নিউইয়র্ক ১০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অথচ নৃশংসতা দেখে তারাও এগোয়নি : ওইদিন পুলিশ বলছিল ওনাদেরকে কেউ ধরেন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৪৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০১৫
  • / ১০০২ বার পঠিত

ঢাকা: কাজ সেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে আড্ডা দেওয়া ফটো সাংবাদিক জীবন ও রহমানের প্রায় প্রতিদিনের অভ্যাস। গত বৃহস্পতিবারও (২৬ ফেব্রুয়ারী) এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সেই আড্ডা থেকেই চিৎকার শুনে ছুটে এলেন দুই জন এবং হতবাক হয়ে দেখলেন, শার্টার চাপলেন এবং রক্তাক্ত অভিজিতকে নিয়ে গেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে অভিজিত রায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তরুণ আর কেউ নন, তিনি বাংলার চোখ নিউজ এজেন্সীর ফটো সাংবাদিক জীবন। মাস ছয়েক হলো সাংবাদিকতা পেশায় আসেন জীবন আহমেদ। তিনি কাজ করছেন বাংলার চোখ নামে একটি ফটো এজেন্সিতে এবং ঘটনাস্থলে অপর ফটো সাংবাদিক হচ্ছেন এস এম রহমান তিনি কাজ করছেন ফোকাস বাংলায়।
এই প্রতিবেদককে জীবন সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। জীবন বলেন, আমি আর রহমান আড্ডা দিচ্ছিছলাম এবং টিএসসি চত্বরে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে এগিয়ে আসি।
জীবন বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল শত শত মানুষ এবং অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশও। কিন্তু সবাই নির্বাক, নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। এমতাবস্থায় আমি (জীবন) প্রথমে ২টি ছবি তুলি, যেহেতু ফটো সাংবাদিক হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব। ঘটনাস্থলে পুলিশ বলছিল ওনাদেরকে কেউ ধরেন।
জীবনের সাথে থাকা রহমান বলেন, এই রকম ঘটনা আমি আমার জীবনে আর কখনই দেখিনি। আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই আমি ঘটনার ৪টি ছবি তুলে চলে এসেছিলাম। ঐ অবস্থায় জীবন রক্তাক্ত রাফিদা আহমেদ বন্যার সাহায্যে মাটিতে পড়ে থাকা অভিজিত রায়কে টেনে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে কয়েকজন তাদেরকে সাহায্য করে।
জীবন আরো বলেন, বইমেলা থেকে আগত একটি যাত্রীবাহী সিএনজি সাহায্যে ঘটনাস্থল থেকে অভিজিৎ ও বন্যাকে ঢাকা মেডিকেলে নেই। কিন্ত সিএনজিতে ওঠার পর রাফিদা আহমেদ বন্যা চিৎকার করে ওঠে, কারণ তিনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ঐ মুহূর্তে তিনি তার স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং আমাকে সন্দেহ করেন। এসময় রাফিদা আহমেদ বারবারই আমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে তাদের ছেড়ে দিতে বলেন। জীবন বলেন, সিএনজিতে অভিজিত রায়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ আমার কোলেই ছিল। যখন তার মাথায় আমি হাত দেই দেখলাম তার মগজ আমার হাতে চলে আসছে আমি আবার তা ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেই, এসময় তার (অভিজিৎ) দেহ বারবারই লাফিয়ে উঠছিল। ওনার শরীরের রক্তে আমার গায়ের শার্ট ভিজে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলের পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কোনো প্রকার সাহায্য করেনি।
আমি ভয়কে জয় করে মানবতার পরিচয় দিয়ে একাই অবশেষে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। মানুষ হিসেবে মানুষের বিপদে সাহায্য করাই মানুষের ধর্ম এবং আমি চেষ্টা করেছি সেই ধর্ম পালন করার। (দৈনিক আমাদের অর্থনীতি)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

অথচ নৃশংসতা দেখে তারাও এগোয়নি : ওইদিন পুলিশ বলছিল ওনাদেরকে কেউ ধরেন

প্রকাশের সময় : ০৮:৪৪:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ মার্চ ২০১৫

ঢাকা: কাজ সেরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে আড্ডা দেওয়া ফটো সাংবাদিক জীবন ও রহমানের প্রায় প্রতিদিনের অভ্যাস। গত বৃহস্পতিবারও (২৬ ফেব্রুয়ারী) এর ব্যত্যয় ঘটেনি। সেই আড্ডা থেকেই চিৎকার শুনে ছুটে এলেন দুই জন এবং হতবাক হয়ে দেখলেন, শার্টার চাপলেন এবং রক্তাক্ত অভিজিতকে নিয়ে গেলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সচেতন নাগরিক হিসেবে অভিজিত রায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া তরুণ আর কেউ নন, তিনি বাংলার চোখ নিউজ এজেন্সীর ফটো সাংবাদিক জীবন। মাস ছয়েক হলো সাংবাদিকতা পেশায় আসেন জীবন আহমেদ। তিনি কাজ করছেন বাংলার চোখ নামে একটি ফটো এজেন্সিতে এবং ঘটনাস্থলে অপর ফটো সাংবাদিক হচ্ছেন এস এম রহমান তিনি কাজ করছেন ফোকাস বাংলায়।
এই প্রতিবেদককে জীবন সেদিনের সেই নৃশংস ঘটনার কথা বর্ণনা করলেন। জীবন বলেন, আমি আর রহমান আড্ডা দিচ্ছিছলাম এবং টিএসসি চত্বরে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ নারী কণ্ঠের চিৎকার শুনে এগিয়ে আসি।
জীবন বলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল শত শত মানুষ এবং অস্ত্র হাতে দাঁড়িয়ে ছিল পুলিশও। কিন্তু সবাই নির্বাক, নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল। এমতাবস্থায় আমি (জীবন) প্রথমে ২টি ছবি তুলি, যেহেতু ফটো সাংবাদিক হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব। ঘটনাস্থলে পুলিশ বলছিল ওনাদেরকে কেউ ধরেন।
জীবনের সাথে থাকা রহমান বলেন, এই রকম ঘটনা আমি আমার জীবনে আর কখনই দেখিনি। আমি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। তাই আমি ঘটনার ৪টি ছবি তুলে চলে এসেছিলাম। ঐ অবস্থায় জীবন রক্তাক্ত রাফিদা আহমেদ বন্যার সাহায্যে মাটিতে পড়ে থাকা অভিজিত রায়কে টেনে তোলার চেষ্টায় ব্যর্থ হলে কয়েকজন তাদেরকে সাহায্য করে।
জীবন আরো বলেন, বইমেলা থেকে আগত একটি যাত্রীবাহী সিএনজি সাহায্যে ঘটনাস্থল থেকে অভিজিৎ ও বন্যাকে ঢাকা মেডিকেলে নেই। কিন্ত সিএনজিতে ওঠার পর রাফিদা আহমেদ বন্যা চিৎকার করে ওঠে, কারণ তিনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। ঐ মুহূর্তে তিনি তার স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন এবং আমাকে সন্দেহ করেন। এসময় রাফিদা আহমেদ বারবারই আমার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়ে তাদের ছেড়ে দিতে বলেন। জীবন বলেন, সিএনজিতে অভিজিত রায়ের ক্ষতবিক্ষত দেহ আমার কোলেই ছিল। যখন তার মাথায় আমি হাত দেই দেখলাম তার মগজ আমার হাতে চলে আসছে আমি আবার তা ঠেলা দিয়ে ভেতরে ঢুকিয়ে দেই, এসময় তার (অভিজিৎ) দেহ বারবারই লাফিয়ে উঠছিল। ওনার শরীরের রক্তে আমার গায়ের শার্ট ভিজে গিয়েছিল। ঘটনাস্থলের পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে কোনো প্রকার সাহায্য করেনি।
আমি ভয়কে জয় করে মানবতার পরিচয় দিয়ে একাই অবশেষে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাই। মানুষ হিসেবে মানুষের বিপদে সাহায্য করাই মানুষের ধর্ম এবং আমি চেষ্টা করেছি সেই ধর্ম পালন করার। (দৈনিক আমাদের অর্থনীতি)