নিউইয়র্ক ১২:১২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘নারীর ক্ষমতায়নে ১০ম জাতীয় সংসদ উজ্জল দৃষ্টান্ত, সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে’

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ মার্চ ২০১৫
  • / ১০১৩ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নারীর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উজ্জল দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার। সাংবাধিনাকি গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি পদই তার প্রমাণ। তবে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব তৈরী করা। আপনি জানেন যে বর্তমানে বাংলাদেশ’সহ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে তরুণ-প্রজন্ম মেধা এবং মননে বিকশিত হচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তরুণ প্রজন্মদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। এসব কথা বলেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী। শুক্রবার ম্যানহাটনস্থ বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয়ে বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশনের মুখোমুখি হন বাংলাদেশ স্পীকার।
কমওনওয়েলথ পাল্টামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী কার্যালয় পরিদর্শনকালো টাইম টেলিভিশনের মুখোমুখি হন তিনি। তুলে ধরেন নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন দিক। বলেন, আমি কমনওয়েলথভুক্ত ১৭৯টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া গর্বিত। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি’। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি দেশের জাতীয় সংসদ হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল কেন্দ্র। আমাদের দেশও তাই। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ইয়াং কমনওয়েলথ’। আপনার জানেন বর্তমানে এসব দেশগুলোর জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ সমাজ। তাদের মেধা এবং শক্তিকে বিকশিত করে আগামী দিনে দেশের প্রতিনিধিত্বে নিয়ে আসতে হবে’।
ড. শিরিন শারমিন বলেন, ‘সব নারীর প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। যাতে তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে নারীরা শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় ভূমিকা রাখছে। নারীদের সব সম্ভাবনার পথকে আরো সূদুরপ্রসারি করতে সবার সহযোগিতও কামনা করেন তিনি।
কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশেগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ’সহ তরুণ প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্বমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান কমওনওয়েলথ পাল্টামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী।
স্পীকারের সাক্ষাতকালে উপস্থিত জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ’সহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারী-পুরুষের সমান-অধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ লক্ষ্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গেল বছরের ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদে‘তে সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলনে ৩ বছর মেয়াদি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিএ’র ৩৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে চেয়ারপারসন পদে ৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেইম্যান আইল্যান্ডস’র স্পীকার জুলিয়ানা ‘ও’ কনর-কন্নোলি। এ নির্বাচনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৭৫টি পার্লামেন্টের ৩২১ জন ভোটার ছিলেন। যার মধ্যে ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ড. শিরিন। তাঁর প্রতিদ্বন্দি পেয়েছেন ৬৭ ভোট। প্রায় ১১টি রিজিওনে বিভক্ত সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন শিরিন শারমিন প্রথম বাঙালী নারী স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট শিরিন শারমিন চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্বাক্ষর করেছেন। আর সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ভারতীয় লোকসভার স্পীকার সুমাত্রা মহাজন ও সিঙ্গাপুরের স্পীকার হালিমা ইয়াকুব। গত ২ অক্টোবর সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলন শুরু হয়। ১০ অক্টোবর শুক্রবার চেয়ারপার্সন শিরিন শারমিন চৌধুরী’সহ ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলন।
১৯৭৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ পার্লামেন্ট পৃথিবীর বৃহত্তম সংসদীয় ফোরাম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর সদস্য। ১৯১১ সালে যাত্র শুরু করা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে সিপিএ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সিপিএ’র সদস্যপদ লাভ করে। এর আগে ১৯৮৪-৮৭ মেয়াদে ভারতের এমপি বাল রাম ঝাকার এবং ২০০৫-২০০৮ মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের এমএলএ হাশিম আবদুল হালিম সিপিএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পীকার থাকাকালে সিপিএ নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
২০০৯ সালে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পীকারের দায়িত্ব পান। তখন তিনি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। এরপর আলোচিত-সমালোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও বগুড়া থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত করানো হয় তাঁকে। দ্বিতীয় মেয়াদেও পার্লামেন্টের স্পীকারের দায়িত্বভার দেয়া হয় বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পীকারকে। প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
ড. শিরিন শারমিনের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকায়। বাবা রফিক উল্লাহ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব। মাতা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবি। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি। শিরিন শারমিন ১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান নিয়ে এসএসসি পাস করেন। দুই বছর পর একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে অবস্থান অটুট রেখেই এলএলএম ডিগ্রী নেন শিরিন শারমিন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। বাংলাদেশের স্পীকার শিরিন বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ২০০৮ সালে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। সবশেষে রাজনীতিতে এসে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হিসেবে নবম জাতীয় সংসদে আইনসভায় আসেন শিরীন শারমিন। স্পীকার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর নবম সংসদের স্পীকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আইনসভার মেয়াদের আট মাস বাকি থাকতে স্পীকার হন শিরিন শারমিন। দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেয়া রংপুরের পীরগঞ্জ আসনে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে বর্তমানেও বাংলাদেশের স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘নারীর ক্ষমতায়নে ১০ম জাতীয় সংসদ উজ্জল দৃষ্টান্ত, সংসদে তরুণদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াতে হবে’

প্রকাশের সময় : ০২:১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ মার্চ ২০১৫

নিউইয়র্ক: বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নারীর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উজ্জল দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, সংসদ উপনেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পীকার। সাংবাধিনাকি গুরুত্বপূর্ণ এ চারটি পদই তার প্রমাণ। তবে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে তরুণ নেতৃত্ব তৈরী করা। আপনি জানেন যে বর্তমানে বাংলাদেশ’সহ কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোতে তরুণ-প্রজন্ম মেধা এবং মননে বিকশিত হচ্ছে। তাই দেশের উন্নয়নের স্বার্থে তরুণ প্রজন্মদের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। এসব কথা বলেন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী। শুক্রবার ম্যানহাটনস্থ বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধির কার্যালয়ে বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশনের মুখোমুখি হন বাংলাদেশ স্পীকার।
কমওনওয়েলথ পাল্টামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারপার্সন হিসেবে ১২ মার্চ বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। শুক্রবার (১৩ মার্চ) দুপুরে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী কার্যালয় পরিদর্শনকালো টাইম টেলিভিশনের মুখোমুখি হন তিনি। তুলে ধরেন নারীর ক্ষমতায়নের বিভিন্ন দিক। বলেন, আমি কমনওয়েলথভুক্ত ১৭৯টি দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাওয়া গর্বিত। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছি’। তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি দেশের জাতীয় সংসদ হচ্ছে গণতন্ত্রের মূল কেন্দ্র। আমাদের দেশও তাই। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে এবারের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘ইয়াং কমনওয়েলথ’। আপনার জানেন বর্তমানে এসব দেশগুলোর জনসংখ্যার একটি বড় অংশ তরুণ সমাজ। তাদের মেধা এবং শক্তিকে বিকশিত করে আগামী দিনে দেশের প্রতিনিধিত্বে নিয়ে আসতে হবে’।
ড. শিরিন শারমিন বলেন, ‘সব নারীর প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। যাতে তারা নিজেদের ভাগ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারেন। বর্তমানে নারীরা শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় ভূমিকা রাখছে। নারীদের সব সম্ভাবনার পথকে আরো সূদুরপ্রসারি করতে সবার সহযোগিতও কামনা করেন তিনি।
কমনওয়েলথ ভুক্ত দেশেগুলোতে নারীর ক্ষমতায়ন, দারিদ্র বিমোচন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন, সামাজিক মূল্যবোধ’সহ তরুণ প্রজন্মকে প্রতিনিধিত্বমূলক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করার অঙ্গিকার নিয়ে কাজ করছেন বলেও জানান কমওনওয়েলথ পাল্টামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র চেয়ারপার্সন ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরী।
স্পীকারের সাক্ষাতকালে উপস্থিত জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. আবদুল মোমেন বলেন, ‘আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ’সহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোতে নারী-পুরুষের সমান-অধিকার প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। এ লক্ষ্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গেল বছরের ৯ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ক্যামেরুনের রাজধানী ইয়াউনদে‘তে সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলনে ৩ বছর মেয়াদি কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সিপিএ’র ৩৫ সদস্যের নির্বাহী কমিটির নির্বাচনে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে চেয়ারপারসন পদে ৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পীকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কেইম্যান আইল্যান্ডস’র স্পীকার জুলিয়ানা ‘ও’ কনর-কন্নোলি। এ নির্বাচনে কমনওয়েলথভুক্ত ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্রের ১৭৫টি পার্লামেন্টের ৩২১ জন ভোটার ছিলেন। যার মধ্যে ৭০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন ড. শিরিন। তাঁর প্রতিদ্বন্দি পেয়েছেন ৬৭ ভোট। প্রায় ১১টি রিজিওনে বিভক্ত সিপিএ নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন শিরিন শারমিন প্রথম বাঙালী নারী স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট শিরিন শারমিন চৌধুরী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই স্বাক্ষর করেছেন। আর সমর্থক হিসেবে স্বাক্ষর করেছেন ভারতীয় লোকসভার স্পীকার সুমাত্রা মহাজন ও সিঙ্গাপুরের স্পীকার হালিমা ইয়াকুব। গত ২ অক্টোবর সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলন শুরু হয়। ১০ অক্টোবর শুক্রবার চেয়ারপার্সন শিরিন শারমিন চৌধুরী’সহ ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট নতুন নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব গ্রহণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় সিপিএ’র ৬০তম সম্মেলন।
১৯৭৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ পার্লামেন্ট পৃথিবীর বৃহত্তম সংসদীয় ফোরাম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ)-এর সদস্য। ১৯১১ সালে যাত্র শুরু করা কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে সিপিএ। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সিপিএ’র সদস্যপদ লাভ করে। এর আগে ১৯৮৪-৮৭ মেয়াদে ভারতের এমপি বাল রাম ঝাকার এবং ২০০৫-২০০৮ মেয়াদে পশ্চিমবঙ্গের এমএলএ হাশিম আবদুল হালিম সিপিএ’র চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আর বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পীকার থাকাকালে সিপিএ নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
ডক্টর শিরিন শারমিন চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনী:
২০০৯ সালে আওয়ামী নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম নারী স্পীকারের দায়িত্ব পান। তখন তিনি ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি। এরপর আলোচিত-সমালোচিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও বগুড়া থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত করানো হয় তাঁকে। দ্বিতীয় মেয়াদেও পার্লামেন্টের স্পীকারের দায়িত্বভার দেয়া হয় বাংলাদেশের প্রথম নারী স্পীকারকে। প্রথমবারের মতো কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন-সিপিএ’র চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন তিনি।
ড. শিরিন শারমিনের জন্ম ১৯৬৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকায়। বাবা রফিক উল্লাহ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব। মাতা অধ্যাপক নাইয়ার সুলতানা ছিলেন একজন সরকারি চাকুরিজীবি। বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের সদস্য ছিলেন তিনি। শিরিন শারমিন ১৯৮৩ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় প্রথম স্থান নিয়ে এসএসসি পাস করেন। দুই বছর পর একই বোর্ড থেকে মানবিক বিভাগে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় স্থান নিয়ে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৮৯ সালে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স) এবং ১৯৯০ সালে অবস্থান অটুট রেখেই এলএলএম ডিগ্রী নেন শিরিন শারমিন। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। বাংলাদেশের স্পীকার শিরিন বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন ১৯৯২ সালে। ১৯৯৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগ ও ২০০৮ সালে আপিল বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। সবশেষে রাজনীতিতে এসে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য হিসেবে নবম জাতীয় সংসদে আইনসভায় আসেন শিরীন শারমিন। স্পীকার নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর নবম সংসদের স্পীকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ায় আইনসভার মেয়াদের আট মাস বাকি থাকতে স্পীকার হন শিরিন শারমিন। দশম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেড়ে দেয়া রংপুরের পীরগঞ্জ আসনে উপ-নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়ে বর্তমানেও বাংলাদেশের স্পীকার হিসেবে দায়িত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)