নিউইয়র্ক ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

‘আমরা’ ক্ষমা করবো, জনগণ কি ক্ষমা করবে?

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৬:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫
  • / ৯৭৬ বার পঠিত

শাহাব উদ্দিন সাগর: জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধীকারী প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকান্ডসহ মুক্তমনাদের উপর হামলার ঘটনায় রাজনীতিবিদদের দায়ী করে তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
তিনি বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্র নেতারা রাজনীতি করলে দেশের অবস্থা কখনো ভালো হতে পারে না। রাজনৈতিক দলের চরিত্র আগে উন্নত করতে হবে। রাজনীতিটা দলের ভেতরে করতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ ভালো দল হয়ে উঠুক, আমরা তাদের অতীতের সব অপরাধ ভুলে গিয়ে তাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। অন্যকোনো দল ভালো হতে চাইলে তাদেরকে এদেশের মানুষ গ্রহণ করে নেবে।’
ফজলুল হক স্যারের এমন বক্তব্যের পর আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। আমার মতো হয়তো যারা এ সরকারের কার্যক্রমের গঠনমুলক সমালোচনা করেন তাদের মনেও প্রশ্নের উদ্বেগ হতে পারে। ফজলুল হক স্যার আপনি দীপন হত্যার পর বিচার চাইবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এ ধরনের বক্তব্য নিউইয়র্কে খুব প্রভাব ফেলেছিল।
টাইম টেলিভিশনের মধ্যরাতের টকশো টাইম পলিটিক্স সঞ্চালনার সময় অন্তত তিন জন আলোচক তাদের আলোচনায় এনেছিলেন আপনার বক্তব্য। লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর শওকত আলী বলেছিলেন, ‘ফজলুল হক সাহেবের মতো একজন মানুষ গড়ার কারিগর যখন এ ধরনের বক্তব্য দেয় তাহলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বা আইনের শাসন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বুঝতে বেশি দূর যেতে হবে না।’
মাননীয় আদালত ( সম্মান প্রদর্শন করে বলছি) বা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার সাহস বা যোগ্যতা হয়তো আমার নেই কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কিছু বলার অধিকারওতো আছে। যদিও সরকারের দায়ীত্বশীলদের পক্ষ থেকে বলা হয় সরকারের সমালোচনা করলেই তারা বিএনপি বা জামাতের সমর্থক বা তাদের পক্ষ নিচ্ছেন! যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে এ ধরনের কথা বলছেন! আমার এ ধরনের ইচ্ছা বা বাসনা কোনটিই নেই। আমার কথা হলো; বাংলাদেশ ভালো চললে, টকশোতে ইতিবাচক কিছু উঠে আসলে, বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ধারার কথা প্রাধান্য পেলে ভালো লাগে, উজ্জীবিত হই। তবে খারাপ লাগা এখানেই যখন সপ্তান্তে লিখতে যাই তখন লিখতে হয় বাংলাদেশের সব নেতিবাচক ঘটনার কথা।
ধরুন এ সপ্তাহে কথা: অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে ‘হস্তান্তর’, শিক্ষনবীশ অইনজীবি খুন, বরের গাড়ী থেকে কনে ছিনতাই, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা, রাষ্ট্রপতি জিয়া ও এরশাদের অবসর ভাতা না দিতে সংসদে বিল, বিমানবন্দরে বৃটিশ গোয়েন্দা, ধরপাকড়ে বিএনপিজোট ঘরছাড়া এ ধরনের সংবাদ। এসব সংবাদ সবকিছুকে চাপিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের মাঝে খবর হয়ে দেখা দিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাচনও। এ নির্বাচনের অংসান সুচির পতাকা উড্ডীয়মান হওয়ার খবরটি বেশ পুলকিত করেছে বিএনপি এবং সমমনাদের। নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদের বাণিজ্যিক হাব (কেন্দ্রবিন্দ) হিসেবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসে বিএনপি নেতা এবং সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অনেকে বলেছিলেন; মিয়ানমারের নির্বাচনের পর আমরা অনেকটাই আশাবাদী, কারণ জনগণের সংগ্রাম যে কাজে আসে তারই উজ্জল উদাহরণ হলো মিয়ানমারের নির্বাচন। তারা বলেছেন; সরকারের কার্যক্রমে যারা ক্ষুব্ধ বা হতাশ হচ্ছেন তাদের জন্য এ মহুুর্ত্বে পরামর্শ ‘লুক মিয়ানমার’।
এক. আসামের বিচ্ছিন্ততাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে ‘হস্তান্তর’। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, এর বিনিময়ে ফিরে আনা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামী নূর হোসেনকে। বিশ্বাস করুন নিউইয়র্কে এ ধরনের বক্তব্যে দারুণ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
মজার একটি কথা মনে পড়েছে। বাংলাদেশের একটি টেলিভিশন শোতে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী একদিন একটি কৌতুক বলেছিলেন’ তিনি বলেছিলেন; ভিন্ন এক দেশে নাকি বিড়ালের কুস্তি প্রতিযোগিতা হচ্ছিল; সেখানে বাংলাদেশও অংশ নেয়। বিভিন্ন দেশের বিড়াল কুস্তি খেলার পর মাত্র দুটি বিড়াল বাকী ছিল; একটি ভারতের আর অন্যটি বাংলাদেশের। খেলা শুরু মুহুর্ত্বেও কপোকাত ভারতের বেড়াল, বেজায় খুশি বাংলাদেশ। পাশের একজন বাহাবা দিয়ে জানতে চাইলো ভাই আপানাদের বিড়াল এতো শক্তিশালী। জবাবে বলা হলো এই মিয়া এটা বিড়াল নয় এটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, খেতে না পেরে বিড়াল হয়ে গেছে।’ বাস্তবতাটা ঠিক ওই রকমওই ভারতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান বুঝাতে গিয়ে অনুপচেটিয়ার বদলে নূর হোসেনকে ফেরত পেলো বাংলাদেশ!
দুই. জিয়ার মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা; জিয়ার মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা এমন খবর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এতোদিন পর শুনতে হচ্ছে তাই অবাক লাগে। এ মাজার সরাতেতো এতোদিন লাগার কথা না। সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম বদলে যায়, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র হয়ে যায়, ভাসানী নভোথিয়েটার বঙ্গবন্ধু থিয়েটার হয়ে যায়, তাহলে জিয়ার মাজার সরানোর সময় নেয়াটা বেশি হয়ে গেলো না!
কথা সেখানে নয়; আগেই বলেছিলমা ‘লুক মিয়ানমার’। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। এখন বাকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ধরে নিলাম এ নির্বাচনে সরকার ক্ষমতায় এলো! ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন হলো, টার্গেট ২০৪১ও পূরণ হলো! তারপর! যদি মিয়ানমারের গনতন্ত্রকামী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অংসান সূচির দলের মতো মিয়ানমারের আকাশে ‘গণতন্ত্রের’ সুর্য্যের উদয়ন ঘটালো বিএনপি বা খালেদা জিয়ার উত্তরসূরীরা। তাহলে কি হবে, যদি তারা বলে গোপালগঞ্জকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার সরিয়ে ফেলা হবে বা ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি কলাবাগান লেক সংস্কারের নামে সরিয়ে ফেলা হবে তাহলে কি কিছু বলার থাকবে! আমি মনে করি এ সংস্কৃতি থেকে রেব হওয়া খুবই জরুরী।
তিন. বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দমনে ব্যস্ত থাকায় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারি দল সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। আর সরকারি বাহিনীগুলো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমনে ব্যস্ত। এ কারণেই বর্তমানে দেশে কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে প্রতিদিন কম-বেশি এক হাজার বিরোধী দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করছে সরকার। আট-দশ জন বিএনপি কর্মী একসঙ্গে বসলেও নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে গ্রেফতার করা হয়। প্রশ্ন জাগে গ্রেফতার বা হামলা কি রাজনৈতিক সমাধান এনে দিবে! অন্ধ করে কি প্রলয় বন্ধ করা যাবে!
চার. এমপি লিটন সাহেব গুলি করে শিশু হত্যার চেষ্টা করেছে, এমপির ছেলে গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারছে, এক মন্ত্রী সচিবালয়ের ভিতরে তার অধিনস্ত কর্মকর্তার কক্ষে ভাংচুর করে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। এগুলোকে কি বলা হবে?
হান্নান শাহার বক্তব্য দেশের মানুষ কিভাবে নেবেন সেটি তাদের বিষয়; কিন্তু বাস্তবতা হলো এ কথাগুলো অস্বীকার করা যাবেনা। তবে বিস্মিত হই কোথায় জানেন; ধরপাকড়ের পর যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের ধরপাকড় হচ্ছে না। শুধু আমি নই বিবেকবান সব মানুষই হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করবে। আর গণতন্ত্র বা মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যারের মতো বলবেন ‘আমরা’ ক্ষমা করবো। কিন্তু আমার প্রশ্ন জনগণ কি ক্ষমা করবে?
শাহাব উদ্দিন সাগর
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
১৩ নভেম্বর, ২০১৫।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

‘আমরা’ ক্ষমা করবো, জনগণ কি ক্ষমা করবে?

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৫

শাহাব উদ্দিন সাগর: জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধীকারী প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যাকান্ডসহ মুক্তমনাদের উপর হামলার ঘটনায় রাজনীতিবিদদের দায়ী করে তাদের কঠোর সমালোচনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক।
তিনি বলেছেন, ‘দুশ্চরিত্র নেতারা রাজনীতি করলে দেশের অবস্থা কখনো ভালো হতে পারে না। রাজনৈতিক দলের চরিত্র আগে উন্নত করতে হবে। রাজনীতিটা দলের ভেতরে করতে হবে। আজকে আওয়ামী লীগ ভালো দল হয়ে উঠুক, আমরা তাদের অতীতের সব অপরাধ ভুলে গিয়ে তাদেরকে ক্ষমা করে দিবো। অন্যকোনো দল ভালো হতে চাইলে তাদেরকে এদেশের মানুষ গ্রহণ করে নেবে।’
ফজলুল হক স্যারের এমন বক্তব্যের পর আমার মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। আমার মতো হয়তো যারা এ সরকারের কার্যক্রমের গঠনমুলক সমালোচনা করেন তাদের মনেও প্রশ্নের উদ্বেগ হতে পারে। ফজলুল হক স্যার আপনি দীপন হত্যার পর বিচার চাইবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এ ধরনের বক্তব্য নিউইয়র্কে খুব প্রভাব ফেলেছিল।
টাইম টেলিভিশনের মধ্যরাতের টকশো টাইম পলিটিক্স সঞ্চালনার সময় অন্তত তিন জন আলোচক তাদের আলোচনায় এনেছিলেন আপনার বক্তব্য। লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডক্টর শওকত আলী বলেছিলেন, ‘ফজলুল হক সাহেবের মতো একজন মানুষ গড়ার কারিগর যখন এ ধরনের বক্তব্য দেয় তাহলে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা বা আইনের শাসন কোথায় গিয়ে ঠেকেছে তা বুঝতে বেশি দূর যেতে হবে না।’
মাননীয় আদালত ( সম্মান প্রদর্শন করে বলছি) বা বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করার সাহস বা যোগ্যতা হয়তো আমার নেই কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে কিছু বলার অধিকারওতো আছে। যদিও সরকারের দায়ীত্বশীলদের পক্ষ থেকে বলা হয় সরকারের সমালোচনা করলেই তারা বিএনপি বা জামাতের সমর্থক বা তাদের পক্ষ নিচ্ছেন! যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে এ ধরনের কথা বলছেন! আমার এ ধরনের ইচ্ছা বা বাসনা কোনটিই নেই। আমার কথা হলো; বাংলাদেশ ভালো চললে, টকশোতে ইতিবাচক কিছু উঠে আসলে, বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ধারার কথা প্রাধান্য পেলে ভালো লাগে, উজ্জীবিত হই। তবে খারাপ লাগা এখানেই যখন সপ্তান্তে লিখতে যাই তখন লিখতে হয় বাংলাদেশের সব নেতিবাচক ঘটনার কথা।
ধরুন এ সপ্তাহে কথা: অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে ‘হস্তান্তর’, শিক্ষনবীশ অইনজীবি খুন, বরের গাড়ী থেকে কনে ছিনতাই, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা, রাষ্ট্রপতি জিয়া ও এরশাদের অবসর ভাতা না দিতে সংসদে বিল, বিমানবন্দরে বৃটিশ গোয়েন্দা, ধরপাকড়ে বিএনপিজোট ঘরছাড়া এ ধরনের সংবাদ। এসব সংবাদ সবকিছুকে চাপিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশীদের মাঝে খবর হয়ে দেখা দিয়েছে মিয়ানমারের নির্বাচনও। এ নির্বাচনের অংসান সুচির পতাকা উড্ডীয়মান হওয়ার খবরটি বেশ পুলকিত করেছে বিএনপি এবং সমমনাদের। নিউইয়র্কের বাংলাদেশীদের বাণিজ্যিক হাব (কেন্দ্রবিন্দ) হিসেবে পরিচিত জ্যাকসন হাইটসে বিএনপি নেতা এবং সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তাদের অনেকে বলেছিলেন; মিয়ানমারের নির্বাচনের পর আমরা অনেকটাই আশাবাদী, কারণ জনগণের সংগ্রাম যে কাজে আসে তারই উজ্জল উদাহরণ হলো মিয়ানমারের নির্বাচন। তারা বলেছেন; সরকারের কার্যক্রমে যারা ক্ষুব্ধ বা হতাশ হচ্ছেন তাদের জন্য এ মহুুর্ত্বে পরামর্শ ‘লুক মিয়ানমার’।
এক. আসামের বিচ্ছিন্ততাবাদী নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে ‘হস্তান্তর’। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল বলেছেন, এর বিনিময়ে ফিরে আনা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের আসামী নূর হোসেনকে। বিশ্বাস করুন নিউইয়র্কে এ ধরনের বক্তব্যে দারুণ হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
মজার একটি কথা মনে পড়েছে। বাংলাদেশের একটি টেলিভিশন শোতে জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী একদিন একটি কৌতুক বলেছিলেন’ তিনি বলেছিলেন; ভিন্ন এক দেশে নাকি বিড়ালের কুস্তি প্রতিযোগিতা হচ্ছিল; সেখানে বাংলাদেশও অংশ নেয়। বিভিন্ন দেশের বিড়াল কুস্তি খেলার পর মাত্র দুটি বিড়াল বাকী ছিল; একটি ভারতের আর অন্যটি বাংলাদেশের। খেলা শুরু মুহুর্ত্বেও কপোকাত ভারতের বেড়াল, বেজায় খুশি বাংলাদেশ। পাশের একজন বাহাবা দিয়ে জানতে চাইলো ভাই আপানাদের বিড়াল এতো শক্তিশালী। জবাবে বলা হলো এই মিয়া এটা বিড়াল নয় এটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার, খেতে না পেরে বিড়াল হয়ে গেছে।’ বাস্তবতাটা ঠিক ওই রকমওই ভারতের সঙ্গে নিজেদের অবস্থান বুঝাতে গিয়ে অনুপচেটিয়ার বদলে নূর হোসেনকে ফেরত পেলো বাংলাদেশ!
দুই. জিয়ার মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা; জিয়ার মাজার সংসদ এলাকায় থাকছেনা এমন খবর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার এতোদিন পর শুনতে হচ্ছে তাই অবাক লাগে। এ মাজার সরাতেতো এতোদিন লাগার কথা না। সরকার ক্ষমতায় আসার পর যখন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম বদলে যায়, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র হয়ে যায়, ভাসানী নভোথিয়েটার বঙ্গবন্ধু থিয়েটার হয়ে যায়, তাহলে জিয়ার মাজার সরানোর সময় নেয়াটা বেশি হয়ে গেলো না!
কথা সেখানে নয়; আগেই বলেছিলমা ‘লুক মিয়ানমার’। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন। এখন বাকী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ধরে নিলাম এ নির্বাচনে সরকার ক্ষমতায় এলো! ভিশন ২০২১ বাস্তবায়ন হলো, টার্গেট ২০৪১ও পূরণ হলো! তারপর! যদি মিয়ানমারের গনতন্ত্রকামী শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অংসান সূচির দলের মতো মিয়ানমারের আকাশে ‘গণতন্ত্রের’ সুর্য্যের উদয়ন ঘটালো বিএনপি বা খালেদা জিয়ার উত্তরসূরীরা। তাহলে কি হবে, যদি তারা বলে গোপালগঞ্জকে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহর করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার সরিয়ে ফেলা হবে বা ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি কলাবাগান লেক সংস্কারের নামে সরিয়ে ফেলা হবে তাহলে কি কিছু বলার থাকবে! আমি মনে করি এ সংস্কৃতি থেকে রেব হওয়া খুবই জরুরী।
তিন. বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ্ ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, আইন-শৃংখলা বাহিনী বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের দমনে ব্যস্ত থাকায় জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকারি দল সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। আর সরকারি বাহিনীগুলো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দমনে ব্যস্ত। এ কারণেই বর্তমানে দেশে কারো জীবনের নিরাপত্তা নেই। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার না করে প্রতিদিন কম-বেশি এক হাজার বিরোধী দলীয় কর্মীকে গ্রেফতার করছে সরকার। আট-দশ জন বিএনপি কর্মী একসঙ্গে বসলেও নাশকতার পরিকল্পনা করছে বলে গ্রেফতার করা হয়। প্রশ্ন জাগে গ্রেফতার বা হামলা কি রাজনৈতিক সমাধান এনে দিবে! অন্ধ করে কি প্রলয় বন্ধ করা যাবে!
চার. এমপি লিটন সাহেব গুলি করে শিশু হত্যার চেষ্টা করেছে, এমপির ছেলে গাড়ি চাপা দিয়ে মানুষ মারছে, এক মন্ত্রী সচিবালয়ের ভিতরে তার অধিনস্ত কর্মকর্তার কক্ষে ভাংচুর করে তালা লাগিয়ে দিচ্ছে। এগুলোকে কি বলা হবে?
হান্নান শাহার বক্তব্য দেশের মানুষ কিভাবে নেবেন সেটি তাদের বিষয়; কিন্তু বাস্তবতা হলো এ কথাগুলো অস্বীকার করা যাবেনা। তবে বিস্মিত হই কোথায় জানেন; ধরপাকড়ের পর যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দেশের ধরপাকড় হচ্ছে না। শুধু আমি নই বিবেকবান সব মানুষই হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে বিশ্লেষণ করবে। আর গণতন্ত্র বা মানুষের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে আবুল কাশেম ফজলুল হক স্যারের মতো বলবেন ‘আমরা’ ক্ষমা করবো। কিন্তু আমার প্রশ্ন জনগণ কি ক্ষমা করবে?
শাহাব উদ্দিন সাগর
যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
১৩ নভেম্বর, ২০১৫।