বাংলাদেশেই ভারতের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থ
- প্রকাশের সময় : ০৭:৩০:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০১৫
- / ৮৯২ বার পঠিত
ঢাকা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্কের ‘গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০৮ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনে রাজনৈতিক ঝুঁকি গ্রহণ করলেও ভারত তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোতে লক্ষণীয় কোনো উন্নতি হয়নি। নয়াদিল্লির কাছে ঢাকার প্রত্যাশা অনেক। বিশেষ করে বাংলাদেশী পণ্যের ওপর শুল্ক প্রত্যাহার ও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা দূর করার চাহিদা বাড়ছে। দুই দেশের বিরোধপূর্ণ সীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে কিছুটা অগ্রগতি দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকার কৃষি উৎপাদনে তিস্তার পানি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু হাসিনার প্রস্তাবে যথাযথ সাড়া দিতে ভারত উদাসীনতা দেখিয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে আবার বাংলাদেশের বিরোধী দল বিএনপি ভারত-বাংলাদেশ মাখামাখিকে সরকারবিরোধী সমালোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ ভারতের করদরাজ্য হয়ে উঠেছে বলে তারা প্রচারণা চালিয়ে আসছে। ২০০১-০৬ সালে বিএনপির শাসনামলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক একেবারে তলানিতে ঠেকেছিল। ২০১০ সালে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি হাসিনা সরকারের সঙ্গে ১০০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করেন। একক কোনো চুক্তি হিসেবে বাংলাদেশ এই প্রথম এমন মোটা অংকের অর্থ পায়। ১ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদে এই অর্থ বাংলাদেশের রেলওয়ে ও যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ব্যয় করার কথা। ২০ বছরের মধ্যে (৫ বছর গ্রেসসহ) এই ঋণ শোধ করতে হবে। পরবর্তীতে ৩৫ বছর মেয়াদি বিদ্যুৎ ট্রান্সমিশন চুক্তি হয় যাতে বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট পাওয়ারের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে ভারত। এছাড়া বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দুটি কয়লা খনির চুল্লি স্থাপনে ১৭০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়। এত কিছুর পরও গুরুত্বপূর্ণ দুই ইস্যু সীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টনের কোনো সুরাহা হয়নি।
নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে ৪১ বছরের পুরনো সীমান্ত বিবাদ মেটানোর উদ্যোগ নেন। পার্লামেন্টে সীমান্ত বিল পাশে সফল হয়ে এবার বাংলাদেশ সফরে যাচ্ছেন তিনি। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে সঙ্গী হতে রাজি হননি। এবার তিনি মোদির সফরসঙ্গী হয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে মনে করা হচ্ছে পশ্চিবঙ্গের আপত্তিতে ঝুলে থাকা তিস্তা সমস্যার সমাধানে একটা পথ বের হবে।
ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তিগুলোর ধীর বাস্তবায়নে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই উদ্বিগ্ন থাকে। হাসিনা যেভাবে ঝুঁকি নিয়ে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী হয়, ভারত সেভাবে আগ্রহ দেখায় না। কিন্তু নয়াদিল্লির এই সুযোগের দরজা চিরদিন খোলা থাকবে না। ঢাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নে নয়াদিল্লি বৃহত্তর সুযোগের সৃষ্টি করলেই শুধু বাংলাদেশে ভারতবিরোধী জনমত কমে যেতে পারে। পাক-আফগান বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে ভারত বাংলাদেশের প্রতি মনোযোগ দিতেই ব্যর্থ হয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রতিবেশীদের ওপর চীনের প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি শেখ হাসিনাই কিছুদিন আগে চীনকে বাংলাদেশের ‘সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও উপযুক্ত বন্ধু’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০১৪ সালের জানুয়ারীতে পুনরায় সরকার গঠন করে জুনে বেইজিং সফরে যান হাসিনা। তখন ১৩২০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ চুল্লি স্থাপনসহ পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চীন বর্তমানে ঢাকার সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার ও সর্বাধিক সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী। ভারতের চারপাশের সীমান্তে যখন অশান্তি ও বিশৃংখলার ডামাডোল বেজে উঠছে, তখন স্থিতিশীল মডারেট বাংলাদেশই হতে পারে নয়াদিল্লির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ। সে ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশের গঠনমূলক সম্পর্ক সমগ্র দক্ষিণ এশিয়াকে স্থিতিশীল রাখতে পারে। এ কারণেই দুই দেশের আস্থা-সংকট নিরসন ও দ্বিপাক্ষিক বন্ধন শক্তিশালী অত্যন্ত জরুরি। বড় দেশ ও অর্থনৈতিক শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকেই উদার ও গঠনমূলক পদক্ষেপে এগোতে হবে। (দৈনিক যুগান্তর)