নিউইয়র্ক ০৮:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল অস্থায়ী শহীদ বেদি : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত-স্মরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:১৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৫
  • / ৮৪০ বার পঠিত

ঢাকা: ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তথা খালেদা-তারেক এদেশে খুনের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, সন্ত্রাস ও খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। ১৫ আগস্ট ‘জাতির জনক’কে সপরিবারে হত্যা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জিয়া পরিবার জড়িত ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই ভয়াবহ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ চলছে। আশা করি প্রকৃত অপরাধীরা উপযুক্ত সাজা পাবে। এটা অবশ্যই হতে হবে। না হলে দেশে সন্ত্রাস বাড়তে থাকবে।
শুক্রবার (২১ আগষ্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে এ সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সভায় বক্তব্য দেয়ার আগে সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে কেন্দ্রীয় ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কাছে পেয়ে নিহতদের স্বজন ও আহতরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় শেখ হাসিনাকেও চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। তিনি প্রত্যেকের কাছে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাদের খোঁজখবর নেন। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩১ মিনিটের বক্তৃতায় পুরোটাই ছিলেন আবেগপ্রবণ। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হতাহতদের স্মরণ করে স্মৃতি চারণ বক্তৃতায় কয়েকবার চোখ মুছতেও দেখা যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে।
PM Hasina_21 Aug'2015ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায়। আলামত রক্ষা করা তো দূরের কথা, আলামত নষ্ট করে। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এনে আলামত দ্রুত নষ্ট করে। দুটো গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি, সেগুলো সংরক্ষণ না করে নষ্ট করে দেয় তারা। সেই সময় সরকারে থাকা এ দলটির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি। কি ন্যক্কারজনক! যারা মেরেছিল, তাদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হল! খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র করার শ্লোগান দিয়েছে, খালেদা জিয়া তাদের সমর্থন দিয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের প্রচেষ্টা। শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আমরা সন্ত্রাসবিরোধী র‌্যালি করতে গিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। যে গ্রেনেড যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সেই গ্রেনেড আমাদের সভায় ছুড়ে মেরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়। পরে তারা জজ মিয়ার নাটক সাজিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতি বিএনপি করছে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মানুষকে পুড়িয়ে মেরে স্বস্তি পায়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী সন্ত্রাস-অরাজগতা। প্রায় তিন মাস ৬৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে বসে খালেদা জিয়া পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারার হুকুম দিয়েছে। হত্যা ও খুনের রাজনীতি যে তারা করে, সেটি আরও একবার প্রমাণ করেছে। কিন্তু এত মানুষ পুড়িয়ে মারল, এজন্য খালেদা জিয়া কোনো দিন কোনো লজ্জাবোধ করেনি। বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ পুড়িয়ে মেরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করে নাকি তিনি ঘরেই ফিরবেন না। সুতরাং বিএনপি গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, মানবাধিকার বিশ্বাস করে না এবং তারা মানুষের কল্যাণকে বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে নারী ও শিশু হত্যা শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে। শুধু ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্টই নয়, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যেসব বোমা হামলা, হত্যা এবং ২০১৫ সালে পেট্রলবোমা হামলা ও পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দিতেই হবে। হত্যাকারী যেই হোক, যে দলেরই হোক না কেন তাদের উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না, দেয়া যায় না সে যেই হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে এবং দেশের মানুষের শান্তি চায়। কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায় তখনই বিএনপি গণতন্ত্রের নামে হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়। বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে তখন আমার খারাপ লাগে। কারণ যারা গণন্ত্রের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না।
বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে স্মরণসভাস্থলে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারপর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পরে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শদীহদের স্মৃতির প্রতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ অশরাফুল ইসলাম, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাহারা খাতুন, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, এইচটি ইমাম, সতীশ চন্দ্র রায়, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুল রাজ্জাক, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, কর্নেল ফারুক খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এনামুল হক শামীম, মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল অস্থায়ী শহীদ বেদি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন ও বক্তৃতা শেষে যখন অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তখন মানুষের ঢল নামে। ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ, যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, শহীদ মোস্তাক আহমেদ সেন্টু পরিষদ, একুশে আগস্ট বাংলাদেশ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পেশাজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মৎসজীবী লীগ, তরুণ লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান। তবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিশৃংখলাও ছিল চোখে পড়ার মতো। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল অস্থায়ী শহীদ বেদি : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় খালেদা-তারেক জড়িত-স্মরণ সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রকাশের সময় : ১০:১৫:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৫

ঢাকা: ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডে জিয়াউর রহমান এবং ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার সঙ্গে খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জড়িত বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি তথা খালেদা-তারেক এদেশে খুনের রাজত্ব কায়েম করতে চায়, সন্ত্রাস ও খুনের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরতে চায়। ১৫ আগস্ট ‘জাতির জনক’কে সপরিবারে হত্যা এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জিয়া পরিবার জড়িত ছিল তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এই ভয়াবহ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার কাজ চলছে। আশা করি প্রকৃত অপরাধীরা উপযুক্ত সাজা পাবে। এটা অবশ্যই হতে হবে। না হলে দেশে সন্ত্রাস বাড়তে থাকবে।
শুক্রবার (২১ আগষ্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এক স্মরণসভায় তিনি এ অভিযোগ করেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় শহীদদের স্মরণে এ সভার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। সভায় বক্তব্য দেয়ার আগে সেখানে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। পরে কেন্দ্রীয় ১৪ দল এবং আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরে শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে কাছে পেয়ে নিহতদের স্বজন ও আহতরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় শেখ হাসিনাকেও চোখের পানি মুছতে দেখা যায়। তিনি প্রত্যেকের কাছে গিয়ে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে তাদের খোঁজখবর নেন। শেখ হাসিনা দীর্ঘ ৩১ মিনিটের বক্তৃতায় পুরোটাই ছিলেন আবেগপ্রবণ। ১৯৭৫’র ১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট হতাহতদের স্মরণ করে স্মৃতি চারণ বক্তৃতায় কয়েকবার চোখ মুছতেও দেখা যায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে।
PM Hasina_21 Aug'2015ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তখন বিএনপি ক্ষমতায়। আলামত রক্ষা করা তো দূরের কথা, আলামত নষ্ট করে। সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি এনে আলামত দ্রুত নষ্ট করে। দুটো গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়নি, সেগুলো সংরক্ষণ না করে নষ্ট করে দেয় তারা। সেই সময় সরকারে থাকা এ দলটির নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে নিজেই মেরেছি। কি ন্যক্কারজনক! যারা মেরেছিল, তাদের বিদেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া হল! খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র করার শ্লোগান দিয়েছে, খালেদা জিয়া তাদের সমর্থন দিয়েছে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করাই ছিল তাদের প্রচেষ্টা। শেখ হাসিনা বলেন, সেদিন আমরা সন্ত্রাসবিরোধী র‌্যালি করতে গিয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হই। যে গ্রেনেড যুদ্ধে ব্যবহার হয়, সেই গ্রেনেড আমাদের সভায় ছুড়ে মেরে নিরীহ মানুষদের হত্যা করা হয়। পরে তারা জজ মিয়ার নাটক সাজিয়ে ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, এদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতি বিএনপি করছে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া মানুষকে পুড়িয়ে মেরে স্বস্তি পায়। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় দেশব্যাপী সন্ত্রাস-অরাজগতা। প্রায় তিন মাস ৬৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে গুলশান কার্যালয়ে বসে খালেদা জিয়া পেট্রলবোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে মারার হুকুম দিয়েছে। হত্যা ও খুনের রাজনীতি যে তারা করে, সেটি আরও একবার প্রমাণ করেছে। কিন্তু এত মানুষ পুড়িয়ে মারল, এজন্য খালেদা জিয়া কোনো দিন কোনো লজ্জাবোধ করেনি। বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল মানুষ পুড়িয়ে মেরে আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা এবং আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত না করে নাকি তিনি ঘরেই ফিরবেন না। সুতরাং বিএনপি গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না, মানবাধিকার বিশ্বাস করে না এবং তারা মানুষের কল্যাণকে বিশ্বাস করে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদেশে নারী ও শিশু হত্যা শুরু হয়েছে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের মধ্যে দিয়ে। শুধু ১৫ আগস্ট, ২১ আগস্টই নয়, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত যেসব বোমা হামলা, হত্যা এবং ২০১৫ সালে পেট্রলবোমা হামলা ও পরিকল্পনাকারীদের শাস্তি দিতেই হবে। হত্যাকারী যেই হোক, যে দলেরই হোক না কেন তাদের উপযুক্ত শাস্তি পেতেই হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না, দেয়া যায় না সে যেই হোক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত আমাকে হত্যা করতে চেয়েছে, কিন্তু পারেনি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে, কারণ আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে এবং দেশের মানুষের শান্তি চায়। কিন্তু যখনই আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যায় তখনই বিএনপি গণতন্ত্রের নামে হত্যাকান্ডে লিপ্ত হয়। বিএনপি যখন গণতন্ত্রের কথা বলে তখন আমার খারাপ লাগে। কারণ যারা গণন্ত্রের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারে তাদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না।
বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে স্মরণসভাস্থলে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তারপর প্রথমে প্রধানমন্ত্রী পরে দলীয় সভানেত্রী হিসেবে নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত শদীহদের স্মৃতির প্রতি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ অশরাফুল ইসলাম, বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাহারা খাতুন, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, এইচটি ইমাম, সতীশ চন্দ্র রায়, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মাহবুবউল আলম হানিফ, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাবিবুর রহমান সিরাজ, ড. আবদুল রাজ্জাক, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, কর্নেল ফারুক খান, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট তারানা হালিম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, এনামুল হক শামীম, মাইনুদ্দিন হাসান চৌধুরী প্রমুখ।
ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল অস্থায়ী শহীদ বেদি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রদ্ধা নিবেদন ও বক্তৃতা শেষে যখন অস্থায়ী বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় তখন মানুষের ঢল নামে। ওয়ার্কার্স পার্টি, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, কেন্দ্রীয় যুবলীগ, যুবলীগ উত্তর ও দক্ষিণ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ, যুব মহিলা লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, শহীদ মোস্তাক আহমেদ সেন্টু পরিষদ, একুশে আগস্ট বাংলাদেশ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, পেশাজীবী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, মৎসজীবী লীগ, তরুণ লীগ, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানান। তবে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় বিশৃংখলাও ছিল চোখে পড়ার মতো। (দৈনিক যুগান্তর)