নিউইয়র্ক ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার : নাগরিক সমাবেশে বক্তারা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০১৫
  • / ৫৪৮ বার পঠিত

ঢাকা: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুুদুর রহমান মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলেছেন, মান্না তার কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাকে রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে আর কোন তথ্য বের করার প্রয়োজন নেই। রিমান্ডের নামে তার ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। যে কথপোকথনের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে এতে কোন প্রকার বেআইনি কিছু নেই। বুধবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশ সংহতি প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে। কিন্তু সেটা মঙ্গলজনক হবে না। দেশে গণতন্ত্রই থাকতে হবে। মানবাধিকার কমিশন ও আইন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা কিভাবে মানুষের বুকে গুলি করতে বলে। তারা কিভাবে একজন মানুষকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। এজন্য সাধারণ মানুষকে মানবাধিকার কমিশন ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান তিনি। মান্নাকে ২০ ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, হাইকোর্টের উচিত সুয়োমটো দিয়ে এ রহস্যের উদঘাটন করা। বৃটিশ আমলেও পুলিশ রাতে কারও বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার করত না। সারা রাত বাসা ঘিরে রাখত। সকালে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। জনগণকে রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত না জনগণ ন্যূনতম সাহস অর্জন করতে পারবে ততদিন সরকার যা খুশি তাই করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ-র‌্যাব কেউ অন্যায় করলে রেহাই পাবে না। জনগণ একদিন সকল অনাচারের প্রতিশোধ নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মান্না পরিষ্কার ইমেজের মানুষ। তাকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করতে দেয়নি। মান্নার কথোপকথনে বেআইনি কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, মান্না ক্যাম্পাসে ছাত্রদের আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপি নেতা খোকাকে পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হলে তা করতে বলেছেন। এটা রাজনীতিবিদরা হরহামেশাই বলে থাকেন। মিডিয়া তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। উনি লাশ চাননি। সরকার তাকে গ্রেপ্তারের পথ প্রশস্ত করার জন্য মিডিয়া ট্রায়াল করেছে। সরকার একতরফা ৪৮ ঘণ্টা মান্নার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা যে ব্যক্তি কথা বলেছেন তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যারা সরকারের কাজের সমালোচনা করেন তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে আসিফ নজরুল বলেন, তিন মাস থেকে তার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। মান্না ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরকার সবই জানে অথচ তাকে আটকের পর ২০ ঘণ্টার জন্য উধাও করে দেয়া হয়েছিল। এখন টানা ২০দিন রিমান্ডে রেখে তাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে হল দখল করে রেখেছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করে লাশ ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার এ কৌশল নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, দেশ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। মান্না এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার কণ্ঠরোধ করতেই মামলা দেয়া হয়েছে। মান্নার বিরুদ্ধে এ মামলা ষড়যন্ত্রমূলক।
মান্নার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য সরকার মান্নার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মান্না রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললে এতে সরকারের সমস্যা কোথায়। মান্না প্রয়োজনে জেলে থেকেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য মান্নার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, ইফতেখার আহমেদ বাবু, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান প্রমুখ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার : নাগরিক সমাবেশে বক্তারা

প্রকাশের সময় : ১২:৩১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ মার্চ ২০১৫

ঢাকা: রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুুদুর রহমান মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট নাগরিকেরা। তারা বলেছেন, মান্না তার কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাকে রিমান্ডে নিয়ে নতুন করে আর কোন তথ্য বের করার প্রয়োজন নেই। রিমান্ডের নামে তার ওপর অত্যাচার করা হচ্ছে। যে কথপোকথনের জন্য তাকে আটক করা হয়েছে এতে কোন প্রকার বেআইনি কিছু নেই। বুধবার (১১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশ সংহতি প্রকাশ করে গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ভিন্ন চিন্তা করতে পারে। কিন্তু সেটা মঙ্গলজনক হবে না। দেশে গণতন্ত্রই থাকতে হবে। মানবাধিকার কমিশন ও আইন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা কিভাবে মানুষের বুকে গুলি করতে বলে। তারা কিভাবে একজন মানুষকে দিনের পর দিন রিমান্ডে নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। এজন্য সাধারণ মানুষকে মানবাধিকার কমিশন ঘেরাওয়ের আহ্বান জানান তিনি। মান্নাকে ২০ ঘণ্টা কোথায় রাখা হয়েছিল- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, হাইকোর্টের উচিত সুয়োমটো দিয়ে এ রহস্যের উদঘাটন করা। বৃটিশ আমলেও পুলিশ রাতে কারও বাসায় ঢুকে গ্রেপ্তার করত না। সারা রাত বাসা ঘিরে রাখত। সকালে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেত। জনগণকে রাষ্ট্রীয় অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যতদিন পর্যন্ত না জনগণ ন্যূনতম সাহস অর্জন করতে পারবে ততদিন সরকার যা খুশি তাই করবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, পুলিশ-র‌্যাব কেউ অন্যায় করলে রেহাই পাবে না। জনগণ একদিন সকল অনাচারের প্রতিশোধ নেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল বলেন, মান্না পরিষ্কার ইমেজের মানুষ। তাকে গ্রেপ্তারের আগে সরকার তার অবস্থান পরিষ্কার করতে দেয়নি। মান্নার কথোপকথনে বেআইনি কিছু নেই দাবি করে তিনি বলেন, মান্না ক্যাম্পাসে ছাত্রদের আন্দোলন জোরদার করতে বিএনপি নেতা খোকাকে পরামর্শ দিয়েছেন। এজন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হলে তা করতে বলেছেন। এটা রাজনীতিবিদরা হরহামেশাই বলে থাকেন। মিডিয়া তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রচার করেছে। উনি লাশ চাননি। সরকার তাকে গ্রেপ্তারের পথ প্রশস্ত করার জন্য মিডিয়া ট্রায়াল করেছে। সরকার একতরফা ৪৮ ঘণ্টা মান্নার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে। তার সঙ্গে অজ্ঞাতনামা যে ব্যক্তি কথা বলেছেন তাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যারা সরকারের কাজের সমালোচনা করেন তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। মান্না রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে আসিফ নজরুল বলেন, তিন মাস থেকে তার ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে। মান্না ফোনে কথা বলার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সরকার সবই জানে অথচ তাকে আটকের পর ২০ ঘণ্টার জন্য উধাও করে দেয়া হয়েছিল। এখন টানা ২০দিন রিমান্ডে রেখে তাকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে।
ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, দেশে আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে। যারা বছরের পর বছর ক্যাম্পাসে হল দখল করে রেখেছে, নিজেদের মধ্যে মারামারি করে লাশ ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তির উত্থানকে বাধাগ্রস্ত করতে সরকার এ কৌশল নিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বলেন, দেশ আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। মান্না এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। তার কণ্ঠরোধ করতেই মামলা দেয়া হয়েছে। মান্নার বিরুদ্ধে এ মামলা ষড়যন্ত্রমূলক।
মান্নার মুক্তি দাবি করে নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরাম বলেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য সরকার মান্নার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। মান্না রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বললে এতে সরকারের সমস্যা কোথায়। মান্না প্রয়োজনে জেলে থেকেই ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি। এজন্য মান্নার বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুল হক সরকারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, শহীদুল্লাহ কায়সার, ইফতেখার আহমেদ বাবু, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান প্রমুখ।