্রেটারী এসেছে কিন্তু মুজিবরের মতো যোগ্য সেক্রেটারী অন্য কাউকে পাইনি।’ উল্লেখ্য মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারীতে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে যখন বাকশাল গঠিত হয় তখন তিনি খুবই বিরক্ত হন। তিনি বাকশালের বিরোধিতা করাতে তাকে তার সন্তোষের বাড়ীতে অন্তরীণ করে রাখা হয়। তিনি রোজ বাংলাদেশের সমস্ত সংবাদপত্র পড়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু একদিন যখন দেখলেন ২-১টি বাদে সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে, তখন খুবই ক্ষুদ্ধ হন।
বঙ্গবন্ধুও মওলানাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায়ই কোনো নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই শুধুমাত্র গাড়ীর ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মওলানার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। সে খবর তৎকালীন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই জানতেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তখন মওলানা ভাসানী খুবই কেঁদেছেন। তিনি ওইদিন বার বার বলেছেন ‘সব শেষ হয়ে গেল’। তিনি এতো দু:খ পেয়েছিলেন যে, ঐদিন কোনো কিছুই খাননি, কারো সাথে সাক্ষাৎও করেননি। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের পক্ষ থেকে তার কাছে দূত পাঠানো হয়েছিল তার সরকারকে সমর্থন করে একটি স্টেটমেন্ট দেয়ার জন্য, কিন্তু মওলানা তার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ মওলানাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন কিন্তু মওলানা সবার চালাকী বুঝতে পারতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সাথে ভারতে ফারাক্কার পানি বন্টন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধিকে বেশ কয়েকবার চিঠি লিখেছেন এবং টেলিগ্রামও করেছেন। মিসেস গান্ধী তার চিঠির জবাব দিয়েছেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সমস্যার আদৌ কোন সমাধান না হওয়ায় ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মওলানা ফারাক্কা মার্চের ঘোষণা দেন। ১৬ মে তিনি রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ সমাপ্ত করেই যে ফারাক্কা মার্চের নেতৃত্ব দেন সেই মিছিলে আমিও অংশগ্রহণ করেছিলাম। ১৭ মে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী কানসাটে মিছিল সমাপ্ত ঘোষণা করে তিনি বলেন, নিরস্ত্র মানুষের ভয়ে ভারতকে সীমান্তে সৈন্য সমাবেল করতে হয়েছে, ভারত যদি অবিলম্বে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে তাহলে তিনি ১৬ আগস্ট ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু করবেন।
মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর প্রায় ৩৮ বছর পার হতে চললো। তার লাখো সৈনিক আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। উনি স্বপ্ন দেখতেন একটি শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার; উনি চাইতেন খেটে খাওয়া মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
আজ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ৩৫ এর নিচে, তারা ভাসানী সম্মন্ধে বিশেষ কিছু জানেন না। ভবিষৎ প্রজন্মকে নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে এবং ইতিহাস থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নিতে তাদের কাছে মওলানা ভাসানীকে পরিচিত করাতে হবে। আমি গত দুই যুগেরও অধিককাল যাবৎ নিউইয়র্কে আছি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছে।
মওলানা ভাসানীর জীবন ও সংগ্রামের পরিধি কত বিশাল, দূরদৃষ্টি কত সুদূর প্রসারী, উপলব্ধি কত গভীর তা তার জীবন সর্ম্পকে পর্যালোচনা না করলে বোঝা কঠিন। তার কর্মময় জীবন ব্যাপক, সুবিস্তৃত। তার জীবনের খন্ড খন্ড ঘটনা নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন, তবে তার জীবনাদর্শ কর্মপদ্ধতি ও দর্শন নিয়ে আরো গভীরভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
একদিন মওলানা ভাসানীর আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আজ সুদীর্ঘ ৩৪ বছর এরও বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে এদেশের রাজনীতির মূল ¯্রােতধারার সাথে জড়িত আছি। তাছাড়া একটি আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচ এর কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করতে হয়। মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে এবং সাউথ এশিয়া ওয়াচ এর কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কোথাও মওলানা ভাসানীর মত এত বড় মাপের নেতা দেখা এখনও মেলেনি।

লেখক: শহীদুল ইসলাম তালুকদার নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচের মহাসচিব। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদস্য ও এশিয়ান আমেরিকান ডেমোক্রেটিক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

স্মরণ: মওলানা ভাসানী : কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৯:৩৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৪

পাক-ভারত-বাংলাদেশ উপমহাদেশের ৪ জন নেতাকে আমি বিশেষ ভাবে শ্রদ্ধা করি এবং তাদেরকে নিজের দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করার চেষ্টা করি। তারা হলেন মওলনা ভাসানী, নেতাজী সুভাস বোস, শেরে বাংলা এ কে ফজলুর হক ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস। পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জ্যোতি বসু।একমাত্র মওলানা ভাসানী ছাড়া অন্য কারো সান্নিধ্যে আসার সুযোগ আমার হয়নি। যদিও ১৯৬০ সালে শেরে বাংলাকে তার ৮৭ বছর বয়সে একবার দেখার সুযোগ হয়েছিল।
আমার প্রিয় নেতা মওলানা ভাসানীকে প্রথম দেখি ১৯৬৪ সালে। পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ছোট বোন মিস ফাতেমা জিন্নাহকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন নেতারা। ১৯৬৪ সালে ফাতেমা জিন্নাহর সমর্থনে পিরোজপুরে এক বড় জনসভা হয়। জনসভায় খাজা নাজিমুদ্দিন, খান আতাউর রহমানসহ আরো কয়েকজন নেতা বক্তব্য রাখেন। সবাই নিজ নিজ বক্তৃতায় মোটামুটি আইয়ুবের বিরুদ্ধে এবং ফাতেমা জিন্নাহকে কেন ভোট দেয়া উচিৎ সে বাপারে বললেন। আমি সভা মঞ্চে দেখছিলাম চোস্ত পাজামা পরিহিত খাজা নাজিমুদ্দিনসহ অন্যান্য কেতাদুরস্ত নেতাদের। এদের মাঝে সাদা লুঙ্গি, সাদা পাঞ্জাবি ও মাথায় তালের টুপি পরিহিত কালো মতো এক বৃদ্ধ বসেছিলেন। আমি তাকে আদৌ আমলে আনছিলাম না। কিন্তু যখন দেখলাম সবার শেষে বক্তব্য রাখার জন্য ভাসানীর নাম ঘোষিত হলো তখন হাজারো জনতা এক সাথে দাঁড়িয়ে মওলানা ভাসানী জিন্দাবাদ, আইয়ুব শাহী নিপাত যাক ইত্যাদি শ্লোগানে পিরোজপুরের আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করতে লাগলো। আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম এবং আমার মনে হলো ইনিই তো সব নেতাদের বড় নেতা। জনগণের শ্লোগান থামছিল না, তখন তিনি একটু উচ্চস্বরে বললেন ‘খামোশ’। মন্ত্রমুগ্ধের মতো জনতা শ্লোগান বন্ধ করে আস্তে আস্তে বসে পড়লো। মওলানার বক্তৃতা শুরু হলো এবং একটানা দেড় ঘন্টা তার বক্তৃতা চললো। আমি আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলাম, কি অদ্ভুত তার বাচন ভঙ্গি, কত সহজভাবে তিনি জনগণকে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন এদেশে রাজনীতির গতি প্রকৃতি। মনে হচ্ছিল একজন যাদুকর তার সম্মোহনী শক্তির মায়াজালে আচ্ছন্ন করে রেখেছেন।
৬৪ সালের নির্বাচনে আইয়ুব খান কারচুপি করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও জনমত ফাতেমা জিন্নাহর পক্ষে ছিল। এরপর মওলানা ভাসানীকে বহুবার বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে বিভিন্ন জনসভায় দেখেছি। তারপর থেকে আস্তে আস্তে একদিন আমি মওলানা ভাসানীর রাজনীতির একজন ভক্ত হয়ে গেলাম। ভাসানীর ন্যাপ সমর্থিত পূর্ববাংলা বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের একজন সক্রীয় কর্মী হিসবে মওলানা ও তার রজানীতিকে আরা বেশী করে জানার প্রচেষ্টা চালালাম।
১৯৬৮ তে আইয়ুব শাহীর পতন ঘটানোর লক্ষ্যে তার ঘেরাও আন্দোলনের ডাক, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব আহুত গোলটেবিল বর্জন, ১৯৭০ সালের ৪ ডিসেম্বর পল্টনের জনসভায় ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ ঘোষণা, ‘ভোটের আগে ভাত চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই’ শ্লোগান প্রবর্তন প্রভৃতির আমরা সক্রিয় সমর্থক ছিলাম। ১৯৭০ এর প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পরে পাকিস্তান সরকারের উদাসীনতায় মওলানার মর্মস্পর্শী প্রতিক্রিয়া ‘ওরা কেউ আসেনি’ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানের সাথে আর এক সাথে থাকা সম্ভব নয়।
‘ওরা আমাদের বন্ধু হতে পারে না, ওদের থেকে আলাদা হয়ে আমাদের স্বাধীন হতে হবে’। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ন্যাপ আয়োজিত ২৮টি জনসভায় তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনের পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। ২৫ মার্চ শুরু হয় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর আক্রমণ। মওলানা ভাসানী তখন রৌমারী সীমান্ত পথে ভারতে চলে যান। ভারতে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী সমগ্র রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করার জন্য একটি সর্বদলীয় কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি করা হয়েছিল মওলানা ভাসানীকে। কিন্তু মওলানাকে এক প্রকার অন্তরীণ করে রেখেছিল তৎকালীন ভারত সরকার। তাকে কারো সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না। কেউ তার খোঁজ জানতো না যে উনি কোথায় আছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের দিকে কোলকাতার থিয়েটার রোডে আওয়ামী লীগের দুই নেতা খোন্দকার মোশতাক আহমদ ও ফনিভুষণ মজুমদারকে দেখে মওলানা কোথায় আছেন জিজ্ঞেস করায় মনে হলো তারা আমার উপর বিরক্ত হলেন। এরপর আমি ভারতের বিহারে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং নিয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় প্রবেশ করি। ১৬ ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত মওলানার আর কোনো খোঁজ পাইনি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারী তিনি দেশে ফিরে আসেন। এরপর আমি আবার মওলানাকে দেখি ৭২ সালের মার্চের দিকে বাগেরহাটের এক জনসভায়। আমি তখন পিরোজপুর কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং ভাসানী ন্যাপ সমর্থিত বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন পিরোজপুর কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ন্যাপের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সেই জনসভায় মওলানার সাথে একই স্টেজে বসার সুযোগ হয়েছিল। মওলনা তার বক্তব্য শেষ করে স্টেজ থেকে নিচে নামার সময় আমার কাঁেধ হাত রেখেছিলেন এবং আমি পিরোজপুরে এসে সেই কথা আমার বন্ধু বান্ধব অনেককে বলেছি। ১৯৭২ সালের ২ সেপ্টেম্বর ভাসানীর নেতৃত্বে ভূখা মিছিলে অংশগ্রহণ করি। একই বছরের শেষের দিকে বাংলাদেশ বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় পল্টন ময়দানে। উদ্ধোধন করেন মওলানা ভাসানী। সেদিন বেশ কাছে থেকে শুনেছি হাজারো ছাত্র জনতার সাথে মওলানার অনলবর্ষী বক্তৃতা। প্রায় ৮০ মিনিটের বক্তৃতা দিয়েছিলেন তিনি। বয়স তখন তার ৯২ বছর। সেদিনের সেই ছাত্র সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন হাজী দানেশ, ডা: আলীম আলরাজী, কাজী জাফর আহমেদ, কমরেড অমল সেন, রাশেদ খান মেনন, হায়দার আকবর খান রনো, সিরাজুল হোসেন খান প্রমুখ। ১৯৭৩ সালের ১৫ মে খাদ্যের দাবীতে মওলানা আমরণ অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। তার অনশনের সমর্থনে বাংলাদেশের সর্বত্র মিছিল ও জন সমাবেশ হয়। তার অনশন ভাঙ্গাতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পিজি হাসপাতালে আসেন। ন্যাপের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক কাজী জাফরের সাথে বঙ্গবন্ধুর বেশ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় এবং তিনি দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করেন। এরপরে কাজী জাফরের নামে হুলিয়া জারি করা হয়।
১৯৭৫ সালে মওলানা সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজে আতœনিয়োগ করেন। ৭৫ এর প্রথম দিকে সর্বহারা পার্টির নেতা সিরাজ সিকদারের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে তিনি মনে বড় ব্যাথা পান।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মওলানা খুবই ¯েœহ করতেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমার রাজনৈতিক জীবনে অনেক সেক্রেটারী এসেছে কিন্তু মুজিবরের মতো যোগ্য সেক্রেটারী অন্য কাউকে পাইনি।’ উল্লেখ্য মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালে বঙ্গবন্ধু তার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারীতে সমস্ত রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে যখন বাকশাল গঠিত হয় তখন তিনি খুবই বিরক্ত হন। তিনি বাকশালের বিরোধিতা করাতে তাকে তার সন্তোষের বাড়ীতে অন্তরীণ করে রাখা হয়। তিনি রোজ বাংলাদেশের সমস্ত সংবাদপত্র পড়ার চেষ্টা করতেন। কিন্তু একদিন যখন দেখলেন ২-১টি বাদে সমস্ত সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে, তখন খুবই ক্ষুদ্ধ হন।
বঙ্গবন্ধুও মওলানাকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন প্রায়ই কোনো নিরাপত্তা রক্ষী ছাড়াই শুধুমাত্র গাড়ীর ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে রাতের অন্ধকারে মওলানার সাথে সাক্ষাৎ করতে যেতেন। সে খবর তৎকালীন আওয়ামীলীগের অনেক নেতাই জানতেন না। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যসহ নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। তখন মওলানা ভাসানী খুবই কেঁদেছেন। তিনি ওইদিন বার বার বলেছেন ‘সব শেষ হয়ে গেল’। তিনি এতো দু:খ পেয়েছিলেন যে, ঐদিন কোনো কিছুই খাননি, কারো সাথে সাক্ষাৎও করেননি। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের পক্ষ থেকে তার কাছে দূত পাঠানো হয়েছিল তার সরকারকে সমর্থন করে একটি স্টেটমেন্ট দেয়ার জন্য, কিন্তু মওলানা তার প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেন। বাংলাদেশের অনেক রাজনীতিবিদ মওলানাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করতেন কিন্তু মওলানা সবার চালাকী বুঝতে পারতেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সাথে ভারতে ফারাক্কার পানি বন্টন সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে ভারতের প্রধান মন্ত্রী ইন্ধিরা গান্ধিকে বেশ কয়েকবার চিঠি লিখেছেন এবং টেলিগ্রামও করেছেন। মিসেস গান্ধী তার চিঠির জবাব দিয়েছেন এবং সমস্যা সমাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সমস্যার আদৌ কোন সমাধান না হওয়ায় ১৯৭৬ সালের ১৮ এপ্রিল মওলানা ফারাক্কা মার্চের ঘোষণা দেন। ১৬ মে তিনি রাজশাহী মাদ্রাসা ময়দানে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ সমাপ্ত করেই যে ফারাক্কা মার্চের নেতৃত্ব দেন সেই মিছিলে আমিও অংশগ্রহণ করেছিলাম। ১৭ মে রাজশাহীর সীমান্তবর্তী কানসাটে মিছিল সমাপ্ত ঘোষণা করে তিনি বলেন, নিরস্ত্র মানুষের ভয়ে ভারতকে সীমান্তে সৈন্য সমাবেল করতে হয়েছে, ভারত যদি অবিলম্বে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না আসে তাহলে তিনি ১৬ আগস্ট ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন শুরু করবেন।
মওলানা ভাসানীর মৃত্যুর পর প্রায় ৩৮ বছর পার হতে চললো। তার লাখো সৈনিক আজ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। উনি স্বপ্ন দেখতেন একটি শোষনমুক্ত সমাজ ব্যবস্থার; উনি চাইতেন খেটে খাওয়া মানুষের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে।
আজ বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম যাদের বয়স ৩৫ এর নিচে, তারা ভাসানী সম্মন্ধে বিশেষ কিছু জানেন না। ভবিষৎ প্রজন্মকে নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন করে গড়ে তুলতে এবং ইতিহাস থেকে উপযুক্ত শিক্ষা নিতে তাদের কাছে মওলানা ভাসানীকে পরিচিত করাতে হবে। আমি গত দুই যুগেরও অধিককাল যাবৎ নিউইয়র্কে আছি। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে বেশ কয়েকবার মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখার সুযোগ হয়েছে।
মওলানা ভাসানীর জীবন ও সংগ্রামের পরিধি কত বিশাল, দূরদৃষ্টি কত সুদূর প্রসারী, উপলব্ধি কত গভীর তা তার জীবন সর্ম্পকে পর্যালোচনা না করলে বোঝা কঠিন। তার কর্মময় জীবন ব্যাপক, সুবিস্তৃত। তার জীবনের খন্ড খন্ড ঘটনা নিয়ে অনেকেই কাজ করছেন, তবে তার জীবনাদর্শ কর্মপদ্ধতি ও দর্শন নিয়ে আরো গভীরভাবে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
একদিন মওলানা ভাসানীর আদর্শ অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আজ সুদীর্ঘ ৩৪ বছর এরও বেশি সময় ধরে বিদেশে অবস্থান করছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে এদেশের রাজনীতির মূল ¯্রােতধারার সাথে জড়িত আছি। তাছাড়া একটি আর্ন্তজাতিক মানবাধিকার সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচ এর কর্মকান্ডের সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকার ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ সফর করতে হয়। মার্কিন রাজনীতিতে ডেমোক্রেটিক পার্টির সাথে এবং সাউথ এশিয়া ওয়াচ এর কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ততার ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতা ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতাদের সাথে মতবিনিময় করার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু কোথাও মওলানা ভাসানীর মত এত বড় মাপের নেতা দেখা এখনও মেলেনি।

লেখক: শহীদুল ইসলাম তালুকদার নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সাউথ এশিয়া ওয়াচের মহাসচিব। যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় কমিটির সদস্য ও এশিয়ান আমেরিকান ডেমোক্রেটিক এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট।