নিউইয়র্ক ০২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিজামীর ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের আবার ধৃষ্টতা!

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৪২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০১৬
  • / ৮১২ বার পঠিত

ঢাকা: জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে গতকাল বুধবার সর্বসম্মতভাবে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ঘটনায় ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। এ ছাড়া গণহত্যায় নিজামীর সম্পৃক্ততাকে ‘কথিত অপরাধ’ উল্লেখ করে দেশটি ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে বলেছে, ‘পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত’ রাখাই ছিল তাঁর অপরাধ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পাকিস্তান অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তিনি বলেন, নিজামী যদি পাকিস্তানের এতটাই অনুগত থেকে থাকেন তবে পাকিস্তান কেন তাকে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব দেয়নি?
গতকাল দেশটির সরকারি বেতার রেডিও পাকিস্তানের ওয়েবসাইটে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী রানা তানভির হুসেইন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। নিন্দা প্রস্তাবের আগে নিজামীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ করা হয়। মতিউর রহমান নিজামীকে নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিবৃতি দিল। এর আগে ৬ মে বিবৃতি দিয়েছিল তারা।
গত সোমবার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ইসলামাবাদের দেওয়া ৬ মের বিবৃতিকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলার দুই দিন পর আবার দেশটি একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল। গতকাল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের আগের ‘কথিত অপরাধে’ নিজামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত রাখা ছিল তাঁর একমাত্র অপরাধ। ত্রুটিপূর্ণ বিচারে বিরোধী নেতাদের হত্যা করে তাঁদের কণ্ঠরোধ করার প্রক্রিয়া পুরোপুরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। নিজামীকে যাঁরা সংসদে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন, বাংলাদেশের সেই জনগণের জন্যও তাঁর ফাঁসি কার্যকর করাটা দুর্ভাগ্যজনক।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ক্ষমাপ্রদর্শনের পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ বিচার-প্রক্রিয়া এগিয়ে না নিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই অঙ্গীকার পূরণ করা উচিত।’ পাকিস্তান নিজামীর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘১৯৭৪ সালের চুক্তিতে যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার না করার কথা থাকে তবে ওই চুক্তির পরও কীভাবে বাংলাদেশের কারাগারে প্রায় ২৫ হাজার যুদ্ধাপরাধী ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ওই সব যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তান করবে বলে বলা হয়েছিল। আমরা জানতে চাই, পাকিস্তান ওই অপরাধীদের বিচার করেছে কি না।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এপিপির এক খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবের ব্যাপারে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নেতারা বলেছেন, ১৯৭১-এ অভিন্ন পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের জন্য নিজামীসহ জামায়াতে ইসলামীর লোকজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আলোচনায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সাংসদেরা জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে নিজামীর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। পশতুন জাতীয়তাবাদী দল পাখতুনওয়ালা মিল্লি আওয়ামী পার্টির নেতা মেহমুদ খান আসাকজাই প্রস্তাব করেন, পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যকারীদের হত্যা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রাজি করাতে একটি সংসদীয় দলের বাংলাদেশ সফর করা উচিত। এ সময় জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিক বলেন, এ ব্যাপারে তিনি জ্যেষ্ঠ সাংসদদের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকের আয়োজন করবেন। এ ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে নিন্দা জানিয়ে এবং ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে প্রস্তাবটি পাস হয়।
পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পাকিস্তান যে এ ধরনের আচরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক মান যে নীচু, তা তাদের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে। প্রতিক্রিয়ার প্রতিটি কথা মিথ্যা এবং এভাবে মিথ্যা দিয়েই পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করেছিল। আমরা যে বারবার বলে এসেছি মতিউর রহমান নিজামীরা পাকিস্তানের পক্ষে রাজনীতি ও গণহত্যা চালিয়েছিল, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তা আবার প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তান গণতন্ত্রের চর্চা করে না, জঙ্গি ও মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়। এমন একটি দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’ তাঁর মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব একটা নেই। কাজেই কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্নতর পর্যায়ে নামিয়ে আনা উচিত।
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পাকিস্তানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে হলে একই সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও কাতারের আলেম গ্রুপের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করতে পারি, তবে তুরস্ককে পারব না কেন!’
তুরস্কের নিন্দা: জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা এবং বাংলাদেশের সাবেক কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়টি তুরস্ক গভীর দুঃখের সঙ্গে জানতে পেরেছে। এতে বলা হয়, ‘আমরা এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র নিন্দা জানাই। কারণ, আমরা মনে করি, নিজামী এমন শাস্তি পাওয়ার মতো কাজ করেননি।’
নিজামীর ফাঁসির নিন্দা জানালেও বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্ক অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে থাকবে।
এর আগে সর্বোচ্চ আদালতে নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর দণ্ডাদেশকে অন্যায্য বলে নিন্দা করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নিজামীর ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তানের আবার ধৃষ্টতা!

প্রকাশের সময় : ১০:৪২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ মে ২০১৬

ঢাকা: জামায়াতের নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে গতকাল বুধবার সর্বসম্মতভাবে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এ ঘটনায় ‘গভীরভাবে মর্মাহত’। এ ছাড়া গণহত্যায় নিজামীর সম্পৃক্ততাকে ‘কথিত অপরাধ’ উল্লেখ করে দেশটি ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। সেই সঙ্গে বলেছে, ‘পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত’ রাখাই ছিল তাঁর অপরাধ।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, পাকিস্তান অযাচিতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। তিনি বলেন, নিজামী যদি পাকিস্তানের এতটাই অনুগত থেকে থাকেন তবে পাকিস্তান কেন তাকে নিয়ে গিয়ে নাগরিকত্ব দেয়নি?
গতকাল দেশটির সরকারি বেতার রেডিও পাকিস্তানের ওয়েবসাইটে প্রচারিত খবরে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী রানা তানভির হুসেইন প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। নিন্দা প্রস্তাবের আগে নিজামীর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ করা হয়। মতিউর রহমান নিজামীকে নিয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত এক সপ্তাহের মধ্যে দুই দফা বিবৃতি দিল। এর আগে ৬ মে বিবৃতি দিয়েছিল তারা।
গত সোমবার ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলমকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে ইসলামাবাদের দেওয়া ৬ মের বিবৃতিকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলার দুই দিন পর আবার দেশটি একই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল। গতকাল পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর ডিসেম্বরের আগের ‘কথিত অপরাধে’ নিজামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। বস্তুত, পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত রাখা ছিল তাঁর একমাত্র অপরাধ। ত্রুটিপূর্ণ বিচারে বিরোধী নেতাদের হত্যা করে তাঁদের কণ্ঠরোধ করার প্রক্রিয়া পুরোপুরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। নিজামীকে যাঁরা সংসদে তাঁদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করেছিলেন, বাংলাদেশের সেই জনগণের জন্যও তাঁর ফাঁসি কার্যকর করাটা দুর্ভাগ্যজনক।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ‘১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ক্ষমাপ্রদর্শনের পদক্ষেপ হিসেবে বাংলাদেশ বিচার-প্রক্রিয়া এগিয়ে না নিতে রাজি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে সেই অঙ্গীকার পূরণ করা উচিত।’ পাকিস্তান নিজামীর শোকসন্তপ্ত পরিবার ও তাঁর অনুসারীদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘১৯৭৪ সালের চুক্তিতে যদি যুদ্ধাপরাধের বিচার না করার কথা থাকে তবে ওই চুক্তির পরও কীভাবে বাংলাদেশের কারাগারে প্রায় ২৫ হাজার যুদ্ধাপরাধী ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ওই সব যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পাকিস্তানের ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীর বিচার পাকিস্তান করবে বলে বলা হয়েছিল। আমরা জানতে চাই, পাকিস্তান ওই অপরাধীদের বিচার করেছে কি না।’
পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা এপিপির এক খবরে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাবের ব্যাপারে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে নেতারা বলেছেন, ১৯৭১-এ অভিন্ন পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যের জন্য নিজামীসহ জামায়াতে ইসলামীর লোকজনকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আলোচনায় পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ও পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) সাংসদেরা জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের নেতাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে নিজামীর জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। পশতুন জাতীয়তাবাদী দল পাখতুনওয়ালা মিল্লি আওয়ামী পার্টির নেতা মেহমুদ খান আসাকজাই প্রস্তাব করেন, পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্যকারীদের হত্যা বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে রাজি করাতে একটি সংসদীয় দলের বাংলাদেশ সফর করা উচিত। এ সময় জাতীয় পরিষদের স্পিকার আয়াজ সাদিক বলেন, এ ব্যাপারে তিনি জ্যেষ্ঠ সাংসদদের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একটি বৈঠকের আয়োজন করবেন। এ ব্যাপারে সর্বসম্মতভাবে নিন্দা জানিয়ে এবং ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘনের প্রতিবাদে প্রস্তাবটি পাস হয়।
পাকিস্তানের এই প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পাকিস্তান যে এ ধরনের আচরণ করবে, এটাই স্বাভাবিক। কারণ, রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক মান যে নীচু, তা তাদের প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে। প্রতিক্রিয়ার প্রতিটি কথা মিথ্যা এবং এভাবে মিথ্যা দিয়েই পাকিস্তান গণহত্যা শুরু করেছিল। আমরা যে বারবার বলে এসেছি মতিউর রহমান নিজামীরা পাকিস্তানের পক্ষে রাজনীতি ও গণহত্যা চালিয়েছিল, দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে তা আবার প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তান গণতন্ত্রের চর্চা করে না, জঙ্গি ও মৌলবাদকে প্রশ্রয় দেয়। এমন একটি দেশের প্রতিক্রিয়া নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই।’ তাঁর মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের ব্যবসা-বাণিজ্য খুব একটা নেই। কাজেই কূটনৈতিক সম্পর্ক নিম্নতর পর্যায়ে নামিয়ে আনা উচিত।
মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘পাকিস্তানের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানাতে হলে একই সঙ্গে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও কাতারের আলেম গ্রুপের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানানো উচিত। আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করতে পারি, তবে তুরস্ককে পারব না কেন!’
তুরস্কের নিন্দা: জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে গতকাল বুধবার প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা এবং বাংলাদেশের সাবেক কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার বিষয়টি তুরস্ক গভীর দুঃখের সঙ্গে জানতে পেরেছে। এতে বলা হয়, ‘আমরা এ মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের তীব্র নিন্দা জানাই। কারণ, আমরা মনে করি, নিজামী এমন শাস্তি পাওয়ার মতো কাজ করেননি।’
নিজামীর ফাঁসির নিন্দা জানালেও বিবৃতিতে বলা হয়, তুরস্ক অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম জনগণের পাশে থাকবে।
এর আগে সর্বোচ্চ আদালতে নিজামীর রিভিউ আবেদন খারিজ হওয়ার পরও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান তাঁর দণ্ডাদেশকে অন্যায্য বলে নিন্দা করেন।