ঢাকা: বাংলা বর্ষবরণের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) এ রুল দেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, পুলিশের রমনা জোনের ডিসি ও শাহবাগ থানার ওসিকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে হবে। গত মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেইটে সংঘবদ্ধ একদল যুবক নারীদের যৌন হয়রানি করে। নারীদের ওপর হামলা ঠেকাতে গিয়ে হাত ভেঙে যায় ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি লিটন নন্দীর।
বর্ষবরণে ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন, ৬ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী বহিষ্কার: বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জগন্নাথ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করায় ছাত্রলীগের ৬ কর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বুধবার (১৫ এপ্রিল) ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কর্মী নাজমুলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। মঙ্গলবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করে নাজমুল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নাজমুলসহ ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী উত্তরণ বাসে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছিল। চানখারপুলে এলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নাজমুলসহ কয়েকজনকে মারধর করে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। নাজমুল রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ এনেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। মঙ্গলবার নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষে রাত সাড়ে সাতটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের চৌরঙ্গীর মোড়ে এক আদিবাসি ছাত্রী এ যৌন নিপীড়নের শিকার হন। অভিযুক্ত ৫ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীকে এরইমধ্যে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, ৪৩তম ব্যাচের কয়েকজন ছাত্রী নববর্ষের অনুষ্ঠান শেষে হলে ফিরছিলেন। হলে ফেরার পথে চৌরঙ্গীর মোড়ে শহীদ সালাম বরকত হলের ৫ ছাত্রলীগ কর্মী তাদের পথ আটকায়। এ সময় কোন কিছু না বলে ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই আদিবাসী ছাত্রীকে ধরে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। তারা ঐ ছাত্রীর শাড়ী ধরে টান দেয় এবং সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। তার কাছে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল কেড়ে নেয়। ওই সময় ছাত্রীদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন জড়ো হলো ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা পালিয়ে যায়। যৌন হয়রানির শিকার ঐ ছাত্রী ও তার সহপাঠী মিলে পাঁচ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে সনাক্ত করে প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রক্টর তপন কুমার সাহা অভিযোগ আমলে না নিলে তারা ভিসি বরাবর অরেকটি অভিযোগ করেন। বহিষ্কৃতরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য নিশাত ইমতিয়াজ বিজয় (জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), শহীদ সালাম বরকত হল শাখা ছাত্রলীগের প্রচার সম্পাদক নাফিজ ইমতিয়াজ (রসায়ন বিভাগ, ৪২তম ব্যাচ), ছাত্রলীগকর্মী আবদুর রহমান ইফতি (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ), রাকিব হাসান (ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ) ও নুরুল কবীর (নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ৪৩তম ব্যাচ)। এ বিষয়ে যৌন হয়রানির শিকার ওই ছাত্রী বলেন, বর্তমানে আমি এবং আমার সহপাঠীরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অবিলম্বে এই সন্ত্রাসী ছাত্রদের ছাত্রত্ব বাতিল ও শাস্তির দাবি জানাই। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহমেদ রাসেল সাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে।
ঢাবিতে নারীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ ছাত্রদলের: নবর্ষের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ছাত্রলীগ কর্মীর সহায়তায় নারীর শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন ছাত্রদল। গণমাধ্যমে পাঠানো সংগঠনটির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান স্বাক্ষরিত এক যৌথ বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান ছাত্রদলের সভাপতি রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান। ছাত্রলীগকে ‘ধর্ষকদের সংগঠন’ আখ্যায়িত করে বিবৃতিতে তারা বলেন, নারীর সম্ভ্রমহানি ছাত্রলীগের মজ্জাগত অভ্যাস। এর আগেও থার্টি ফার্স্ট নাইটে তারা টিএসসিতে বাঁধন নামের এক ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে সম্ভ্রমহানি করেছিল। মুজিব হলের ছাত্রলীগ নেতার নারীর সম্ভ্রমহানির গোপন ভিডিও ধারণ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিকের ক্যাম্পাসে ধর্ষণের সেঞ্চুরি উৎসব পালনÑ ছাত্রলীগের চারিত্রিক স্খলনের পরিচয় বহন করে। বুধবারই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা নাজমুলকে ছাত্রী উত্ত্যত করার দায়ে কেন্দ্র থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়াও বাংলা নববর্ষে দিন জাহাঙ্গীর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী তাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ৫ ছাত্রলীগ নেতার নামে প্রক্টর তপন কুমার শাহ’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। তারা আবরও বলেন, স্বাধীনতার পরপরই রক্ষীবাহিনী, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা-কর্মীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ধর্ষণের উৎসবে মেতেছিল। তারা বলেন, নিরাপত্তার চাদরে ঘেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের সামনেই এ ধরনের ঘটনা এদেশের নারী সমাজের ওপর বড় আঘাত। দুই নিপীড়নকারীকে ধরে পুলিশে দিলেও ছাত্রলীগ পরিচয়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। অবৈধ সরকারের পদলেহনকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে নীরব ভূমিকা পালন করে। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী, মাদক-ব্যবসায়ী ও ধর্যকদের শেল্টার দেয়ায় যেন এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান কাজ। ‘পুলিশের অস্ত্র পকেটে গুঁজিয়ে রাখার জন্য নয়’ অবৈধ সরকার প্রধানের এ ধরনের আস্ফালন শুধুই যেন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, অবৈধ সরকারের নির্দেশেই ছাত্রলীগ-যুবলীগের ক্যাডার, খুনি, মাদক ব্যবসায়ী ও ধর্ষকরা অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে পুলিশ প্রশাসনের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকে। অবিলম্বে এ ধরনের জঘন্য ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারের দাবি জানান ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।(দৈনিক মানবজমিন)