নিউইয়র্ক ০৫:১৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত : প্রধানমন্ত্রী মোদিকে খালেদা জিয়া ॥ প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে ১৫ মিনিট একান্তে বৈঠক

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
  • / ৭১২ বার পঠিত

ঢাকা: বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত- এমন কথাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এ দেশের জনগণ মনে করে, গণতন্ত্রই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।’ রোববার (৭ জুন) হোটেল সোনারগাঁওয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিদেশী সাংবাদিকরা খালেদা জিয়াকে কিছু বলার জন্য ঘিরে ধরলে তিনি বলেন, ‘সুন্দর আলোচনা হয়েছে।’ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটাকে যদি বাস্তবায়িত করতে হয়, গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে উন্নয়ন করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করেছি, গণতন্ত্র ব্যতিরেকে টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না।’
এর আগে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা নিয়ে সোনারগাঁও হোটেলে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা স্যুটে ৪টা ১০ থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ উপস্থিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি ও তার মায়ের জন্য উপহার সামগ্রী দিয়েছেন খালেদা জিয়া। মোদির মা হীরাবাইয়ের জন্য তাঁতের বোনা জামদানি শাড়ি ও চাদর এবং মোদির জন্য পাঞ্জাবি ও কটির কাপড় উপহার দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের শুরুতে কুশল বিনিময় শেষে দলের চেয়ারপারসন নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। মোদির রাজনৈতিক দর্শনের প্রশংসা করেন তিনি। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করায় খালেদা জিয়া মোদিকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টনসহ দু’দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সম্মানজনক সমাধান চাওয়া হয় বিএনপির তরফ থেকে।
ওই নেতা আরও বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়া দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতন্ত্রহীনতার নানা প্রসঙ্গ বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। মোদিকে তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এ দেশের জনগণ মনে করে, গণতন্ত্রই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। জবাবে গণতন্ত্রের পক্ষে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদি জানান, এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় ভারতের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় যান। বৈঠকে উপস্থিত নেতারাও তার সঙ্গে ছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে বৈঠকের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক নেতা জানান, চেয়ারপারসন ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে কি আলাপ হয়েছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলাপ করে ধারণা পাওয়া গেছে, তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনের বিষয়টি মোদিকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপির আন্দোলনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেছেন তিনি। জোটের বিষয়টি বিশেষ করে জামায়াত প্রসঙ্গটিও আলোচনায় এসেছে বলে তার কথায় মনে হয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী, মৌলবাদ বা কোনো জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার বিএনপি কখনও মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না বলে দলের অবস্থানও মোদিকে অবহিত করা হয়েছে বলে মনে হয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার, গুম ও খুনের তথ্য-উপাত্ত মোদির হাতে তুলে দেন খালেদা জিয়া।
মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশনেত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে দেশের যুব সমাজ নিয়ে। শিশুদের নিয়ে। সর্বোপরি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা গণতন্ত্র অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।’
মঈন খান বলেন, ‘বৈঠকের শুরুতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। অত্যন্ত চমৎকার ও খোলামেলা পরিবেশে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। দেশে কোন সরকার আছে, তা মূল কথা নয়। সরকার আসবে, যাবে। কিন্তু জনগণ চিরদিনই থাকবে। সেজন্য দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।’
বর্তমানে দেশের অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যতই উন্নয়নের কথা বলে যুক্তি দেখাই উন্নয়ন আগে হবে, গণতন্ত্র পরে হবে। সেটা আসলে বাস্তবতার দিক থেকে কখনও সম্ভব হতে পারে না। কোনো না কোনো উন্নয়নই মানুষের কল্যাণে আসবে না, যদি না সেদেশে গণতন্ত্র থাকে, যদি না মানুষের কথা বলার অধিকার থাকে। যদি না সেদেশের বিচার ব্যবস্থা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে, যদি না সেদেশের প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ বিভাগ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে। সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের জন্য সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
নরেন্দ্র মোদির কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়টি কেন তুলে ধরা হয়েছে- জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, ‘জনাব মোদি গণতন্ত্র বিশ্বাসী একজন নেতা। তার জীবন-আদর্শ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ভারতের তৃণমূল থেকে আজ তিনি সর্বোচ্চ পদ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার জন্য। যারা গণতন্ত্রকে মূল্য দেয় তাদের সঙ্গেই গণতন্ত্রের কথা বলা যায়। আমরা তাই বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করেছে, তাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন। যদিও আমরা বারবার প্রস্তাব দিয়েছি কয়েক বছর ধরে- আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন করি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আপনাদের বক্তব্যের জবাবে কি বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে কি বলা হয়েছে, এটা তারা বলবে। আমার বলাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
হোটেল সোনারগাঁওয়ে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রগতি ইন্স্যুরেন্স অফিসে যান। এ সময় আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে যাওয়ার পথে ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার বৈঠকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই নির্ধারিত সময়ের আগে সোনারগাঁওয়ের আশপাশে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত : প্রধানমন্ত্রী মোদিকে খালেদা জিয়া ॥ প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে ১৫ মিনিট একান্তে বৈঠক

প্রকাশের সময় : ০৮:২৯:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫

ঢাকা: বাংলাদেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত- এমন কথাই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে জানালেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘এ দেশের জনগণ মনে করে, গণতন্ত্রই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।’ রোববার (৭ জুন) হোটেল সোনারগাঁওয়ে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক শেষে বেরিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য খালেদা জিয়ার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানান।
প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি ১৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে বিদেশী সাংবাদিকরা খালেদা জিয়াকে কিছু বলার জন্য ঘিরে ধরলে তিনি বলেন, ‘সুন্দর আলোচনা হয়েছে।’ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি আঞ্চলিক উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটাকে যদি বাস্তবায়িত করতে হয়, গণতন্ত্রের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে উন্নয়ন করতে হবে। আমরা স্পষ্ট করেছি, গণতন্ত্র ব্যতিরেকে টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না।’
এর আগে বিকাল পৌনে ৪টার দিকে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতা নিয়ে সোনারগাঁও হোটেলে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়া। হোটেল সোনারগাঁওয়ের সুরমা স্যুটে ৪টা ১০ থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা তাদের মধ্যে এ বৈঠক হয়। বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর ও ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ উপস্থিত ছিলেন।
নরেন্দ্র মোদি ও তার মায়ের জন্য উপহার সামগ্রী দিয়েছেন খালেদা জিয়া। মোদির মা হীরাবাইয়ের জন্য তাঁতের বোনা জামদানি শাড়ি ও চাদর এবং মোদির জন্য পাঞ্জাবি ও কটির কাপড় উপহার দেন তিনি।
বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা জানান, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের শুরুতে কুশল বিনিময় শেষে দলের চেয়ারপারসন নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান। মোদির রাজনৈতিক দর্শনের প্রশংসা করেন তিনি। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করায় খালেদা জিয়া মোদিকে ধন্যবাদ জানান। বৈঠকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টনসহ দু’দেশের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুগুলোর সম্মানজনক সমাধান চাওয়া হয় বিএনপির তরফ থেকে।
ওই নেতা আরও বলেন, বৈঠকে খালেদা জিয়া দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণতন্ত্রহীনতার নানা প্রসঙ্গ বিশদভাবে তুলে ধরেছেন। মোদিকে তিনি বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। এ দেশের জনগণ মনে করে, গণতন্ত্রই চলমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। জবাবে গণতন্ত্রের পক্ষে তার অবস্থানের কথা জানিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে মোদি জানান, এদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয় ভারতের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।
বৈঠক শেষে খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় যান। বৈঠকে উপস্থিত নেতারাও তার সঙ্গে ছিলেন। এ সময় খালেদা জিয়া তাদের সঙ্গে বৈঠকের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বলে জানা গেছে।
বৈঠকে উপস্থিত বিএনপির এক নেতা জানান, চেয়ারপারসন ও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান বৈঠকে কি আলাপ হয়েছে সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানা যায়নি। তবে চেয়ারপারসনের সঙ্গে আলাপ করে ধারণা পাওয়া গেছে, তিনি দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ৫ জানুয়ারীর একতরফা নির্বাচনের বিষয়টি মোদিকে বিস্তারিত অবহিত করেছেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপির আন্দোলনের যৌক্তিকতাও তুলে ধরেছেন তিনি। জোটের বিষয়টি বিশেষ করে জামায়াত প্রসঙ্গটিও আলোচনায় এসেছে বলে তার কথায় মনে হয়েছে। এছাড়া এই অঞ্চলে সন্ত্রাসী, মৌলবাদ বা কোনো জঙ্গি সংগঠনের বিস্তার বিএনপি কখনও মেনে নেয়নি, ভবিষ্যতেও মেনে নেবে না বলে দলের অবস্থানও মোদিকে অবহিত করা হয়েছে বলে মনে হয়। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার, গুম ও খুনের তথ্য-উপাত্ত মোদির হাতে তুলে দেন খালেদা জিয়া।
মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশনেত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সুন্দর আলোচনা হয়েছে। কথা হয়েছে দেশের যুব সমাজ নিয়ে। শিশুদের নিয়ে। সর্বোপরি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তথা গণতন্ত্র অনুপস্থিতির বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে।’
মঈন খান বলেন, ‘বৈঠকের শুরুতে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এরপর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদিও তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। অত্যন্ত চমৎকার ও খোলামেলা পরিবেশে দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, দুটি দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে হলে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। দেশে কোন সরকার আছে, তা মূল কথা নয়। সরকার আসবে, যাবে। কিন্তু জনগণ চিরদিনই থাকবে। সেজন্য দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বপূর্ণ ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে।’
বর্তমানে দেশের অবস্থার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা যতই উন্নয়নের কথা বলে যুক্তি দেখাই উন্নয়ন আগে হবে, গণতন্ত্র পরে হবে। সেটা আসলে বাস্তবতার দিক থেকে কখনও সম্ভব হতে পারে না। কোনো না কোনো উন্নয়নই মানুষের কল্যাণে আসবে না, যদি না সেদেশে গণতন্ত্র থাকে, যদি না মানুষের কথা বলার অধিকার থাকে। যদি না সেদেশের বিচার ব্যবস্থা সবকিছুর ঊর্ধ্বে থাকে, যদি না সেদেশের প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে। পুলিশ বিভাগ সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারে। সত্যিকার অর্থে উন্নয়নের জন্য সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে।’
নরেন্দ্র মোদির কাছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়টি কেন তুলে ধরা হয়েছে- জানতে চাইলে মঈন খান বলেন, ‘জনাব মোদি গণতন্ত্র বিশ্বাসী একজন নেতা। তার জীবন-আদর্শ বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, ভারতের তৃণমূল থেকে আজ তিনি সর্বোচ্চ পদ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে ভারতের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার জন্য। যারা গণতন্ত্রকে মূল্য দেয় তাদের সঙ্গেই গণতন্ত্রের কথা বলা যায়। আমরা তাই বলেছি।’
তিনি বলেন, ‘যারা গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করেছে, তাদের সঙ্গে গণতন্ত্রের আলোচনা করা অত্যন্ত কঠিন। যদিও আমরা বারবার প্রস্তাব দিয়েছি কয়েক বছর ধরে- আসুন আমরা আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন করি।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আপনাদের বক্তব্যের জবাবে কি বলেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতের পক্ষ থেকে কি বলা হয়েছে, এটা তারা বলবে। আমার বলাটা যুক্তিসঙ্গত হবে না।’
হোটেল সোনারগাঁওয়ে যাওয়ার আগে খালেদা জিয়া কারওয়ান বাজারে অবস্থিত আবদুল আউয়াল মিন্টুর প্রগতি ইন্স্যুরেন্স অফিসে যান। এ সময় আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতে যাওয়ার পথে ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে সরকার বৈঠকে বাধা সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কা থেকেই নির্ধারিত সময়ের আগে সোনারগাঁওয়ের আশপাশে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। (দৈনিক যুগান্তর)