বাংলাদেশ : রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতি ১৭,০০০ কোটি টাকা

- প্রকাশের সময় : ১১:০২:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ এপ্রিল ২০১৫
- / ৪৫৪ বার পঠিত
ঢাকা: রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১৭,১৫০ কোটি টাকা বা ২.২ বিলিয়ন ডলার। ফলে এ অর্থবছর দেশের প্রবৃদ্ধি ৫.৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর্থিক ক্ষতির মধ্যে সেবা খাতের ক্ষতি ৬৮ শতাংশ, ২৫ শতাংশ শিল্প খাতে এবং কৃষি খাতের ৭ শতাংশ। গত রোববার (১২ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক কার্যালয়ে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ পূবার্ভাস দিয়েছে সংস্থাটি। প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, আর্থিক ক্ষতির এ পরিমাণ মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) এক শতাংশ। তিনি বলেন, যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকত তাহলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬.৪ থেকে ৬.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতো। যেহেতু এক শতাংশ ক্ষতি হয়ে গেছে, সেহেতু আমাদের হিসাবে ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে।
জাহিদ হোসেন বলেন, গত ৫ জানুয়ারী সারা দেশে অবরোধ শুরু হয়; পরে মাঝে মাঝে হরতাল। টানা তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলে অবরোধ-হরতাল। তবে শেষ দিকে এসে এর ধার কমে গিয়েছিল। সে কারণে আমরা ৬০ দিনের উৎপাদনের ক্ষতির হিসাব করে এ তথ্য দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে জাহিদ হোসেন বলেন, এ ৬০ দিনে উৎপাদনশীল খাতে দৈনিক যে ক্ষতি হয়েছে তার ভিত্তিতে হিসাব করা হয়েছে। ২০১৩ সালে যে অস্থিরতা-সংঘাত হয়েছিল তার হিসাবও একইভাবে করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৬.১২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। আর বিশ্বব্যাংক ৫.৮ শতাংশ পবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অন্তর্নিহিত শক্তি আছে। সেই শক্তি দিয়ে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে তারা অর্থনীতিতে অবদান রেখে চলেন। তাছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যে বছর রাজনৈতিক অস্থিরতা হয়েছে তার পরের বছরই ভাল প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৩ সালের প্রথম দিকের সহিংসতার পর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬.১২ শতাংশপ্র্রবৃদ্ধি সেটাই প্রমাণ করে। একই কারণে নতুন করে অস্থিরতা তৈরি না হলে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। তবে এর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি গতানুগতিক উন্নয়ন যেমন অবকাঠামো খাতে সংস্কার, অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ’র (পিপিপি) উন্নয়ন করতে হবে। গত ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জিডিপির আকার ছিল চলতি মূল্যে ১৩ লাখ ৫০,৯২০ কোটি টাকা। এ থেকে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করছে সরকার।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য সুখবর। শুধু তেল নয়; সার, খাদ্যপণের দামও কম। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সব কিছুই বাংলাদেশের অনুকূলে। বাজেটে সরকারের ভর্তুকি খাতে খরচ অনেক কম হবে।
জাহিদ হোসেন বলেন, তেলের দাম কমায় অতীতের পুঞ্জীভূত ক্ষতি থেকে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশের জ্বালানি তেল বিপণন ও সরবরাহকারী সংস্থা বিপিসি। গত বছরের অক্টোবর থেকে লাভ করছে সংস্থটি। কেবল পেট্রল-অকটেনে নয়, ডিজেল-কেরোসিনেও লাভ করছে বিপিসি। বাংলাদেশের অর্থনীতির চালচিত্র বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, গড় মূল্যস্ফীতি ৭.৫ শতাংশ থেকে ৬.৭ শতাংশে নেমে এসেছে। খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত দুই ধরনের মূল্যস্ফীতিই সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারী) বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ১০৯ কোটি ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) রয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ১৮০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। এ ছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬৪০ কোটি ডলারে উঠেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেস জাট, প্র্যাকটিস ম্যানেজার শুভব চৌধুরী ও যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরীন এ মাহবুব।(দৈনিক মানবজমিন)