নিউইয়র্ক ১১:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

একজন জিএম কাদের

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৬
  • / ২২৮৩ বার পঠিত

ঢাকা: প্রায় দেড় যুগেরও কাছাকাছি সময় তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য। পূূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে নেই তেমন বিতর্ক। বড় ভাইয়ের সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনে অটল থাকতে গিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। যদিও সময়ের ব্যবধানে রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন তিনি। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের। যিনি জিএম কাদের নামেই পরিচিত। তার পিতা মকবুল হোসেন ছিলেন ভারতের কুচবিহারের দ্বীনহাটা সাব-ডিভিশনের একজন আইনজীবী। সেখানকার স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। আর মায়ের বাড়ি দ্বীনহাটা সীমান্ত নিকটবর্তী বাংলাদেশের লালমনিরহাটে। তবে তার জন্ম দ্বীনহাটাতেই। ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী তার জন্ম। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে জিএম কাদের অষ্টম। পরিবারের সবার বড় ছিলেন বোন। ভাইদের মধ্যে বড় এইচ এম এরশাদ। বর্তমানে বেঁচে আছেন ৩ ভাই, ৩ বোন। এর মধ্যে এক বোন মেরিনা রহমান সংসদ সদস্য। বাকিরা আছেন পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। বাকি এক ভাই, যিনি সবার ছোট তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
জন্মের কিছুদিন পরেই জিএম কাদের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রথমে নানাবাড়ি লালমনিরহাট জেলায় শিশুকালের কিছুদিন কাটে। সেখান থেকে রংপুর জেলায় চলে আসেন। রংপুরেই গড়ে উঠে পরিবারের বসতি। সেখানে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বেশির ভাগ সময় কাটান। এদিকে বড় ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ততদিনে সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। জিএম কাদেরের সঙ্গে তার বয়সের ব্যবধান প্রায় ১৮ বছর। ছুটি নিয়ে যখন এইচ এম এরশাদ গ্রামের বাড়ি রংপুরে বেড়াতে আসতেন, তখন ভাই-বোনদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতেন তিনি। এটা ওটা যা-ই চাইতো, বড় ভাই তাদের আবদার পূরণ করতেন নির্দ্বিধায়। সেসময় অবশ্য হলে গিয়ে সিনেমা দেখানোই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় আবদার। স্নেহের ছোট ভাই-বোনদের আবদার রক্ষায় এরশাদও ছিলেন অনেক বেশি তৎপর। জিএম কাদের তখনও খুব ছোট। সিনেমা হলের সিটে বসে পর্দা দেখতে পেতেন না তিনি। সামনের চেয়ারগুলো তার মাথার অনেক উপরে। আর তাই ছোট ভাইকে কোলে বসিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতেন বড় ভাই এইচ এম এরশাদ। জিএম কাদেরের ছোটবেলায় অনেক স্বপ্ন ছিল। কখনও চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন, কখনও পাইলট, কখনওবা আর্মি অফিসার। কখনও আবার স্বপ্ন দেখতেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাতারে দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর দলে শামিল হতে। তবে একটু বড় হওয়ার পর তিনি চেয়েছেন সুখী সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। যাতে জীবনের কোনও অনিশ্চয়তা না থাকে।
জিএম কাদেরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় রংপুরের লিচুবাগান প্রাইমারি স্কুলে। প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যের দিক থেকে বয়সের তুলনায় ছোটখাটো। সেসময় একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন তিনি। সবাই ভেবেছিল হেরে যাবেন কাদের। কেউ কেউ অবজ্ঞাও করেছে। কিন্তু প্রথম স্থানটা অধিকার করে আলোচনার সৃষ্টি করে দিলেন তিনি। ওটাই ছিল তার জীবনের প্রথম পুরস্কার। পুরস্কারের ট্রফিটাকে দীর্ঘদিন আগলে রেখেছেন। বারবার ট্রফিটার দিকে তাকিয়ে আনন্দ পেতেন। মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবসহ অন্যদেরও দেখাতেন। প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে তিনি রংপুর জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন উত্তারঞ্চেলের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান রংপুর কারমাইকেল কলেজে।
কারমাইকেল কলেজে তার জীবনে অন্যতম আরেকটা প্রাপ্তির ঘটনা ঘটে। সে বছর কলেজের ইংরেজি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। ফলাফল ঘোষণার সময় কলেজের অধ্যক্ষ একটু ভূমিকাই করলেন। বললেন, এবার ইংরেজি বিভাগ থেকে কেউ ফার্স্ট হয়নি। জিএম কাদের তখনও ভাবতে পারেননি তার নামটাই ঘোষণা হতে যাচ্ছে। বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হলো। পুরো কলেজজুড়ে তার পরিচিতি বেড়ে গেলো বহু গুণ। কে জানতো, সেদিনের কলেজে আঙিনায় পরিচিত হওয়া ছেলেটি একদিন দেশজুড়ে পরিচিত হবেন। ১৯৬৫ সালে জিএম কাদের কারমাইকেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বুয়েট)। ১৯৬৯ সালে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষণার অনেক আগেই ছাত্রাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে চাকরি হয়ে যাওয়ার খবর পান তিনি। ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পান। এরপর ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি চাকরিতে যোগাদান করেন। দেশজুড়ে তখন চলছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার বছর চারেক পর তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে ১ বছর চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন যমুনা অয়েলে।
১৯৭৬ সালে জিএম কাদের বিয়ে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী শেরিফাকে। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে শেরিফার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। এরপর প্রণয়। ৭-৮ বছর একসাথে চলার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুজনে। বড় ভাই এইচ এম এরশাদ তখন তার পাশে এসে দাঁড়ান। বিয়ের পর ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে নিজের বাসায় তোলেন। এরমধ্যে প্রমোশন পেয়ে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের হন জিএম (জেনারেল ম্যানেজার)। যা তার নামের প্রথম অংশের সঙ্গে বেশ শোভা পেতো। তারপর প্লানিং ও অপারেশন ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ততদিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু উলট-পালট হয়ে যায়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। ক্ষমতায় আসেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন সাত্তার। ক্ষমতায় আসেন স্বয়ং জিএম কাদেরের বড় ভাই। জিএম কাদের তখন রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে এরশাদের পতনের পর জিএম কাদেরকে চাকরি থেকে ওএসডি করা হয়। এরশাদ আটকের কয়েক দিন পর তিনি বড় ভাইয়ের মুক্তির জন্য ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। এরশাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তার। একসময় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান।
১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। সেসময় তার ওএসডি প্রত্যাহার করা হলেও চাকরিতে ফিরে যাননি তিনি। নিজেই অব্যাহতি দিয়ে দেন। ’৯৬ সালে এরশাদ জেলে থাকা অবস্থায় লালমনিহাট-৩ আসনে জয়ী হন জিএম কাদের। তারপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩ টার্ম তিনি এমপি ছিলেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কয়েকদিন পরেই তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ম সংসদে তিনি মহাজোট সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম ৩ বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী। এরপরের দু’বছর বাণিজ্যমন্ত্রী। জিএম কাদেরের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শামস বিন কাদের একটি বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ে শিক্ষকতা করছেন। শামস বিয়ে করেছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের মেয়েকে। জিএম কাদেরের মেয়ে ইসরাত জাহান কাদেরের বিয়ে হয়েছে অভিনেতা মাহফুজ আহমদের সঙ্গে। ইসরাত সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া বসবাস করছেন। এদিকে জিএম কাদের উত্তরায় নিজ বাসভবনে স্ত্রী, ছেলে ও তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য শামসও যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। (দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

একজন জিএম কাদের

প্রকাশের সময় : ০৮:০২:২১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০১৬

ঢাকা: প্রায় দেড় যুগেরও কাছাকাছি সময় তিনি ছিলেন সংসদ সদস্য। পূূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। রাজনীতিতে তাকে নিয়ে নেই তেমন বিতর্ক। বড় ভাইয়ের সিদ্ধান্তে নির্বাচন বর্জনে অটল থাকতে গিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়েছেন। যদিও সময়ের ব্যবধানে রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হচ্ছেন তিনি। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছোট ভাই ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদের। যিনি জিএম কাদের নামেই পরিচিত। তার পিতা মকবুল হোসেন ছিলেন ভারতের কুচবিহারের দ্বীনহাটা সাব-ডিভিশনের একজন আইনজীবী। সেখানকার স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন তিনি। আর মায়ের বাড়ি দ্বীনহাটা সীমান্ত নিকটবর্তী বাংলাদেশের লালমনিরহাটে। তবে তার জন্ম দ্বীনহাটাতেই। ১৯৪৮ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী তার জন্ম। ৪ ভাই ও ৫ বোনের মধ্যে জিএম কাদের অষ্টম। পরিবারের সবার বড় ছিলেন বোন। ভাইদের মধ্যে বড় এইচ এম এরশাদ। বর্তমানে বেঁচে আছেন ৩ ভাই, ৩ বোন। এর মধ্যে এক বোন মেরিনা রহমান সংসদ সদস্য। বাকিরা আছেন পরিবার নিয়ে ব্যস্ত। বাকি এক ভাই, যিনি সবার ছোট তিনি থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে।
জন্মের কিছুদিন পরেই জিএম কাদের পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। প্রথমে নানাবাড়ি লালমনিরহাট জেলায় শিশুকালের কিছুদিন কাটে। সেখান থেকে রংপুর জেলায় চলে আসেন। রংপুরেই গড়ে উঠে পরিবারের বসতি। সেখানে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের বেশির ভাগ সময় কাটান। এদিকে বড় ভাই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ততদিনে সেনাবাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা। জিএম কাদেরের সঙ্গে তার বয়সের ব্যবধান প্রায় ১৮ বছর। ছুটি নিয়ে যখন এইচ এম এরশাদ গ্রামের বাড়ি রংপুরে বেড়াতে আসতেন, তখন ভাই-বোনদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠতেন তিনি। এটা ওটা যা-ই চাইতো, বড় ভাই তাদের আবদার পূরণ করতেন নির্দ্বিধায়। সেসময় অবশ্য হলে গিয়ে সিনেমা দেখানোই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় আবদার। স্নেহের ছোট ভাই-বোনদের আবদার রক্ষায় এরশাদও ছিলেন অনেক বেশি তৎপর। জিএম কাদের তখনও খুব ছোট। সিনেমা হলের সিটে বসে পর্দা দেখতে পেতেন না তিনি। সামনের চেয়ারগুলো তার মাথার অনেক উপরে। আর তাই ছোট ভাইকে কোলে বসিয়ে সিনেমা দেখার সুযোগ করে দিতেন বড় ভাই এইচ এম এরশাদ। জিএম কাদেরের ছোটবেলায় অনেক স্বপ্ন ছিল। কখনও চেয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার হবেন, কখনও পাইলট, কখনওবা আর্মি অফিসার। কখনও আবার স্বপ্ন দেখতেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের কাতারে দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর দলে শামিল হতে। তবে একটু বড় হওয়ার পর তিনি চেয়েছেন সুখী সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ। যাতে জীবনের কোনও অনিশ্চয়তা না থাকে।
জিএম কাদেরের শিক্ষাজীবন শুরু হয় রংপুরের লিচুবাগান প্রাইমারি স্কুলে। প্রাইমারি স্কুলে পড়া অবস্থায় তিনি ছিলেন স্বাস্থ্যের দিক থেকে বয়সের তুলনায় ছোটখাটো। সেসময় একটা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে সবার দৃষ্টি কেড়েছিলেন তিনি। সবাই ভেবেছিল হেরে যাবেন কাদের। কেউ কেউ অবজ্ঞাও করেছে। কিন্তু প্রথম স্থানটা অধিকার করে আলোচনার সৃষ্টি করে দিলেন তিনি। ওটাই ছিল তার জীবনের প্রথম পুরস্কার। পুরস্কারের ট্রফিটাকে দীর্ঘদিন আগলে রেখেছেন। বারবার ট্রফিটার দিকে তাকিয়ে আনন্দ পেতেন। মাঝে মাঝে বন্ধু-বান্ধবসহ অন্যদেরও দেখাতেন। প্রাইমারি স্কুলে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে তিনি রংপুর জিলা স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে তিনি ওই স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন উত্তারঞ্চেলের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান রংপুর কারমাইকেল কলেজে।
কারমাইকেল কলেজে তার জীবনে অন্যতম আরেকটা প্রাপ্তির ঘটনা ঘটে। সে বছর কলেজের ইংরেজি রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন। প্রতিযোগিতায় স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অংশ নিয়েছিলেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীরাও। ফলাফল ঘোষণার সময় কলেজের অধ্যক্ষ একটু ভূমিকাই করলেন। বললেন, এবার ইংরেজি বিভাগ থেকে কেউ ফার্স্ট হয়নি। জিএম কাদের তখনও ভাবতে পারেননি তার নামটাই ঘোষণা হতে যাচ্ছে। বিজয়ী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হলো। পুরো কলেজজুড়ে তার পরিচিতি বেড়ে গেলো বহু গুণ। কে জানতো, সেদিনের কলেজে আঙিনায় পরিচিত হওয়া ছেলেটি একদিন দেশজুড়ে পরিচিত হবেন। ১৯৬৫ সালে জিএম কাদের কারমাইকেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ভর্তি হন পাকিস্তান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বর্তমানে বুয়েট)। ১৯৬৯ সালে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করেন। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর ফলাফল ঘোষণার অনেক আগেই ছাত্রাবস্থায় নারায়ণগঞ্জ ডক ইয়ার্ডে চাকরি হয়ে যাওয়ার খবর পান তিনি। ১৯৭০ সালের জানুয়ারী মাসে তিনি নিয়োগপত্র হাতে পান। এরপর ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি চাকরিতে যোগাদান করেন। দেশজুড়ে তখন চলছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার বছর চারেক পর তিনি ইরাক চলে যান। সেখানে ১ বছর চাকরি করে দেশে ফিরে আসেন। যোগ দেন যমুনা অয়েলে।
১৯৭৬ সালে জিএম কাদের বিয়ে করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের শিল্পী শেরিফাকে। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে শেরিফার সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। এরপর প্রণয়। ৭-৮ বছর একসাথে চলার পর বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন দুজনে। বড় ভাই এইচ এম এরশাদ তখন তার পাশে এসে দাঁড়ান। বিয়ের পর ছোট ভাই ও তার স্ত্রীকে নিজের বাসায় তোলেন। এরমধ্যে প্রমোশন পেয়ে গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের হন জিএম (জেনারেল ম্যানেজার)। যা তার নামের প্রথম অংশের সঙ্গে বেশ শোভা পেতো। তারপর প্লানিং ও অপারেশন ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। ততদিনে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বহু উলট-পালট হয়ে যায়।
১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। ক্ষমতায় আসেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ক্ষমতাচ্যুত হন সাত্তার। ক্ষমতায় আসেন স্বয়ং জিএম কাদেরের বড় ভাই। জিএম কাদের তখন রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না। ১৯৯০ সালের শেষের দিকে এরশাদের পতনের পর জিএম কাদেরকে চাকরি থেকে ওএসডি করা হয়। এরশাদ আটকের কয়েক দিন পর তিনি বড় ভাইয়ের মুক্তির জন্য ছোটাছুটি করতে শুরু করেন। এরশাদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু হয় তার। একসময় রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যান।
১৯৯৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন। সেসময় তার ওএসডি প্রত্যাহার করা হলেও চাকরিতে ফিরে যাননি তিনি। নিজেই অব্যাহতি দিয়ে দেন। ’৯৬ সালে এরশাদ জেলে থাকা অবস্থায় লালমনিহাট-৩ আসনে জয়ী হন জিএম কাদের। তারপর থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত টানা ৩ টার্ম তিনি এমপি ছিলেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যোগ দেয়ার কয়েকদিন পরেই তাকে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম প্রেসিডিয়ামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ম সংসদে তিনি মহাজোট সরকারের দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। প্রথম ৩ বছর বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী। এরপরের দু’বছর বাণিজ্যমন্ত্রী। জিএম কাদেরের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে শামস বিন কাদের একটি বেসরকারি বিশ্বদ্যিালয়ে শিক্ষকতা করছেন। শামস বিয়ে করেছেন সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলের মেয়েকে। জিএম কাদেরের মেয়ে ইসরাত জাহান কাদেরের বিয়ে হয়েছে অভিনেতা মাহফুজ আহমদের সঙ্গে। ইসরাত সন্তানদের নিয়ে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া বসবাস করছেন। এদিকে জিএম কাদের উত্তরায় নিজ বাসভবনে স্ত্রী, ছেলে ও তার পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য শামসও যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ায়। (দৈনিক মানবজমিন)