গাইবান্ধার এমপি লিটন গুলিতে নিহত
- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৬:১৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬
- / ১১৮৬ বার পঠিত
সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা): বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাতটা ৪০ মিনিটের দিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র রায় জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। লিটনের বুকের বাম দিকে দুটি এবং বাম হাতে একটি গুলি লেগেছিল বলে জানান তিনি।
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গার বাছোহাটি গ্রামে এমপির বাড়ির কেয়ারটেকার ইউসুফ আলী বলেন, ‘সন্ধ্যার পর মনজরুল ইসলাম লিটন বাড়ির খুলিতে গাছের নিচে চেয়ারে বসে কয়েকজন কিশোরের সাথে ফুটবল দেয়া বিষয়ে কথা বলছিলেন। এসময় আমি খুলি (বাড়ির সামনে) থেকে ভিতরে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একটি লাল ও একটি কালো রংয়ের মোটরসাইকেলে করে পাঁচজন লোক খুলিতে আসে। তারা এমপি স্যারকে বলেন, বাড়ির ভেতরে চলেন জরুরি কথা আছে। এ সময় এমপি তাদেরকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে নিজের ঘরে যান। সেখানে তারা এমপির স্ত্রীকে বলে আমাদের জরুরি কথা আছে। আপনি বাইরে যান। এমপির স্ত্রী বাইরে গেলে তারা এমপিকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ঘর থেকে বের হয়। এরপর তারা মোটরসাইকেলে করে বাড়ির পেছন দিয়ে পশ্চিম পাশ দিয়ে চলে যায়। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে পুলিশ ও স্থানীয়রা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।’
ফুটবল নিতে আসা জুয়েল নামের এক কিশোর জানান, আমরা বল নেয়ার জন্য এমপির সাথে কথা বলছিলাম। তখন ওই পাঁচজন লোক এসে আমাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়ে এমপিকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে গুলি করে পালিয়ে যায়।
এমপি লিটনের স্ত্রী খোরশেদ জাহান জানান, মাগরিবের নামাজের পরপর মোটর সাইকেলে অজ্ঞাতপরিচয় তিন যুবক বাড়িতে ঢুকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
এদিকে, এমপি লিটনকে গুলি এবং তার মৃত্যুর খবরে পুরো সুন্দরগঞ্জ জুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শত শত মানুষ রাস্তায় নেমে মিছিল করছে। অবরোধের কারণে সুন্দরগঞ্জের সাথে গাইবান্ধা ও রংপুরের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আতিয়ার রহমান জানান, এমপি খুন হওয়ার ঘটনায় জনগণ রাস্তায় অবরোধ গড়ে মিছিল করছে। আমরা জনগণকে শান্ত করার চেষ্টা করছি।
র্যাব-১৩ রংপুরের সিও আতিকুর রহমান জানান, নিজ বাড়িতে এমপি দুর্বৃত্তদের গুলিতে গুরুতর আহত হন। রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। দুর্বৃত্তদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি।
গত বছর ২ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গোপালচরণ গ্রামের শিশু শাহাদাত হোসেন সৌরভকে গুলি করেন সারাদেশে আলোচনায় আসেন এমপি লিটন। সৌরভের পিতা সাজু মিয়ার করা মামলায় ওই বছরের ১৪ অক্টোবর রাতে রাজধানীর উত্তরা থেকে লিটনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।
থমথমে সুন্দরগঞ্জ : রাস্তাঘাট ফাঁকা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর
এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিহত হওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার পর তার এলাকা গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে আতঙ্ক বিরাজ করছে। পুরো এলাকার রাস্তা, বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ জনশূন্য হয়ে পড়েছে। লিটনের সমর্থকদের রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় মিছিল করতে দেখা গেছে। মানুষজন আতঙ্কে বাড়িতে অবস্থান করছে। কেউ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। ক্ষুব্ধ লোকজন সুন্দরগঞ্জের সোনারায় এলাকায় ডা. আব্দুল গাফফারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এছাড়াও উপজেলা সদরে অবস্থিত তার চেম্বার ও ওষুধের দোকানও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে সুন্দরগঞ্জ পৌরসভা, সোনালী ব্যাংক, কাঠালতলি মোড়, ছাইতালতলা বাজার, বামনডাঙ্গা হল মোড়, শিবতলা মোড়, লিটন মোড়সহ সুন্দরঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজচারে দোকানপাট ও বাড়িঘর। এসময় তারা হাটবাজার ও রাস্তাঘাটে পথচারী লোকদের যেখানেই পেয়েয়েছে সেখানেই পিটুনি দেয়।
ধোঁয়াশায় পুলিশ: এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকান্ডের ঘটনায় কারা জড়িত সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো ধারনা দিতে পারেনি পুলিশ। তবে বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করার কথা বলছে আইনশৃংখলাবাহিনী। এদিকে এ ঘটনায় নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে হামলা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সুন্দরগঞ্জের নাগরিক সমাজ।
গাইবান্ধার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানান, এমপি লিটনকে হত্যার ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু হয়েছে। তিনি জানান, স্থানীয়দের অবরোধ ও বিক্ষোভে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক জানান, এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের খুনের ঘটনায় রোববার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সুন্দরগঞ্জ আসছেন। তারা সরেজমিনে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তিনি বলেন, এই নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে ফাঁসি দিতে হবে।
এমপি লিটনের শ্যালক সৈয়দ বদিউল কারেমীন বাদল জানান, নিহতের লাশ কোথায় নেয়া হবে, সে বিষয়ে রোববার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এখন তার লাশ রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে।
লিটনের বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার (মেরিন) ছিলেন। তার পেশা ছিল কৃষি ও ব্যবসা। তিনি আনন্দ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক ছিলেন। (দৈনিক নয়া দিগন্ত)