নিউইয়র্ক ০৭:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ব আর উপেক্ষা করতে পারে না : এইচআরডব্লিউ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৬৬৫ বার পঠিত

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের কাছে ভারতের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশটির উচিত বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধে তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা। বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সহিংসতা ও অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা অবসানের কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত সকলের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং বিচার বহির্ভূতভাবে শক্তি প্রয়োগ, গুম এবং গ্রেফতার বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে সমর্থকরা যাতে বেআইনিভাবে সহিংসতার আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিতে সকল রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট বিবৃতি প্রদান করা উচিত। অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা অবসানে সব পক্ষকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেছেন, সহিংস অপরাধের ধারাবাহিকতা বন্ধে ও সব ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিতে সবপক্ষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তিনি বলেন, বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্যের সহিংস অপরাধ কর্মকান্ড সরকার পক্ষের হত্যাকান্ড, জখম ও অনৈতিক গ্রেফতারের ঘটনাসমূহকে ন্যায্যতা প্রদান করে না। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ব আর উপেক্ষা করতে পারে না।
গত মাসে দেশজুড়ে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন, শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সমর্থকরা যাতে বেআইনিভাবে সহিংসতার আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিতে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত স্পষ্ট বিবৃতি দেয়া।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ কয়েকটি রাষ্ট্র সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ‘বিতর্কিত নির্বাচনের’ বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে বিরোধীদের সহিংসতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এবারো নির্বিচারে গ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম করে দেয়ার কৌশল হাতে নিয়েছে বলে দাবি করে তারা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা যায় বলে দাবি করে সংগঠনটি।
যানবাহনে পেট্রোলবোমা হামলাকে এবারের সহিংসতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পেট্রোলবোমা হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে হাসপাতালগুলো বদলে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারী পেট্রোলবোমা হামলায় আহত একজন পুলিশ কর্মকর্তা গত ৫ ফেব্রুয়ারী নিহত হয়েছেন বলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ১৭ জন মারা গেছে এবং তাদের বেশিরভাগই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মী। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এরা মারা গেছে বলে দাবী করছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। অনেকক্ষেত্রে পুলিশ দাবী করছে, তারা গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে। তবে নিহতদের স্বজনদের দাবী, হত্যার আগে তাদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছিল। সরকার অত্যাধিক বলপ্রয়োগ বন্ধ বা এ ধরনের হত্যাকান্ড তদন্তের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রয়োজনে যে কারও ওপর যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে প্রকৃত অর্থে পুলিশকে আরো বাড়াবাড়ি করতে উস্কানি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অপরাধ দমনের নাম করে বাড়াবাড়ি করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং যার ফলশ্রুতিতে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে এবং রাজপথে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, যদিও পরবর্তীতে খালেদার অফিসের গেট থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং রাস্তা থেকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার তার বাসার বিদ্যুৎ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বেশকিছু সময়ের জন্য। এছাড়া পেট্রোলবোমা হামলায় নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বেগম জিয়াকে আসামী করে তাকে আটকেরও পাঁয়তারা বর্তমান সরকার করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ব আর উপেক্ষা করতে পারে না : এইচআরডব্লিউ

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

ঢাকা: বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের কাছে ভারতের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশী দেশটির উচিত বাংলাদেশে নির্যাতন বন্ধে তাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করা। বাংলাদেশে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত সহিংসতা ও অন্যান্য নির্যাতনের ঘটনা অবসানের কোনো লক্ষণ নেই। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকারের উচিত সকলের অধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা এবং বিচার বহির্ভূতভাবে শক্তি প্রয়োগ, গুম এবং গ্রেফতার বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে সমর্থকরা যাতে বেআইনিভাবে সহিংসতার আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিতে সকল রাজনৈতিক দলের স্পষ্ট বিবৃতি প্রদান করা উচিত। অপরাধমূলক কর্মকান্ডের ধারাবাহিকতা অবসানে সব পক্ষকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। গত ৬ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউ’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেছেন, সহিংস অপরাধের ধারাবাহিকতা বন্ধে ও সব ধরনের অপরাধ কর্মকান্ডের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে তাদের গ্রেফতার ও বিচার নিশ্চিতে সবপক্ষের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত। তিনি বলেন, বিরোধী দলের কয়েকজন সদস্যের সহিংস অপরাধ কর্মকান্ড সরকার পক্ষের হত্যাকান্ড, জখম ও অনৈতিক গ্রেফতারের ঘটনাসমূহকে ন্যায্যতা প্রদান করে না। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ব আর উপেক্ষা করতে পারে না।
গত মাসে দেশজুড়ে প্রায় ৬০ জন নিহত হয়েছেন, শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সমর্থকরা যাতে বেআইনিভাবে সহিংসতার আশ্রয় না নেয়, তা নিশ্চিতে সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের উচিত স্পষ্ট বিবৃতি দেয়া।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ কয়েকটি রাষ্ট্র সহিংসতা অবসানের আহ্বান জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ‘বিতর্কিত নির্বাচনের’ বর্ষপূর্তিতে বাংলাদেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে বিরোধীদের সহিংসতা প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এবারো নির্বিচারে গ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড, গুম করে দেয়ার কৌশল হাতে নিয়েছে বলে দাবি করে তারা। ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ মারা যায় বলে দাবি করে সংগঠনটি।
যানবাহনে পেট্রোলবোমা হামলাকে এবারের সহিংসতার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পেট্রোলবোমা হামলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনে হাসপাতালগুলো বদলে যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। গত ১৭ জানুয়ারী পেট্রোলবোমা হামলায় আহত একজন পুলিশ কর্মকর্তা গত ৫ ফেব্রুয়ারী নিহত হয়েছেন বলেও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে ১৭ জন মারা গেছে এবং তাদের বেশিরভাগই বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মী। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এরা মারা গেছে বলে দাবী করছে নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। অনেকক্ষেত্রে পুলিশ দাবী করছে, তারা গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে। তবে নিহতদের স্বজনদের দাবী, হত্যার আগে তাদের গ্রেফতার বা আটক করা হয়েছিল। সরকার অত্যাধিক বলপ্রয়োগ বন্ধ বা এ ধরনের হত্যাকান্ড তদন্তের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। বরং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো প্রয়োজনে যে কারও ওপর যে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, এর ফলে প্রকৃত অর্থে পুলিশকে আরো বাড়াবাড়ি করতে উস্কানি দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, অপরাধ দমনের নাম করে বাড়াবাড়ি করার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং যার ফলশ্রুতিতে আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে এবং রাজপথে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়, যদিও পরবর্তীতে খালেদার অফিসের গেট থেকে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে এবং রাস্তা থেকে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও সরকার তার বাসার বিদ্যুৎ, টেলিফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বেশকিছু সময়ের জন্য। এছাড়া পেট্রোলবোমা হামলায় নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় বেগম জিয়াকে আসামী করে তাকে আটকেরও পাঁয়তারা বর্তমান সরকার করছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।