নিউইয়র্ক ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

রীতিমত অফিস যাচ্ছি, তার পরও………

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ৯২৯ বার পঠিত

ঢাকা: এমন অনেকেই আছেন যে, তিনি যোগ্যতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন বলে মনে করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার অভাব নেই। নিজেকে তো উজাড়ই করে দিচ্ছেন। কিন্তু বছর শেষে কর্মক্ষেত্রে যখন কর্মীদের মূল্যায়ন হয়, তখন তাঁর প্রতি ‘সুবিচার’ করা হয় না—এমন ভাবনা মনে আসে অনেক কর্মীরই। আবার উল্টো দিকে তাঁর বস বা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মনে করেন, কর্মীর কাজের ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নই করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মী তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাহিদা সঠিকভাবে মেটাতে পারছেন না। কর্মীকে আর কী কী করতে হবে, তাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয় না। এমন অবস্থায় কাজের ক্ষেত্রে কর্মী আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
কর্মী মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সাধারণত বছরের শেষে কর্মী মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এই মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে কর্মীর বেতন বৃদ্ধি, কর্মীর উন্নয়ন ও পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। একটি স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন মূল্যায়ন কর্মীর গুণগত মানোন্নয়নে এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণে ভূমিকা পালন করে। সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মী যেমন সন্তুষ্ট হন, তেমনি পদ্ধতিগত অসংগতি এবং সঠিক মূল্যায়ন না হলো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাই দায়িত্বটা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারই বেশি।

যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সে জন্য মূল্যায়নকারী কর্মকর্তা ও মূল্যায়িত কর্মীর—দুজনেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। এটা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, যখন নিয়মিত কাজের পর্যালোচনার সংস্কৃতি থাকবে প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা বছরের শুরুতেই নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। মোট কথা, কর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীকে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর অর্জন সঠিকভাবে জানানোর পাশাপাশি কর্মীর উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রথমেই কর্মীর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করা যাক। কর্মীকে মূল্যায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। সাধারণত কর্মী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের ও নেতৃত্বের নীতিমালার সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ নিজস্ব লক্ষ্য অজনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটা দেখা হয়। প্রতিষ্ঠানের যে কিছু লক্ষ্য আছে, কর্মীর উচিত সেগুলো অর্জনে তাঁর নিজস্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করা। আর এটি অবশ্যই পরিমাপযোগ্য হতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এগুলোকে চূড়ান্ত করা ভালো। তাতে ভবিষ্যৎতে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ কম থাকে। নিয়মিত বিরতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে কর্মীর জেনে নেওয়া উচিত তাঁর কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না। অনেক সময় দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ফিডব্যাক দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে কর্মীকে নিজ উদ্যোগে কাজের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া উচিত। ফলে, কর্মী তাঁর কাজের কোথায় ফাঁক (গ্যাপ) আছে তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
সঠিক কর্মী মূল্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা জরুরি। এ ছাড়া সারা বছর কর্মীর দক্ষতা বাড়াতে দরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ দেখাতে পারে না। আবার কখনো কখনো পারদর্শিতার অভাবও থাকে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উচিত নির্দিষ্ট কর্মীর জন্য প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করে সেটার বাস্তবায়ন করা। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার কারণে তাঁর মনোবল আকাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধরে রাখতে পারেন না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সজাগ থেকে বাধা অপসারণে উদ্যোগী হতে হবে।
মনে রাখা দরকার, যত বেশি কর্মী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মত প্রকাশ ও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত বেশি কর্মীর কমিটমেন্ট বাড়বে। অনেক সময় কর্মী মূল্যায়নের সময় কর্মীকে দোষ চাপানোর অত্যধিক প্রবণতা দেখা যায়। গঠনমূলক মতামত দিয়ে কর্মীর দক্ষতা বাড়ানো যায়। সঠিক কর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীর কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাঁর পারর্শিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর ওপর আলোকপাত করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দরকার খোলামেলা আলোচনা ও সমন্বয়। আর এর মধ্য দিয়েই কর্মী ও প্রতিষ্ঠান আগামীর নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে অগ্রসর হতে পারেন। এমনটা হলে কর্মীরও মনে হবে যে তাঁর কাজের মূল্যায়ন ঠিকভাবেই হয়েছে।
– প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক, গ্রো এন এক্সেল

Tag :

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

রীতিমত অফিস যাচ্ছি, তার পরও………

প্রকাশের সময় : ০৫:৪৩:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকা: এমন অনেকেই আছেন যে, তিনি যোগ্যতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন বলে মনে করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার অভাব নেই। নিজেকে তো উজাড়ই করে দিচ্ছেন। কিন্তু বছর শেষে কর্মক্ষেত্রে যখন কর্মীদের মূল্যায়ন হয়, তখন তাঁর প্রতি ‘সুবিচার’ করা হয় না—এমন ভাবনা মনে আসে অনেক কর্মীরই। আবার উল্টো দিকে তাঁর বস বা জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মনে করেন, কর্মীর কাজের ভিত্তিতে সঠিক মূল্যায়নই করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কর্মী তাঁর কাজ করে যাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের চাহিদা সঠিকভাবে মেটাতে পারছেন না। কর্মীকে আর কী কী করতে হবে, তাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলা হয় না। এমন অবস্থায় কাজের ক্ষেত্রে কর্মী আর প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
কর্মী মূল্যায়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং সাধারণত বছরের শেষে কর্মী মূল্যায়ন-সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এই মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে কর্মীর বেতন বৃদ্ধি, কর্মীর উন্নয়ন ও পদোন্নতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো। একটি স্বচ্ছ ও পক্ষপাতহীন মূল্যায়ন কর্মীর গুণগত মানোন্নয়নে এবং প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য পূরণে ভূমিকা পালন করে। সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মী যেমন সন্তুষ্ট হন, তেমনি পদ্ধতিগত অসংগতি এবং সঠিক মূল্যায়ন না হলো কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাই দায়িত্বটা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারই বেশি।

যাতে কোনো দূরত্ব তৈরি না হয়, সে জন্য মূল্যায়নকারী কর্মকর্তা ও মূল্যায়িত কর্মীর—দুজনেরই সক্রিয় অংশগ্রহণ দরকার। এটা বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, যখন নিয়মিত কাজের পর্যালোচনার সংস্কৃতি থাকবে প্রতিষ্ঠানে। পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট ও পরিমাপযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা বছরের শুরুতেই নির্ধারণ করে নেওয়া জরুরি। মোট কথা, কর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীকে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁর অর্জন সঠিকভাবে জানানোর পাশাপাশি কর্মীর উত্তরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রথমেই কর্মীর পরিপ্রেক্ষিতে আলোচনা করা যাক। কর্মীকে মূল্যায়নের প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। সাধারণত কর্মী মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা এবং প্রতিষ্ঠানের মূল্যবোধের ও নেতৃত্বের নীতিমালার সমন্বয় করা হয়। অর্থাৎ নিজস্ব লক্ষ্য অজনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাটা দেখা হয়। প্রতিষ্ঠানের যে কিছু লক্ষ্য আছে, কর্মীর উচিত সেগুলো অর্জনে তাঁর নিজস্ব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করা। আর এটি অবশ্যই পরিমাপযোগ্য হতে হবে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এগুলোকে চূড়ান্ত করা ভালো। তাতে ভবিষ্যৎতে ভুল-বোঝাবুঝির অবকাশ কম থাকে। নিয়মিত বিরতিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছ থেকে কর্মীর জেনে নেওয়া উচিত তাঁর কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কি না। অনেক সময় দেখা যায়, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ব্যস্ততার কারণে নিয়মিত ফিডব্যাক দিতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে কর্মীকে নিজ উদ্যোগে কাজের হালনাগাদ তথ্য দেওয়া উচিত। ফলে, কর্মী তাঁর কাজের কোথায় ফাঁক (গ্যাপ) আছে তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
সঠিক কর্মী মূল্যায়নের জন্য প্রতিষ্ঠানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন স্তরে মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করা জরুরি। এ ছাড়া সারা বছর কর্মীর দক্ষতা বাড়াতে দরকারি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে কর্মীরা তাঁদের দক্ষতা অনুযায়ী কাজ দেখাতে পারে না। আবার কখনো কখনো পারদর্শিতার অভাবও থাকে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার উচিত নির্দিষ্ট কর্মীর জন্য প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা তৈরি করে সেটার বাস্তবায়ন করা। আরও একটি বিষয় হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার কারণে তাঁর মনোবল আকাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধরে রাখতে পারেন না। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সজাগ থেকে বাধা অপসারণে উদ্যোগী হতে হবে।
মনে রাখা দরকার, যত বেশি কর্মী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মত প্রকাশ ও অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন, তত বেশি কর্মীর কমিটমেন্ট বাড়বে। অনেক সময় কর্মী মূল্যায়নের সময় কর্মীকে দোষ চাপানোর অত্যধিক প্রবণতা দেখা যায়। গঠনমূলক মতামত দিয়ে কর্মীর দক্ষতা বাড়ানো যায়। সঠিক কর্মী মূল্যায়নের মাধ্যমে কর্মীর কাজের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাঁর পারর্শিতা ও দক্ষতা বাড়ানোর ওপর আলোকপাত করা হয়। তাই এ ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে দরকার খোলামেলা আলোচনা ও সমন্বয়। আর এর মধ্য দিয়েই কর্মী ও প্রতিষ্ঠান আগামীর নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একসঙ্গে অগ্রসর হতে পারেন। এমনটা হলে কর্মীরও মনে হবে যে তাঁর কাজের মূল্যায়ন ঠিকভাবেই হয়েছে।
– প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও মুখ্য পরামর্শক, গ্রো এন এক্সেল