নিউইয়র্ক ১০:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

এমভি মোস্তফা-৩ লঞ্চ উদ্ধার : পদ্মায় মিলল ৭০ লাশ : নিখোঁজ ১০

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:০৫:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ৮২২ বার পঠিত

পাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ): কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় থাকা পরিবারের কাছে সপ্তায়ান্তে যেতেন রিকশাচালক দানেজ আলী (৫৫)। ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে আসতেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের কাছে। পাটুরিয়ায় এমভি মোস্তফা লঞ্চের সঙ্গে একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অন্ধকারে ডুবে গেছে দানেজ আলীর পরিবার। বাবার লাশ নেয়ার সময় চিৎকার করে কেঁদেই গেছেন বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম (১৮)। তার মতোই চোখের জলে ভেসে ৬৯ লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক নারীর লাশ পড়ে ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতরের (বিআইডব্লিউটিএ) পাটুরিয়া নদী বন্দরের যাত্রী ছাউনিতে।
পদ্মার পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টা পর এমভি মোস্তফা-৩ লঞ্চ উদ্ধার করেছে সরকারী সং¯’াগুলো। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাহাজটি উদ্ধার করে নদীর কিনারে নিয়ে আসে। সে সময় নৌযানের ভেতর থেকে ২৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রোববার রাত পর্যন্ত ৪১ লাশ উদ্ধার করে দমকল বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ¯’ানীয়রা। এ নৌদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ঠেকল ৭০-এ। এর মধ্যে পুরুষ ২৭, নারী ২৯ ও শিশু ১৪ জন। ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চটিতে শতাধিক যাত্রী ছিল। সার্ভে সনদ অনুযায়ী দিনে লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ১৪০ জন।
সরকারী ভাষ্যমতে, চার যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ। তাদের সন্ধান চলছে। তবে স্বজনদের দাবী, নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা ১০ জনের কম নয়। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার পর লঞ্চ উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক। তবে নিখোঁজদের সন্ধান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে নৌমন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় শিবালয় থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্ঘটনার জন্য কার্গো ও লঞ্চের চালকের (মাস্টার) অদক্ষতা ও গাফলতি দায়ী বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। দুটি নৌযান স্ব স্ব গতিতে চলছিল। কোনো একটি গতি কমিয়ে দিলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। সার্ভে সনদ অনুযায়ী লঞ্চটিতে তৃতীয় শ্রেণীর মাস্টার আফজাল হোসেন ও কার্গোতে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার ইকবাল কবির ছিলেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানীতে স্বজনহারাদের আর্তনাদে পদ্মাপাড়ে শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রিয়জনের লাশের সামনে মাতম করেন আত্মীয়-স্বজনরা। দিনদুপুরে দুই নৌযানের সংঘর্ষের এত মানুষের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন স্বজনহারা মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, ডুবে যাওয়া এমভি মোস্তফা লঞ্চ উদ্ধার করে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অদূরে বরুরিয়ায় রাখা হয়েছে। লঞ্চটির উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর ফিটনেস পুনরায় সার্ভে করে চলাচলের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত যাত্রীবহন করতে পারবে না এটি। লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়া কার্গো জাহাজ নার্গিস-১ আটক করেছে পুলিশ।
দুর্ঘটনার একদিন পর নৌ সচিব শফিক আলম মেহেদী সোমবার ঘটনা¯’ল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উদ্ধার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হ”েছ। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাইনি। এ কারণে দুর্ঘটনার কারণ বলতে পারছি না। তিনি বলেন, তদন্তে দুর্ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করা হবে। কারও গাফলতি বা ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যব¯’া নেয়া হবে। নিখোঁজদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাকারী সং¯’া বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রাত ১১টার পর ঘটনা¯’লে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি তুলে নদীর কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভোর ৫টার দিকে লঞ্চটি সোজা করে ভেতরে তল্লাশী চালিয়ে ২৮ লাশ উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, উদ্ধারকাজে নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড সদস্য এবং ¯’ানীয়রা অংশ নেন। ট্রলারের সাহায্যে ¯’ানীয়রা ঘটনা¯’লের আশপাশে নিখোঁজদের অনুসন্ধান চালিয়েছেন। দুর্ঘটনায় হতাহতদের আত্মীয়-স্বজনের অব¯’ানের জন্য ¯’ানীয়রা প্যান্ডেল টানিয়েছেন। ২২ ফেব্রুয়ারী রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত আগতদের খাবার সরবরাহ করেছেন তারা।
পদ্মার পাড়ে আহাজারী: পদ্মার পাড়ে স্বজনহারা মানুষকে আহাজারী করতে দেখা গেছে। এমভি মোস্তফার বাবুর্চি সোহরাব শেখকে সারাদিন খুঁজে বেড়িয়েছেন ছেলে নয়ন শেখ। সকালে লঞ্চের পাশে বসে বাবার জন্য বিলাপ করছিলেন নয়ন। বিকালে জেলা প্রশাসনের নিখোঁজ রেজিস্টারে সোহরাব শেখের নাম লেখান ছেলে। সোহরাব শেখকে খুঁজতে পদ্মার পাড়ে আসেন তার শাশুড়ী আয়েশা। মেয়ের জামাইয়ের খোঁজে আসা প্রায় ষাট বছর বয়সীর চোখে বইছিল পানির স্্েরাত। পদ্মার পাড়ে মাটিতে নুয়ে পড়ে জামাইয়ের জন্য দু’হাত তুলে খোদার কাছে প্রার্থনা করছেন। ফরিদপুরের বিআরটিএতে কর্মরত উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান খানের সন্ধানে সারারাত নির্ঘুম পার করেছেন ভাই গোলাম মোস্তফা। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানান, বিআউব্লিউটিএ’র আন্তরিকতার অভাবে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হ”েছ। তা না হলে রোববারই ভাইয়ের সন্ধান পেতেন। একমাত্র মেয়ে প্রিয়ামনিকে হারিয়ে বাবা আবদুর রহিমের কান্না থামছে না। মেয়ের সঙ্গে থাকা রহিমের শাশুড়ী আজিরুন নেছার কোনো খোঁজ এখনও মেলেনি।
১৬ ঘণ্টার অভিযান: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, ২২ ফেব্রুয়ারী রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যায় এমভি মোস্তফা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। লঞ্চডুবি থেকে উদ্ধার পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর পরি¯ি’তিতে ছিলেন স্বজনরা। লঞ্চের যাত্রীরা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন-এমন সংবাদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। একের পর এক লাশ উদ্ধারের পরই মরদেহের চেহারা একনজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। প্রিয়জনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। সরকারী সং¯’াগুলোর পাশাপাশি ¯’ানীয়রা লঞ্চ ও ট্রলার নিয়ে উদ্ধার কাজে সহায়তায় করেছেন।
ব্যাগের ¯‘প: উদ্ধার হওয়া মোস্তফা লঞ্চের ভেতর থেকে প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন হ্যান্ডব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব ব্যাগের ভেতর ছিল বিস্কুট, চকলেট, কমলা, আপেলসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী, যা আর কোনোদিন পৌঁছবে না তাদের হাতে।
এখনও নিখোঁজ: জেলা প্রশাসন বলছে এখনও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও স্বজনদের দাবি নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেশি। জেলা প্রশাসনের রেজিস্টার অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জের শিবালয়ের বাসিন্দা ডুবে যাওয়া লঞ্চের বাবুর্চি মোহাম্মদ সোহরাব শেখ, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাসিন্দা আজিরুন্নেছা, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সাহেদা বেগম ও একই উপজেলার আনোয়ারা বেগম। এছাড়া ওই লঞ্চের যাত্রী মোস্তফা মেহফুজসহ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা।
মামলা: ২৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার পুলিশ বাদী হয়ে শিবালয় থানায় মামলা করেছে। এতে দুই নৌযানের চালক ও কর্মচারীদের আসামী করা হয়েছে বলে জানান শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান। ২৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার নৌ আদালতে আরেকটি মামলা করা হবে বলে জানান সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, রোববার থেকে ঘটনা¯’লে অব¯’ান ও দুর্ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করতে সময় লেগেছে। আজ দুর্ঘটনায় মামলা করা হবে।
মানবতার সেবায় ¯’ানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবক : ¯’ানীয় আরুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান মাসুম ও সমাজসেবক মোবারক হোসেন পান্নু নিখোঁজ যাত্রীদের জন্য আসা স্বজনদের জন্য খাবারের ব্যব¯’া করেন। এছাড়া লঞ্চ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রশাসনের লোকদের জন্যও ছিল আপ্যায়নের ব্যব¯’া। অন্যদিকে স্বজনদের সঙ্গে সারারাতও কাটিয়েছেন তারা।
দুর্ঘটনায় মারা গেলেন যারা : এমভি মোস্তফা লঞ্চডুবিতে যারা মারা গেছেন তারা হলেন- মাগুরার শ্রীপুরের লাইলী বেগম (৬৫), মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে ইমরান (৮), বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ফজলুর রহমান খান (৫৫) ও মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের সেলিম হোসেন (২২), কুষ্টিয়া সদরের নাসির উদ্দিন (৪০), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির ইমামুল (১৪), কুষ্টিয়া সদরের মেহেদী হাসান (৩০), ফরিদপুর সদরের নারগিস আক্তার (১১), রাজবাড়ী সদরের রাবেয়া বেগম (২২), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ইউনুস আলী (৪০), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের সুফিয়া বেগম (২৮), একই এলাকার নবীজান বেগম (৭০), রাজবাড়ী সদরের জয়নাল শেখ (৫০), মানিকগঞ্জের শিবালয়ের লতা আক্তার (২২), কুষ্টিয়ার খোকসার ইনামুল হক (১৮), কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছাবু মিয়া (২৫), নড়াইলের হান্নানের মেয়ে হাফছা (৮), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মধুসূদন সাহা (৬০), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ফারুক হোসেনের দেড় বছরে মেয়ে ফারজানা আক্তার, ফরিদপুর সদরের রতন কুমার সরকার (৩৪) ও তার ছেলে পাপন (৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রেবেকা খাতুন (৩৩) ও তার মেয়ে বিথী খাতুন (১৫), ছেলে রাইসান (১৪ মাস), ফরিদপুরের নগরকান্দার খোকন সরকারের ছেলে বাঁধন সরকার (৫), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সোহরাব শেখের এক বছরের ছেলে জোনায়েদ শেখ, ফরিদপুরের শালথার অর্চনা মালো (৪৫), মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের লাবনী আক্তার (১৫), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নাসিমা আক্তার (৩৬), রাজবাড়ী সদরের অনিমা রানী (৬০), নড়াইলের নড়াগাতির আমেনা বেগম (৩৫), কুষ্টিয়ার লাঙ্গলকোটের আবুল হাসান (৬৫), একই এলাকার পরিমল ভৌমিক (৪৫), গোপালগঞ্জ সদরের আসলাম মোল্লা (৩৫), কুষ্টিয়ার মিরপুরের আসাদুল ইসলাম (২৮), ডুবে যাওয়া লঞ্চের ইঞ্জিনচালক মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আবুল কাশেম (৪৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মদিনা বেগম (৭৫), মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অঞ্জলী রানী সূত্রধর (৬০), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ডলি খাতুন (৩৪), রাজবাড়ীর সদরের রহমান শেখ (৫৫), মেহেরপুর সদরের হায়দার আলী (৫০), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর রিনা আক্তার (২৩), কুষ্টিয়ার খোকসার গোলাম মোস্তফা (৫৫), ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মুরাদ হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫) ও তার ছয় বছরের মেয়ে মারজানা আক্তার, ফরিদপুরের শালথার অনিমা রানী মালো (৪৫), কুষ্টিয়া সদরের ডা. নবনীতা পাল (২৮), নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আবদুর রহিমের আড়াই বছরের মেয়ে রিয়া মনি, নড়াইলের নড়াগাতির হোসাইন কবির (২৮), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নূর হোসেনের আড়াই মাসের মেয়ে নুসরাত নূর, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের মনোয়ার হোসেনের দেড় বছরের ছেলে হোসাইন, ফরিদপুর সদরের স্বপন কুমার সরকার (৫০), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শাহনাজ বেগম (৪৫), কুষ্টিয়া সদরের নাসির উদ্দিনের ছয় বছরের মেয়ে ময়না আক্তার, ফরিদপুরের শালথার চম্পা রানী (৫৮), নড়াইলের নড়াগাতির মুরাদ হোসেনের সাত বছরের মেয়ে কেয়ামনি, শেরপুরের নকলার লিটন মিয়া (৩০), ফরিদপুর সদরের মমতা বেগম (৪৯), কুষ্টিয়ার মিরপুরের শরীফ ইসলাম (২৫), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির মঞ্জিলা বেগম (৪৫), রাজবাড়ীর পাংশার হালিমা বেগম (৪৫), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের রুমা আক্তার (২৫), মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য ও রাজবাড়ী গোলন্দের বাসিন্দা নূর হোসেনের সাত বছরের ছেলে উৎসব, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের রতন চন্দ্র সরকার (৫৫), রাজবাড়ী সদরের রেখা রানী সরকার (৪৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ইউনুস শেখের আড়াই বছরের ফাতেমা আক্তার, রাজবাড়ী পাংশার সাবেরা বেগম (৫০), কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার দানেজ আলী (৬৯)। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

এমভি মোস্তফা-৩ লঞ্চ উদ্ধার : পদ্মায় মিলল ৭০ লাশ : নিখোঁজ ১০

প্রকাশের সময় : ০৪:০৫:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

পাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ): কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় থাকা পরিবারের কাছে সপ্তায়ান্তে যেতেন রিকশাচালক দানেজ আলী (৫৫)। ঢাকায় রিকশা চালিয়ে যে উপার্জন হয় তা দিয়ে আসতেন স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ের কাছে। পাটুরিয়ায় এমভি মোস্তফা লঞ্চের সঙ্গে একমাত্র উপার্জনকারীকে হারিয়ে অন্ধকারে ডুবে গেছে দানেজ আলীর পরিবার। বাবার লাশ নেয়ার সময় চিৎকার করে কেঁদেই গেছেন বড় ছেলে হাফিজুল ইসলাম (১৮)। তার মতোই চোখের জলে ভেসে ৬৯ লাশ নিয়ে যান স্বজনরা। রাত ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এক নারীর লাশ পড়ে ছিল বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদফতরের (বিআইডব্লিউটিএ) পাটুরিয়া নদী বন্দরের যাত্রী ছাউনিতে।
পদ্মার পাটুরিয়ায় ডুবে যাওয়ার ১৬ ঘণ্টা পর এমভি মোস্তফা-৩ লঞ্চ উদ্ধার করেছে সরকারী সং¯’াগুলো। উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাহাজটি উদ্ধার করে নদীর কিনারে নিয়ে আসে। সে সময় নৌযানের ভেতর থেকে ২৮টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে রোববার রাত পর্যন্ত ৪১ লাশ উদ্ধার করে দমকল বাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও ¯’ানীয়রা। এ নৌদুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ঠেকল ৭০-এ। এর মধ্যে পুরুষ ২৭, নারী ২৯ ও শিশু ১৪ জন। ডুবে যাওয়ার সময় লঞ্চটিতে শতাধিক যাত্রী ছিল। সার্ভে সনদ অনুযায়ী দিনে লঞ্চটির ধারণ ক্ষমতা ১৪০ জন।
সরকারী ভাষ্যমতে, চার যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এদের মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ। তাদের সন্ধান চলছে। তবে স্বজনদের দাবী, নিখোঁজ যাত্রীর সংখ্যা ১০ জনের কম নয়। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার পর লঞ্চ উদ্ধার কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণা করেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক। তবে নিখোঁজদের সন্ধান অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি। নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে নৌমন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় শিবালয় থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে।
বিআইডব্লিউটিএ ও সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্ঘটনার জন্য কার্গো ও লঞ্চের চালকের (মাস্টার) অদক্ষতা ও গাফলতি দায়ী বলে তথ্য পেয়েছেন তারা। দুটি নৌযান স্ব স্ব গতিতে চলছিল। কোনো একটি গতি কমিয়ে দিলে দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। সার্ভে সনদ অনুযায়ী লঞ্চটিতে তৃতীয় শ্রেণীর মাস্টার আফজাল হোসেন ও কার্গোতে দ্বিতীয় শ্রেণীর মাস্টার ইকবাল কবির ছিলেন।
বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রাণহানীতে স্বজনহারাদের আর্তনাদে পদ্মাপাড়ে শোকাবহ ও হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রিয়জনের লাশের সামনে মাতম করেন আত্মীয়-স্বজনরা। দিনদুপুরে দুই নৌযানের সংঘর্ষের এত মানুষের মৃত্যুতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন স্বজনহারা মানুষ।
সরেজমিন দেখা যায়, ডুবে যাওয়া এমভি মোস্তফা লঞ্চ উদ্ধার করে পাটুরিয়া ফেরিঘাটের অদূরে বরুরিয়ায় রাখা হয়েছে। লঞ্চটির উপরিভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর ফিটনেস পুনরায় সার্ভে করে চলাচলের অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত যাত্রীবহন করতে পারবে না এটি। লঞ্চটিকে ধাক্কা দেয়া কার্গো জাহাজ নার্গিস-১ আটক করেছে পুলিশ।
দুর্ঘটনার একদিন পর নৌ সচিব শফিক আলম মেহেদী সোমবার ঘটনা¯’ল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে উদ্ধার কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হ”েছ। প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পাইনি। এ কারণে দুর্ঘটনার কারণ বলতে পারছি না। তিনি বলেন, তদন্তে দুর্ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করা হবে। কারও গাফলতি বা ত্রুটির জন্য দুর্ঘটনা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যব¯’া নেয়া হবে। নিখোঁজদের উদ্ধার কার্যক্রম চলমান থাকবে।
উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনাকারী সং¯’া বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রাত ১১টার পর ঘটনা¯’লে পৌঁছে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি তুলে নদীর কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভোর ৫টার দিকে লঞ্চটি সোজা করে ভেতরে তল্লাশী চালিয়ে ২৮ লাশ উদ্ধার করা হয়।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, উদ্ধারকাজে নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস ও কোস্টগার্ড সদস্য এবং ¯’ানীয়রা অংশ নেন। ট্রলারের সাহায্যে ¯’ানীয়রা ঘটনা¯’লের আশপাশে নিখোঁজদের অনুসন্ধান চালিয়েছেন। দুর্ঘটনায় হতাহতদের আত্মীয়-স্বজনের অব¯’ানের জন্য ¯’ানীয়রা প্যান্ডেল টানিয়েছেন। ২২ ফেব্রুয়ারী রোববার রাত থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত আগতদের খাবার সরবরাহ করেছেন তারা।
পদ্মার পাড়ে আহাজারী: পদ্মার পাড়ে স্বজনহারা মানুষকে আহাজারী করতে দেখা গেছে। এমভি মোস্তফার বাবুর্চি সোহরাব শেখকে সারাদিন খুঁজে বেড়িয়েছেন ছেলে নয়ন শেখ। সকালে লঞ্চের পাশে বসে বাবার জন্য বিলাপ করছিলেন নয়ন। বিকালে জেলা প্রশাসনের নিখোঁজ রেজিস্টারে সোহরাব শেখের নাম লেখান ছেলে। সোহরাব শেখকে খুঁজতে পদ্মার পাড়ে আসেন তার শাশুড়ী আয়েশা। মেয়ের জামাইয়ের খোঁজে আসা প্রায় ষাট বছর বয়সীর চোখে বইছিল পানির স্্েরাত। পদ্মার পাড়ে মাটিতে নুয়ে পড়ে জামাইয়ের জন্য দু’হাত তুলে খোদার কাছে প্রার্থনা করছেন। ফরিদপুরের বিআরটিএতে কর্মরত উপ-পরিচালক ফজলুর রহমান খানের সন্ধানে সারারাত নির্ঘুম পার করেছেন ভাই গোলাম মোস্তফা। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি জানান, বিআউব্লিউটিএ’র আন্তরিকতার অভাবে উদ্ধার কাজ বিলম্বিত হ”েছ। তা না হলে রোববারই ভাইয়ের সন্ধান পেতেন। একমাত্র মেয়ে প্রিয়ামনিকে হারিয়ে বাবা আবদুর রহিমের কান্না থামছে না। মেয়ের সঙ্গে থাকা রহিমের শাশুড়ী আজিরুন নেছার কোনো খোঁজ এখনও মেলেনি।
১৬ ঘণ্টার অভিযান: প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা মতে, ২২ ফেব্রুয়ারী রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডুবে যায় এমভি মোস্তফা। রাত সাড়ে ৩টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়। লঞ্চডুবি থেকে উদ্ধার পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর পরি¯ি’তিতে ছিলেন স্বজনরা। লঞ্চের যাত্রীরা বেঁচে আছেন নাকি মরে গেছেন-এমন সংবাদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন স্বজনরা। একের পর এক লাশ উদ্ধারের পরই মরদেহের চেহারা একনজর দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তারা। প্রিয়জনের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। সরকারী সং¯’াগুলোর পাশাপাশি ¯’ানীয়রা লঞ্চ ও ট্রলার নিয়ে উদ্ধার কাজে সহায়তায় করেছেন।
ব্যাগের ¯‘প: উদ্ধার হওয়া মোস্তফা লঞ্চের ভেতর থেকে প্রায় অর্ধশত বিভিন্ন হ্যান্ডব্যাগ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব ব্যাগের ভেতর ছিল বিস্কুট, চকলেট, কমলা, আপেলসহ শিশুদের বিভিন্ন খেলনাসামগ্রী, যা আর কোনোদিন পৌঁছবে না তাদের হাতে।
এখনও নিখোঁজ: জেলা প্রশাসন বলছে এখনও চারজন নিখোঁজ রয়েছেন। যদিও স্বজনদের দাবি নিখোঁজের সংখ্যা আরও বেশি। জেলা প্রশাসনের রেজিস্টার অনুযায়ী, নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জের শিবালয়ের বাসিন্দা ডুবে যাওয়া লঞ্চের বাবুর্চি মোহাম্মদ সোহরাব শেখ, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাসিন্দা আজিরুন্নেছা, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার সাহেদা বেগম ও একই উপজেলার আনোয়ারা বেগম। এছাড়া ওই লঞ্চের যাত্রী মোস্তফা মেহফুজসহ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা।
মামলা: ২৩ ফেব্রুয়ারী সোমবার পুলিশ বাদী হয়ে শিবালয় থানায় মামলা করেছে। এতে দুই নৌযানের চালক ও কর্মচারীদের আসামী করা হয়েছে বলে জানান শিবালয় থানার ওসি রকিবুজ্জামান। ২৪ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার নৌ আদালতে আরেকটি মামলা করা হবে বলে জানান সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের মুখ্য পরিদর্শক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, রোববার থেকে ঘটনা¯’লে অব¯’ান ও দুর্ঘটনায় দায়ীদের শনাক্ত করতে সময় লেগেছে। আজ দুর্ঘটনায় মামলা করা হবে।
মানবতার সেবায় ¯’ানীয় জনপ্রতিনিধি ও সমাজসেবক : ¯’ানীয় আরুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান খান মাসুম ও সমাজসেবক মোবারক হোসেন পান্নু নিখোঁজ যাত্রীদের জন্য আসা স্বজনদের জন্য খাবারের ব্যব¯’া করেন। এছাড়া লঞ্চ উদ্ধারের সঙ্গে সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন প্রশাসনের লোকদের জন্যও ছিল আপ্যায়নের ব্যব¯’া। অন্যদিকে স্বজনদের সঙ্গে সারারাতও কাটিয়েছেন তারা।
দুর্ঘটনায় মারা গেলেন যারা : এমভি মোস্তফা লঞ্চডুবিতে যারা মারা গেছেন তারা হলেন- মাগুরার শ্রীপুরের লাইলী বেগম (৬৫), মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের উজ্জ্বল মিয়ার ছেলে ইমরান (৮), বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক ফজলুর রহমান খান (৫৫) ও মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের সেলিম হোসেন (২২), কুষ্টিয়া সদরের নাসির উদ্দিন (৪০), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির ইমামুল (১৪), কুষ্টিয়া সদরের মেহেদী হাসান (৩০), ফরিদপুর সদরের নারগিস আক্তার (১১), রাজবাড়ী সদরের রাবেয়া বেগম (২২), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ইউনুস আলী (৪০), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের সুফিয়া বেগম (২৮), একই এলাকার নবীজান বেগম (৭০), রাজবাড়ী সদরের জয়নাল শেখ (৫০), মানিকগঞ্জের শিবালয়ের লতা আক্তার (২২), কুষ্টিয়ার খোকসার ইনামুল হক (১৮), কুষ্টিয়া কুমারখালীর ছাবু মিয়া (২৫), নড়াইলের হান্নানের মেয়ে হাফছা (৮), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মধুসূদন সাহা (৬০), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ফারুক হোসেনের দেড় বছরে মেয়ে ফারজানা আক্তার, ফরিদপুর সদরের রতন কুমার সরকার (৩৪) ও তার ছেলে পাপন (৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর রেবেকা খাতুন (৩৩) ও তার মেয়ে বিথী খাতুন (১৫), ছেলে রাইসান (১৪ মাস), ফরিদপুরের নগরকান্দার খোকন সরকারের ছেলে বাঁধন সরকার (৫), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর সোহরাব শেখের এক বছরের ছেলে জোনায়েদ শেখ, ফরিদপুরের শালথার অর্চনা মালো (৪৫), মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের লাবনী আক্তার (১৫), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নাসিমা আক্তার (৩৬), রাজবাড়ী সদরের অনিমা রানী (৬০), নড়াইলের নড়াগাতির আমেনা বেগম (৩৫), কুষ্টিয়ার লাঙ্গলকোটের আবুল হাসান (৬৫), একই এলাকার পরিমল ভৌমিক (৪৫), গোপালগঞ্জ সদরের আসলাম মোল্লা (৩৫), কুষ্টিয়ার মিরপুরের আসাদুল ইসলাম (২৮), ডুবে যাওয়া লঞ্চের ইঞ্জিনচালক মানিকগঞ্জের শিবালয়ের আবুল কাশেম (৪৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর মদিনা বেগম (৭৫), মানিকগঞ্জের শিবালয়ের অঞ্জলী রানী সূত্রধর (৬০), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ডলি খাতুন (৩৪), রাজবাড়ীর সদরের রহমান শেখ (৫৫), মেহেরপুর সদরের হায়দার আলী (৫০), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর রিনা আক্তার (২৩), কুষ্টিয়ার খোকসার গোলাম মোস্তফা (৫৫), ফরিদপুরের বোয়ালমারীর মুরাদ হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তার (২৫) ও তার ছয় বছরের মেয়ে মারজানা আক্তার, ফরিদপুরের শালথার অনিমা রানী মালো (৪৫), কুষ্টিয়া সদরের ডা. নবনীতা পাল (২৮), নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের আবদুর রহিমের আড়াই বছরের মেয়ে রিয়া মনি, নড়াইলের নড়াগাতির হোসাইন কবির (২৮), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের নূর হোসেনের আড়াই মাসের মেয়ে নুসরাত নূর, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের মনোয়ার হোসেনের দেড় বছরের ছেলে হোসাইন, ফরিদপুর সদরের স্বপন কুমার সরকার (৫০), গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শাহনাজ বেগম (৪৫), কুষ্টিয়া সদরের নাসির উদ্দিনের ছয় বছরের মেয়ে ময়না আক্তার, ফরিদপুরের শালথার চম্পা রানী (৫৮), নড়াইলের নড়াগাতির মুরাদ হোসেনের সাত বছরের মেয়ে কেয়ামনি, শেরপুরের নকলার লিটন মিয়া (৩০), ফরিদপুর সদরের মমতা বেগম (৪৯), কুষ্টিয়ার মিরপুরের শরীফ ইসলাম (২৫), রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির মঞ্জিলা বেগম (৪৫), রাজবাড়ীর পাংশার হালিমা বেগম (৪৫), রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের রুমা আক্তার (২৫), মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য ও রাজবাড়ী গোলন্দের বাসিন্দা নূর হোসেনের সাত বছরের ছেলে উৎসব, মানিকগঞ্জের শিবালয়ের রতন চন্দ্র সরকার (৫৫), রাজবাড়ী সদরের রেখা রানী সরকার (৪৫), কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ইউনুস শেখের আড়াই বছরের ফাতেমা আক্তার, রাজবাড়ী পাংশার সাবেরা বেগম (৫০), কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার দানেজ আলী (৬৯)। (দৈনিক যুগান্তর)