নিউইয়র্ক ০১:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

উপকূলে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী : টানা বর্ষণ, ঢল ও জোয়ারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:২৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অগাস্ট ২০১৫
  • / ৮৭৪ বার পঠিত

ঢাকা: ভারত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল, টানা বর্ষণ আর পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে পানিতে ভেসে আসা দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লক্ষীপুর, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও এসব এলাকার নি¤œাঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মাছের ঘের, চিংড়িঘের ও লবণের ঘের ভেসে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাকরিয়া, ডুমুরিয়া ও পাইকগাছায় জোয়ারের তোড়ে ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া ও রাজশাহীসহ সারা দেশে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে পদ্মা উত্তাল থাকায় নৌচলাচলে বিঘœ ঘটছে।
কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদরও রামু উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ আবারো বন্যার পানির তোপের মুখে পড়েছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকেই কক্সবাজারের এ চার উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের ২০ হাজার বসতবাড়ি এখন পানির নিচে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে জেলাজুড়ে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টিপাত চলছে। সেই সাথে ধমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে পানিবন্দী হাজার হাজার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন, কোথায়ও মাথাগোঁজার জায়গা পাচ্ছে না। সব বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যেখানে উঁচু উঁচু ভবন রয়েছে বর্তমানে সে ভবনগুলোতেও নেই কোনো থাকার ব্যবস্থা। সে ভবনে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব এলাকার কারো ঘরের চুলোয় আগুন জ্বলেনি ও রান্না করতে না পারায় শত শত পরিবারের লোকজন অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। অপর দিকে, কক্সবাজারে ঈদগাও বানের পানিতে ভেসে যাওয়া স্থানীয় আবুল কালামের ছেলে জুবাইর আহমদ (৫) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ইসলামাবাদে। গত শুক্রবার রাতে ওই এলাকার পাশের বিল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। অন্য দিকে, শনিবার বাকখালী রামু গর্জনিয়ার বাঁকখালী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া উপজাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কোমেনের প্রভাবে গত তিন দিনে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফের শাহপরীদ্বীপ, পেকুয়ার উপকূল এলাকার ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ার, অপর দিকে বন্যার পানি মিলিয়ে দুর্ভোগে পড়া হাজার হাজার মানুষের ত্রাহি অবস্থা। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার- টেকনাফ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এ সড়কে যান চালাচল গত শনিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এ দিকে, গত ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্তদের দুই দিন পর কোস্ট গার্ড, রেড ক্রিসেন্ট কর্মীরা গতকাল সকালে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
কোমেনের প্রভাব ও তিন-চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে কক্সবাজারের উপকূল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পাহাড়ি ঢল আর সামুদ্রিক নোনা পানিতে আবারো তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজারে চার উপজেলার স্কুল-মাদরাসাসহ বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো ডুবে আছে পানির নিচে। ভেসে গেছে শত শত মৎস্য খামার। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রত্যেকের ঘরে সংগ্রহ করে রাখা ধান ও চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব এলাকার কারো ঘরের চুলোয় আগুন জ্বলেনি, রান্নার করতে না পারায় শত শত পরিবারের লোকজন অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। গৃহপালিত গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষ।সেখানে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। এলাকাবাসী ভেলা ও নৌকায় করে যাতায়াত করছে। উপজেলার সাথে যোগাযোগের শাখা সড়ক গুলো ডুবে যাওয়ায় মানুষের দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। এক অবর্ণনীয় অবস্থা বিরাজ করছে সর্বত্র। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা আরো ভেঙে পড়েছে।
বিশেষ করে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বদরখালী, কোনাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বিএমচর, কৈয়ারবিল, চিরিঙ্গা, কাকারা, ফাশিয়াখালী, হারবাং, বরইতলি, লক্ষ্মারচর, চকরিয়া পৌরসভা, মগনামা, উজানটিয়া, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ১৫ হাজারেরও অধিক বসতবাড়ি পানির নিচে। রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার বসতবাড়ি গত শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। অপর দিকে, একদিকে উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল অপর দিকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। এর ফলে দুবিষহ জীবনযাপন করছে এসব এলাকার মানুষ। সড়কের ওপর পানি চলাচল করায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে অনেক জায়গায়।
হাজার হাজার বন্যাদুর্গতরা বর্তমানে সাইকোন শেল্টারে ও পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রায় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর। দীর্ঘ সময় সেখানে আশ্রয় নেয়ার কারনে দুর্গত পরিবারগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।
সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে বন্যার পানি দ্রুত সাগরে নেমে যেতে পারচ্ছে না। ফলে টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বাঁকখালী নদীর পানি সাত দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ফলে প্লাবিত এলাকাগুলো এখনো পানিতে একাকার হয়ে আছে। বন্যাকবলিত লোকজন বাসস্থান, খাদ্য ও পানিসহ নানা সংকটে সময় পার করছেন।
কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ না থাকায় উত্তর ধূরুং, লেমশীখালী, কৈয়ারবিল ও বড়ঘোপের দণি মুরালিয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারের পানি ঢুকেছে। প্রতিদিন সাগর থেকে সরাসরি লোকালয়ে সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকার আউশ ফসল ও বহু বসতঘর তলিয়ে গেছে।
এ দিকে চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলায় তৃতীয়বারের বন্যার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মূলত গত শনিবার ভোর থেকে আকস্মিকভাবে পাহাড়ি ঢলের পানিতে একাকার হয়ে যায় এসব জনপদ। বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়ায় ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলায় ৭০ হাজার হেক্টর চিংড়িঘেরের মাছ ভেসে গেছে। লাখ লাখ লোক খাবার সঙ্কটে পড়েছে। কোথাও খাবারের আয়োজন হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে মানববসতি ও গবাদিপশুর আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মানুষ আর গবাদিপশু এক সাথে বসবাস করছে এখানে। দুপুর ১২টা থেকে চকরিয়ার চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মহেশখালী ও মাতারবাড়ির সাথেও যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেলে ঝুঁকি নিয়ে বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতে গেলে একটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) ও একটি ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উল্টে যায়। তবে ভাগ্যক্রমে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান প্রত্যদর্শীরা। চিরিঙ্গা-বহদ্দারকাটা সড়কে যানবাহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
চট্টগ্রাম: প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগর, শঙ্খ ও কর্ণফুলি নদীর তীরবর্তী জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলার মানুষ আবারো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাঁশখালি ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী বলেন ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারে শেলবন, ছনুয়ার টেক, মধুখালি, এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু বলেন, ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া, সন্দিপপাড়া, রোশাংগিরিপাড়া, উত্তর প্রেমাশিয়া, দণি প্রেমাশিয়া, শেখ মুহাম্মদপাড়া, রহমত নগর আবার তলিয়ে গেছে। একইভাবে সাতকানিয়া আমিলাইষ, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, বাজালিয়া পুরানগড়, সদাহা কেঁওচিয়া পৌর সদর, চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল, পটিয়ার, শোভনদ-ী, আশিয়া, খরনা, কচুয়াই। আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর, পরৈকোড়া, বারশত, তৈলারদ্বিপ, বরুমছড়া, জুইদন্ডি, রায়পুর ইউনিয়নের শত শত গ্রাম তলিয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ভোলা: ভোলায় নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্ণিমার সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে পানি উচ্চতা বেড়েছে। এতে তলিয়ে গেছে জেলা সদর, দৌলতখান, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। জোয়ারের পানিতে ভেসে আহত হয়েছে সাত স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলোÑ সালমা, ইমা, রিনা, সুমাইয়া, জাভেদ, শান্তা ও ফারজানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোয়ারে পানিতে সদরের রাজাপুর, কাচিয়া, দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, মদনপুর, সৈয়দপুর, নেয়ামতপুর, মেদুয়া, মনপুরা উপজেলার দক্ষিন সাকুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া, মনপুরা, হাজিরহাট, চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী-মুকরী, ঢালচর, জাহানপুর, মাদ্রাজ, কলমি, নজরুল নগর, মুজিব নগর, নুরাবাদ, চর মানিকা, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভাসছে ওই সব এলাকার লাখো মানুষ। ঘর বাড়ি ছেড়ে কেউ কেউ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নারী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। এ দিকে, দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এতে নদীর উপকূলবর্তী মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চর পাতিলা এলাকায় জোয়ারে পানিতে ডুবে সাত স্কুলছাত্রী আহত হয়। তাদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, চরফ্যাশনে ১০টি ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দৌলতখানের বাসিন্দা মহিন জানান, সৈয়দপুরসহ উপজেলা বেশির ভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। ছোট ফেনী নদী এবং কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট থেকে ভারতের ধেয়ে আসা বন্যার পানিতে প্রতি দিনই ডুবে যাচ্ছে একের পর এক রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। গতকাল আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর উপজেলার উপজেলার শত শত গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। তার মধ্যে বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ উপজেলার দু-একটি পাকা সড়ক ছাড়া সব ক’টি সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার শতভাগ কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ৯০ শতাংশ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। বাঁশের সাঁকো, নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসী। জেলা শহর মাইজদী, নোয়াখালী পৌরসভা ও জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী পৌরসভার প্রায় সব ক’টি গ্রাম। বেগমগঞ্জের নরোত্তমপুর, মিরওয়ারীশপুর, মিরআলীপুর, লালপুর, গোপালপুর, দুর্গাপুর, কুতুবপুর, রসুলপুর, শরীফপুর, বেগমগঞ্জ, আলাইয়ারপুর, আমানউল্লাপুর, গোপালপুর, সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাও, চাষীরহাট, অম্বরনগর, নাটেশ^র, বজরা, বানুয়াই, কুশুল্লারবাগ, পাপুয়া, সোনাইমুড়ী. কাঁঠালী, নদনা জয়াগ, ইউনিয়ন সেনবাগসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও সেনবাগ পৌরসভার সব ক’টি গ্রামের অবস্থা নাজুক। এসব এলাকার শত শত মৎস্য প্রজেক্টের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে বাড়িতে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন। বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
ফেনী: টানা বর্ষণ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার প্রায় সবক’টি ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ও শর্শদী ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘর এখনো হাঁটু পানির নিচে। পানিবন্দী হয়ে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ছোট ধলিয়া, ডমুরুয়া, এলাহিগঞ্জ, বিরলী, রতনপুর, উজালিয়া, ভগবানপুর, শর্শদী ইউনিয়নের দণি আবুপুর গ্রাম পানিতে ভাসছে। এখানে ২৮টি শিাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অনেক মানুষ এসব স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সবকটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে এবং বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে।
কুমিল্লা: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে কুমিল্লার দেবিদ্বারে টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে বৃষ্টির পানিতে উপজেলা প্রশাসনের প্রধান সড়ক ও দেবিদ্বার উপজেলার এ বি এম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়াম ও পৌর মিলনায়তনে হাঁটুপানি জমেছে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর-ডোবা ভরাট করে আবসান নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি হয়ে রাস্তার ওপরে উঠে আসে ড্রেনের কালো ময়লা। এতে পৌরবাসীর পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
পিরোজপুর: ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার জোয়ারের এ জেলায় গত তিন দিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টি পড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়েছে দুই-তিন ফুট। জেলার নদীর চরগুলোর বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কৃষকেরা গবাদিপশু নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তলিয়ে গেছে জেলার ফসলি জমি। কোথাও কোথাও তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে মাটির রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণের। কৃষি জমি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আমন ধানের বিজতলা পানির নিচে রয়েছে।এ কারণে বীজ নষ্ট হওয়া আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জেলার কঁচা, বলেশ্বর ও সন্ধ্যা নদীতে প্রবল স্রোত বইছে।
বরিশাল: কয়েক দিনের লাগাতার অবিরাম বর্ষণে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দরিদ্র লোকজনের। বর্ষণে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের আধাপাকা ও কাঁচা সড়কের বিভিন্নস্থান খানাখন্দকে ভরে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ কাঁচা-আধাপাকা সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দিন-রাত বর্ষণের ফলে অনেকের মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। চাষিদের শাকসবজি তে তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী: পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে পায়রা ও শ্রীমন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মির্জাগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট উঁচুতে স্্েরাত প্রবাহিত হয়। জোয়ারের সময় নি¤œাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, বাড়িঘর, আউশের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। জোয়ারের সময় পটুয়াখালী-সুবিদখালী-বেতাগী মহাসড়কের পায়রা নদীর মনোহরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে পায়রা নদীর ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ও পিঁপড়াখালী গ্রামের উত্তর ইসলামাবাদ দাখিল মাদরাসার সামন থেকে প্রায় ২০০ ফুট পায়রা নদীর বেড়িবাঁধ স্্েরাতের তোড়ে ভেঙে গেছে।
খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৯ ন¤॥^র পোল্ডারের চাঁদগড়-জালিয়াখালী অংশে বুড়িভদ্রা নদীতে ভাটার সময় প্রায় ৫০ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত শুক্রবার বিকেলে প্রবল বৃষ্টিতে নদীতে ভাটার সময় দুর্বল বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ ফুট নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
পাইকগাছায় নি¤œচাপের প্রভাবে শিবসা-কপোতাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর উপচেপড়া পানিতে পৌরবাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত শনিবার সকালে শিবসার জোয়ারের উপচেপড়া পানিতে পৌরবাজারের কাঁচাবাজার, কাপড়পট্টি, কাঁকড়া মার্কেট, চিংড়ি বিপণন মার্কেটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।
বগুড়া: দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে এখানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে শহরের অনেক রাস্তা পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বগুড়ায় দুই দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পানির মধ্যে মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির নিচে অনেক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার কারণে পথচারীদের যাতায়াত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সেই সাথে রিকশা, অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনের ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
নওগাঁ: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে নওগাঁতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও যানবাহনে মানুষের চলাচল হ্রাস পেয়েছে। চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।(দৈনিক নয়া দিগন্ত)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

উপকূলে ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী : টানা বর্ষণ, ঢল ও জোয়ারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশের সময় : ০৬:২৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ অগাস্ট ২০১৫

ঢাকা: ভারত থেকে ধেয়ে আসা পাহাড়ি ঢল, টানা বর্ষণ আর পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার, নোয়াখালী, ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কক্সবাজার থেকে পানিতে ভেসে আসা দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া লক্ষীপুর, ভোলা, পিরোজপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা ও এসব এলাকার নি¤œাঞ্চল অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব স্থানে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মাছের ঘের, চিংড়িঘের ও লবণের ঘের ভেসে গেছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাকরিয়া, ডুমুরিয়া ও পাইকগাছায় জোয়ারের তোড়ে ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় চরম খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া ও রাজশাহীসহ সারা দেশে ভারী বর্ষণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে পদ্মা উত্তাল থাকায় নৌচলাচলে বিঘœ ঘটছে।
কক্সবাজার: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের ক্ষতি কাটিয়ে না উঠতেই কক্সবাজারের চকরিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদরও রামু উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষ আবারো বন্যার পানির তোপের মুখে পড়েছে। গত শুক্রবার বিকেল থেকেই কক্সবাজারের এ চার উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের ২০ হাজার বসতবাড়ি এখন পানির নিচে। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। গত শুক্রবার ভোর থেকে জেলাজুড়ে থেমে থেমে মুষলধারে বৃষ্টিপাত চলছে। সেই সাথে ধমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে পানিবন্দী হাজার হাজার লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছেন, কোথায়ও মাথাগোঁজার জায়গা পাচ্ছে না। সব বাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যেখানে উঁচু উঁচু ভবন রয়েছে বর্তমানে সে ভবনগুলোতেও নেই কোনো থাকার ব্যবস্থা। সে ভবনে লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব এলাকার কারো ঘরের চুলোয় আগুন জ্বলেনি ও রান্না করতে না পারায় শত শত পরিবারের লোকজন অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। অপর দিকে, কক্সবাজারে ঈদগাও বানের পানিতে ভেসে যাওয়া স্থানীয় আবুল কালামের ছেলে জুবাইর আহমদ (৫) নামের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ইসলামাবাদে। গত শুক্রবার রাতে ওই এলাকার পাশের বিল থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। অন্য দিকে, শনিবার বাকখালী রামু গর্জনিয়ার বাঁকখালী নদী থেকে পাহাড়ি ঢলে ভেসে যাওয়া উপজাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
কোমেনের প্রভাবে গত তিন দিনে কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফের শাহপরীদ্বীপ, পেকুয়ার উপকূল এলাকার ৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একদিকে পূর্ণিমার প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ার, অপর দিকে বন্যার পানি মিলিয়ে দুর্ভোগে পড়া হাজার হাজার মানুষের ত্রাহি অবস্থা। মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজার- টেকনাফ মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এ সড়কে যান চালাচল গত শনিবার সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এ দিকে, গত ঘূর্ণিঝড় কোমেনের আঘাতে টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপে ক্ষতিগ্রস্তদের দুই দিন পর কোস্ট গার্ড, রেড ক্রিসেন্ট কর্মীরা গতকাল সকালে উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করেছে।
কোমেনের প্রভাব ও তিন-চার ফুট উচ্চতার জোয়ারে কক্সবাজারের উপকূল এলাকার কয়েক লাখ মানুষ পাহাড়ি ঢল আর সামুদ্রিক নোনা পানিতে আবারো তলিয়ে গেছে।
কক্সবাজারে চার উপজেলার স্কুল-মাদরাসাসহ বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনো ডুবে আছে পানির নিচে। ভেসে গেছে শত শত মৎস্য খামার। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী না পাওয়ায় অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রত্যেকের ঘরে সংগ্রহ করে রাখা ধান ও চাল পানিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে এসব এলাকার কারো ঘরের চুলোয় আগুন জ্বলেনি, রান্নার করতে না পারায় শত শত পরিবারের লোকজন অর্ধাহারে দিন যাপন করছে। গৃহপালিত গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি নিয়েও বিপাকে পড়েছে মানুষ।সেখানে চলছে ত্রাণের জন্য হাহাকার। এলাকাবাসী ভেলা ও নৌকায় করে যাতায়াত করছে। উপজেলার সাথে যোগাযোগের শাখা সড়ক গুলো ডুবে যাওয়ায় মানুষের দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। এক অবর্ণনীয় অবস্থা বিরাজ করছে সর্বত্র। এ ছাড়া বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামীণ সড়কগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা আরো ভেঙে পড়েছে।
বিশেষ করে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বদরখালী, কোনাখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বিএমচর, কৈয়ারবিল, চিরিঙ্গা, কাকারা, ফাশিয়াখালী, হারবাং, বরইতলি, লক্ষ্মারচর, চকরিয়া পৌরসভা, মগনামা, উজানটিয়া, পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ১৫ হাজারেরও অধিক বসতবাড়ি পানির নিচে। রামু ও কক্সবাজার সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার বসতবাড়ি গত শুক্রবার রাত থেকে পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে। অপর দিকে, একদিকে উজান থেকে নেমে আসছে পাহাড়ি ঢল অপর দিকে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। এর ফলে দুবিষহ জীবনযাপন করছে এসব এলাকার মানুষ। সড়কের ওপর পানি চলাচল করায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে অনেক জায়গায়।
হাজার হাজার বন্যাদুর্গতরা বর্তমানে সাইকোন শেল্টারে ও পলিথিনের তাঁবু টাঙিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে আশ্রায় নিয়েছে আঞ্চলিক মহাসড়কের ওপর। দীর্ঘ সময় সেখানে আশ্রয় নেয়ার কারনে দুর্গত পরিবারগুলোতে খাবার ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব।
সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে বন্যার পানি দ্রুত সাগরে নেমে যেতে পারচ্ছে না। ফলে টিউবওয়েলগুলো পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বাঁকখালী নদীর পানি সাত দিন ধরে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বৃষ্টিপাতের ফলে প্লাবিত এলাকাগুলো এখনো পানিতে একাকার হয়ে আছে। বন্যাকবলিত লোকজন বাসস্থান, খাদ্য ও পানিসহ নানা সংকটে সময় পার করছেন।
কুতুবদিয়ায় বেড়িবাঁধ না থাকায় উত্তর ধূরুং, লেমশীখালী, কৈয়ারবিল ও বড়ঘোপের দণি মুরালিয়ায় পূর্ণিমার জোয়ারের পানি ঢুকেছে। প্রতিদিন সাগর থেকে সরাসরি লোকালয়ে সমুদ্রের লোনা পানি ঢুকে বিস্তীর্ণ এলাকার আউশ ফসল ও বহু বসতঘর তলিয়ে গেছে।
এ দিকে চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলায় তৃতীয়বারের বন্যার মারাত্মক অবনতি ঘটেছে। মূলত গত শনিবার ভোর থেকে আকস্মিকভাবে পাহাড়ি ঢলের পানিতে একাকার হয়ে যায় এসব জনপদ। বন্যায় চকরিয়া ও পেকুয়ায় ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কট ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। এসব উপজেলায় ৭০ হাজার হেক্টর চিংড়িঘেরের মাছ ভেসে গেছে। লাখ লাখ লোক খাবার সঙ্কটে পড়েছে। কোথাও খাবারের আয়োজন হলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষগুলো। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া আঞ্চলিক মহাসড়কটি বর্তমানে মানববসতি ও গবাদিপশুর আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। মানুষ আর গবাদিপশু এক সাথে বসবাস করছে এখানে। দুপুর ১২টা থেকে চকরিয়ার চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে মহেশখালী ও মাতারবাড়ির সাথেও যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গতকাল বিকেলে ঝুঁকি নিয়ে বন্যার্ত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার চেষ্টা করতে গেলে একটি চাঁদের গাড়ি (জিপ) ও একটি ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উল্টে যায়। তবে ভাগ্যক্রমে কেউ হতাহত হয়নি বলে জানান প্রত্যদর্শীরা। চিরিঙ্গা-বহদ্দারকাটা সড়কে যানবাহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
চট্টগ্রাম: প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও পূর্ণিমার কারণে অস্বাভাবিক জোয়ারে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বঙ্গোপসাগর, শঙ্খ ও কর্ণফুলি নদীর তীরবর্তী জেলার বাঁশখালী, সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলার মানুষ আবারো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাঁশখালি ছনুয়া ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী বলেন ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার কারণে সাগরের অস্বাভাবিক জোয়ারে শেলবন, ছনুয়ার টেক, মধুখালি, এলাকার বেরিবাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে গেছে। খানখানাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু বলেন, ইউনিয়নের মৌলভিপাড়া, সন্দিপপাড়া, রোশাংগিরিপাড়া, উত্তর প্রেমাশিয়া, দণি প্রেমাশিয়া, শেখ মুহাম্মদপাড়া, রহমত নগর আবার তলিয়ে গেছে। একইভাবে সাতকানিয়া আমিলাইষ, কালিয়াইশ, খাগরিয়া, বাজালিয়া পুরানগড়, সদাহা কেঁওচিয়া পৌর সদর, চন্দনাইশ উপজেলার ধোপাছড়ি, দোহাজারী, সাতবাড়িয়া, বৈলতলী, বরমা, বরকল, পটিয়ার, শোভনদ-ী, আশিয়া, খরনা, কচুয়াই। আনোয়ারা উপজেলার হাইলধর, পরৈকোড়া, বারশত, তৈলারদ্বিপ, বরুমছড়া, জুইদন্ডি, রায়পুর ইউনিয়নের শত শত গ্রাম তলিয়ে লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ভোলা: ভোলায় নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্ণিমার সৃষ্ট জোয়ারের পানিতে পানি উচ্চতা বেড়েছে। এতে তলিয়ে গেছে জেলা সদর, দৌলতখান, মনপুরা ও চরফ্যাশন উপজেলার অন্তত ৬০টি গ্রাম। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন লাখো মানুষ। জোয়ারের পানিতে ভেসে আহত হয়েছে সাত স্কুল শিক্ষার্থী। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলোÑ সালমা, ইমা, রিনা, সুমাইয়া, জাভেদ, শান্তা ও ফারজানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জোয়ারে পানিতে সদরের রাজাপুর, কাচিয়া, দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর, মদনপুর, সৈয়দপুর, নেয়ামতপুর, মেদুয়া, মনপুরা উপজেলার দক্ষিন সাকুচিয়া, উত্তর সাকুচিয়া, মনপুরা, হাজিরহাট, চরফ্যাশন উপজেলার কুকরী-মুকরী, ঢালচর, জাহানপুর, মাদ্রাজ, কলমি, নজরুল নগর, মুজিব নগর, নুরাবাদ, চর মানিকা, হাজারীগঞ্জ ইউনিয়নের ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ভাসছে ওই সব এলাকার লাখো মানুষ। ঘর বাড়ি ছেড়ে কেউ কেউ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে নারী ও শিশুরা বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। এ দিকে, দুপুর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভারী বর্ষণ ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এতে নদীর উপকূলবর্তী মানুষ চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। চর পাতিলা এলাকায় জোয়ারে পানিতে ডুবে সাত স্কুলছাত্রী আহত হয়। তাদের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, চরফ্যাশনে ১০টি ইউনিয়নে অন্তত ১০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দৌলতখানের বাসিন্দা মহিন জানান, সৈয়দপুরসহ উপজেলা বেশির ভাগ নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে।
নোয়াখালী: নোয়াখালীতে বন্যার পরিস্থিতি আরো অবনতি ঘটেছে। ছোট ফেনী নদী এবং কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্ট থেকে ভারতের ধেয়ে আসা বন্যার পানিতে প্রতি দিনই ডুবে যাচ্ছে একের পর এক রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর। গতকাল আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী, চাটখিল, সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সুবর্ণচর উপজেলার উপজেলার শত শত গ্রাম পানিতে ডুবে গেছে। তার মধ্যে বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ উপজেলার দু-একটি পাকা সড়ক ছাড়া সব ক’টি সড়ক হাঁটু পরিমাণ পানিতে ডুবে গেছে। এসব এলাকার শতভাগ কাঁচা রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ৯০ শতাংশ বাড়িতে পানি উঠে গেছে। বাঁশের সাঁকো, নৌকা দিয়ে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসী। জেলা শহর মাইজদী, নোয়াখালী পৌরসভা ও জেলার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র চৌমুহনী পৌরসভার প্রায় সব ক’টি গ্রাম। বেগমগঞ্জের নরোত্তমপুর, মিরওয়ারীশপুর, মিরআলীপুর, লালপুর, গোপালপুর, দুর্গাপুর, কুতুবপুর, রসুলপুর, শরীফপুর, বেগমগঞ্জ, আলাইয়ারপুর, আমানউল্লাপুর, গোপালপুর, সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাও, চাষীরহাট, অম্বরনগর, নাটেশ^র, বজরা, বানুয়াই, কুশুল্লারবাগ, পাপুয়া, সোনাইমুড়ী. কাঁঠালী, নদনা জয়াগ, ইউনিয়ন সেনবাগসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও সেনবাগ পৌরসভার সব ক’টি গ্রামের অবস্থা নাজুক। এসব এলাকার শত শত মৎস্য প্রজেক্টের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে কয়েক শত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় অনেকে বাড়িতে তালা দিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্রে চলে গেছেন। বন্যার পানিতে বাড়ি-ঘর রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছে গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
ফেনী: টানা বর্ষণ ও কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানিতে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার প্রায় সবক’টি ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ও শর্শদী ইউনিয়নের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এসব এলাকার বেশির ভাগ গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাড়িঘর এখনো হাঁটু পানির নিচে। পানিবন্দী হয়ে হাজার হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। দেখা গেছে, ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের ছোট ধলিয়া, ডমুরুয়া, এলাহিগঞ্জ, বিরলী, রতনপুর, উজালিয়া, ভগবানপুর, শর্শদী ইউনিয়নের দণি আবুপুর গ্রাম পানিতে ভাসছে। এখানে ২৮টি শিাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। অনেক মানুষ এসব স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। সবকটি ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে এবং বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে।
কুমিল্লা: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে কুমিল্লার দেবিদ্বারে টানা দুই দিনের ভারী বর্ষণে বৃষ্টির পানিতে উপজেলা প্রশাসনের প্রধান সড়ক ও দেবিদ্বার উপজেলার এ বি এম গোলাম মোস্তফা স্টেডিয়াম ও পৌর মিলনায়তনে হাঁটুপানি জমেছে। অপরিকল্পিতভাবে পুকুর-ডোবা ভরাট করে আবসান নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় একটু বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি হয়ে রাস্তার ওপরে উঠে আসে ড্রেনের কালো ময়লা। এতে পৌরবাসীর পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
পিরোজপুর: ঘূর্ণিঝড় কোমেন ও পূর্ণিমার জোয়ারের এ জেলায় গত তিন দিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টি পড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেড়েছে দুই-তিন ফুট। জেলার নদীর চরগুলোর বাসিন্দারা পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। কৃষকেরা গবাদিপশু নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তলিয়ে গেছে জেলার ফসলি জমি। কোথাও কোথাও তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে মাটির রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী জনসাধারণের। কৃষি জমি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আমন ধানের বিজতলা পানির নিচে রয়েছে।এ কারণে বীজ নষ্ট হওয়া আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। জেলার কঁচা, বলেশ্বর ও সন্ধ্যা নদীতে প্রবল স্রোত বইছে।
বরিশাল: কয়েক দিনের লাগাতার অবিরাম বর্ষণে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দরিদ্র লোকজনের। বর্ষণে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের আধাপাকা ও কাঁচা সড়কের বিভিন্নস্থান খানাখন্দকে ভরে গেছে। এ ছাড়া উপজেলার অভ্যন্তরীণ কাঁচা-আধাপাকা সড়কগুলো কর্দমাক্ত হয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দিন-রাত বর্ষণের ফলে অনেকের মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। চাষিদের শাকসবজি তে তলিয়ে গেছে।
পটুয়াখালী: পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে পায়রা ও শ্রীমন্ত নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে মির্জাগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গতকাল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে চার-পাঁচ ফুট উঁচুতে স্্েরাত প্রবাহিত হয়। জোয়ারের সময় নি¤œাঞ্চল ও বেড়িবাঁধের বাইরে বসবাসকারী মানুষ সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, বাড়িঘর, আউশের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। জোয়ারের সময় পটুয়াখালী-সুবিদখালী-বেতাগী মহাসড়কের পায়রা নদীর মনোহরখালী ফেরিঘাটের গ্যাংওয়ে তলিয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে পায়রা নদীর ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে ও পিঁপড়াখালী গ্রামের উত্তর ইসলামাবাদ দাখিল মাদরাসার সামন থেকে প্রায় ২০০ ফুট পায়রা নদীর বেড়িবাঁধ স্্েরাতের তোড়ে ভেঙে গেছে।
খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ২৯ ন¤॥^র পোল্ডারের চাঁদগড়-জালিয়াখালী অংশে বুড়িভদ্রা নদীতে ভাটার সময় প্রায় ৫০ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত শুক্রবার বিকেলে প্রবল বৃষ্টিতে নদীতে ভাটার সময় দুর্বল বেড়িবাঁধের প্রায় ৫০ ফুট নদীতে বিলীন হয়ে যায়।
পাইকগাছায় নি¤œচাপের প্রভাবে শিবসা-কপোতাসহ বিভিন্ন নদ-নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীর উপচেপড়া পানিতে পৌরবাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত শনিবার সকালে শিবসার জোয়ারের উপচেপড়া পানিতে পৌরবাজারের কাঁচাবাজার, কাপড়পট্টি, কাঁকড়া মার্কেট, চিংড়ি বিপণন মার্কেটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।
বগুড়া: দুই দিনের অবিরাম বর্ষণে এখানে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে শহরের অনেক রাস্তা পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় চলাচল দুরূহ হয়ে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে বগুড়ায় দুই দিন ধরে অবিরাম বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃষ্টির পানির মধ্যে মানুষের চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। পানির নিচে অনেক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ার কারণে পথচারীদের যাতায়াত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। সেই সাথে রিকশা, অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহনের ভাড়া বেড়ে গেছে। অনেক রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
নওগাঁ: ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে নওগাঁতে গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গত শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিপাতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। হাটবাজার, রাস্তাঘাট ও যানবাহনে মানুষের চলাচল হ্রাস পেয়েছে। চরম দুর্ভোগে খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।(দৈনিক নয়া দিগন্ত)