স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগষ্ট
- প্রকাশের সময় : ০৪:১৮:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০১৫
- / ২৮৪৫ বার পঠিত
ঢাকা: স্বাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি ‘জাতির জনক’ সাবেক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ১৫ আগস্ট শনিবার। সরকারী ঘোষণায় দিনটি জাতীয় শোক দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ জাতীয় নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন। শনিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়াও শ্রদ্ধা জানাবেন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য ও দলীয় নেতৃবৃন্দ।
দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশের সকল সরকারি-আধাসরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিলাদ মাহফিল কুরআনখানি এবং আলোচনা সভা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোররাতে ঢাকার ৩২নং ধানমন্ডির বাসভবনে সেনাবাহিনীর একদল তরুণ অফিসার ও জওয়ানদের হাতে শেখ মুজিব সপরিবারে নিহত হন। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রথম শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দিনটিকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। কিন্তু এরপর ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করে। তবে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আবারও ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে মহাজোট সরকার পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় শোক দিবস পালন অব্যাহত রাখা হয়। দিনটি সাধারণ ছুটির দিন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতি করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে তিনি সক্রিয়ভাবে এর সাথে সম্পৃক্ত হন। স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা ও মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আর জননেতা শামসুল হক ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। অপরদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে তিনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং স্বাধীন বাংলাদেশেরও প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
১৫ আগস্ট কালরাতে নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল, মেঝপুত্র শেখ জামাল ও তাদের স্ত্রীদ্বয় যথাক্রমে সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরসহ বঙ্গবন্ধু পরিবারের ২৮ সদস্য। একই দিন ঘাতকের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারান বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু সুকান্ত বাবু, আরিফ, রিন্টু প্রমুখ। ঘাতকরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সব সদস্যকেই হত্যা করে। কিন্তু সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। ঘাতকরা সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সদস্যদেরই কেবল হত্যা করেনি, বাঙালী জাতির আশা-আকাংখার কেন্দ্রবিন্দুকে নস্যাৎ করতে চেয়েছিল। ৪০ বছর আগের সেই শোকাবহ দুঃসহ স্মৃতি আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।
রাষ্ট্রপতির বাণী: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আব্দুল হামিদ বলেন, বাঙালী জাতির শোকাবহ দিন আজ। আমি এ দিনে শোকাহত চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার স্থপতি কালজয়ী শ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের অম্লান স্মৃতির প্রতি। জাতীয় শোক দিবসে পরম করুণাময় আল্ল¬াহর দরবারে সে দিনের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির জনক’ শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। আমি সকল শহীদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি। ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জনগণের নিকট থেকে তার স্বপ্ন ও আদর্শের মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। ১৫ কোটি বাঙালীর অন্তরে তার ত্যাগ ও তিতিক্ষার সংগ্রামী জীবনাদর্শ গ্রোথিত রয়েছে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৪০ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগস্ট মাসের শুরু থেকে এ কর্মসূচি চলে আসছে। ১৫ আগস্ট শনিবার সূর্য উদয় ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সকল স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৬টা ৪৫ মি. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্প অর্পণ।
এছাড়াও বাদ জোহর দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা। দুপুরে অস্বচ্ছল দু:স্থ মানুষদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা।
বাদ আছর বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ১৬ আগষ্ট রোববার বিকেল ৪টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত হবে আলোচনা সভা। সভায় সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
সৈয়দ আশরাফুলের আহবান: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এমপি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাত বার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সাথে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একইসাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বলা হয়েছে।
প্রবাসেও নানা কর্মসূচী: জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রবাসেও বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগসহ দলের বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোও নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।