বিদায় ২০১৫ : স্বাগতম ২০১৬
- প্রকাশের সময় : ০১:০৩:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ জানুয়ারী ২০১৬
- / ২২৮৬ বার পঠিত
ঢাকা: অনাদিকাল থেকে সৌরজগতের নিখুঁত নিয়মে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। সে নিয়মেই মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল আরেকটি বছর ২০১৫। শুরু হল ২০১৬ খ্রিস্টাব্দ। শুভ নববর্ষ। অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হল আরেকটি মাইলফলক। মহাকালের যাত্রায় একটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে। মানুষ মুছে ফেলে গত হয়ে যাওয়া বছরের গ্লানি, উৎসাহ খুঁজে পায় সুখকর ঘটনা থেকে, তারপর এগিয়ে যায় অগ্রগতির পানে। নতুন বছর সবার জন্যই মঙ্গলময় হোক বছরের শুরুতে সেটাই সবার প্রত্যাশা।
কিন্তু কেমন কেটেছে গত বছর? প্রতিবারের মতো গত বছরেও আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ, আশা-নিরাশার দোলায় দুলেছে সবাই। সুখকর ঘটনায় পুলকিত হয়েছে হৃদয়। তেমনি অনাকাঙক্ষিত ঘটনায় ভারাক্রান্তও হয়েছি সবাই। গত বছরের শুরুতে দেশজুড়ে টানা তিন মাসের রাজনৈতিক সহিংসতা ছিল সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ। এ সময় মানুষকে অবরুদ্ধ জীবনযাপন করতে হয়েছে। সেই অবস্থার অবসান হলে দেশবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বছরজুড়ে গুম-খুন-অপহরণ আর শিশুদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনাগুলো মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ঢাকায় ইতালি, রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যাকান্ড এবং পুরনো ঢাকায় হোসনি দালানে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এ উদ্বেগ আরও বাড়ে। বিদেশী নাগরিক ও হোসনি দালানের বোমা হামলার ঘটনাকে আইএস বা জঙ্গিদের কর্মকান্ড প্রমাণের অপচেষ্টায় একটি আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী অতি উৎসাহ দেখিয়েছে। একেবারের বছরের শেষে এসে রাজশাহীর বাগমারায় কাদিয়ানিদের মসজিদে ঘটেছে বোমা বিস্ফোরণ। এতে হামলাকারী নিহত ও নামাজরত কয়েকজন মুসল্লি আহত হন। এ বছর অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছে জাতি। তাদের সবার পরিবারের প্রতি রইল সমবেদনা।
স্বাধীনতার পর বিদায়ী বছরটি সবচেয়ে অস্থিরতা ও শংকার মধ্যে কেটেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়েছে জনজীবন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে। এ পরিস্থিতির অবসানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ অবস্থায় বিএনপি জোটকে আস্থায় এনে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরিতে সরকারের ভূমিকাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সর্বশেষ পৌর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিএনপিসহ বিরোধী সব দলের প্রতিও আমাদের আহ্বান থাকবে সহিংস আন্দোলন পরিহার করে বিকল্প শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথে অগ্রসর হওয়ার।
তবে আশার কথা বিশ্বের তথাকথিত মোড়ল বিশ্বব্যাংককে ছাড়াই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণে অগ্রযাত্রা সূচিত হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য আর্থ’ এবং আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ সংস্থার (আইটিইউ) ‘আইসিটি টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ অর্জন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর বাইরেও বঙ্গবন্ধু কন্যার একাধিক অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে বিশ্ববাসীর কাছে সম্মানিত করেছে। এর মধ্যে নি¤œ আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্তরণ এবং ভারতের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর ও ছিটমহল বিনিময় উল্লেখযোগ্য। এর বাইরে তিন যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা চৌধুরী) ফাঁসি কার্যকরের ঘটনা দেশবাসীকে স্বস্তি এনে দিয়েছে।
বিদায়ী বছরে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ইরানের সঙ্গে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর চুক্তি, ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি, আইএস দমনের উদ্দেশ্যে সিরিয়ার হয়ে রাশিয়ার লড়াই, সমুদ্র তীরে শিশু আইলানের নিথর দেহ বিশ্ববিবেককে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছে। বছরের শেষদিকে প্যারিস হামলায় সাধারণ মানুষ আক্রান্ত ও নিহত হলে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এর আগে হিমালয় কন্যা নেপালের মানুষকে কাঁদিয়ে পর্যটননির্ভর এদেশটিকে বিরানভূমিতে পরিণত করে ভয়ংকর ভূমিকম্প।
২০১৬ সালে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি কী রূপ নেবে, তা এ মুহূর্তে বলা কঠিন। তবে সবার প্রত্যাশা, নতুন বছরটি দেশবাসী তথা বিশ্ববাসীর জন্য নিয়ে আসবে স্বস্তিদায়ক ও আনন্দের সব খবর। তেমন প্রতিশ্রুতি রয়েছে রাজনৈতিক নেতাদেরও। নতুন বছরের আগমন উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অনুরূপ বাণী দিয়েছেন। তারা ইংরেজি নববর্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন।
দেশবাসীও মনে করেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বই পারেন বড় কোনো সুখবর উপহার দিতে। নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই জাতি সেই সুখবরের অপেক্ষায় রইল। শুভ ইংরেজী নববর্ষ।