নিউইয়র্ক ১১:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

পিরোজপুরে শিল্পী নচিকেতা : ফেললেন অশ্রু, নিয়ে গেলেন জল

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:৩৭:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৪
  • / ১৫১৬ বার পঠিত

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): কুঁড়েঘরের বারান্দার মাটির মেঝেতে বসে কান্না লুকানোর চেষ্টা করেও পারলেন না। কালো রোদচশমার ফাঁক গলে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো কোলে। কখনো বাড়ির দিঘিরপাড়ে, কখনো পৈতৃক ভিটায় বসে এভাবেই নীরবে চোখের জল ফেললেন। পরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাটাখালী খালের পানি বোতলে ভরে নিয়ে গেলেন।
ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতাকে এভাবে দেখে অবাক হয়েছেন চেচরীরামপুর গ্রামের মানুষ। যাঁরা নচিকেতার গান শুনেছেন কিংবা তাঁর সম্পর্কে জানেন, তাঁরা নচিকেতার মাতৃভূমির প্রতি এমন টান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। প্রিয় শিল্পীর কান্না দেখে সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীরও চোখে পানি ঝরেছে।
নচিকেতা চক্রবর্তীর জন্ম কলকাতায়। পূর্বপুরুষের বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচরীরামপুর গ্রামে। কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন তিনি। গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আসেন চেচরীরামপুর গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন জানান, হেলিকপ্টারে করে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরে আসেন নচিকেতা। স্থানীয় বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামার পর ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর দাস তাঁকে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপনের একটি স্মরণিকা উপহার দেন।
শংকর দাস বলেন, নচিকেতার দাদু (মায়ের বাবা) ললিত মোহন গাঙগুলী বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি এ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। দাদুর স্মৃতিবিজড়িত বিদ্যালয়ে এসে প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পী আবেগে শিশুর মতো কেঁদে ফেলেন।
বিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সড়কপথে যান ভান্ডারিয়া শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কাঁঠালিয়ার চেচরীরামপুর গ্রামে। সেখানে ললিত মোহন গাঙগুলীর বাড়ির পাশেই জমি কিনে বসবাস করতেন নচিকেতার বাপ-দাদার পরিবার। সেখান থেকেই বাবা সখা রঞ্জন চক্রবর্তী ১৯৪৫ সালে সপরিবারে ভারত চলে যান।
গ্রামের লোকজন জানান, নচিকেতা প্রথমে গিয়েই বসেন বাড়ির দিঘিরপাড়ে। সেখানে তাঁকে ঘিরে ধরেন উৎসুক লোকজন। দিঘির জলের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। এরপর গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। জানতে পারেন তাঁদের ভিটায় এখন আনোয়ার সিকদার নামের এক ব্যক্তি ঘর তুলে বসবাস করছেন। একজন দেখিয়ে দেন তাঁর পৈতৃক ভিটা। সেখানে আনোয়ারের কুঁড়েঘরের বারান্দায় মাটিতে বসে পড়েন তিনি। এ সময় আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। সবার সামনেই কেঁদে ফেলেন।
নচিকেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৪৫ সালে আমার বাবা সখা রঞ্জন চক্রবর্তী সপরিবারে ভারতে চলে যান। কলকাতায় আমার জন্ম। এখানে এসেছি নাড়ির টানে। অনেক দিন ধরে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। ব্যস্ততার কারণে আসা হয়নি। সময় পেলে আবার গ্রামে আসব।’ উপস্থিত গ্রামবাসীকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা আমার আপনজন।’

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

পিরোজপুরে শিল্পী নচিকেতা : ফেললেন অশ্রু, নিয়ে গেলেন জল

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৭:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৪

মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর): কুঁড়েঘরের বারান্দার মাটির মেঝেতে বসে কান্না লুকানোর চেষ্টা করেও পারলেন না। কালো রোদচশমার ফাঁক গলে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো কোলে। কখনো বাড়ির দিঘিরপাড়ে, কখনো পৈতৃক ভিটায় বসে এভাবেই নীরবে চোখের জল ফেললেন। পরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া কাটাখালী খালের পানি বোতলে ভরে নিয়ে গেলেন।
ভারতের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী নচিকেতাকে এভাবে দেখে অবাক হয়েছেন চেচরীরামপুর গ্রামের মানুষ। যাঁরা নচিকেতার গান শুনেছেন কিংবা তাঁর সম্পর্কে জানেন, তাঁরা নচিকেতার মাতৃভূমির প্রতি এমন টান দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। প্রিয় শিল্পীর কান্না দেখে সেখানে উপস্থিত গ্রামবাসীরও চোখে পানি ঝরেছে।
নচিকেতা চক্রবর্তীর জন্ম কলকাতায়। পূর্বপুরুষের বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার চেচরীরামপুর গ্রামে। কয়েক দিন আগে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন তিনি। গত সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে আসেন চেচরীরামপুর গ্রামে।
স্থানীয় লোকজন জানান, হেলিকপ্টারে করে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা শহরে আসেন নচিকেতা। স্থানীয় বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নামার পর ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আতিকুর ইসলাম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান তাঁকে স্বাগত জানান। এরপর তিনি বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শংকর দাস তাঁকে বিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদ্যাপনের একটি স্মরণিকা উপহার দেন।
শংকর দাস বলেন, নচিকেতার দাদু (মায়ের বাবা) ললিত মোহন গাঙগুলী বিহারী পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি এ বিদ্যালয় থেকে অবসর নেন। দাদুর স্মৃতিবিজড়িত বিদ্যালয়ে এসে প্রখ্যাত এই সংগীতশিল্পী আবেগে শিশুর মতো কেঁদে ফেলেন।
বিদ্যালয়ে কিছুক্ষণ কাটিয়ে সড়কপথে যান ভান্ডারিয়া শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে কাঁঠালিয়ার চেচরীরামপুর গ্রামে। সেখানে ললিত মোহন গাঙগুলীর বাড়ির পাশেই জমি কিনে বসবাস করতেন নচিকেতার বাপ-দাদার পরিবার। সেখান থেকেই বাবা সখা রঞ্জন চক্রবর্তী ১৯৪৫ সালে সপরিবারে ভারত চলে যান।
গ্রামের লোকজন জানান, নচিকেতা প্রথমে গিয়েই বসেন বাড়ির দিঘিরপাড়ে। সেখানে তাঁকে ঘিরে ধরেন উৎসুক লোকজন। দিঘির জলের দিকে আনমনে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ। এরপর গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলেন। জানতে পারেন তাঁদের ভিটায় এখন আনোয়ার সিকদার নামের এক ব্যক্তি ঘর তুলে বসবাস করছেন। একজন দেখিয়ে দেন তাঁর পৈতৃক ভিটা। সেখানে আনোয়ারের কুঁড়েঘরের বারান্দায় মাটিতে বসে পড়েন তিনি। এ সময় আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। সবার সামনেই কেঁদে ফেলেন।
নচিকেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘১৯৪৫ সালে আমার বাবা সখা রঞ্জন চক্রবর্তী সপরিবারে ভারতে চলে যান। কলকাতায় আমার জন্ম। এখানে এসেছি নাড়ির টানে। অনেক দিন ধরে এখানে আসার ইচ্ছা ছিল। ব্যস্ততার কারণে আসা হয়নি। সময় পেলে আবার গ্রামে আসব।’ উপস্থিত গ্রামবাসীকে তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ হয়েছি। আপনারা আমার আপনজন।’