নিউইয়র্ক ০৫:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

গৌরবের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০২:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬
  • / ৭০৪ বার পঠিত

ঢাকা: ১৬ ডিসেম্বর। মহান ও গৌরবের বিজয় দিবস। বাঙালী জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জনের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে ওঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এইদিনই বীর বাঙালী জাতি ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে এক নতুন ‘মহাকাব্য’ তৈরি হয়েছিল। সেই কাব্যের নাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর, বিহ্বল হওয়ারও দিন আজ। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করবে সেই শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটির দিন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে শহীদদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ জনতার ঢল।
বিজয় এলো যেভাবে: ব্রিটিশদের বিদায়ের পর নতুন রূপে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা) ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক শ্রেণি। তাদের হঠকারিতা, অদূরদর্শিতা এবং অবিমৃশ্যকারীতার কারণে দু’ অঞ্চলের মধ্যে তৈরি হয় ভেদ রেখা এবং বৈষম্যের বেড়াজাল। পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে প্রতিবাদে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী। ফলে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানী শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে দমনের পথ বেছে নেয়। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম দেয় ২৫ মার্চের কালরাতের। এরপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াই। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার ৪৯৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিত সিং অরোরা’র কাছে। শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আরো অবদান রাখতে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আরো অর্থবহ করতে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি। সবাই মিলে একটি সেবামুখী, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি- জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’।
কর্মসূচি: দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ: আজ সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বিকাল পৌঁনে ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন। এ অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
আজ সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহে দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগের তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৮টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় শোভাযাত্রা। আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় বিজয় দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।(দৈনিক ইত্তেফাক)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

গৌরবের বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর

প্রকাশের সময় : ০২:৩৯:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

ঢাকা: ১৬ ডিসেম্বর। মহান ও গৌরবের বিজয় দিবস। বাঙালী জাতির জীবনে সবচেয়ে বড় অর্জনের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ, নিপীড়ন আর দুঃশাসনের কুহেলিকা ভেদ করে বিজয়ের প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে ওঠেছিল বাংলাদেশের শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করে এইদিনই বীর বাঙালী জাতি ছিনিয়ে এনেছিল লাল-সবুজের পতাকা। স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে এক নতুন ‘মহাকাব্য’ তৈরি হয়েছিল। সেই কাব্যের নাম স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্ণ হলো আজ। লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর, বিহ্বল হওয়ারও দিন আজ। জাতি আজ গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার সঙ্গে স্মরণ করবে সেই শহীদদের যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা। যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি উদযাপনের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। বাংলাদেশে আজ সরকারি ছুটির দিন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে শহীদদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞ জনতার ঢল।
বিজয় এলো যেভাবে: ব্রিটিশদের বিদায়ের পর নতুন রূপে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের (পূর্ব বাংলা) ওপর শোষক হিসেবে আবির্ভূত হয় পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক শ্রেণি। তাদের হঠকারিতা, অদূরদর্শিতা এবং অবিমৃশ্যকারীতার কারণে দু’ অঞ্চলের মধ্যে তৈরি হয় ভেদ রেখা এবং বৈষম্যের বেড়াজাল। পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা আর অবহেলা চরম আকার ধারণ করলে প্রতিবাদে ক্রমে অগ্নিগর্ভ হতে থাকে এ অঞ্চল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের জনগণের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভকারী আওয়ামী লীগের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে টালবাহানা শুরু করে শাসকগোষ্ঠী। ফলে ক্ষোভে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তান। একাত্তরের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ‘এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম’ জনগণের স্বাধীনতার স্পৃহাকে প্রবল করে তোলে। ঢাকা যখন অগ্নিগর্ভ, তখন পাকিস্তানী শাসকচক্র আমাদের মুক্তির স্পৃহাকে দমনের পথ বেছে নেয়। রাতের অন্ধকারে নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষ হত্যার মাধ্যমে জন্ম দেয় ২৫ মার্চের কালরাতের। এরপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের পৃথক পথচলার যাত্রা। ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় চূড়ান্ত লড়াই। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিসংগ্রামের পর পরাজয় মেনে নেয় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার ৪৯৮ জন পাকিস্তানী সৈন্য নিয়ে ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন সম্মিলিত বাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিত সিং অরোরা’র কাছে। শুরু হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের পথচলা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী: মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আরো অবদান রাখতে দলমত নির্বিশেষে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে আরো অর্থবহ করতে গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দলমত নির্বিশেষে একযোগে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আসুন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা করি। সবাই মিলে একটি সেবামুখী, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলি। প্রতিষ্ঠা করি- জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’।
কর্মসূচি: দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধাগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যগণ এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ: আজ সকাল ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বিকাল পৌঁনে ৪টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন। এ অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন।
আজ সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন সংবাদপত্রসমূহ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহ মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাক টিকিট প্রকাশ করবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও উপাসনার আয়োজন করা হবে। এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল, জেলখানা, সরকারি শিশুসদনসহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানসমূহে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে। দেশের সকল শিশু পার্ক ও জাদুঘরসমূহ বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সমূহে দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি: আওয়ামী লীগের তিন দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, সূর্যোদয় ক্ষণে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারাদেশের সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩৪ মিনিটে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন, সকাল ৮টায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন এবং সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় শোভাযাত্রা। আগামীকাল শনিবার বিকাল ৩টায় বিজয় দিবস উপলক্ষে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।(দৈনিক ইত্তেফাক)