নিউইয়র্ক ১১:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তন?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪
  • / ১০৭৮ বার পঠিত

ঢাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেকগুলো দিকের সাথে অনেকেরই মত পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক নীতি এবং আদর্শের প্রশ্নেও অনেক মতভেদ রয়েছে। কিন্তু একটি কথা শিকার করতেই হবে যে, দলটি যা কিছুই বলে অত্যন্ত বোল্ডলি বলে। তার রাজনীতির আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকাকেও তারা পাত্তা দেয় না। ঢাকার শিক্ষিত মানুষের মুখে মুখে এ কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা মাসের পর মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রাইম মিনিস্টার তাকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন না। সেদিন একজন আমাকে বললেন যে, বাংলাদেশে মজিনার রাষ্ট্রদূতের চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ। তাকে বদলি করা হয়েছে। তার উত্তরসূরি নিয়োগও মার্কিন সিনেট কনফার্ম করেছে। এখন মজিনা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদায়ি সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে সেই সময়ও নাকি দিচ্ছেন না। এসব কথা কত দূর পূর্ণ সত্য অথবা কতদূর আংশিক সত্য সেটি প্রাইম মিনিস্টার এবং মজিনা সাহেবই জানেন। তবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি পাত্তা পান না সেটি সকলেই জানেন। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তিন দিনের জন্য ঢাকা সফর করে গেলেন। তিনি নাকি মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে ঢাকা আসছেন, এমন কথা চাউর হয়ে গিয়েছিল। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। আরও দেখা করেছেন সংসদীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সাথে। এসব দেখা সাক্ষাতের এক পয়সাও মূল্য দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং শনিবার নিশা দেশাইকে চরম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত শনিবার খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আনা মন্ত্রী, চার আনাও নয়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিশা দেশাই। তার সামনে দুই-দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। তিনি নাকি তাকে (খালেদা জিয়াকে) ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন। মজিনা তো কত চেষ্টা করলেন নির্বাচন বন্ধ করার জন্য। শেখ হাসিনা যাতে প্রধানমন্ত্রী না হয় তার জন্য। কিন্তু তিনি পারেননি। মজিনা যখন ব্যর্থ হলেন তখন খালেদা জিয়া মোদির পানে চেয়ে রইলেন। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই যে, শেখ হাসিনাকে নির্দিষ্ট সময়ের একদিন আগেও ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক সেকেন্ড আগেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে না।
আমেরিকা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই মনোভাব নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর আগে মার্কিন রাষ্টদূত বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, যেরকম মন্তব্য তারা হর-হামেশাই করে থাকেন। তো, বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে এ ধরনের একটি মন্তব্য করলে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তৎকালীন মার্কিন রাষ্টদূতকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানান। আওয়ামী লীগের অনেক নীতির সাথে আমি একমত নই। আমার কলম দিয়েই আওয়ামী লীগের অনেক নীতি এবং বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা বেরিয়েছে। তারপরেও বলবো, তাদের মতের সাথে আমরা একমত হই বা না হই, তারা তাদের বক্তব্য খুব জোরের সাথে বলে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা স্বাধীনতার সর্বাত্মক বিরোধিতা করেছিল। বিরোধিতা করেছিল গণচীন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ওইসব বিরোধিতা গায়ে মাখেননি। তিনি তার সংগ্রাম অবিরাম চালিয়েছেন। এবারও বর্তমান সরকার আমেরিকা এবং পশ্চিমা শক্তিকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। তারপরও তারা এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, আওয়ামী লীগের পেছনে ইন্ডিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। সে কারণেই তারা আমেরিকা বা চীনের ব্যাপারে এমন কঠোর অবস্থান নিতে পারছেন। কথাটার মধ্যে হয়তো আংশিক সত্যতা রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা বা চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের সাহস তারা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য কোন দল কি সেই বুকের পাটা দেখাতে পেরেছে?
দুই
একশ্রেণীর পত্র-পত্রিকা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে আমেরিকার ভূমিকা আজও অনড় ও অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কালে নিশা দেশাই যে কথা বলেছেন, সে কথা শুনে মনে হয় যে তারা সম্ভবত তাদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে সেটা এদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। তবে সবার অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শক্তিই হলো তার গণতন্ত্র। এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চাই। গত শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া তিনি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, জিএসপি পুনর্বহাল, সার্ক সম্মেলনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা ও দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা শাই এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিশা দেশাই বলেন, আমরা রাজনৈতিক সংলাপের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, সকল রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রমকে দায়িত্বশীল ও শান্তি পূর্ণভাবে মোকাবেলা করবে।
নির্বাচনের আগে থেকেই একমাত্র ভারত ছাড়া বিদেশি সব গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বলেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সঠিক রূপ দিতে গেলে এবং নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে হলে সবদলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া দরকার। এটিকে পশ্চিমারা বলেন ‘ইনক্লুসিভ ইলেকশন’। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বয়কট করে। তারা বলে যে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করবে না। বরং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে সরকার বলেছিলেন যে, এটি একটি নেহায়েত নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষিত হবে না। এর ফলে সংবিধান বহির্ভূত শক্তির অভ্যুদয় হতে পারে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সবদলের সাথে মিলে আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। পর্যবেক্ষক মহল বলেন যে, ভারত ছাড়া অন্যান্য বিদেশি শক্তির চাপের মুখেই সরকার এমন ওয়াদা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সুর পরিবর্তন করেছে। এর নমুনা সৈয়দ আশরাফের গত শনিবারের উক্তি। শনিবার তিনি বলেছেন যে, ২০১৯ সালে সংবিধান মোতাবেক দেশের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই, যে শক্তি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।
গত শনিবার মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বলেছেন যে, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে সেটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। তবে তিনি সংলাপের ওপর জোর দেন। তার কথার সারমর্ম এই যে, বাংলাদেশের জনগণ যদি আগ বাড়িয়ে ক্ষমতা কব্জা করতে পারেন তাহলে সেটা হবে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ এখন শুধুমাত্র শক্তির ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে। আর বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, শক্তি প্রয়োগ তাদেরকে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। গত নির্বাচনের ১১ মাস পর আমেরিকা আর মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে না। তারা এখন বলছেন যে, জনগণ যখন চাইবে তখনই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিন
শেষ করার আগে জনগণকে একটি অজানা তথ্য দিতে চাই। তথ্যর উৎস হলেন মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। মোখলেস চৌধুরীকে ঢাকার সাংবাদিকরা খুব ভালোভাবেই জানেন প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হওয়ার আগে মোখলেস চৌধুরী দৈনিক ‘দিনকালে’ কাজ করতেন। ২৯ অক্টোবর তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের প্রেস উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১/১১ যখন সংঘঠিত হয় তখনও তিনি প্রেস উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সুযোগে ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সমস্ত নেপথ্য ঘটনাবলী দেখার তার সুযোগ হয়েছে। ১/১১-এর পর তিনি লন্ডন চলে যান। এখনও তিনি সেখানে বাস করছেন। শুনেছি লন্ডনে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি লন্ডনে তিনি ঢাকার একাধিক বাংলা পত্রিকাকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। গত রোববার ঢাকার একশ্রেণীর পত্র-পত্রিকায় মোখলেস চৌধুরীর বিশাল সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ নিচে তুলে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিন ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট। এ বিষয়টিকে তখন আপনারা কিভাবে নিয়েছিলেন?
মোখলেস চৌধুরী : বাংলাদেশের সংবিধানের তৎকালীন বিধান অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেয়ার কথা। তাদের মেয়াদ ২৯ অক্টোবর রাত ১২টায় শেষ হবে। সেদিন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবেন। এটাই ছিল সংবিধানের বিধান। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বঙ্গভবন। এর মধ্যে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত জোটের নেতাকর্মীদের হুকুম দিলেন লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে থাকতে। লগি-বৈঠা দিয়ে সেদিন রাজপথে কি তান্ডব ঘটানো হয়েছিল সেটা বিশ্ববাসী দেখেছে। আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা নিয়ে তান্ডবে লিপ্ত হলেও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বরণ করতে বঙ্গভবন সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
প্রশ্ন : লগি-বৈঠার এই তান্ডব কি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?
মোখলেস চৌধুরী : লগি-বৈঠার তান্ডব অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পল্টনসহ সারা দেশের তান্ডবে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি অরাজনৈতিক শক্তিও যোগ দিয়েছিল। রাজনীতির বাইরে একটি অপশক্তি সেদিন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো ক্ষমতা দখলের জন্য ওঁৎ পেতে ছিল। সে অনুযায়ী তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতা দখলের নিমিত্তে নিয়ে রাখা হয়েছিল অনেক প্রস্তুতি।
প্রশ্ন : অরাজনৈতিক শক্তি বলতে আপনি কাদের বোঝাতে চাচ্ছেন?
মোখলেস চৌধুরী : তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমদ ক্ষমতা দখলের জন্য ২০০৫ সাল থেকে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। বলতে গেলে ওই লগি-বৈঠার তান্ডব ছিল তার ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পরিণতি। তিনি এমনই একটি ক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন। নির্দেশিত হয়ে সেদিন লগি-বৈঠার তান্ডবে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই অংশ নিয়েছিল। রাজপথে পিটিয়ে হত্যাকান্ডের পর লাশের উপর নৃত্যের ছবি তোলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ডিজিএফআই-এর ক্যামেরা ইউনিট। ওই চিত্র বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করার জন্য তাদের একটি ইউনিট কাজ করেছে যাতে পর দিন ২৯ অক্টোবর জরুরি অবস্থা জারির ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ দেয়া যায়। সে দিনই ক্ষমতা দখলের সকল আয়োজন ছিল জেনারেল মইনের। বিদায়ী সরকারের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারি করিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা বঙ্গভবনের সতর্ক পদক্ষেপের কারণে সেদিন ভুল হয়ে যায়। বিদায়ী সরকারকে ব্যবহার করে ২৯ অক্টোবর ক্ষমতা দখল করতে না পেরে জেনারেল মইন চরম আশাহত হয়েছিলেন, তবে হাল ছাড়েননি।
সাক্ষাৎকারটি বিশাল। অনেক অজানা তথ্যই রয়েছে সেখানে। মোখলেস চৌধুরী অনেক বিলম্বে এসব কথা বলেছেন। আগে বললে আরও ভালো হতো।  (দৈনিক ইনকিলাব)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

একাদশ সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তন?

প্রকাশের সময় : ১২:৫৫:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৪

ঢাকা: আওয়ামী লীগের রাজনীতির অনেকগুলো দিকের সাথে অনেকেরই মত পার্থক্য রয়েছে। মৌলিক নীতি এবং আদর্শের প্রশ্নেও অনেক মতভেদ রয়েছে। কিন্তু একটি কথা শিকার করতেই হবে যে, দলটি যা কিছুই বলে অত্যন্ত বোল্ডলি বলে। তার রাজনীতির আর একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তি আমেরিকাকেও তারা পাত্তা দেয় না। ঢাকার শিক্ষিত মানুষের মুখে মুখে এ কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা মাসের পর মাস ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইন্টারভিউ চেয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু প্রাইম মিনিস্টার তাকে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন না। সেদিন একজন আমাকে বললেন যে, বাংলাদেশে মজিনার রাষ্ট্রদূতের চাকরির মেয়াদ প্রায় শেষ। তাকে বদলি করা হয়েছে। তার উত্তরসূরি নিয়োগও মার্কিন সিনেট কনফার্ম করেছে। এখন মজিনা প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিদায়ি সাক্ষাৎ করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাকে সেই সময়ও নাকি দিচ্ছেন না। এসব কথা কত দূর পূর্ণ সত্য অথবা কতদূর আংশিক সত্য সেটি প্রাইম মিনিস্টার এবং মজিনা সাহেবই জানেন। তবে তিনি যে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশি পাত্তা পান না সেটি সকলেই জানেন। দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আমেরিকার সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল তিন দিনের জন্য ঢাকা সফর করে গেলেন। তিনি নাকি মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য সরকারকে চাপ দিতে ঢাকা আসছেন, এমন কথা চাউর হয়ে গিয়েছিল। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। আরও দেখা করেছেন সংসদীয় বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সাথে। এসব দেখা সাক্ষাতের এক পয়সাও মূল্য দেয়নি আওয়ামী লীগ। বরং শনিবার নিশা দেশাইকে চরম তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। গত শনিবার খুলনা সার্কিট হাউস ময়দানে আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তৃতায় তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুই আনা মন্ত্রী, চার আনাও নয়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত নিশা দেশাই। তার সামনে দুই-দুইবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বসে আছেন। তিনি নাকি তাকে (খালেদা জিয়াকে) ক্ষমতায় বসিয়ে দেবেন। মজিনা তো কত চেষ্টা করলেন নির্বাচন বন্ধ করার জন্য। শেখ হাসিনা যাতে প্রধানমন্ত্রী না হয় তার জন্য। কিন্তু তিনি পারেননি। মজিনা যখন ব্যর্থ হলেন তখন খালেদা জিয়া মোদির পানে চেয়ে রইলেন। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই যে, শেখ হাসিনাকে নির্দিষ্ট সময়ের একদিন আগেও ক্ষমতা থেকে সরাতে পারে। মেয়াদ শেষ হওয়ার এক সেকেন্ড আগেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ছাড়বে না।
আমেরিকা সম্পর্কে আওয়ামী লীগের এই মনোভাব নতুন কিছু নয়। বেশ কয়েক বছর আগে মার্কিন রাষ্টদূত বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, যেরকম মন্তব্য তারা হর-হামেশাই করে থাকেন। তো, বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে এ ধরনের একটি মন্তব্য করলে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়। আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে অর্থাৎ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত এক প্রতিবাদ সভায় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ তৎকালীন মার্কিন রাষ্টদূতকে বাংলাদেশে অবাঞ্ছিত ঘোষণার দাবি জানান। আওয়ামী লীগের অনেক নীতির সাথে আমি একমত নই। আমার কলম দিয়েই আওয়ামী লীগের অনেক নীতি এবং বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা বেরিয়েছে। তারপরেও বলবো, তাদের মতের সাথে আমরা একমত হই বা না হই, তারা তাদের বক্তব্য খুব জোরের সাথে বলে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আমেরিকা স্বাধীনতার সর্বাত্মক বিরোধিতা করেছিল। বিরোধিতা করেছিল গণচীন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ওইসব বিরোধিতা গায়ে মাখেননি। তিনি তার সংগ্রাম অবিরাম চালিয়েছেন। এবারও বর্তমান সরকার আমেরিকা এবং পশ্চিমা শক্তিকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। তারপরও তারা এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন যে, আওয়ামী লীগের পেছনে ইন্ডিয়ার অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে। সে কারণেই তারা আমেরিকা বা চীনের ব্যাপারে এমন কঠোর অবস্থান নিতে পারছেন। কথাটার মধ্যে হয়তো আংশিক সত্যতা রয়েছে। কিন্তু তারপরও আমেরিকা বা চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের সাহস তারা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য কোন দল কি সেই বুকের পাটা দেখাতে পেরেছে?
দুই
একশ্রেণীর পত্র-পত্রিকা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ বলছেন যে, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ব্যাপারে আমেরিকার ভূমিকা আজও অনড় ও অপরিবর্তিত রয়েছে। কিন্তু ঢাকা থেকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কালে নিশা দেশাই যে কথা বলেছেন, সে কথা শুনে মনে হয় যে তারা সম্ভবত তাদের অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে কবে নির্বাচন হবে সেটা এদেশের জনগণই নির্ধারণ করবে। তবে সবার অংশগ্রহণে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শক্তিই হলো তার গণতন্ত্র। এক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে এগিয়ে নিতে চাই। গত শনিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইলে তিনি এ কথা বলেন। এছাড়া তিনি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, জিএসপি পুনর্বহাল, সার্ক সম্মেলনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। রাজধানীর আমেরিকান ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা ও দূতাবাসের মুখপাত্র মনিকা শাই এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিশা দেশাই বলেন, আমরা রাজনৈতিক সংলাপের পক্ষে। যুক্তরাষ্ট্র আশা করে, সকল রাজনৈতিক দল তাদের অবস্থানে থেকে রাজনৈতিক কার্যক্রমকে দায়িত্বশীল ও শান্তি পূর্ণভাবে মোকাবেলা করবে।
নির্বাচনের আগে থেকেই একমাত্র ভারত ছাড়া বিদেশি সব গুরুত্বপূর্ণ শক্তি বলেছিল যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে সঠিক রূপ দিতে গেলে এবং নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করতে হলে সবদলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়া দরকার। এটিকে পশ্চিমারা বলেন ‘ইনক্লুসিভ ইলেকশন’। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচন বয়কট করে। তারা বলে যে, দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করবে না। বরং কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এ অবস্থায় নির্বাচনের আগে সরকার বলেছিলেন যে, এটি একটি নেহায়েত নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষিত হবে না। এর ফলে সংবিধান বহির্ভূত শক্তির অভ্যুদয় হতে পারে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সবদলের সাথে মিলে আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হবে। পর্যবেক্ষক মহল বলেন যে, ভারত ছাড়া অন্যান্য বিদেশি শক্তির চাপের মুখেই সরকার এমন ওয়াদা করেছিল। কিন্তু নির্বাচন হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সুর পরিবর্তন করেছে। এর নমুনা সৈয়দ আশরাফের গত শনিবারের উক্তি। শনিবার তিনি বলেছেন যে, ২০১৯ সালে সংবিধান মোতাবেক দেশের পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে পৃথিবীর এমন কোন শক্তি নেই, যে শক্তি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে পারে।
গত শনিবার মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী নিশা দেশাই বলেছেন যে, বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন কবে হবে সেটি নির্ভর করবে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। তবে তিনি সংলাপের ওপর জোর দেন। তার কথার সারমর্ম এই যে, বাংলাদেশের জনগণ যদি আগ বাড়িয়ে ক্ষমতা কব্জা করতে পারেন তাহলে সেটা হবে তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আওয়ামী লীগ এখন শুধুমাত্র শক্তির ওপর নির্ভর করে দেশ চালাচ্ছে। আর বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, শক্তি প্রয়োগ তাদেরকে ডিভিডেন্ড দিচ্ছে। গত নির্বাচনের ১১ মাস পর আমেরিকা আর মধ্যবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলছে না। তারা এখন বলছেন যে, জনগণ যখন চাইবে তখনই এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
তিন
শেষ করার আগে জনগণকে একটি অজানা তথ্য দিতে চাই। তথ্যর উৎস হলেন মোখলেসুর রহমান চৌধুরী। মোখলেস চৌধুরীকে ঢাকার সাংবাদিকরা খুব ভালোভাবেই জানেন প্রেসিডেন্টের প্রেস সচিব হওয়ার আগে মোখলেস চৌধুরী দৈনিক ‘দিনকালে’ কাজ করতেন। ২৯ অক্টোবর তিনি প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদায় তৎকালীন রাষ্ট্রপ্রধান ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদের প্রেস উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। ১/১১ যখন সংঘঠিত হয় তখনও তিনি প্রেস উপদেষ্টা ছিলেন। সেই সুযোগে ১/১১-এর জরুরি অবস্থার সমস্ত নেপথ্য ঘটনাবলী দেখার তার সুযোগ হয়েছে। ১/১১-এর পর তিনি লন্ডন চলে যান। এখনও তিনি সেখানে বাস করছেন। শুনেছি লন্ডনে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি লন্ডনে তিনি ঢাকার একাধিক বাংলা পত্রিকাকে ইন্টারভিউ দিয়েছেন। গত রোববার ঢাকার একশ্রেণীর পত্র-পত্রিকায় মোখলেস চৌধুরীর বিশাল সাক্ষাৎকার প্রকাশ হয়েছে। সেই সাক্ষাৎকারের অংশবিশেষ নিচে তুলে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন : ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিন ঢাকার রাজপথে প্রকাশ্য দিবালোকে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট। এ বিষয়টিকে তখন আপনারা কিভাবে নিয়েছিলেন?
মোখলেস চৌধুরী : বাংলাদেশের সংবিধানের তৎকালীন বিধান অনুযায়ী ২৯ অক্টোবর চারদলীয় জোট সরকার বিদায় নেয়ার কথা। তাদের মেয়াদ ২৯ অক্টোবর রাত ১২টায় শেষ হবে। সেদিন নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবেন। এটাই ছিল সংবিধানের বিধান। সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের সকল প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বঙ্গভবন। এর মধ্যে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে নামার ঘোষণা দিলেন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত জোটের নেতাকর্মীদের হুকুম দিলেন লগি-বৈঠা নিয়ে রাজপথে থাকতে। লগি-বৈঠা দিয়ে সেদিন রাজপথে কি তান্ডব ঘটানো হয়েছিল সেটা বিশ্ববাসী দেখেছে। আওয়ামী লীগ লগি-বৈঠা নিয়ে তান্ডবে লিপ্ত হলেও নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বরণ করতে বঙ্গভবন সবরকমের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল।
প্রশ্ন : লগি-বৈঠার এই তান্ডব কি পূর্ব পরিকল্পিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?
মোখলেস চৌধুরী : লগি-বৈঠার তান্ডব অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। সেদিন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে পল্টনসহ সারা দেশের তান্ডবে রাজনৈতিক শক্তির পাশাপাশি অরাজনৈতিক শক্তিও যোগ দিয়েছিল। রাজনীতির বাইরে একটি অপশক্তি সেদিন ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো ক্ষমতা দখলের জন্য ওঁৎ পেতে ছিল। সে অনুযায়ী তাদের পক্ষ থেকে ক্ষমতা দখলের নিমিত্তে নিয়ে রাখা হয়েছিল অনেক প্রস্তুতি।
প্রশ্ন : অরাজনৈতিক শক্তি বলতে আপনি কাদের বোঝাতে চাচ্ছেন?
মোখলেস চৌধুরী : তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমদ ক্ষমতা দখলের জন্য ২০০৫ সাল থেকে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। বলতে গেলে ওই লগি-বৈঠার তান্ডব ছিল তার ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত পরিণতি। তিনি এমনই একটি ক্ষণের অপেক্ষায় ছিলেন। নির্দেশিত হয়ে সেদিন লগি-বৈঠার তান্ডবে সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই অংশ নিয়েছিল। রাজপথে পিটিয়ে হত্যাকান্ডের পর লাশের উপর নৃত্যের ছবি তোলার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল ডিজিএফআই-এর ক্যামেরা ইউনিট। ওই চিত্র বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করার জন্য তাদের একটি ইউনিট কাজ করেছে যাতে পর দিন ২৯ অক্টোবর জরুরি অবস্থা জারির ষড়যন্ত্র চূড়ান্ত রূপ দেয়া যায়। সে দিনই ক্ষমতা দখলের সকল আয়োজন ছিল জেনারেল মইনের। বিদায়ী সরকারের মাধ্যমে জরুরি অবস্থা জারি করিয়ে ক্ষমতা দখল করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার সেই পরিকল্পনা বঙ্গভবনের সতর্ক পদক্ষেপের কারণে সেদিন ভুল হয়ে যায়। বিদায়ী সরকারকে ব্যবহার করে ২৯ অক্টোবর ক্ষমতা দখল করতে না পেরে জেনারেল মইন চরম আশাহত হয়েছিলেন, তবে হাল ছাড়েননি।
সাক্ষাৎকারটি বিশাল। অনেক অজানা তথ্যই রয়েছে সেখানে। মোখলেস চৌধুরী অনেক বিলম্বে এসব কথা বলেছেন। আগে বললে আরও ভালো হতো।  (দৈনিক ইনকিলাব)