নিউইয়র্ক ১০:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আজকের সমাজ ও কিছু অভিজ্ঞতা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০১৫
  • / ১৭০৩ বার পঠিত

মিজানুর রহমান খান আপেল: কে না চায় তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক যা মানব সমাজের জন্য অতীব প্রয়োজন। মানব সমাজ তথা জাতীয় উন্নতি সাধনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই, যা থেকে উপকৃত হতে পারে সমাজের প্রতিটি মানুষ। সততা ও আইনের শাসন মেনে চলার কারণে এক সময় সমাজে ছিল শান্তি, একে অপরের প্রতি ছিল মায়া মমতা, ¯েœহ-ভালবাসা, সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শন, ছিল অন্যের সুখে দুঃখে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিযোগীতা একটাই, কার সন্তান কত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চ মাত্রায় অর্থ উপার্জন করতে পারে। ন্যায় অন্যায় বৈধ অবৈধের কোন ভেদাভেদ নেই। এ যেন একটা বিরাট প্রতিযোগীতা এমন এক সময় ছিল মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করতেন অমুকের সন্তানেরা মানুষ হয়েছে কিনা, মানে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে কিনা। আজ সমাজ থেকে এ নীতি কথাটা হারিয়ে গিয়েছে। কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থানে অনৈতিকতাই সমাজের প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে, কিন্তু জাত ধর্ম নির্বিশেষে নৈতিকতাই যে মানব জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ তা অনেকেই বুঝতে চাননা, বা অনেকে না বুঝার ভান করেন, তাদের কাছে অর্থ ছাড়া আর সবই মূল্যহীন।
অনেক স্বার্থান্বেষী মা বাবা অর্থ উপার্জনই মূল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করে এই ফরমূলায় সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন। অথচ সৎপথে উপার্জনের কথাটা বলতে চান না। কারণ অসৎপথেই রাতারাতি টাকার কুমির হওয়া যায়।
বর্তমান যুগে মানুষ দায়িত্ব কর্তব্য সম্বন্ধে খুবই উদাসীন। আজ মানুষ মানুষের তথা সন্তানের অধিকার (পাওনা) নিশ্চিত না করেই তার কর্তব্য নিয়ে মাথা ঘামায় কারণ প্রতিটা সন্তানই জন্মগত ভাবেই নিষ্পাপ ও বিবেকশুন্য অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে। তারপর কচি লতার ন্যায় তিল তিল করে বেড়ে উঠে মা বাবার সার্বিক সহযোগীতায় ও লালন পালনের মাধ্যমে। প্রথমে সন্তান, মা বাবা তার পর পারিপার্শ্বিকতাকে অনুসরণ, অনুকরণ করে মনের অজান্তেই আপন ভূবন সৃষ্টি করে নেয়। এর প্রতিফলন ঘটে সমাজে, মূল কথা প্রথমে সন্তানের পাওনা সুশিক্ষা, তার মা বাবার কাছ থেকে। এটা যেমন সন্তানের অধিকার তেমনি সুশিক্ষা দেওয়া মা বাবার দায়িত্ব। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব মায়ের কারণ আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত ভালবাসার টানেই সন্তান মায়ের আঁচল ধরেই বেড়ে উঠে মায়ের স্তনের দুগ্ধ পান করার মাধ্যমে মায়ের এ নারীছেড়া ধন। একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ছায়ার মত লেগে থাকে মায়ের গা ঘেঁষে তাই মায়ের আচার ব্যবহারে প্রভাবিত হয় এবং মায়ের ভাষাটাই আয়ত্ব করে প্রথম, তাই এটাকে মাতৃভাষা বলা হয়।
মায়ের সুশিক্ষায় সন্তান যেমন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভূমিকা অগ্রগণ্য তেমনি কুসন্তান হওয়ার ক্ষেত্রেও দায়ভার অনেকটাই মায়ের উপরই বর্তায়। বাবার প্রধান দায়িত্ব সন্তান ও সংসারের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানো তাই তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় বাচ্চাদের তেমন সময় দিতে পারেন না। এমতাবস্থায় অনেক বুদ্ধিমতি মায়েদের সুশিক্ষা দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে অনেক সন্তান সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মা বাবার সুশিক্ষার আলোকে এখন তাদের মা বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করে আসছে।
উদাহরণ স্বরূপ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক মায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছি। যিনি তার জীবনের সিংহভাগ গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন তার পিতৃহারা সন্তানের পেছনে। স্বপ্ন একটাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের মুখে হাসি ফুটাবে এ সন্তানই অবলম্বন হবে তার জীবনের সুখে শান্তিতে কাটাবে বাকী জীবনটা, অনেক আশা ভরসা নিয়ে বুকে বাসা বেঁধে ছিলেন, একদিন পুত্র বধু হবে। বুকের জড়িয়ে আদর করবেন তাকে নিজের মেয়ের মত। তারপর তাদের ঘরে আসবে ফুটফুটে ছোট সোনামনি ঘরকে আলোকিত করতে, হেসে খেলে দিন কাটাবেন তার সঙ্গে…….. আরো কতকি অবশেষে সবই হলো। হলোনা শুধু অভাগিনীর ঐ সংসারে মাথা গোজার ঠাঁই কারণ ছেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ‘মডার্ন’। কিন্তু মানুষ হয় নাই। হয়েছে মানুষ আকৃতির নরপশু, যদিও বা কারো সুপারিশে ঐ সংসারে থাকার অনুমতি মিলেছে। তবে শর্ত, বৃদ্ধা মাকেও উপার্জন করে তাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। হায়রে পোড়া কপাল এখন তার সঙ্গী শুধু বিরহের কান্না আর অশ্রুজল।
হে অভাগী মা মনে কষ্ট নেবেন না। আপনাকেই বলছি। প্রশ্ন: উচ্চ শিক্ষার সাথে কি ধর্ম শিক্ষা দিয়ে ছিলেন? এটা যে তার দায়িত্ব কর্তব্য, বিবেককে যে তাড়া দিবে এমন নৈতিকতা অথবা সুজনদের সাথে চলাফেরা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন? তা না হলে শুধু শিক্ষা ছিল কিন্তু সুশিক্ষা ছিল না, শিশুকালে যে সন্তান সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আজ তার ধারাবাহিকতায় মাকে তার প্রতিদান দিতে কুণ্ঠাবোধ করছেনা, দোষ দেবেন কাকে?
উদাহরণ তুলে ধরছি আরেক মায়ের যার নাম প্রকাশে কোন আপত্তি নেই। তিনি মিসেস আফরোজা পিনু গ্রাম কুলিয়া, উপজেলা ঘাটাইল, স্বামী আব্দুস সালাম, গ্রাম বৈল তৈল, উপজেলা ঘাটাইল, টাংগাইল। বর্তমান ঠিকানা ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক। এই মা যিনি আপাত দৃষ্টিতে তার সাফল্যের প্রথম ধাপ পাড়ি দিয়েছেন। যিনি ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে পারিপার্শিকতা বিবেচনায় এনে, তারা স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অন্য মায়েদের সন্তানদেরকে আর্থিক সাহায্য করে তার সাথে নিজের সন্তানদের উপর আল্লাহ তায়ালার রহমত পাওয়ার আশা রেখেছেন এবং এটাই তার সন্তানের কল্যাণের উপযোগী মনে করেছেন।
কয়েক বছর আগের কথা একে একে অনেক সন্তানের মা বাবার কাছে প্রস্তাব রেখেছি আলোচনার মাধ্যমে যে, আমরা টাঙ্গাইল প্রবাসী। আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে থাকি। কিন্তু যাদের এরকম কোন পাওয়ার মাধ্যম নেই তাদের সাহায্যার্থে কিছু করা যায় কিনা। আমার এ কথার উত্তরে এ মা নিদ্বির্ধায় বলে ছিলেন হ্যাঁ ভাই এটা একটা খুব ভাল উদ্যোগ আপনারা যদি এরকম অর্থ সংকটে পরা মেধাবী ছাত্র/ ছাত্রীদের খুঁজে বের করতে পারেন আমাদের জন্য খুব ভাল হয়। এটা কোন ব্যাপার না আমাদের জন্য। আমাদের দেওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু ঐ সকল মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের খুঁজে বের করা আমাদের জন্য কষ্ট সাধ্য। প্রতিটা মা বাবা চান তার সন্তান সুশিক্ষিত হোক, সাথে সাথে আমাদের বাচ্চারাও যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজকে আলোকিত করতে পারে। এ কথা আমাকে অনেক অনুপ্রাণীত করেছে ও উৎসাহ যুগিয়েছে তার পর থেকে (২০০৮ ইং) ‘টাঙ্গাইল কল্যাণ ট্রাস্ট’ গড়ে উঠেছে যার মাধ্যমে প্রতি বছর বৃত্তির মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের অভ্যন্তরে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কোটা ভিত্তিক, প্রতিটা উপজেলায়। বর্তমানে এর সদস্য/সদস্যা সংখ্যা পঞ্চাশ উর্ধ। এই মায়ের তিন সন্তানই আজ আল্লাহ তায়ালার রহমতে স্পেশাল স্কুল ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুল-এ অধ্যয়নরত। সাথে সাথে ধর্মীয় শিক্ষায় বেশ মনোযোগী ও ধর্ম পালনে উৎসাহী, ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে আজ বর্তমান দুনিয়া অশান্তিতে আবদ্ধ। সুতরাং অবৈধ উপায়ে পয়সা উপার্জনকারীর জ্ঞান যেখানে শেষ, বৈধ উপার্জনকারীর জ্ঞান ওখান থেকে শুরু। তাই এ মা কথা প্রসঙ্গে বলেছেন, যে সময়ে অন্য মায়েরা তাদের সন্তানের বায়নার কারণে স্মার্ট ফোন কিনে দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন ঐ সময় তিনি অপ্রাপ্ত বয়সে এটার অপকারিতা সন্তানদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এটাই তার সফলতা, একজন গর্বিত মা।
এ যুগে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কথাটা ঠিক নয়। শ্লোগান হবে ‘সুশিক্ষাই জাতীয় মেরুদন্ড’। শিক্ষা দীক্ষা একই সূত্রে গাঁথা অনেকে সন্তানদের পুঁথিগত শিক্ষা হয়তো দিয়েছেন, দীক্ষা তারা মোটেও পায় নাই। বাস্তবে সমাজে চলার পথে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখার সৌভাগ্য তাদের হয় নাই। কারণ আমাদের সমাজে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোক যারা আত্ম জ্ঞানের ফুলকি ফুটান মুখে, অথচ বলে থাকেন আমি কারো সাথে মিশিনা। প্রশ্ন: আপনি যদি সমাজে না মিশেন, তাহলে আপনি সামাজিক জীব হলেন কি ভাবে? আপনার সন্তানকে সামাজিক ভাবে শিক্ষা দেবেন কি ভাবে? এই সন্তানেরা আপনাকে কি দেবে? তাদের কাছে আপনি কি আশা করেন? বনের পশু পাখীরাও যেখানে দল বেঁধে চলাচল করে আত্ম রক্ষার্থে, মানুষ কি তাদের চেয়েও নিচে? তাই কবি বলেছেন ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ’। যখন আপনি নিজেকে সমাজচ্যুত করবেন তখন আপনার সন্তান খুঁজে নিতে বাধ্য হবে অন্য কোন অসৎসংগ অথবা সময় কাটাতে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে আজে বাজে ওয়েব সাইট দেখতে। এ অবস্থায় অনেক মা বাবা মনে করেন তাদের সন্তান লেখা পড়ার খুবই মনোযোগী অথচ বছরের শেষে ফলাফল দেখে হতবাক, বলে থাকেন আমাদের সন্তান সারা বছর এত লেখা পড়ার সময় ব্যয় করল অথচ….। ভাগ্য খারাপ। ভাগ্য তো বটেই তবে খবর রেখেছেন স্মার্ট ফোন কম্পিউটার লেখা পড়ার জন্য দৈনিক কত ঘন্টা ব্যবহার করতে হয়? আদৌ এই বয়সে এত বিলাসিতার প্রয়োজন ছিল কিনা। কোন কাজে সময় ব্যয় হয়েছে? আপনার সন্তান কার সাথে বন্ধুত্ব করেছে? আপনি কতদিন তাদের সমাজের ভাল পরিবেশে নিয়ে গিয়েছেন? আপনি যদি সন্তানদের সুশিক্ষার সাথে সাথে ভাল পরিবেশে মেশার সুযোগ করে দেন মনের অজান্তেই তারা সঠিক সুন্দর পথের পথিক হবে আর পাথেয় সুন্দর হলে পথ চলা এমনিতেই সহজ হয়।
উজ্জলতম ভবিষ্যত গড়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা না হলে একবার লাইনচ্যুত হলে তাদের পথে ফেরানো যায় না যেমন: বিভিন্ন প্রজাতী ও স্বভাবের পশু পাখিকে একত্র রেখে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা যার যার দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। তাই মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়।
আজ অনেক লোকদের বলতে শুনা যায়, অমোক তমোক খুব সুখী, বড় লোক, বুদ্ধিমান ইত্যাদি। তারা কি ভোবে দেখেছেন, সুখী লোকের অভাব নেই কিন্তু শান্তিতে আছে কতজন? এদের মধ্যে অনেকে বুঝে না। আবার অনেকে না বুঝার ভান করে। ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সবের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্তানদের অবৈধ অর্থ উপার্জনে প্রভাবিত করে থাকেন। অথচ যারা মদ্য পান করে অট্টালিকায় ঘুমায় তারা সাময়িক সুখ পেলেও কি শান্তিতে আছে? পয়সা থাকলেই যদি বড়লোক হওয়া যেত তাহলে তো চোর ডাকাতরাও বড়লোক। বড়লোক হতে হলে নৈতিকতার বিকল্প নেই, বড় মনের পরিচয়ের মাধ্যমেই বড়লোক হওয়া যায়। জাত ধর্ম নির্বিশেষে বৈধ উপার্জনে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর মধ্য দিয়ে। যারা জ্ঞান-বুদ্ধি, বড়লোক-ধনী এবং সুখ-শান্তি পার্থক্য বুঝে না তারাই আবার নিজেদের মহাজ্ঞানী বলে দাবী করেন। অল্প কথায় বলতে গেলে জ্ঞান থাকলে বড়লোক হওয়া যায়, বড়লোক হলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় যেখানে শুধু নৈতিক আচরণই বিদ্যমান আর নৈতিক আচরণই সততার পরিচয়। অন্যদিকে বুদ্ধি থাকলে ধনী হওয়া যায়, ধনী হলে সুখ পাওয়া যায় যা শুধু সাময়িক ভোগ বিলাসের চাহিদা মেটায়। পরবর্তীতে মনকে উদাসীন, পাগল প্রায় করে তোলে, নেমে আসে অভিশাপ এবং মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হয়। বুদ্ধি খাটিয়ে চোরকে সাধু, সাধুকে চোর, ন্যায়কে অন্যায়, অন্যায়কে ন্যায় বানানো যায় অর্থাৎ যে বুদ্ধিতে নৈতিকতা অনুপস্থিত তা জ্ঞান হতে পারে না যেমন: বাবুই পাখীর অনেক বুদ্ধি, বাসা বুনে নিঁখুত ভাবে, জোনাকী পোকা ধরে এনে নিজের ঘর আলোকিত করে কিন্তু বাবুই পাখী জ্ঞানী নয় তাই যদি হতো পথিকের চলার পথের উপর বাসা বেঁধে ময়লা ফেলতো না অন্যের খরকুটায় নিজের ঘর তৈরী করতো না, অন্যের ক্ষেতের ফসল নষ্ট করত না।
কোন কোন মা সন্তানদের প্রতি অতি আদরের ভূমিকা অথবা বিলাসিতা দেখাতে গিয়ে তাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেন যা সন্তানের সুশিক্ষা বাধাগ্রস্থ হয় এমতাবস্থায় বাবা অসম্মতি জানালে সন্তানেরা বাবার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় তাদের জ্ঞানের সল্পতার কারণে, নিজেদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শুরু হয় যুদ্ধ (মা+সন্তান) বনাম বাবা=অশান্তি। আবার সন্তান যখন পরিপক্ক বয়সে বুঝতে পারে তার অতীত ভুলের কথা তখন মাকে দোষারোপ করতে থাকে। শুরু হয় ত্রিমুখী যুদ্ধ। মা, বাবা ও সন্তানের মধ্যে। ফলাফল বিচ্ছিন্নতা।
কিছু বিকৃত রুচী সম্পন্ন জ্ঞান পাপীদের দেখা যায় তার সন্তানদের বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পড়াতে খুব উৎসাহ বোধ করেন। যেমন ছেলেদের হাতে চুরি কানে দুল গলায় ওড়না ইত্যাদি। তন্মধ্যে মেয়েদের বেলায় বেশী ঘটে। যেখানে আল্লাহতায়ালা নারী পুরুষ একে অপরের উপর মর্যাদা দান করেছেন সেখানে তারা মেয়েদেরকে ছেলেদের পোষাক পড়িয়ে তাদের নারী সুলভ আচরণকে উশৃঙ্খলায় উৎসাহীত করে ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেন এতে পরবর্তীতে যা হবার তাই হয় দোষ দেবেন কাকে?
সমাজে কিছু মা বাবাকে দেখা যায় সুযোগ পেলেই সন্তানদেরকে ঘরে যন্ত্রের সাথে সময় কাটাতে দিয়ে তারা বিভিন্ন আড্ডায় মেতে থাকেন যা বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
পয়সার লোভ কম বেশী সবারই আছে। মানুষ মাত্রই মন্দ কর্ম প্রবণ ও লোভী। তন্মধ্যে কাউকে পয়সার লোভ এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সেখানে কোন কোন মায়েরা অপ্রয়োজনে স্বামীর উপর খবরদারী করার জন্য সন্তানদের লালন পালনের কর্তব্য কাজের তোয়াক্কা না করে নিজের বাচ্চা অন্যের হাতে তুলে দিয়ে সময় অসময়ে টাকার নেশায় ব্যস্ত সময় কাটান তখন তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় দূরত্ব, সন্তান, মা বাবার প্রতি হারায় ভালবাসা। পক্ষান্তরে একদিন ঐ মা বাবার আশ্রয় বহুল হয় বৃদ্ধাশ্রম অথবা একাকীত্ব জীবন। যে সন্তানদের ঘরে মায়ের তৈরী করা খাবার ভাগ্যে জোটে না মরণ খাবার মানে ফাষ্টফুড খেয়ে দিন কাটাতে হয় ঐ সন্তানেরা আপনার উপার্জিত টাকা মদ জুয়ায় অথবা খারাপ কাজে ব্যবহার করবে না তা ভাবেন কিভাবে?
অনেকে শুরু থেকেই বাচ্চাদের মিথ্যার তালিম দিয়ে থাকেন যেমন কেউ ফোন করলে তাদের কথা বলার ইচ্ছা না থাকায় বাচ্চাদেরকে বলে দেয় বল বাবা মা ঘুমাচ্ছে অথবা বাসায় নেই অথচ মিথ্যা সকল পাপের মা জননী। মিথ্যা থেকেই সব ধরনের অন্যায় শুরু। আবার অনেককে বলতে শুনা যায় তাদের সন্তানরা বাংলা ভাষা ভুলেই গেছে। তাও আবার গর্ব করে এরা যে কত বড় নির্লজ্জ তা বলাই বাহুল্য। ভাবুন কার কত জন আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশী আছে যারা সবাই ইংলিশ বোঝেন। মানে সন্তানদের নিঃসঙ্গ করার এটাই বড় উপায়। আর বেশী দেরী নয় আজ যারা বাংলা ভুলে গেছে, তারাই আবার আপনাদেরকে ভুলে যাবে অতি সহজেই। এভাবেই অনেক মূখ্য পন্ডিতেরা সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে নিজেদের দলে অন্তর্ভূক্ত করেন এবং আধুনিকতার দোহাই দিয়ে মার্জিত পোষক ছেঁড়ে দিয়ে নির্লজ্জের মডেল হয়ে যায় যা গোটা সামাজে তার প্রভাব পরে।
মাত্রাধিক স্বাস্থ্য যেমন শরীরের অসুস্থতা বাড়ায় তেমনি মৌলিক চাহিদার অধিক পয়সা মানুষকে মানসিক রোগে আক্রান্ত করে। আজ আর নয় আমার এ লেখা ব্যক্তিগতভাবে কারো কষ্ট দেওয়ার জন্য নয় অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরলাম। আশা রাখি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

আজকের সমাজ ও কিছু অভিজ্ঞতা

প্রকাশের সময় : ০১:৫৯:৫৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ জুলাই ২০১৫

মিজানুর রহমান খান আপেল: কে না চায় তার সন্তানেরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক যা মানব সমাজের জন্য অতীব প্রয়োজন। মানব সমাজ তথা জাতীয় উন্নতি সাধনে সুশিক্ষার বিকল্প নেই, যা থেকে উপকৃত হতে পারে সমাজের প্রতিটি মানুষ। সততা ও আইনের শাসন মেনে চলার কারণে এক সময় সমাজে ছিল শান্তি, একে অপরের প্রতি ছিল মায়া মমতা, ¯েœহ-ভালবাসা, সহানুভূতি ও সম্মান প্রদর্শন, ছিল অন্যের সুখে দুঃখে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রতিযোগীতা একটাই, কার সন্তান কত উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উচ্চ মাত্রায় অর্থ উপার্জন করতে পারে। ন্যায় অন্যায় বৈধ অবৈধের কোন ভেদাভেদ নেই। এ যেন একটা বিরাট প্রতিযোগীতা এমন এক সময় ছিল মুরুব্বীরা জিজ্ঞেস করতেন অমুকের সন্তানেরা মানুষ হয়েছে কিনা, মানে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছে কিনা। আজ সমাজ থেকে এ নীতি কথাটা হারিয়ে গিয়েছে। কুশিক্ষা ও অপসংস্কৃতির উত্থানে অনৈতিকতাই সমাজের প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে, কিন্তু জাত ধর্ম নির্বিশেষে নৈতিকতাই যে মানব জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ তা অনেকেই বুঝতে চাননা, বা অনেকে না বুঝার ভান করেন, তাদের কাছে অর্থ ছাড়া আর সবই মূল্যহীন।
অনেক স্বার্থান্বেষী মা বাবা অর্থ উপার্জনই মূল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করে এই ফরমূলায় সন্তানদের শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন মনে করেন। অথচ সৎপথে উপার্জনের কথাটা বলতে চান না। কারণ অসৎপথেই রাতারাতি টাকার কুমির হওয়া যায়।
বর্তমান যুগে মানুষ দায়িত্ব কর্তব্য সম্বন্ধে খুবই উদাসীন। আজ মানুষ মানুষের তথা সন্তানের অধিকার (পাওনা) নিশ্চিত না করেই তার কর্তব্য নিয়ে মাথা ঘামায় কারণ প্রতিটা সন্তানই জন্মগত ভাবেই নিষ্পাপ ও বিবেকশুন্য অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে। তারপর কচি লতার ন্যায় তিল তিল করে বেড়ে উঠে মা বাবার সার্বিক সহযোগীতায় ও লালন পালনের মাধ্যমে। প্রথমে সন্তান, মা বাবা তার পর পারিপার্শ্বিকতাকে অনুসরণ, অনুকরণ করে মনের অজান্তেই আপন ভূবন সৃষ্টি করে নেয়। এর প্রতিফলন ঘটে সমাজে, মূল কথা প্রথমে সন্তানের পাওনা সুশিক্ষা, তার মা বাবার কাছ থেকে। এটা যেমন সন্তানের অধিকার তেমনি সুশিক্ষা দেওয়া মা বাবার দায়িত্ব। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব মায়ের কারণ আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত ভালবাসার টানেই সন্তান মায়ের আঁচল ধরেই বেড়ে উঠে মায়ের স্তনের দুগ্ধ পান করার মাধ্যমে মায়ের এ নারীছেড়া ধন। একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত ছায়ার মত লেগে থাকে মায়ের গা ঘেঁষে তাই মায়ের আচার ব্যবহারে প্রভাবিত হয় এবং মায়ের ভাষাটাই আয়ত্ব করে প্রথম, তাই এটাকে মাতৃভাষা বলা হয়।
মায়ের সুশিক্ষায় সন্তান যেমন সমাজে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ভূমিকা অগ্রগণ্য তেমনি কুসন্তান হওয়ার ক্ষেত্রেও দায়ভার অনেকটাই মায়ের উপরই বর্তায়। বাবার প্রধান দায়িত্ব সন্তান ও সংসারের অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানো তাই তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় বাচ্চাদের তেমন সময় দিতে পারেন না। এমতাবস্থায় অনেক বুদ্ধিমতি মায়েদের সুশিক্ষা দেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে অনেক সন্তান সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং মা বাবার সুশিক্ষার আলোকে এখন তাদের মা বাবার প্রতি দায়িত্ব পালন করে আসছে।
উদাহরণ স্বরূপ, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক মায়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরছি। যিনি তার জীবনের সিংহভাগ গুরুত্বপূর্ণ সময় ব্যয় করেছেন তার পিতৃহারা সন্তানের পেছনে। স্বপ্ন একটাই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের মুখে হাসি ফুটাবে এ সন্তানই অবলম্বন হবে তার জীবনের সুখে শান্তিতে কাটাবে বাকী জীবনটা, অনেক আশা ভরসা নিয়ে বুকে বাসা বেঁধে ছিলেন, একদিন পুত্র বধু হবে। বুকের জড়িয়ে আদর করবেন তাকে নিজের মেয়ের মত। তারপর তাদের ঘরে আসবে ফুটফুটে ছোট সোনামনি ঘরকে আলোকিত করতে, হেসে খেলে দিন কাটাবেন তার সঙ্গে…….. আরো কতকি অবশেষে সবই হলো। হলোনা শুধু অভাগিনীর ঐ সংসারে মাথা গোজার ঠাঁই কারণ ছেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত ‘মডার্ন’। কিন্তু মানুষ হয় নাই। হয়েছে মানুষ আকৃতির নরপশু, যদিও বা কারো সুপারিশে ঐ সংসারে থাকার অনুমতি মিলেছে। তবে শর্ত, বৃদ্ধা মাকেও উপার্জন করে তাদের সাথে শেয়ার করতে হবে। হায়রে পোড়া কপাল এখন তার সঙ্গী শুধু বিরহের কান্না আর অশ্রুজল।
হে অভাগী মা মনে কষ্ট নেবেন না। আপনাকেই বলছি। প্রশ্ন: উচ্চ শিক্ষার সাথে কি ধর্ম শিক্ষা দিয়ে ছিলেন? এটা যে তার দায়িত্ব কর্তব্য, বিবেককে যে তাড়া দিবে এমন নৈতিকতা অথবা সুজনদের সাথে চলাফেরা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন? তা না হলে শুধু শিক্ষা ছিল কিন্তু সুশিক্ষা ছিল না, শিশুকালে যে সন্তান সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে আজ তার ধারাবাহিকতায় মাকে তার প্রতিদান দিতে কুণ্ঠাবোধ করছেনা, দোষ দেবেন কাকে?
উদাহরণ তুলে ধরছি আরেক মায়ের যার নাম প্রকাশে কোন আপত্তি নেই। তিনি মিসেস আফরোজা পিনু গ্রাম কুলিয়া, উপজেলা ঘাটাইল, স্বামী আব্দুস সালাম, গ্রাম বৈল তৈল, উপজেলা ঘাটাইল, টাংগাইল। বর্তমান ঠিকানা ব্রঙ্কস নিউইয়র্ক। এই মা যিনি আপাত দৃষ্টিতে তার সাফল্যের প্রথম ধাপ পাড়ি দিয়েছেন। যিনি ধর্মীয় শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে পারিপার্শিকতা বিবেচনায় এনে, তারা স্বামী স্ত্রীর পারস্পরিক সহযোগীতার মাধ্যমে সন্তানদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে অন্য মায়েদের সন্তানদেরকে আর্থিক সাহায্য করে তার সাথে নিজের সন্তানদের উপর আল্লাহ তায়ালার রহমত পাওয়ার আশা রেখেছেন এবং এটাই তার সন্তানের কল্যাণের উপযোগী মনে করেছেন।
কয়েক বছর আগের কথা একে একে অনেক সন্তানের মা বাবার কাছে প্রস্তাব রেখেছি আলোচনার মাধ্যমে যে, আমরা টাঙ্গাইল প্রবাসী। আমরা সবাই যার যার অবস্থান থেকে আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী ও তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করে থাকি। কিন্তু যাদের এরকম কোন পাওয়ার মাধ্যম নেই তাদের সাহায্যার্থে কিছু করা যায় কিনা। আমার এ কথার উত্তরে এ মা নিদ্বির্ধায় বলে ছিলেন হ্যাঁ ভাই এটা একটা খুব ভাল উদ্যোগ আপনারা যদি এরকম অর্থ সংকটে পরা মেধাবী ছাত্র/ ছাত্রীদের খুঁজে বের করতে পারেন আমাদের জন্য খুব ভাল হয়। এটা কোন ব্যাপার না আমাদের জন্য। আমাদের দেওয়ার ইচ্ছা আছে কিন্তু ঐ সকল মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদের খুঁজে বের করা আমাদের জন্য কষ্ট সাধ্য। প্রতিটা মা বাবা চান তার সন্তান সুশিক্ষিত হোক, সাথে সাথে আমাদের বাচ্চারাও যেন মানুষের মত মানুষ হয়ে সমাজকে আলোকিত করতে পারে। এ কথা আমাকে অনেক অনুপ্রাণীত করেছে ও উৎসাহ যুগিয়েছে তার পর থেকে (২০০৮ ইং) ‘টাঙ্গাইল কল্যাণ ট্রাস্ট’ গড়ে উঠেছে যার মাধ্যমে প্রতি বছর বৃত্তির মাধ্যমে সাহায্য দেওয়া হয় টাঙ্গাইলের অভ্যন্তরে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত কোটা ভিত্তিক, প্রতিটা উপজেলায়। বর্তমানে এর সদস্য/সদস্যা সংখ্যা পঞ্চাশ উর্ধ। এই মায়ের তিন সন্তানই আজ আল্লাহ তায়ালার রহমতে স্পেশাল স্কুল ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুল-এ অধ্যয়নরত। সাথে সাথে ধর্মীয় শিক্ষায় বেশ মনোযোগী ও ধর্ম পালনে উৎসাহী, ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে আজ বর্তমান দুনিয়া অশান্তিতে আবদ্ধ। সুতরাং অবৈধ উপায়ে পয়সা উপার্জনকারীর জ্ঞান যেখানে শেষ, বৈধ উপার্জনকারীর জ্ঞান ওখান থেকে শুরু। তাই এ মা কথা প্রসঙ্গে বলেছেন, যে সময়ে অন্য মায়েরা তাদের সন্তানের বায়নার কারণে স্মার্ট ফোন কিনে দিয়ে নিজেদের ধন্য মনে করেছেন ঐ সময় তিনি অপ্রাপ্ত বয়সে এটার অপকারিতা সন্তানদের বুঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এটাই তার সফলতা, একজন গর্বিত মা।
এ যুগে শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কথাটা ঠিক নয়। শ্লোগান হবে ‘সুশিক্ষাই জাতীয় মেরুদন্ড’। শিক্ষা দীক্ষা একই সূত্রে গাঁথা অনেকে সন্তানদের পুঁথিগত শিক্ষা হয়তো দিয়েছেন, দীক্ষা তারা মোটেও পায় নাই। বাস্তবে সমাজে চলার পথে মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখার সৌভাগ্য তাদের হয় নাই। কারণ আমাদের সমাজে অনেক তথাকথিত শিক্ষিত লোক যারা আত্ম জ্ঞানের ফুলকি ফুটান মুখে, অথচ বলে থাকেন আমি কারো সাথে মিশিনা। প্রশ্ন: আপনি যদি সমাজে না মিশেন, তাহলে আপনি সামাজিক জীব হলেন কি ভাবে? আপনার সন্তানকে সামাজিক ভাবে শিক্ষা দেবেন কি ভাবে? এই সন্তানেরা আপনাকে কি দেবে? তাদের কাছে আপনি কি আশা করেন? বনের পশু পাখীরাও যেখানে দল বেঁধে চলাচল করে আত্ম রক্ষার্থে, মানুষ কি তাদের চেয়েও নিচে? তাই কবি বলেছেন ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গ বাস আর অসৎসঙ্গে সর্বনাশ’। যখন আপনি নিজেকে সমাজচ্যুত করবেন তখন আপনার সন্তান খুঁজে নিতে বাধ্য হবে অন্য কোন অসৎসংগ অথবা সময় কাটাতে নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে আজে বাজে ওয়েব সাইট দেখতে। এ অবস্থায় অনেক মা বাবা মনে করেন তাদের সন্তান লেখা পড়ার খুবই মনোযোগী অথচ বছরের শেষে ফলাফল দেখে হতবাক, বলে থাকেন আমাদের সন্তান সারা বছর এত লেখা পড়ার সময় ব্যয় করল অথচ….। ভাগ্য খারাপ। ভাগ্য তো বটেই তবে খবর রেখেছেন স্মার্ট ফোন কম্পিউটার লেখা পড়ার জন্য দৈনিক কত ঘন্টা ব্যবহার করতে হয়? আদৌ এই বয়সে এত বিলাসিতার প্রয়োজন ছিল কিনা। কোন কাজে সময় ব্যয় হয়েছে? আপনার সন্তান কার সাথে বন্ধুত্ব করেছে? আপনি কতদিন তাদের সমাজের ভাল পরিবেশে নিয়ে গিয়েছেন? আপনি যদি সন্তানদের সুশিক্ষার সাথে সাথে ভাল পরিবেশে মেশার সুযোগ করে দেন মনের অজান্তেই তারা সঠিক সুন্দর পথের পথিক হবে আর পাথেয় সুন্দর হলে পথ চলা এমনিতেই সহজ হয়।
উজ্জলতম ভবিষ্যত গড়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা না হলে একবার লাইনচ্যুত হলে তাদের পথে ফেরানো যায় না যেমন: বিভিন্ন প্রজাতী ও স্বভাবের পশু পাখিকে একত্র রেখে ছেড়ে দেওয়া হলে তারা যার যার দলে বিভক্ত হয়ে যাবে। তাই মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়।
আজ অনেক লোকদের বলতে শুনা যায়, অমোক তমোক খুব সুখী, বড় লোক, বুদ্ধিমান ইত্যাদি। তারা কি ভোবে দেখেছেন, সুখী লোকের অভাব নেই কিন্তু শান্তিতে আছে কতজন? এদের মধ্যে অনেকে বুঝে না। আবার অনেকে না বুঝার ভান করে। ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এ সবের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সন্তানদের অবৈধ অর্থ উপার্জনে প্রভাবিত করে থাকেন। অথচ যারা মদ্য পান করে অট্টালিকায় ঘুমায় তারা সাময়িক সুখ পেলেও কি শান্তিতে আছে? পয়সা থাকলেই যদি বড়লোক হওয়া যেত তাহলে তো চোর ডাকাতরাও বড়লোক। বড়লোক হতে হলে নৈতিকতার বিকল্প নেই, বড় মনের পরিচয়ের মাধ্যমেই বড়লোক হওয়া যায়। জাত ধর্ম নির্বিশেষে বৈধ উপার্জনে মানুষের প্রয়োজন মেটানোর মধ্য দিয়ে। যারা জ্ঞান-বুদ্ধি, বড়লোক-ধনী এবং সুখ-শান্তি পার্থক্য বুঝে না তারাই আবার নিজেদের মহাজ্ঞানী বলে দাবী করেন। অল্প কথায় বলতে গেলে জ্ঞান থাকলে বড়লোক হওয়া যায়, বড়লোক হলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় যেখানে শুধু নৈতিক আচরণই বিদ্যমান আর নৈতিক আচরণই সততার পরিচয়। অন্যদিকে বুদ্ধি থাকলে ধনী হওয়া যায়, ধনী হলে সুখ পাওয়া যায় যা শুধু সাময়িক ভোগ বিলাসের চাহিদা মেটায়। পরবর্তীতে মনকে উদাসীন, পাগল প্রায় করে তোলে, নেমে আসে অভিশাপ এবং মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হয়। বুদ্ধি খাটিয়ে চোরকে সাধু, সাধুকে চোর, ন্যায়কে অন্যায়, অন্যায়কে ন্যায় বানানো যায় অর্থাৎ যে বুদ্ধিতে নৈতিকতা অনুপস্থিত তা জ্ঞান হতে পারে না যেমন: বাবুই পাখীর অনেক বুদ্ধি, বাসা বুনে নিঁখুত ভাবে, জোনাকী পোকা ধরে এনে নিজের ঘর আলোকিত করে কিন্তু বাবুই পাখী জ্ঞানী নয় তাই যদি হতো পথিকের চলার পথের উপর বাসা বেঁধে ময়লা ফেলতো না অন্যের খরকুটায় নিজের ঘর তৈরী করতো না, অন্যের ক্ষেতের ফসল নষ্ট করত না।
কোন কোন মা সন্তানদের প্রতি অতি আদরের ভূমিকা অথবা বিলাসিতা দেখাতে গিয়ে তাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনে দেন যা সন্তানের সুশিক্ষা বাধাগ্রস্থ হয় এমতাবস্থায় বাবা অসম্মতি জানালে সন্তানেরা বাবার প্রতি অসন্তুষ্ট হয় তাদের জ্ঞানের সল্পতার কারণে, নিজেদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শুরু হয় যুদ্ধ (মা+সন্তান) বনাম বাবা=অশান্তি। আবার সন্তান যখন পরিপক্ক বয়সে বুঝতে পারে তার অতীত ভুলের কথা তখন মাকে দোষারোপ করতে থাকে। শুরু হয় ত্রিমুখী যুদ্ধ। মা, বাবা ও সন্তানের মধ্যে। ফলাফল বিচ্ছিন্নতা।
কিছু বিকৃত রুচী সম্পন্ন জ্ঞান পাপীদের দেখা যায় তার সন্তানদের বিপরীত লিঙ্গের পোষাক পড়াতে খুব উৎসাহ বোধ করেন। যেমন ছেলেদের হাতে চুরি কানে দুল গলায় ওড়না ইত্যাদি। তন্মধ্যে মেয়েদের বেলায় বেশী ঘটে। যেখানে আল্লাহতায়ালা নারী পুরুষ একে অপরের উপর মর্যাদা দান করেছেন সেখানে তারা মেয়েদেরকে ছেলেদের পোষাক পড়িয়ে তাদের নারী সুলভ আচরণকে উশৃঙ্খলায় উৎসাহীত করে ছেলে-মেয়ের অবাধ মেলামেশার সুযোগ করে দেন এতে পরবর্তীতে যা হবার তাই হয় দোষ দেবেন কাকে?
সমাজে কিছু মা বাবাকে দেখা যায় সুযোগ পেলেই সন্তানদেরকে ঘরে যন্ত্রের সাথে সময় কাটাতে দিয়ে তারা বিভিন্ন আড্ডায় মেতে থাকেন যা বাচ্চাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ায় বাধা সৃষ্টি করে।
পয়সার লোভ কম বেশী সবারই আছে। মানুষ মাত্রই মন্দ কর্ম প্রবণ ও লোভী। তন্মধ্যে কাউকে পয়সার লোভ এমনভাবে পেয়ে বসেছে যে, হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছেন। যেখানে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে অর্থ উপার্জনের দায়িত্ব ভার দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সেখানে কোন কোন মায়েরা অপ্রয়োজনে স্বামীর উপর খবরদারী করার জন্য সন্তানদের লালন পালনের কর্তব্য কাজের তোয়াক্কা না করে নিজের বাচ্চা অন্যের হাতে তুলে দিয়ে সময় অসময়ে টাকার নেশায় ব্যস্ত সময় কাটান তখন তাদের মাঝে সৃষ্টি হয় দূরত্ব, সন্তান, মা বাবার প্রতি হারায় ভালবাসা। পক্ষান্তরে একদিন ঐ মা বাবার আশ্রয় বহুল হয় বৃদ্ধাশ্রম অথবা একাকীত্ব জীবন। যে সন্তানদের ঘরে মায়ের তৈরী করা খাবার ভাগ্যে জোটে না মরণ খাবার মানে ফাষ্টফুড খেয়ে দিন কাটাতে হয় ঐ সন্তানেরা আপনার উপার্জিত টাকা মদ জুয়ায় অথবা খারাপ কাজে ব্যবহার করবে না তা ভাবেন কিভাবে?
অনেকে শুরু থেকেই বাচ্চাদের মিথ্যার তালিম দিয়ে থাকেন যেমন কেউ ফোন করলে তাদের কথা বলার ইচ্ছা না থাকায় বাচ্চাদেরকে বলে দেয় বল বাবা মা ঘুমাচ্ছে অথবা বাসায় নেই অথচ মিথ্যা সকল পাপের মা জননী। মিথ্যা থেকেই সব ধরনের অন্যায় শুরু। আবার অনেককে বলতে শুনা যায় তাদের সন্তানরা বাংলা ভাষা ভুলেই গেছে। তাও আবার গর্ব করে এরা যে কত বড় নির্লজ্জ তা বলাই বাহুল্য। ভাবুন কার কত জন আত্মীয়-স্বজন বা পাড়া প্রতিবেশী আছে যারা সবাই ইংলিশ বোঝেন। মানে সন্তানদের নিঃসঙ্গ করার এটাই বড় উপায়। আর বেশী দেরী নয় আজ যারা বাংলা ভুলে গেছে, তারাই আবার আপনাদেরকে ভুলে যাবে অতি সহজেই। এভাবেই অনেক মূখ্য পন্ডিতেরা সহজ সরল মানুষদের বোকা বানিয়ে নিজেদের দলে অন্তর্ভূক্ত করেন এবং আধুনিকতার দোহাই দিয়ে মার্জিত পোষক ছেঁড়ে দিয়ে নির্লজ্জের মডেল হয়ে যায় যা গোটা সামাজে তার প্রভাব পরে।
মাত্রাধিক স্বাস্থ্য যেমন শরীরের অসুস্থতা বাড়ায় তেমনি মৌলিক চাহিদার অধিক পয়সা মানুষকে মানসিক রোগে আক্রান্ত করে। আজ আর নয় আমার এ লেখা ব্যক্তিগতভাবে কারো কষ্ট দেওয়ার জন্য নয় অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরলাম। আশা রাখি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ সবাইকে।
কুইন্স ভিলেজ, নিউইয়র্ক।