নিউইয়র্ক ১০:৩১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিস্ফোরণ ঠেকাতে পারছে না সরকার

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:২০:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৪
  • / ৮৩৫ বার পঠিত

সরকারের ভেতর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলছে। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিস্ফোরণ যেন সরকার কোনোভাবেই থামাতে পারছে না। তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদ আর এ কে খন্দকারের বই বোমা বিস্ফোরণ ও লতিফ সিদ্দিকীর ধর্মদ্রোহীতার পর এবার ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে মহাবিস্ফোরণ ঘটালেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
এইচ টি ইমামের এই বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা সরকারের মসনদ।
গত ১২ নভেম্বর বুধবার টিএসসিতে ছাত্রলীগের এক সমাবেশে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন প্রসঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে’।
তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধু তোলপাড়ই সৃষ্টি হয়নি সরকারের বৈধতার প্রশ্নটি আরো বেশি জোড়ালো হচ্ছে।
আর এ নিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে এখন তারা নতুন করে আবার সমালোচার মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নাকি তার এ বক্তব্যে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও ১৪ নভেম্বর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমামকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এদিকে এইচ টি ইমামের বক্তব্যের পর ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে আবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনরাও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা এত দিন যা বলেছি এইচ টি ইমাম আমাদের বক্তব্যকে সত্য প্রমাণিত করলেন।
অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, এইচ টি ইমামের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী নাকি তার বিদেশ সফর বাতিল করেছেন। নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে প্রধানমন্ত্রী তার যুক্তরাজ্য ও ইতালী সফর বাতিল করেছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অসুস্থতার কারণে সফর বাতিল করেছেন।
অপরদিকে এইচ টি ইমামের একদিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ঘুষকে বৈধ বলে আরেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিজিএমইএ-র সমঝোতা স্মারক সই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগে ঋণ পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হতো। আমাদের দেশে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। আমি ৪০ বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেছি। সে সময় আমাকেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। তবে এটাকে আমি অবৈধ বলতে রাজি না।
তিনি আরো বলেছেন, আমি মনে করি কাজ দ্রুত করায় যদি কেউ কাউকে উপহার হিসেবে কিছু (ঘুষ) দেয় তবে তা অবৈধ নয়। উন্নত দেশে এটার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নামে। তারা এটার নাম দিয়েছে পড মানি।
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর ক্ষেপে উঠেছে দেশের বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও শীর্ষ ওলামায়ে কেরামগণ। তারা অর্থমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও প্রদান করেছেন। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। খেলাফত আন্দোলন নামে একটি সংগঠন অর্থমন্ত্রীকে গ্রেফতার ও তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
যদিও একটি অনলাইন মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি ঘুষকে বৈধ বলেননি।
এদিকে ভেতর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণে রীতিমত বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
একদিকে দলীয় লোকজনের খুন-হত্যা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবজি, দুর্নীতি-লুটপাট অপরদিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের মন্তব্যে সরকারের ভেতরে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ মনে করছেন, সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছিল কিন্তু মন্ত্রী-উপদেষ্টারা সবই ফাঁস করে দিচ্ছে। এখন আর জনবিস্ফোরণের প্রয়োজন হবে না। সরকারের ভেতরের বিস্ফোরণেই তাদের পতন ঘণ্টা বাজবে বলেও বিশ্লেকদের ধারণা।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বিস্ফোরণ ঠেকাতে পারছে না সরকার

প্রকাশের সময় : ০৬:২০:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৪

সরকারের ভেতর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেই চলছে। মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের বিস্ফোরণ যেন সরকার কোনোভাবেই থামাতে পারছে না। তাজউদ্দীন আহমদের মেয়ে শারমিন আহমেদ আর এ কে খন্দকারের বই বোমা বিস্ফোরণ ও লতিফ সিদ্দিকীর ধর্মদ্রোহীতার পর এবার ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে মহাবিস্ফোরণ ঘটালেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
এইচ টি ইমামের এই বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে উঠেছে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় বসা সরকারের মসনদ।
গত ১২ নভেম্বর বুধবার টিএসসিতে ছাত্রলীগের এক সমাবেশে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন প্রসঙ্গে এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘আমি তো প্রত্যেকটি উপজেলায় কথা বলেছি, সব জায়গায় আমাদের যারা রিক্রুটেড তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে দিয়ে মোবাইল কোর্ট করিয়ে আমরা নির্বাচন করেছি। তারা আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে, বুক পেতে দিয়েছে’।
তার এই বক্তব্যের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধু তোলপাড়ই সৃষ্টি হয়নি সরকারের বৈধতার প্রশ্নটি আরো বেশি জোড়ালো হচ্ছে।
আর এ নিয়ে চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে সরকার। ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে এখন তারা নতুন করে আবার সমালোচার মুখে পড়েছেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নাকি তার এ বক্তব্যে প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও ১৪ নভেম্বর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে এইচ টি ইমামকে সতর্ক করে দিয়েছেন।
এদিকে এইচ টি ইমামের বক্তব্যের পর ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন নিয়ে আবার নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনরাও এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
বিশিষ্টজনরা বলছেন, ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আমরা এত দিন যা বলেছি এইচ টি ইমাম আমাদের বক্তব্যকে সত্য প্রমাণিত করলেন।
অসমর্থিত একটি সূত্রে জানা গেছে, এইচ টি ইমামের বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী নাকি তার বিদেশ সফর বাতিল করেছেন। নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা থেকে প্রধানমন্ত্রী তার যুক্তরাজ্য ও ইতালী সফর বাতিল করেছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অসুস্থতার কারণে সফর বাতিল করেছেন।
অপরদিকে এইচ টি ইমামের একদিন আগে অর্থাৎ মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ঘুষকে বৈধ বলে আরেক বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিজিএমইএ-র সমঝোতা স্মারক সই উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগে ঋণ পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হতো। আমাদের দেশে এখন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হয়। আমি ৪০ বছর আগে ড্রাইভিং লাইসেন্স করেছি। সে সময় আমাকেও অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। তবে এটাকে আমি অবৈধ বলতে রাজি না।
তিনি আরো বলেছেন, আমি মনে করি কাজ দ্রুত করায় যদি কেউ কাউকে উপহার হিসেবে কিছু (ঘুষ) দেয় তবে তা অবৈধ নয়। উন্নত দেশে এটার বৈধতা দেওয়া হয়েছে ভিন্ন নামে। তারা এটার নাম দিয়েছে পড মানি।
অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর ক্ষেপে উঠেছে দেশের বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন ও শীর্ষ ওলামায়ে কেরামগণ। তারা অর্থমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কার ও তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতিও প্রদান করেছেন। হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। খেলাফত আন্দোলন নামে একটি সংগঠন অর্থমন্ত্রীকে গ্রেফতার ও তার শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলও করেছে।
যদিও একটি অনলাইন মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে অর্থমন্ত্রী বলেছেন যে, তিনি ঘুষকে বৈধ বলেননি।
এদিকে ভেতর থেকে একের পর এক বিস্ফোরণে রীতিমত বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
একদিকে দলীয় লোকজনের খুন-হত্যা, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবজি, দুর্নীতি-লুটপাট অপরদিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে মন্ত্রী-উপদেষ্টাদের মন্তব্যে সরকারের ভেতরে এখন চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
রাজনীতি বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষ মনে করছেন, সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢেকে রাখার চেষ্টা করেছিল কিন্তু মন্ত্রী-উপদেষ্টারা সবই ফাঁস করে দিচ্ছে। এখন আর জনবিস্ফোরণের প্রয়োজন হবে না। সরকারের ভেতরের বিস্ফোরণেই তাদের পতন ঘণ্টা বাজবে বলেও বিশ্লেকদের ধারণা।