নিউইয়র্ক ০৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

সালাউদ্দিন-মুজাহিদের ফাসি : ফিরে দেখা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫
  • / ১১৪৯ বার পঠিত

ঢাকা: দু’জনই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০১০ সালের জুনে। এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। নানা বিতর্ক। প্রায় ৫ বছর পর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তাংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের ৩ বিচারপতি। রায় অনুযায়ী ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং ৬টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে প্রমাণিত ৯টি অভিযোগের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড, ৩টি অভিযোগের প্রতিটিতে ২০ বছর এবং দুটি অভিযোগে ৫ বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
যে নয়টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সেগুলো হলোÑ অভিযোগ-২: মধ্য গহিরায় গণহত্যা, অভিযোগ-৩: নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা, অভিযোগ-৪: জগতমল্লপাড়া গণহত্যা, অভিযোগ-৫: সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্রসহ ৪ জনকে হত্যা, অভিযোগ-৬: ৬৯ পাড়া গণহত্যা, অভিযোগ-৭: সতিশ চন্দ্র পালিত হত্যা, অভিযোগ-১৭: নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং অভিযোগ-১৮: সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতন।
রাউজানের গহিরায় শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা, সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্রসহ ৪ জনকে হত্যা, ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার পুত্র শেখ আলমগীরকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ ছাড়া প্রমাণিত ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর কারাদন্ড এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে, ৯, ১৩, ১৫ ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি মর্মে এসব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২০১০ সালের ২৬ জুন বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়ি ভাঙচুড় ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রমনা থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় দলের অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৬ই ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদেরকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। ৩০ ডিসেম্বর তাকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় তাকে। ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ১৮ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১২ সালের ১৪ মে থেকে ২০১৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন ৪ জন সাক্ষী। ২৮ জুলাই মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা ৫ কার্যদিবস এবং পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ৭ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ২ বছর ৮ মাস বিচারকাজ চলার পর ১৪ আগস্ট উভয় পক্ষের সমাপনী বক্তব্য শেষে আলোচিত এ মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে তা অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত সর্বাধিকসংখ্যক অভিযোগ ও সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারকাজ শেষ হয়।
নিজেই নিজের পক্ষে বাংলার বদলে ইংরেজিতে সাফাই সাক্ষ্য দেয়া, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী হাতে জবানবন্দি দেয়া, বিচারপতি ও সাক্ষীদের প্রতি নানা কটূক্তি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়াসহ বিচারকাজ চলাকালীন এজলাসে বহু নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাফাই সাক্ষ্যতে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। বাঙালী পরিবারে নয়, তার মাতৃভাষা বাংলা নয়, চাটগাঁইয়া। তবে, ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার আচরণের সমালোচনা করে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও তার আচরণ জনপ্রতিনিধিসুলভ ছিলনা। রায়ে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন কৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধজনক দায়বদ্ধতা তিনি এড়াতে পারেন না। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তিই তার প্রাপ্য।
ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাশ চেয়ে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। চলতি বছরের ১৬ জুন শুরু হয়ে ৭ জুলাই পর্যন্ত ১৩ কার্যদিবসে আপিল শুনানি শেষ হয়। তার পক্ষে আপিল শুনানিতে আইনজীবীরা দাবি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ছিলেন না। এর স্বপক্ষে নানা তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপনকালে বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে অবস্থান করে প্রত্যক্ষভাবে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ট্রাইব্যুনালের রায়ে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড এবং পাঁচটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। আপিল বিভাগ আংশিক আপিল মঞ্জুর করে আটটিতে দন্ডাদেশ বহাল রেখে একটিতে খালাস দেন তাকে।
৩০ সেপ্টেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। এরপর নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই আইনজীবীর মাধ্যমে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন তিনি। ১৮ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
রাজনৈতিক জীবন: সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ফজলুল কাদের চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সবার বড় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার সেজ ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। অপর দুই ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ছাত্রাবস্থায় মুসলিম লীগের হাত ধরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনীতির শুরু। পরে তিনি এনডিপি, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৯ সালে রাউজানের একটি আসন থেকে মুসলিম লীগের হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করে নিজের এলাকা রাউজান থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু একসময় জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি আবারও এনডিপি থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যে এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙগুনিয়া থেকে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সামরিক শাসক এরশাদ ও বিএনপির শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙগুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নির্বাচনে ফটিকছড়িতে জিতলেও রাঙগুনিয়াতে হেরে যান তিনি।
Mojahid Hang Picআলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন, তার কৃত অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া না হলে ন্যায়বিচার হবে না। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। দাখিলকৃত সাতটি অভিযোগের মধ্যে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। তবে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদের কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা, বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা-নিযার্তনের ঘটনায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলাযোদ্ধা শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, জুয়েল, আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাশ চেয়ে একই বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে ২৭ মে ৯ কার্যদিবসে আপিল শুনানি শেষ করেন রাষ্ট্র ও দন্ডপ্রাপ্ত মুজাহিদের আইনজীবীরা। গত ১৬ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত সাতটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা, ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং সপ্তম অভিযোগে ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। আপিল বিভাগের রায়ে আংশিক আপিল মঞ্জুর করে প্রথম অভিযোগে আসামিকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া সপ্তম অভিযোগে সাজা কমিয়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে, ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন সর্বচ্চো আদালত।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এর পরই রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন মুজাহিদের আইনজীবীরা। ১৭ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন মুজাহিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি মুজাহিদের মৃত্যুদন্ডের সাজা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মৃত্যুদন্ডের সাজা মুজাহিদের প্রাপ্য নয়। স্বাধীনতার পরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ৪২টি তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোথাও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম নেই। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের দায়ভার তার ওপর বর্তায় না। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবীদের প্রতি যে আক্রোশ ছিল তা এখনও শেষ হয়নি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হকদের মতো বুদ্ধিজীবীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিকার না হলে এরা শুধু হুমকিই দিচ্ছে না, একাত্তরে যা করেছে তা আবারও করবে। তাই মৃত্যুদন্ড বহাল না থাকলে আমরা হতাশ হবো। শুনানি শেষে পরদিন ১৮ নভেম্বর মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারী মুজাহিদের বিরুদ্ধে ছয় হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ২১ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মুজাহিদের বিচারকাজ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকসহ রাষ্ট্রপক্ষে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসেবে মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেন তার ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। ২০১৩ সালের ৫ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াত নেতা থেকে মন্ত্রী: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারী ফরিদপুর জেলার পশ্চিম খাবাসপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মুজাহিদের। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারীতে ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হন মুজাহিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুলাই মাসে ইসলামী ছাত্র সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে কুখ্যাত আলবদর বাহিনী গঠিত হলে এর শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন মুজাহিদ। স্বাধীনতার পর মুজাহিদ জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮২ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সাল থেকে দুই বছর সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর হয়ে একাধিকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ী হতে পারেননি জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। তবে, ২০০১ সালে অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। (দৈনিক মানব জমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

সালাউদ্দিন-মুজাহিদের ফাসি : ফিরে দেখা

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৫:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ নভেম্বর ২০১৫

ঢাকা: দু’জনই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০১০ সালের জুনে। এরপর দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া। নানা বিতর্ক। প্রায় ৫ বছর পর মৃত্যুদন্ড কার্যকরের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তাদের বিচার প্রক্রিয়া। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবিরের নেতৃত্বে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তাংশ পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনালের ৩ বিচারপতি। রায় অনুযায়ী ২৩টি অভিযোগের মধ্যে নয়টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ ছাড়া ৮টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এবং ৬টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষী হাজির করেনি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে প্রমাণিত ৯টি অভিযোগের মধ্যে ৪টিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড, ৩টি অভিযোগের প্রতিটিতে ২০ বছর এবং দুটি অভিযোগে ৫ বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
যে নয়টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় সেগুলো হলোÑ অভিযোগ-২: মধ্য গহিরায় গণহত্যা, অভিযোগ-৩: নূতন চন্দ্র সিংহ হত্যা, অভিযোগ-৪: জগতমল্লপাড়া গণহত্যা, অভিযোগ-৫: সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্রসহ ৪ জনকে হত্যা, অভিযোগ-৬: ৬৯ পাড়া গণহত্যা, অভিযোগ-৭: সতিশ চন্দ্র পালিত হত্যা, অভিযোগ-১৭: নিজাম উদ্দিন আহম্মদকে অপহরণ ও নির্যাতন এবং অভিযোগ-১৮: সালেহউদ্দিন আহমদকে অপহরণ ও নির্যাতন।
রাউজানের গহিরায় শ্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর অধ্যক্ষ নূতন চন্দ্র সিংহকে গুলি করে হত্যা, সুলতানপুরে নেপাল চন্দ্রসহ ৪ জনকে হত্যা, ঊনসত্তরপাড়ায় গণহত্যা এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মোজাফফর আহম্মদ ও তার পুত্র শেখ আলমগীরকে হত্যার অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এ ছাড়া প্রমাণিত ২, ৪ ও ৭ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর কারাদন্ড এবং ১৭ ও ১৮ নম্বর অভিযোগে ৫ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে, ৯, ১৩, ১৫ ১৬, ২১ ও ২২ নম্বর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষ কোন সাক্ষ্য প্রমাণ হাজির করতে পারেনি মর্মে এসব অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
২০১০ সালের ২৬ জুন বিএনপি-জামায়াত ও সমমনাদের ডাকা হরতালের আগের রাতে মগবাজারে গাড়ি ভাঙচুড় ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় রমনা থানায় মামলা করা হয়। ওই মামলায় দলের অন্যান্য নেতাকর্মীর সঙ্গে এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৬ই ডিসেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ১৯ ডিসেম্বর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সালাউদ্দিন কাদেরকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়। ৩০ ডিসেম্বর তাকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয় তাকে। ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরের মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। ২০১২ সালের ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। ১৮ নভেম্বর অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-১। ২০১২ সালের ১৪ মে থেকে ২০১৩ সালের ১৩ জুন পর্যন্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৪১ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে ২০১৩ সালের ১৭ জুন থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত আসামির পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন ৪ জন সাক্ষী। ২৮ জুলাই মামলার সর্বশেষ ধাপ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা ৫ কার্যদিবস এবং পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা ৭ কার্যদিবস যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ২ বছর ৮ মাস বিচারকাজ চলার পর ১৪ আগস্ট উভয় পক্ষের সমাপনী বক্তব্য শেষে আলোচিত এ মামলার রায় যে কোন দিন ঘোষণা করা হবে মর্মে তা অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। প্রসঙ্গত, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে এখন পর্যন্ত সর্বাধিকসংখ্যক অভিযোগ ও সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিচারকাজ শেষ হয়।
নিজেই নিজের পক্ষে বাংলার বদলে ইংরেজিতে সাফাই সাক্ষ্য দেয়া, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী হাতে জবানবন্দি দেয়া, বিচারপতি ও সাক্ষীদের প্রতি নানা কটূক্তি ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দেয়াসহ বিচারকাজ চলাকালীন এজলাসে বহু নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সাফাই সাক্ষ্যতে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের একটি ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম তার। বাঙালী পরিবারে নয়, তার মাতৃভাষা বাংলা নয়, চাটগাঁইয়া। তবে, ১ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায়ে ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান তার আচরণের সমালোচনা করে বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ছয়বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। একজন জনপ্রতিনিধি হয়েও তার আচরণ জনপ্রতিনিধিসুলভ ছিলনা। রায়ে উল্লেখ করা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন কৃত মানবতাবিরোধী অপরাধের অপরাধজনক দায়বদ্ধতা তিনি এড়াতে পারেন না। এজন্য সর্বোচ্চ শাস্তিই তার প্রাপ্য।
ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাশ চেয়ে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর আইনজীবীর মাধ্যমে আপিল করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। চলতি বছরের ১৬ জুন শুরু হয়ে ৭ জুলাই পর্যন্ত ১৩ কার্যদিবসে আপিল শুনানি শেষ হয়। তার পক্ষে আপিল শুনানিতে আইনজীবীরা দাবি করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে ছিলেন না। এর স্বপক্ষে নানা তথ্য, প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবীরা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তি উপস্থাপনকালে বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে অবস্থান করে প্রত্যক্ষভাবে হত্যা, গণহত্যাসহ মানবতবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। ২৯ জুলাই সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির রায় বহাল রেখে চূড়ান্ত রায় দেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য সদস্যরা ছিলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। ট্রাইব্যুনালের রায়ে চারটি অভিযোগে মৃত্যুদন্ড এবং পাঁচটি অভিযোগে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। আপিল বিভাগ আংশিক আপিল মঞ্জুর করে আটটিতে দন্ডাদেশ বহাল রেখে একটিতে খালাস দেন তাকে।
৩০ সেপ্টেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে দেয়া আপিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পায়। এরপর নির্ধারিত ১৫ দিনের মধ্যেই আইনজীবীর মাধ্যমে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন তিনি। ১৮ নভেম্বর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ।
রাজনৈতিক জীবন: সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার ছিলেন। ফজলুল কাদের চৌধুরীর চার ছেলের মধ্যে সবার বড় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার সেজ ভাই গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা। অপর দুই ভাই সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ছাত্রাবস্থায় মুসলিম লীগের হাত ধরে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রাজনীতির শুরু। পরে তিনি এনডিপি, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৯ সালে রাউজানের একটি আসন থেকে মুসলিম লীগের হয়ে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির হয়ে নির্বাচন করে নিজের এলাকা রাউজান থেকে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। কিন্তু একসময় জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে তিনি আবারও এনডিপি থেকে নির্বাচন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিছুদিনের মধ্যে এনডিপি বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়ে গেলে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ২০০১ সালের নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙগুনিয়া থেকে বিএনপির টিকিটে সংসদ সদস্য হন তিনি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সামরিক শাসক এরশাদ ও বিএনপির শাসনামলে ত্রাণ ও পুনর্বাসন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০০৮ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের রাঙগুনিয়া ও ফটিকছড়ি থেকে নির্বাচনে অংশ নেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নির্বাচনে ফটিকছড়িতে জিতলেও রাঙগুনিয়াতে হেরে যান তিনি।
Mojahid Hang Picআলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকরের আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ৩ সদস্যের ট্রাইব্যুনাল রায়ে উল্লেখ করেন, তার কৃত অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া না হলে ন্যায়বিচার হবে না। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি শাহিনুর ইসলাম। দাখিলকৃত সাতটি অভিযোগের মধ্যে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। তবে ২ ও ৪ নম্বর অভিযোগে মুজাহিদের কোন সংশ্লিষ্টতা না পাওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাশ দেন ট্রাইব্যুনাল। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপরণের পর হত্যা, বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা-নিযার্তনের ঘটনায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলাযোদ্ধা শহীদজননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, জুয়েল, আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
মৃত্যুদন্ডের রায়ের বিরুদ্ধে খালাশ চেয়ে একই বছরের ১১ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল থেকে ২৭ মে ৯ কার্যদিবসে আপিল শুনানি শেষ করেন রাষ্ট্র ও দন্ডপ্রাপ্ত মুজাহিদের আইনজীবীরা। গত ১৬ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডের রায় বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অপর তিন সদস্য হলেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। প্রসিকিউশনের দাখিলকৃত সাতটি অভিযোগের মধ্যে প্রথম অভিযোগে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে অপহরণের পর হত্যা, ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবীসহ গণহত্যার ষড়যন্ত্র ও ইন্ধন এবং সপ্তম অভিযোগে ফরিদপুরের বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করেন। আপিল বিভাগের রায়ে আংশিক আপিল মঞ্জুর করে প্রথম অভিযোগে আসামিকে খালাস দেন আপিল বিভাগ। এ ছাড়া সপ্তম অভিযোগে সাজা কমিয়ে মুজাহিদকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে, ষষ্ঠ অভিযোগে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রাখেন সর্বচ্চো আদালত।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করে আপিল বিভাগ। এর পরই রিভিউ পিটিশন দাখিল করেন মুজাহিদের আইনজীবীরা। ১৭ নভেম্বর আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের শুনানি শুরু হয়। ওই দিন মুজাহিদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র আইনজীবী আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি মুজাহিদের মৃত্যুদন্ডের সাজা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মৃত্যুদন্ডের সাজা মুজাহিদের প্রাপ্য নয়। স্বাধীনতার পরে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড নিয়ে ৪২টি তদন্ত হয়েছে। কিন্তু কোথাও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নাম নেই। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের সাজাপ্রাপ্ত অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেও মুজাহিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের দায়ভার তার ওপর বর্তায় না। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, দন্ডপ্রাপ্ত আসামির পরিকল্পনা, উসকানি, সহযোগিতার মাধ্যমে বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবীদের প্রতি যে আক্রোশ ছিল তা এখনও শেষ হয়নি। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, হাসান আজিজুল হকদের মতো বুদ্ধিজীবীদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিকার না হলে এরা শুধু হুমকিই দিচ্ছে না, একাত্তরে যা করেছে তা আবারও করবে। তাই মৃত্যুদন্ড বহাল না থাকলে আমরা হতাশ হবো। শুনানি শেষে পরদিন ১৮ নভেম্বর মুজাহিদের রিভিউ আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে গঠিত ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পরে ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারী মুজাহিদের বিরুদ্ধে ছয় হাজার ৬৮০ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ২০১২ সালের ২১ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মুজাহিদের বিচারকাজ শুরু হয়। তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাকসহ রাষ্ট্রপক্ষে মুজাহিদের বিরুদ্ধে ১৭ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসেবে মুজাহিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেন তার ছেলে আলী আহমেদ মাবরুর। ২০১৩ সালের ৫ জুন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল।
জামায়াত নেতা থেকে মন্ত্রী: জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারী ফরিদপুর জেলার পশ্চিম খাবাসপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ছাত্রাবস্থায় জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মুজাহিদের। ১৯৬৮ সালে তিনি ইসলামী ছাত্রসংঘের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের জানুয়ারীতে ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হন মুজাহিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুলাই মাসে ইসলামী ছাত্র সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সেক্রেটারির দায়িত্ব পান। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে কুখ্যাত আলবদর বাহিনী গঠিত হলে এর শীর্ষ নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন মুজাহিদ। স্বাধীনতার পর মুজাহিদ জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৮২ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ সাল থেকে দুই বছর সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। জামায়াতে ইসলামীর হয়ে একাধিকবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও জয়ী হতে পারেননি জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা। তবে, ২০০১ সালে অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। (দৈনিক মানব জমিন)