উচ্চ আদালতে আপীলে কাদের সিদ্দিকীর মনোনয়নপত্র বৈধ
- প্রকাশের সময় : ০৩:০২:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৫
- / ৮৯০ বার পঠিত
টাঙ্গাইল: বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম এর বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্র উচ্চ আদালতে বৈধ হওয়াসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় পাল্টে গেছে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের উপ-নির্বাচনের নির্বাচনী চিত্র। এ আসনটি আওয়ামী সমর্থক অধুষ্যিত হলেও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী (বীরোত্তম)-এর প্রতিবাদী ভূমিকাকেও গভীর শ্রদ্ধায় রেখেছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের এ এলাকাবাসী। এরই কৃতজ্ঞতাবোধের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগ থেকে তার সমতুল্য কোন প্রার্থী না থাকায় এ আসনে কাদের সিদ্দিকীর বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয় ভোটারদের তথ্যে জানা গেছে।
জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী বহিস্কৃত হওয়াসহ গত ১ সেপ্টেম্বর তিনি সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনটি শূন্য হয়। নির্বাচন কমিশন এ শূন্য আসটির ১০ নভেম্বর নির্বাচনী তারিখ নির্ধারণ করায় এ আসেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ১১ অক্টোবর দাখিলের শেষ দিন মনোনয়নপত্র দাখিলও করেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী (বীরউত্তম) অগ্রনী ব্যাংক টাঙ্গাইল শাখা থেকে ১৯৯৪ সালে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ঋন গ্রহণ করেন তার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সোনার বাংলা প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানের নামে। এই ঋন এখন পর্যন্ত পরিশোধ না করায় তিনি ঋন খেলাপী হন। এ কারণে মনোনয়ন পত্র বাছাইয়ের শেষ দিন ১৩ অক্টোবর তার মনোনয়ন পত্র বাতিল করা হয়। পাশাপাশি তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকী সোনার বাংলা প্রকৌশলী প্রতিষ্ঠানের সহ-সভাপতি এবং ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার থাকায় রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আলিমুজ্জামান তার মনোনয়ন পত্রও বাতিল করেন। ঋন খেলাপীর দায়ে কাদের সিদ্দিকী ও তার স্ত্রী নাসরিন কাদের সিদ্দিকীসহ মোট ৪ জনের মনোনয়ন পত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। একই দিন আসটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি ১০ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষনা করেন রিটার্নিং অফিসার।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের নির্বাচনে তার প্রার্থীতা বাতিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০ অক্টোবর উচ্চ আদালতের বেঞ্চে রিট আবেদন করেন। বুধবার আবেদনটির শুনানীতে ওই বেঞ্চ তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন।
এদিকে সরেজমিন ঘুড়ে পাওয়া তথ্য মতে, টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) উপ-নির্বাচনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদের সিদ্দিকীর বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্র উচ্চ আদালতে বৈধ হওয়াসহ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সম্ভাবনা দেখা দেয়ায় পাল্টে গেছে এ এলাকার নির্বাচনী চিত্র। আওয়ামী সমর্থক অধুষ্যিত আসনটিতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ ও পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে কাদের সিদ্দিকীর প্রতিবাদী ভূমিকা ব্যাপক প্রশংসনীয়। স্বাধীনতার স্বপক্ষের এ এলাকাবাসী এ আসনের নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বি কাদের সিদ্দিকীর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও জাতির জনক হত্যার প্রতিবাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেছেন। এরই কৃতজ্ঞতাবোধের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামীলীগ থেকে তার সমতুল্য কোন প্রার্থী না থাকায় এ আসনটিতে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বিজয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে উঠেছে বলে এলাকাবাসীর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধ ও আওয়ামী রাজনীতির সূতিকাগার খ্যাত টাঙ্গাইল-৪ আসনের কালিহাতী সদরের রহমত, মজিবর, ছাতিহাটির কুদরত, বল্লার রহিমসহ যোকারচরের মোতালেবসহ নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেকে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনিত প্রার্থী হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী গত দু’বছর যাবৎ তিনি কালিহাতীর রাজনীতিতে অবাঞ্চিত ও এলাকার জনশ্রুতি শূণ্য। যার ফলে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হন তিনি। টাঙ্গাইল-৪ কালিহাতী আসনে বিতর্কিত এই প্রার্থী মনোনয়ন পাওয়ায় চরম হতাশ হয়েছেন সর্বস্তরের জনসাধারণ।
তারা আরো জানায়, মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নির্বাচনী এলাকার অনেক স্থানেই অবস্থান বা প্রবেশ করতে পারে নাই। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রতিষ্ঠাতা আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মত এ আসনের হেবিওয়েট প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা গ্রহণযোগ্যতায় বিষদ ফারাক রয়েছে তেমন প্রার্থীকে গ্রহণযোগ্য বলেও মনে করছেন না স্বাধীনতার স্বপক্ষের এ এলাকাবাসী।
এলাকাবাসীর মতামত, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যদি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ ও গ্রহণযোগ্য আওয়ামী রাজনীতিবিদ মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডুকে এ আসনটিতে মনোনয়ন দিত তাহলে কাদের সিদ্দিকীর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই এর সম্ভাবনা ছিল। স্বাধীনতার স্বপক্ষের এ আসটির নি¤œ থেকে উচ্চ পর্যায়ের মানুষের অন্তরে স্থান পাওয়া ব্যক্তিত্ব প্রবীণ আওয়ামী রাজনীতিবিদ মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডুর দ্বারা আসনটি রক্ষাও সম্ভব ছিল বলে মনে করেন অনেকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যেহেতু হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী পেয়েছেন তাই তার পক্ষেই দলীয় নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী মাঠে কাজ করবেন। কাদের সিদ্দিকী যত বড় ও প্রভাবশালী নেতাই হোন না কেন আওয়ামী প্রার্থীর কাছে তার পরাজয় হবে বলেই মন্তব্য করেন তিনি।
কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী বি.কম বলেন, কালিহাতীর নির্বাচনী মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে। এ আসনটির সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ স্বাধীনতার স্বপক্ষের অংশীদার, আর আওয়ামীলীগ স্বাধীনতার পক্ষের দল। তাই এ দলের প্রার্থীকেই তারা সমর্থন দেবেন বলেই মনে করছেন তিনি।
অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ ও ‘জাতির জনক’ হত্যার প্রতিবাদকারী বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী তার পক্ষে ভোটারদের বিপুল সমর্থন জোগাবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। কেননা বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী’র বীরত্ব গাঁথা স্বাধীনতাযুদ্ধে সখীপুরের পাশাপাশি এ আসনটিতে মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার নির্মাণ করেছিলেন। এ কারণে তার সাথে যারা যুদ্ধ করেছেন ও সমর্থন দিয়েছেন তারা অবশ্যই এ উপ-নির্বাচনে কাদের সিদ্দিকীকে বেছে নেবেন। এর ফলেই তার বিজয় সুনিশ্চিত বলেই মনে করছেন এ এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, ১০ নভেম্বর এ আসনিটর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।