অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই
- প্রকাশের সময় : ০৮:৫০:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০১৪
- / ১০২৫ বার পঠিত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর সাবেক জিএস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই। গত ২২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে এ ঘোষণা দেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি ৬ ছেলে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার নামাজে জানাযার ব্যাপারে এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অধ্যাপক গোলাম আযমের রক্তচাপ সকালে আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। দুর্বলতার কারণে কথা বলতে পারছিলেন না তিনি। রক্তচাপ অনেক কমে যাওয়ায় দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। পক্ষাঘাতগ্রস্ত (প্যারালাইজড) হওয়ায় তার দেহের নিচের অংশ নাড়াচাড়া করতে পারছিলেন না। সন্ধ্যার পর তার অবস্থা আরো অবনতি হয়। পরে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। রাত ১০ টা ১০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।
সরকারি ঘোষাণা: রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করেছেন। রাত ১০টা ১০ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। এ সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সবাই সমস্বরে বলে উঠেন “ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”। এ সময় একজন বলে উঠেন, “আর কত লাশ চাই।” তিনি জানান, কয়েদি হিসেবে তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমরা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে লাশ হস্তান্তর করবো। কারা কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিবেন।
পরিবারের বক্তব্য: অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী রাত ১২টা ১৫ মিনিটে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে মৃত্যুর কারণ প্রসঙ্গে বলেন, এ ব্যাপারে ডাক্তারগণ ভালো বলতে পারবেন। তবে তারা আন্তরিকভাবে আমার আব্বার চিকিৎসা করেছেন। এ জন্য আমরা ডাক্তারদের কাছে কৃতজ্ঞ। নামাজে জানাযা ও দাফন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২/১ দিন পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। কারণ আমাদের ৫ ভাইসহ অনেক আত্মীয় স্বজন দেশের বাইরে রয়েছেন। তাদের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
পোষ্টমর্টেম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পোষ্টমর্টেম না করেই লাশ হস্তান্তর করার জন্য আমরা সরকারের কাছে আবেদন করেছি। মগবাজার কাজী অফিস লেনে পারিবারিক গোরস্থানেই তাকে সমাহিত করা হবে বলে তিনি জানান।
আইনজীবীর বক্তব্য: রাত ১২টা ১০ মিনিটে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তার আইনজীবী এডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযমের শেষ অসিয়ত অনুযায়ী তার নামাজে জানাযার ইমামতির জন্য জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অথবা নায়েবে আমীর আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্যারোলে মুক্তি দেয়া প্রয়োজন। সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে তার জীবনের শেষ অসিয়ত পূরণে সহযোগিতা করবেন বলে আশা করি।
এর আগে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুল মজিদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহ থেকে তিনি কার্ডিয়াক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। বৃহস্প্রতিবার সকাল থেকে তার রক্তচাপ কমে যাচ্ছিল। তার নাড়ির স্পন্দন উঠা-নামা করছিল। অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিচ্ছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করলে মাথা নেড়ে এবং চোখের ইশারায় সাড়া দিতে পারছেন। তার হাতে ভেইন (শিরা) পাওয়া যায়নি বলে তার ঘাড়ে স্যালাইন পুশ করা হচ্ছে। খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ কমে গেছে। সকালে রক্তচাপ ছিল ৬০/৪০। রাত ৮টার দিকে তার রক্তচাপ ৭৫-৪৫ ছিল বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (সাবেক) আব্দুল্লাহিল আমান আযমী। উল্লেখ্য, একজন স্বাভাবিক মানুষের রক্তচাপ ১২০/৮০’র মধ্যে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারী থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে রয়েছেন। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অধ্যাপক গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে। রায় ঘোষণার পরে ডিফেন্স টীমের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক ঘোষণা দেন আপিল করার। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, এ রায় ন্যায়ভ্রষ্ট ও আবেগতাড়িত। আমরা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত। আইনের দৃষ্টিতে এ রায় কোন রায়ই নয়। তিনি বলেন, সারা দুনিয়ার ফৌজদারী মামলার ইতিহাসে এমন আরেকটি রায় খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা এটা সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই প্রসিকিউশন তার বিরুদ্ধে আনীত ৬১টি অভিযোগের একটিও প্রমাণ করতে পারেন নাই। এটা প্রসিকিউশনের চরম ব্যর্থতা।
আপিলের শুনানির দিন ধার্য ছিল ২ ডিসেম্বর: অধ্যাপক গোলাম আযমের করা আপিলের শুনানির জন্য আগামী ২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ শুনানির এই তারিখ ধার্য করেন। বেঞ্চের অপর চার বিচারপতি হলেন-বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী।
আপিল শুনানির দিন নির্ধারণের জন্য আপিল বিভাগের কার্য তালিকায় ১ নম্বর ক্রমিকে ছিল। কার্য দিবসের শুরুতে এ বিষয়ে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। দিন ধার্য হওয়ায় এখন এ আপিলের ওপর ওইদিন শুনানি শুরু হবে। আদালতে অধ্যাপক গোলাম আযমের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং সরকার পক্ষে এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম উপস্থিত ছিলেন। (দৈনিক সংগ্রাম)