বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরজন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ১৭ মার্চ
- প্রকাশের সময় : ০৩:২৭:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ মার্চ ২০১৫
- / ৩৭০৫ বার পঠিত
ঢাকা: ১৭ মার্চ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। ১৭ মার্চ বাঙালী জাতির জীবনের এক আনন্দের দিন। এইদিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সাহেরা খাতুনের কোলজুড়ে বাঙালীর বহু শতাব্দীর পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনে শান্তি ও মুক্তির বারতা নিয়ে সর্বকালের সর্বেেশ্রষ্ঠ বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমান টুঙ্গীপাড়ার শেখ বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রতি মোহাম্মদ আব্দুল হামিদ ও বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর বাল্যকাল টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই কাটে। টুঙ্গীপাড়া প্রথমে কোটালীপাড়া ও পরে গোপালগঞ্জ থানার অন্তর্গত ছিল। মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওর-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গীপাড়া গ্রামটি অবস্থিত। স্বাধীনতা লাভের পর টুঙ্গীপাড়াকে পৃথক থানা ঘোষণা করা হয়। টুঙ্গীপাড়া গ্রামেই শেখ মুজিবুর রহমান ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা শস্য-শ্যামলা রূপসী বাংলাকে দেখেছেন। তিনি আবহমান বাংলার আলো-বাতাসে লালিত ও বর্ধিত হয়েছেন। তিনি শাশ্বত গ্রামীণ সমাজের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছেলেবেলা থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামের মাটি আর মানুষ তাঁকে প্রবলভাবে আকর্ষণ করত। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজাপীড়ন দেখেছেন। গ্রামের হিন্দু, মুসলমানদের সম্মিলিত সামাজিক আবহে তিনি দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িকতার। আর পড়শি দরিদ্র মানুষের দুঃখ-কষ্ট তাঁকে সারাজীবন সাধারণ দুঃখী মানুষের প্রতি অগাধ ভালোবাসায় সিক্ত করে তোলে। বস্তুতপক্ষে সমাজ ও পরিবেশ তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখিয়েছে। তাই পরবর্তী জীবনে তিনি কোনো শক্তির কাছে, সে যত বড়ই হোক, আত্মসমর্পণ করেননি; মাথানত করেননি।
চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সাহেরা খাতুনের তৃতীয় সন্তান। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য বেরি বেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় তাঁর চোখের অপারেশন হয়। এই সময়ে কয়েক বছর তাঁর পড়াশোনা বন্ধ থাকে। ১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চশিক্ষার্থে কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং সুখ্যাত বেকার হোস্টেলে আবাসন গ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই সময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং এদেশের দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের একমাত্র চাওয়া-পাওয়া। যার জন্য জীবনে তিনি জেল-জুলুম-হুলিয়া কোনোকিছুই পরোয়া করেননি। শত যন্ত্রণা, দুঃখ-কষ্ট-বেদনাকে তিনি সহ্য করেছেন। ফাঁসির মঞ্চও যাঁর কাছে ছিল তুচ্ছ-তিনি হচ্ছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এককথায় বলতে গেলে বাংলা, বাঙালী, শেখ মুজিব একবৃন্তে তিনটি চেতনার ফুল। বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মাঝে বঙ্গবন্ধু চিরদিন অমøান থাকবেন। তদ্রুপ বাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নির্যাতিত-মেহনতি জনতার হৃদয়ে চিরভাস্বর থাকবেন ।
প্রতিবারের ন্যায় সমগ্র জাতির সাথে এবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ ও পালন করছে। দিবসটি উপলক্ষে সরকারি ও দলীয়ভাবে নানা কর্মসূচি পালিত হবে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
রাষ্ট্রপতির বাণী: ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য দেশের নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন শৈশব থেকেই নতুন প্রজন্মের মধ্যে সৎ গুণাবলির উন্মেষ ঘটাতে হবে। জ্ঞান-গরিমা, শিক্ষা-দীক্ষা, সততা ও নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে তাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তারা নিজেদের গড়ার পাশাপাশি দেশ ও মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ ‘শিশু অধিকার সনদ’ স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর অন্যতম। সরকার শিশু অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নে অত্যন্ত আন্তরিক। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। তিনি বলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। শৈশব থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত হৃদয়বান, মানবদরদি কিন্তু অধিকার আদায়ে আপোশহীন। স্কুল জীবন থেকেই তাঁর মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়। চল্লিশের দশকে এই তরুণ ছাত্রনেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের সংস্পর্শে এসে সক্রিয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। এ মহান নেতার চিন্তা-চেতনায় সবসময় কাজ করত বাংলা, বাঙালী ও বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালী জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৫৮ এর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ’৬৬ এর ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ’৭০ এর নির্বাচনসহ বাঙালীর মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, এজন্য তাঁকে জীবনে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। অমানবিক নির্যাতনও সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি কখনো অধিকারের প্রশ্নে আপোশ করেননি। বাঙালী জাতির এই অবিসংবাদিত নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে এদেশের আপামরজনগণ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বহু কাক্ষিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জন করে। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য আজ এদেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন সত্তায় পরিণত হয়েছে। তিনি ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস ২০১৫ উপলক্ষে এ মহান নেতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সকল শিশু-কিশোরকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্রপতি ‘জাতির পিতা’র ৯৫তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৫তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেয়া বাণীতে বলেছেন আসুন, শিশুদের কল্যাণে আমরা আমাদের বর্তমানকে উৎসর্গ করি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। দলমতনির্বিশেষে সকলে মিলে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা’র জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার শপথ নিতে হবে। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন ও দেশপ্রেম জাগ্রত করা এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে তাদেরকে প্রিয় মাতৃভূমি ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে। তিনি বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তাই তাঁর জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা’র হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতি আজ কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হয়েছে। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত অবশিষ্ট পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। মানবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বিচারের রায় বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং গণতন্ত্রবিরোধী শক্তির সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে ‘জাতির পিতা’র অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ৯৫তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান। একই সাথে তিনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে ‘জাতির পিতা’র বিদেহী আত্মার মাগফিরাত এবং আগামীদিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।
কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপন শুরু আ.লীগের: কেক কেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৬তম জন্মদিন উদযাপন শুরু করেছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ কেক কাটা হয়। কেক কাটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামররুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, দফতর সম্পাদক শহীদুল ইসলাম মিলন, প্রচার সম্পাদক আবদুল হক সবুজ প্রমুখ। (দৈনিক ইনকিলাব)