নিউইয়র্ক ১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০১৫
  • / ৭৯৫ বার পঠিত

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে। ৪ অক্টোবর রোববার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, এ হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার ও বিচার করা হবে। এ ঘটনার পেছনে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফেরার একদিন পর গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগদান, দেশের জন্য বয়ে আনা দুই মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কার, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বর্তমান গৌরবময় অবস্থান, প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাম্প্রতিক দুই বিদেশী হত্যাকান্ড, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের সফর স্থগিত, বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট টিমের পাকিস্তান সফর এবং গাইবান্ধায় সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের গুলিতে শিশু আহতের ঘটনার বিষয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। প্রধানমন্ত্রীও সৌহার্দ্যময় পরিবেশে সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দেন।
শেখ হাসিনা আইএস প্রসঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত বলতে পারি, আমাদের এখানে আইএস বা সে ধরনের কোনো সংগঠন বা তৎপরতা গড়ে উঠতে পারেনি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট সতর্ক। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান বাংলাদেশে হোক তা আমরা চাই না, তা হতে দেব না। বিদেশী নাগরিক হত্যায় আইএস জড়িত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা এটা বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত আইএসের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলাভাই এদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, গ্রেফতার করেছি, বিচার করেছি। আর আমাদের কিছু কিছু লোক তো অতি উৎসাহী হয়ে ওদিকে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু-একটি ঘটনায় সব অর্জন ধ্বংস হয়ে গেছে এ যদি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা হয়, তবে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যই তো সফল হল।
বিদেশী হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের জড়িত থাকার আশংকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালির নাগরিককে চারটি গুলি করা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত। আমি তার আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য স্মরণ করতে চাই, এরপরে তার রিঅ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, তাদের আগাম কথাবার্তা থেকে সূত্র পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চয়ই এটা দেখবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের যখন বিচার করছি তখন তার কিছু প্রতিক্রিয়া তো হবেই। এজন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তারাই রাজত্ব করেছিল পঁচাত্তরের পর ২১ বছর। তারাই ক্ষমতায় ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, একটি গ্রুপ আছে, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সেটা তারা করতে থাকবে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটা অনেকের পছন্দ নয়। কেউ কেউ মতামত দিয়ে ফেললেন আর্মি নাকি আমার পুরো কন্ট্রোলে। এজন্য আর্মি কিছু করতে পারছে না। যিনি এটা বলেছেন, তিনি কি আর্মিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন? কিন্তু গাছ থেকে ফল পড়েনি। যে যেভাবে ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আমাদের সব থেকে অগ্রগণ্য।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম আসবে না। বলল যে, এখানে পরিস্থিতি ভালো না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে কি ঘটল? এ ব্যাপারে আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইটস করেছে কিনা? অস্ট্রেলিয়ায়ও কিন্তু দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হল। তার কি জবাব দেবে তারা? তিনি বলেন, এখানে একটা হত্যাকান্ডের পর প্রতিক্রিয়া দেখাল যে দেশগুলো তারা অস্ট্রেলিয়ার এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কি বলবে? পাশাপাশি আমেরিকায় গুলিতে ১০ জন মারা গেল তার কি হবে? তারা কি সেখানে ঘোষণা দিয়ে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে যে এখানে কেউ আসবে না।
দেশের মধ্যে কোনো সংকট আছে কিনা? এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের অবস্থান কি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনে সংকট চলছে। বাইরে কোনো সংকটের কথা কেউ বলেননি, দেখিওনি। সংকট এখানে কিছু লোকের মনের সংকট। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রচলিত প্রবাদ ‘বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়’ উদ্ধৃত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের আগ্রহ রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রশ্ন যদি থাকত, তাহলে তো তারা আমাদের দাওয়াত দিত না। তাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। সংকট থাকলে এলডিসির নেতৃত্ব কিভাবে এলো? প্রশ্ন থাকলে তো তারা (বিদেশীরা) সেটাও করত না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সংকট বা সরকারের বৈধতা না থাকলে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বারবারই প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়েছে। এসডিজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছুতেই একটু বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে যায়, হারিয়ে যায় ওই একটা ঘটনায়। আমরা এত মানসিক দৈন্যতায় কেন ভুগি? আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। একটা ছোট্ট ভূখন্ড। আমেরিকা একটা বড় দেশ। কত তাদের জনসংখ্যা? আমাদের দ্বিগুণ। দেশটা কত বিশাল। ৫২ স্টেটের একটা স্টেটের সমান হল বাংলাদেশ। আমাদের এখানে তাদের অর্ধেকের সমান জনসংখ্যা। এখানে আইনশৃংখলা থেকে শুরু করে, খাদ্য নিরাপত্তা সব কিছু আমরা করে যাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নাজমুল, তাকে নিউইয়র্কের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যুগ্ম সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে। বহু বাঙালী সেখানে কাজ করেন, ট্যাক্সি চালান, প্রতিনিয়ত তারা সেখানে খুন হচ্ছেন। কোনো দিন মিডিয়া সেগুলোকে হাইলাইটস করে না। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন- কেন? তারা আমেরিকায় মারা গেছেন, সেজন্য?
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। বিদেশে বাংলাদেশী নিহত হলে তার খবরকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশীদের কাছে আপনাদের এ জিনিসগুলোও তুলে ধরা দরকার যে, আপনার নিজের দেশে বাঙালী মারা যাচ্ছে, তাদের গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে। সেই নিউজ আমার দেশে কেন গুরুত্ব পাবে না? বিদেশী নাগরিক মারা গেলে আমরা যত গুরুত্ব দেই, আমার দেশের মানুষ মারা গেলে আমরা তত গুরুত্ব দেই না কেন? এটা আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলের মধ্যে ঢুকে মেরে ফেলা হচ্ছে গুলি করে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, প্রতিনিয়ত তাকে এ ধরনের ঘটনা, হত্যা দেখতে হচ্ছে। সেখানে কি অবস্থা সেটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। হিসাব করে দেখুন, সেখানে প্রতি মিনিটে কতজন খুন হচ্ছেন, কত মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে। ওদের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের এ এক-দুটি ঘটনায় হতাশ হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের খালাফ হত্যার বিচার করছি। তাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আর আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আলাদা। তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়। আমরা সেটা করলে আপনারাই বলবেন মানবাধিকার গেল। খুনিদের মানবাধিকার নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। কোনো কিছু হলে হাহাকার পড়ে যায়। অথচ আমরা তো বসে নেই, ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ও দলের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার রেটিং যাই হোক, আমি গাছ, আমার শিকড় হচ্ছে দল। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করেছে বলেই আমি এত ওপরে উঠতে পেরেছি। বিশাল একটা সংগঠন। এখানে ছোটখাটো ঘটনা তো ঘটতেই পারে। তারপরও কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে শিশু আহত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের উৎপাত আছে। ওখানে আমার দলের নেতাকর্মীদের হাত-পা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এমপির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার (৩ অক্টোবর) দেশে ফিরেই কথা বলে ব্যবস্থা নিতে বলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের ৯১ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। তারা কি এটা কল্পনা করতে পেরেছিলেন? তারা সচিবদের সঙ্গে সুযোগ-সুবিধার কথা তুলনা করেন। সচিবদের চাকরির বয়স ৫৯ বছর আর শিক্ষকদের ৬৫ বছর করেছি। তাহলে কি শিক্ষকদেরও চাকরির বয়সসীমা কমিয়ে দেব? সচিবরা আর কোনো চাকরি করতে পারেন না। শিক্ষকরা একাধিক চাকরি করেন। কোন শিক্ষক, কতজন শিক্ষক, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন, সেটা আমরা জানি। সে তালিকা আমার কাছে আছে। তিনি বলেন, তারা তো আন্দোলন করছেন, তাহলে একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা নেবেন না। এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। অর্থমন্ত্রী আছেন, শিক্ষামন্ত্রী আছেন বিষয়টি তারা দেখবেন। শুধু একটা কথা বলব, আন্দোলন করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি করবেন না।
নিউইয়র্কে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে ড. ইউনূসের উপস্থিত থাকার বিষয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যার আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছে। জনগণই এর জবাব দেবে। তিনি তো করও দেন না। মামলা করে স্থগিত করে রাখেন, যাতে কর দিতে না হয়।
লন্ডন সফররত খালেদা জিয়ার এক বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি লন্ডনে বসে তো পিন মারায় ব্যস্ত। আর কি করেন জানি না। তিনি আবার আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পেলেন কি করে? তাহলে ফালু’র কি হবে। শেখ হাসিনা আলো বলেন, আওয়ামী লীগে যদি তাদের প্রেমিক কেউ থাকে, তবে তাদের আপনারাই খুঁজে বের করুন।
নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানে বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দল পাঠানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের মেয়েদের পাকিস্তানে পাঠানোর এ সিদ্ধান্ত কেন। জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, খেলতে যাবে না কেন? বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, যে পাকিস্তান একটা ফিউডাল এবং কনজারভেটিভ সোসাইটি। কাজেই আমাদের মেয়েরা সেখানে খেলতে গিয়েছে, এটা তো সাহসের পরিচয় দিয়েছে। এটা দেখে পাকিস্তানের মেয়েরাও উৎসাহিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে একটি বড় মাইলফলক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়। সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরে এ ভাতা চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সংবাদপত্রের মালিকরা ঠিকমতো দেবেন তো বোনাসটা? টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদপত্রের মালিকরা এ নববর্ষের বোনাসটা দিয়ে দিলে আমি খুশি হবো।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের দিক দিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহর অর্থনীতির সমতাও আমরা অনেকখানি নিশ্চিত করতে পেরেছি। জাতিসংঘের অধিবেশনে এসব ভূমিকার জন্য ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব নেতারা জঙ্গিবাদ দমনে এ দেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ এবারের অধিবেশনে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিশ্ব নেতাই তাদের বক্তব্যে বারবার বাংলাদেশের অর্জনের কথা তুলে ধরেছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবারের অংশগ্রহণে সাফল্য, ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ ও ‘আইসিটি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং দল ও জোটের সংসদ সদস্যরাও সাংবাদিক সম্মেলনস্থল গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময় বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর ২০ মিনিটের লিখিত বক্তৃতার পর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলে দীর্ঘ প্রায় ১ ঘণ্টা। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে

প্রকাশের সময় : ১১:৩৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০১৫

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদেশী নাগরিক হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের হাত থাকতে পারে। ৪ অক্টোবর রোববার গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, এ হত্যাকান্ডে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার ও বিচার করা হবে। এ ঘটনার পেছনে তাদের (বিএনপি-জামায়াত) মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয় একটা উদ্দেশ্য আছে।
নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে দেশে ফেরার একদিন পর গণভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগদান, দেশের জন্য বয়ে আনা দুই মর্যাদা সম্পন্ন পুরস্কার, বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের বর্তমান গৌরবময় অবস্থান, প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাম্প্রতিক দুই বিদেশী হত্যাকান্ড, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিমের সফর স্থগিত, বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট টিমের পাকিস্তান সফর এবং গাইবান্ধায় সরকারদলীয় এক সংসদ সদস্যের গুলিতে শিশু আহতের ঘটনার বিষয় মুখ্য হয়ে ওঠে। এসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। প্রধানমন্ত্রীও সৌহার্দ্যময় পরিবেশে সাংবাদিকদের সব প্রশ্নের উত্তর দেন।
শেখ হাসিনা আইএস প্রসঙ্গে বলেন, এখন পর্যন্ত বলতে পারি, আমাদের এখানে আইএস বা সে ধরনের কোনো সংগঠন বা তৎপরতা গড়ে উঠতে পারেনি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা যথেষ্ট সতর্ক। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের কোনো স্থান বাংলাদেশে হোক তা আমরা চাই না, তা হতে দেব না। বিদেশী নাগরিক হত্যায় আইএস জড়িত কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আমরা এটা বলতে পারি না। এখন পর্যন্ত আইএসের জড়িত থাকার কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমাদের দেশে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, বাংলাভাই এদের সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমরা এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, গ্রেফতার করেছি, বিচার করেছি। আর আমাদের কিছু কিছু লোক তো অতি উৎসাহী হয়ে ওদিকে যাওয়ার জন্য আগ্রহী হয়ে পড়ে। এটাই সমস্যা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু-একটি ঘটনায় সব অর্জন ধ্বংস হয়ে গেছে এ যদি আপনাদের চিন্তা-ভাবনা হয়, তবে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যই তো সফল হল।
বিদেশী হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের জড়িত থাকার আশংকার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার স্টাইলটা একই রকম। ইতালির নাগরিককে চারটি গুলি করা হয়েছে। একটা গুলিও মিসফায়ার হয়নি। তার মানে কি এটা সুপরিকল্পিত। আমি তার আগে বিএনপির এক নেতার বক্তব্য স্মরণ করতে চাই, এরপরে তার রিঅ্যাকশন। সেগুলো যদি মিলিয়ে দেখেন তাহলে জিনিসটা খুব স্পষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন, তাদের আগাম কথাবার্তা থেকে সূত্র পাওয়া যায়। গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চয়ই এটা দেখবে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের যখন বিচার করছি তখন তার কিছু প্রতিক্রিয়া তো হবেই। এজন্য জনসচেতনতা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তারাই রাজত্ব করেছিল পঁচাত্তরের পর ২১ বছর। তারাই ক্ষমতায় ছিল। শেখ হাসিনা বলেন, একটি গ্রুপ আছে, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে এবং সেটা তারা করতে থাকবে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশে আমরা গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। এটা অনেকের পছন্দ নয়। কেউ কেউ মতামত দিয়ে ফেললেন আর্মি নাকি আমার পুরো কন্ট্রোলে। এজন্য আর্মি কিছু করতে পারছে না। যিনি এটা বলেছেন, তিনি কি আর্মিকে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন? কিন্তু গাছ থেকে ফল পড়েনি। যে যেভাবে ব্যাখ্যা দিক, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন আমাদের সব থেকে অগ্রগণ্য।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশে না আসা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম আসবে না। বলল যে, এখানে পরিস্থিতি ভালো না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে কি ঘটল? এ ব্যাপারে আমাদের মিডিয়াগুলো হাইলাইটস করেছে কিনা? অস্ট্রেলিয়ায়ও কিন্তু দু’জনকে গুলি করে হত্যা করা হল। তার কি জবাব দেবে তারা? তিনি বলেন, এখানে একটা হত্যাকান্ডের পর প্রতিক্রিয়া দেখাল যে দেশগুলো তারা অস্ট্রেলিয়ার এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে কি বলবে? পাশাপাশি আমেরিকায় গুলিতে ১০ জন মারা গেল তার কি হবে? তারা কি সেখানে ঘোষণা দিয়ে রেড অ্যালার্ট দিয়েছে যে এখানে কেউ আসবে না।
দেশের মধ্যে কোনো সংকট আছে কিনা? এ বিষয়ে বিশ্ব নেতাদের অবস্থান কি? এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ভেতরের কিছু মানুষের মনে সংকট চলছে। বাইরে কোনো সংকটের কথা কেউ বলেননি, দেখিওনি। সংকট এখানে কিছু লোকের মনের সংকট। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রচলিত প্রবাদ ‘বনের বাঘে খায় না মনের বাঘে খায়’ উদ্ধৃত করেন। শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন নয়, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিয়ে বিশ্ব নেতাদের আগ্রহ রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রশ্ন যদি থাকত, তাহলে তো তারা আমাদের দাওয়াত দিত না। তাদের সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। সংকট থাকলে এলডিসির নেতৃত্ব কিভাবে এলো? প্রশ্ন থাকলে তো তারা (বিদেশীরা) সেটাও করত না। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক সংকট বা সরকারের বৈধতা না থাকলে বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানাতেন না বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বারবারই প্রথম সারিতে উচ্চারিত হয়েছে। এসডিজি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের অগ্রণী ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবকিছুতেই একটু বেশি সেনসেটিভ হয়ে যাই। অর্জনগুলো যেন শ্যাডো হয়ে যায়, হারিয়ে যায় ওই একটা ঘটনায়। আমরা এত মানসিক দৈন্যতায় কেন ভুগি? আমাদের ১৬ কোটি মানুষ। একটা ছোট্ট ভূখন্ড। আমেরিকা একটা বড় দেশ। কত তাদের জনসংখ্যা? আমাদের দ্বিগুণ। দেশটা কত বিশাল। ৫২ স্টেটের একটা স্টেটের সমান হল বাংলাদেশ। আমাদের এখানে তাদের অর্ধেকের সমান জনসংখ্যা। এখানে আইনশৃংখলা থেকে শুরু করে, খাদ্য নিরাপত্তা সব কিছু আমরা করে যাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি নাজমুল, তাকে নিউইয়র্কের রাস্তায় গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। যুগ্ম সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছে। বহু বাঙালী সেখানে কাজ করেন, ট্যাক্সি চালান, প্রতিনিয়ত তারা সেখানে খুন হচ্ছেন। কোনো দিন মিডিয়া সেগুলোকে হাইলাইটস করে না। তিনি প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন- কেন? তারা আমেরিকায় মারা গেছেন, সেজন্য?
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। বিদেশে বাংলাদেশী নিহত হলে তার খবরকে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশীদের কাছে আপনাদের এ জিনিসগুলোও তুলে ধরা দরকার যে, আপনার নিজের দেশে বাঙালী মারা যাচ্ছে, তাদের গুলি করে মেরে ফেলে দিচ্ছে। সেই নিউজ আমার দেশে কেন গুরুত্ব পাবে না? বিদেশী নাগরিক মারা গেলে আমরা যত গুরুত্ব দেই, আমার দেশের মানুষ মারা গেলে আমরা তত গুরুত্ব দেই না কেন? এটা আমার প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলের মধ্যে ঢুকে মেরে ফেলা হচ্ছে গুলি করে। প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছেন, প্রতিনিয়ত তাকে এ ধরনের ঘটনা, হত্যা দেখতে হচ্ছে। সেখানে কি অবস্থা সেটাও আমাদের বিবেচনা করতে হবে। হিসাব করে দেখুন, সেখানে প্রতি মিনিটে কতজন খুন হচ্ছেন, কত মেয়ে ধর্ষিত হচ্ছে। ওদের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের এ এক-দুটি ঘটনায় হতাশ হওয়ার তো কিছু নেই। আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি বলেন, সৌদি আরবের খালাফ হত্যার বিচার করছি। তাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আর আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা আলাদা। তারা তো পেলেই গলা কেটে দেয়। আমরা সেটা করলে আপনারাই বলবেন মানবাধিকার গেল। খুনিদের মানবাধিকার নিয়েই সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তা। কোনো কিছু হলে হাহাকার পড়ে যায়। অথচ আমরা তো বসে নেই, ব্যবস্থা নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী ও দলের জনপ্রিয়তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমার রেটিং যাই হোক, আমি গাছ, আমার শিকড় হচ্ছে দল। আওয়ামী লীগ আমাকে সভাপতি করেছে বলেই আমি এত ওপরে উঠতে পেরেছি। বিশাল একটা সংগঠন। এখানে ছোটখাটো ঘটনা তো ঘটতেই পারে। তারপরও কোনো ঘটনা ঘটলে আমরা তার ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের গুলিতে শিশু আহত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরগঞ্জে জামায়াতের উৎপাত আছে। ওখানে আমার দলের নেতাকর্মীদের হাত-পা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে। ওখানে সংগঠন টিকিয়ে রাখাই কঠিন। সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। ওই ঘটনায় এমপির অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে, মামলা দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে শনিবার (৩ অক্টোবর) দেশে ফিরেই কথা বলে ব্যবস্থা নিতে বলেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষকদের ৯১ শতাংশ বেতন বাড়ানো হয়েছে। তারা কি এটা কল্পনা করতে পেরেছিলেন? তারা সচিবদের সঙ্গে সুযোগ-সুবিধার কথা তুলনা করেন। সচিবদের চাকরির বয়স ৫৯ বছর আর শিক্ষকদের ৬৫ বছর করেছি। তাহলে কি শিক্ষকদেরও চাকরির বয়সসীমা কমিয়ে দেব? সচিবরা আর কোনো চাকরি করতে পারেন না। শিক্ষকরা একাধিক চাকরি করেন। কোন শিক্ষক, কতজন শিক্ষক, কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন, সেটা আমরা জানি। সে তালিকা আমার কাছে আছে। তিনি বলেন, তারা তো আন্দোলন করছেন, তাহলে একটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যে বেতন বাড়ানো হয়েছে তা নেবেন না। এখানে আমার হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই। অর্থমন্ত্রী আছেন, শিক্ষামন্ত্রী আছেন বিষয়টি তারা দেখবেন। শুধু একটা কথা বলব, আন্দোলন করে ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার ক্ষতি করবেন না।
নিউইয়র্কে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিলে ড. ইউনূসের উপস্থিত থাকার বিষয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে যার আপন জায়গা খুঁজে পেয়েছে। জনগণই এর জবাব দেবে। তিনি তো করও দেন না। মামলা করে স্থগিত করে রাখেন, যাতে কর দিতে না হয়।
লন্ডন সফররত খালেদা জিয়ার এক বক্তব্য প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি লন্ডনে বসে তো পিন মারায় ব্যস্ত। আর কি করেন জানি না। তিনি আবার আওয়ামী লীগে প্রেমিক খুঁজে পেলেন কি করে? তাহলে ফালু’র কি হবে। শেখ হাসিনা আলো বলেন, আওয়ামী লীগে যদি তাদের প্রেমিক কেউ থাকে, তবে তাদের আপনারাই খুঁজে বের করুন।
নিরাপত্তার বিষয় তুলে ধরে সাংবাদিক সম্মেলনে পাকিস্তানে বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দল পাঠানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের মেয়েদের পাকিস্তানে পাঠানোর এ সিদ্ধান্ত কেন। জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন, খেলতে যাবে না কেন? বাংলাদেশের মহিলা ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়ে যেসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তার কোনো যৌক্তিকতা নেই বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন, যে পাকিস্তান একটা ফিউডাল এবং কনজারভেটিভ সোসাইটি। কাজেই আমাদের মেয়েরা সেখানে খেলতে গিয়েছে, এটা তো সাহসের পরিচয় দিয়েছে। এটা দেখে পাকিস্তানের মেয়েরাও উৎসাহিত হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলা নববর্ষে উৎসব ভাতা চালু অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনে একটি বড় মাইলফলক জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়। সরকারের পাশাপাশি প্রাইভেট সেক্টরে এ ভাতা চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা সংবাদপত্রের মালিকরা ঠিকমতো দেবেন তো বোনাসটা? টেলিভিশন, সংবাদপত্র, মানে ইলেকট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদপত্রের মালিকরা এ নববর্ষের বোনাসটা দিয়ে দিলে আমি খুশি হবো।
যুক্তরাষ্ট্র সফরের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার সমাধান এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলা ও সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহারের দিক দিয়ে সফলতা অর্জন করেছি। গ্রামীণ অর্থনীতি ও শহর অর্থনীতির সমতাও আমরা অনেকখানি নিশ্চিত করতে পেরেছি। জাতিসংঘের অধিবেশনে এসব ভূমিকার জন্য ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘ এবং বিশ্ব নেতারা জঙ্গিবাদ দমনে এ দেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ এবারের অধিবেশনে কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেক বিশ্ব নেতাই তাদের বক্তব্যে বারবার বাংলাদেশের অর্জনের কথা তুলে ধরেছেন।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এবারের অংশগ্রহণে সাফল্য, ‘চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ’ ও ‘আইসিটি অ্যাওয়ার্ড’ অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা এবং দল ও জোটের সংসদ সদস্যরাও সাংবাদিক সম্মেলনস্থল গণভবনের ব্যাংকুয়েট হলে এ সময় উপস্থিত ছিলেন। নির্ধারিত সময় বেলা সাড়ে ১১টায় সাংবাদিক সম্মেলন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রীর ২০ মিনিটের লিখিত বক্তৃতার পর প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলে দীর্ঘ প্রায় ১ ঘণ্টা। (দৈনিক যুগান্তর)