শুক্রবার, জুলাই ১, ২০২২
No Result
View All Result
হককথা
  • প্রচ্ছদ
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • প্রবাস
  • এক স্লিপ
  • লাইফ স্টাইল
  • আরো
    • যুক্তরাষ্ট্র
    • স্বাস্থ্য
    • মুক্তাঙ্গন
    • সাহিত্য
    • সাক্ষাতকার
    • সম্পাদকীয়
    • মিডিয়া
    • জাতিসংঘ
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • স্মরণ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • ক্লাসিফাইড
  • প্রচ্ছদ
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • বিনোদন
  • খেলাধুলা
  • প্রবাস
  • এক স্লিপ
  • লাইফ স্টাইল
  • আরো
    • যুক্তরাষ্ট্র
    • স্বাস্থ্য
    • মুক্তাঙ্গন
    • সাহিত্য
    • সাক্ষাতকার
    • সম্পাদকীয়
    • মিডিয়া
    • জাতিসংঘ
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • স্মরণ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • ক্লাসিফাইড
হককথা
No Result
View All Result
Home মুক্তাঙ্গন

অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস

হক কথা by হক কথা
অক্টোবর ২৩, ২০১৪
in মুক্তাঙ্গন
0

অধ্যাপক গোলাম আযম একটি নাম, একটি ইতিহাস। তিনি বিশ্বনন্দিত ইসলামী চিন্তাবিদ, ভাষা আন্দোলনের নেতা, ডাকসুর সাবেক জিএস, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপকার। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের উত্থান-পতনের প্রতিটি ঘটনায় এবং এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযমের ভূমিকা ইতিহাস হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের মাটি, আলো-বাতাস এবং মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে আছে তার জীবন, তার সংগ্রাম। স্বেচ্ছায় দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে যাওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন তার মতো ব্যক্তির পক্ষেই দেয়া সম্ভব হয়েছে। ৫ম বারের মতো জেলে যাওয়ার আগে গণমাধ্যমের সামনে তিনি যে বলিষ্ঠ সাক্ষাতকার দিয়ে গেছেন তা ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের প্রেরণার বাতিঘর হিসেবেই দেখছেন সকলে। তার চিন্তা চেতনা আর সাহসিকতা আর বলিষ্ঠতা এদেশের ছাত্র-যুব সমাজ তথা ইসলাম প্রিয় মানুষের জন্য আদর্শ হয়ে থাকবে। তার অমর কৃতির জন্য তিনি চির অমর হয়ে থাকবেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয়: অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার (বাংলা ১৩২৯ সালের ৫ অগ্রহায়ণ) ঢাকা শহরের লক্ষ্মীবাজারস্থ বিখ্যাত দ্বীনী পরিবার শাহ সাহেব বাড়ী (মিঞা সাহেবের ময়দান নামে পরিচিত মাতুলালয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ মাওলানা আব্দুস সোবহান। তাদের আদি নিবাস ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও গ্রামে। ইউনিয়নের নামও বীরগাঁও। অধ্যাপক গোলাম আযমের পিতা ১৯৪৮ সালে ঢাকা মহানগরীতে রমনা থানার পূর্ব দিকে মগবাজার এলাকায় জমি কেনার পর ঢাকাতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
অধ্যাপক আযমের পূর্ব পূরুষগণ কমপক্ষে ৭ পুরুষ যাবত ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁওয়ের বাসিন্দা। মাতুল বংশের দিক থেকে অধ্যাপক গোলাম আযম ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাহ সাহেব পরিবারের সাথে সম্পর্কিত। তার মাতামহ ছিলেন মরহুম শাহ্ সৈয়দ আব্দুল মোনয়েম। প্রপিতামহ শাইখ মাহাবুদ্দিন। শাইখ শাহাবুদ্দিন একজন বড় আলেম এবং বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। অধ্যাপক আযমের দাদা মাওলানা আব্দুস সোবহান একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন। তার সম্পর্কে প্রচলিত ছিলো যে, মেঘনার পূর্ব পারে অতবড় আলেম তখন কমই ছিল। ঢাকার মোহসিনিয়া মাদ্রাসা থেকে ডিগ্রী নেয়ার পর গোলাম আযমের পিতা গোলাম কবির ১৯২১ সালে এন্ট্রান্স পাস করেন। এন্ট্রান্স পাসের পর মাওলানা গোলাম কবির হাইস্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। অধ্যাপক আযমের দাদা মাওলানা আব্দুস সোবহানও ঢাকার মোহসিনিয়া মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন এবং পরে শিক্ষকতা করেন। পরবর্তী সময়ে গভর্নমেন্ট ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে পরিণত হয় এবং গোলাম আযম সেই কলেজেই শিক্ষা লাভ করেন।
শিক্ষা জীবন: ১৯৩৭ সালে জুনিয়ার মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে কৃতিত্বেও সাথে উত্তীর্ণ হন। এসএসসি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় গোলাম আযম ত্রয়োদশ স্থান লাভ করেন। ১৯৪৪ সালে ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ থেকেই আইএ পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে ঢাকা বোর্ডে দশম স্থান অধিকার করেন। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের কাজে জড়িয়ে পড়ায় গোলাম আযম পরীক্ষা দিতে পারেননি এবং ১৯৪৯ সালে দাঙ্গাজনিত উত্তেজনাকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠান সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি ১৯৫০ সালে এম. এ পরীক্ষা দেন। ঐ বছর কেউ প্রথম বিভাগ পায়নি। চারজন ছাত্র উচ্চতর দ্বিতীয় বিভাগ লাভ করেন এবং অধ্যাপক গোলাম আযম তাদের মধ্যে একজন।
শিক্ষকতা পেশায় গোলাম আযম: ১৯৫০ সালের ৩ ডিসেম্বর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ) রাষ্ট্র বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। কর্মজীবনের সূচনা হলো। তিনি ১৯৫০ সালর ৩ ডিসেম্বর থেকে ১৯৫৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অত্যন্ত জনপ্রিয় শিক্ষক হিসেবে রংপুর কারমাইকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। নিজ বিভাগের ছাত্ররা ছাড়াও তার লেকচারের সময় অন্যান্য ক্লাসের ছাত্ররা তার ক্লাসে যোগদান করতো।
তাবলীগ জামায়াত ও তমদ্দুন মজলিসে গোলাম আযম: ছাত্রজীবন শেষে অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৫০ সালেই তাবলীগ জামায়াতের তৎপরতার সাথে জড়িত হন। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি তাবলীগ জামায়াতের রংপুরের আমীর ছিলেন। তাবলীগ জামায়াত যেহেতু ধর্মীয় প্রচার ও মিশনারী দায়িত্ব পালন করছিলো তাই তিনি শুধুমাত্র তাবলীগ জামায়াতের কাজ করেই তৃপ্তি পাননি। সুনির্দিষ্ট কোন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মসূচী তাবলীগ জামায়াতের ছিল না। তমদ্দুন মজলিসের কার্যক্রমে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা ও তার সমাধান সম্পর্কে বক্তব্য থাকায় জনাব গোলাম আযম তমদ্দুন মজলিসের কাজেও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে পড়েন ১৯৫২ সালেই। ১৯৫৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি তমদ্দুন মজলিসের রংপুর জেলার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জামায়াতে ইসলামীতে দায়িত্ব পালন: ১৯৫৪ সালের এপ্রিলে জামায়াতে ইসলামীতে সহযোগী (মুত্তাফিক) হিসেবে যোগদান করার পর ১৯৫৫ সালে গ্রেফতার হয়ে রংপুর কারাগারে অবস্থানকালেই জামায়াতের রুকন হন। ১৯৫৫ সালের জুন মাসে তিনি রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি নিযুক্ত হন। এর এক বছর পর তাকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি এবং রাজশাহী বিভাগীয় জামায়াতের আমীরের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৭১ সাল পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯-১৯৭১ সেশনে তিনি জামায়াতে ইসলামী পূর্ব-পাকিস্তানের আমীর নির্বাচিত হন। ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে মজলিসে শূরার কাছে বিশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করেন।
স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন: স্বৈরাচারী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে জামায়াত সর্বদাই সোচ্চার ছিলো। জামায়াতের অন্যতম নেতা হিসেবে এবং বিশেষভাবে রাজনৈতিক দিক থেকে উত্তপ্ত সাবেক পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমীর হিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযম বিরোধী দলীয় আন্দোলনে একজন প্রথম সারির নেতার ভূমিকা পালন করেছেন। আইয়ূব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিটি আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আযম অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালের ২০ জুলাই ঢাকায় খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনে মুসলিম লীগ (কাউন্সিল), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, আওয়ামী লীগ, নেজামে ইসলাম ও নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য চার দিনব্যাপী বৈঠকে নয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সম্মিলিত বিরোধী দল গঠন করা হয়। সম্মিলিত বিরোধী দলের তৎপরতা পরিচালনায় অধ্যাপক গোলাম আযম বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৬৭ সালের ৩০ এপ্রিল শাসরুদ্ধকর স্বৈরশাসনের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আতাউর রহমান খানের বাসভবনে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের সর্বজনাব নূরুল আমীন, হামিদুল হক চৌধুরী ও আতাউর রহমান খান, কাউন্সিল মুসলিম লীগের মিয়া মমতাজ দৌলতানা, তোফাজ্জল আলী ও সৈয়দ খাজা খায়েরুদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর মিয়া তোফায়েল মুহাম্মদ, মাওলানা আব্দুর রহীম ও অধ্যাপক গোলাম আযম, আওয়ামী লীগের নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, আব্দুস সালাম খান ও গোলাম মোহাম্মদ খান লুন্দখোর এবং নেজামে ইসলাম পাটির চৌধুরী মোহাম্মদ আলী, মৌলভী ফরিদ আহমদ ও এম, আর, খানকে নিয়ে ‘পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট’ গঠিত হয়। পিডিএম আট দফা কর্মসুচি ঘোষণা করে। পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের আব্দুস সালাম খানকে সভাপতি এবং অধ্যাপক গোলাম আযমকে জেনারেল সেক্রেটারি করে পূর্বাঞ্চলীয় পিডিএম কমিটি গঠিত হয়। পিডিএম-এর পূর্বাঞ্চলীয় জেনারেল সেক্রেটারি হিসেবে অধ্যাপক গোলাম আযম দিনরাত পরিশ্রম করেন এবং গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
১৯৬৯ সালের সরকার বিরোধী আন্দোলন জানুয়ারী মাসে সতুন পর্যায়ে প্রবেশ করায় দেশব্যাপী এক প্রচন্ড গণজাগরণের সূচনা হয়। সমগ্র দেশব্যাপী সুষ্ঠুভাবে গণআন্দোলন পরিচালনার তাগিদে ৭ ও ৮ জানুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী বৈঠকে (১) ন্যাপ, (২) আওয়ামী লীগ (৬ দফা), (৩) নেজামে ইসলাম পার্টি, (৪) জমিয়তে ই উলামায়ে ইসলাম, (৫) কাউন্সিল মুসলিম লীগ, (৬) জামায়াতে ইসলামী, (৭) এনডিএফ, (৮) আওয়ামী লীগ (৮ দফা পন্থী) এই আটটি  দলের নেতৃবৃন্দের স্বাক্ষর ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠন করা হয়। নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খানকে ডাক-এর আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়।
গণআন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান গোল টেবিল বৈঠকে যোগদান করার জন্য ডাক-এর ৮টি অঙ্গদলের দু’জন করে প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানান। যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তারা হলেন- কাউন্সিল মুসলিম লীগের মমতাজ দৌলতানা এবং খাজা খায়েরুদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সাইয়্যেদ আবুল আ’লা মওদূদী ও অধ্যাপক গোলাম আযম, পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (৬ দফা) শেখ মুজিবুর রহমান ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জমিয়তে ওলামায়ে ইসলামের মুফতি সাহমুদ ও পীর মোহসেন উদ্দিন, পাকিস্তান আওয়ামী লীগের (৮ দফা) নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান ও আব্দুস সালাম খান, নেজামে ইসলামের চৌধুরী মোহাম্মদ আলী ও মৌলভী ফরিদ আহমদ, ন্যাপের আব্দুল ওয়ালী খান ও অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। এ ছাড়াও পাকিস্তানের পিপল্স পাটির জুলফিকার আলী ভুট্টো ও ন্যাপ (ভাসানীর) মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এয়ার মার্শাল আসগর খান, লেঃ জেনারেল মুহম্মদ আযম খান ও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোরশেদ বৈঠকে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন।
২৬ ফেব্রুয়ারী রাওয়ালপিন্ডিতে সকাল সাড়ে দশটায় প্রেসিডেন্ট গেস্ট হাউজে ডাক-এর ষোলজন প্রতিনিধি, প্রেসিডেন্ট আইয়ুবের নেতৃত্বে ১৫ জন, নির্দলীয় এয়ার মার্শাল আসগর খান, বিচারপতি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ রাজনৈতিক সংকট উত্তরণকল্পে গোল টেবিল বৈঠকে মিলিত হন। ৪০ মিনিট ব্যাপী বৈঠকের পর ঈদুল আযহা উপলক্ষে বৈঠক ১০ মার্চ সকাল ১০ টা পর্যন্ত মূলতবি রাখা হয়। ১০ মার্চ হতে ১৩ মার্চ পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডিতে প্রেসিডেন্ট গেস্ট হাউজে গোল টেবিল বৈঠকে বসে এবং ১৩ মার্চ গোল টেবিল বৈঠকের সমাপ্তি অধিবেশনে প্রেসিডেন্ট আইয়ূব খান নিম্নোক্ত দাবী দুটি গ্রহণ করেন, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচন এবং ফেডারেল পার্লামেন্টারী সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন। অধ্যাপক গোলাম আযম এ বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিত্ব করেন।
বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ উপস্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালে তার পূর্বেকার প্রস্তাব মতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার সংবিধানে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ সংযোজন করেন। ১৯৯৯ সালে ইসলাম ও জনগণের ইচ্ছার বিরোধী ভারতের তাঁবেদার আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্ছেদের লক্ষ্যে গঠিত চারদলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন তিনি।
দায়িত্ব পালন: অধ্যাপক গোলাম আযম ১৯৪৫-১৯৪৬ সালে পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের এ্যাসিসটেন্ট সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া ১৯৪৬-১৯৪৭ সেশনে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের জিএস, ১৯৪৭-১৯৪৮ সেশনে পূর্ব-পাকিস্তান সাহিত্য সংসদের জেনারেল সেক্রেটারী, ১৯৫০-১৯৫৫ সালে অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ, ১৯৫২-১৯৫৪ সালে প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, তমদ্দুন মজলিস, রংপুর, ১৯৫১-১৯৫৪ সালে  আমীর, তাবলীগ জামায়াত, রংপুর, ১৯৫৭-১৯৫৯ সালে সেক্রেটারী, জামায়াতে ইসলামী, পূর্ব-পাকিস্তান, ১৯৫৮ সালে সভাপতি, সম্পাদনা পরিষদ, দৈনিক ইত্তেহাদ, ১৯৬৭-১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত সর্বদলীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে (পিডিএম) পূর্ব-পাকিস্তান আঞ্চলিক কার্যপরিষদ-এর জেনারেল সেক্রেটারী, ১৯৬৯ সালে আইয়ুব খানের আমন্ত্রণে ড্যাক-এর কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ, ১৯৬৯-১৯৭১ সালে আমীর, জামায়াতে ইসলামী, পূর্ব পাকিস্তান, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফর্মুলা’ উপস্থাপন, ১৯৯১-১৯৯৩ সেশনে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ-এর আমীর নির্বাচিত, ১৯৯৪-১৯৯৭ সেশনে পুনরায় আমীর নির্বাচিত, ১৯৯৮-২০০০ সেশনে পুনরায় জামায়াতের আমীর নির্বাচিত এবং ২০০০ সালের ডিসেম্বর মাসে মজলিসে শূরার কাছে বিশেষ আবেদনের প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করেন অধ্যাপক গোলাম আযম।
লেখক ও চিন্তাবীদ গোলাম আযম: আন্দোলন এবং সাংগঠনিক কাজের ব্যস্ততার মধ্যেও অধ্যাপক গোলাম আযম লেখা এবং চিন্তার জগতে তার অবদান রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ১৯৫৮ সালে তিনি দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সম্পাদনা বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব নেন। তিনি সম্পাদকীয়সহ বিভিন্ন কলামে নিয়মিত লিখতেন। তাফসীর, নবী জীবন, ইসলাম, সংগঠন, আন্দোলন, রাজনীতি ইত্যাদি নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১০৭ টি বই লিখেছেন তিনি। অধ্যাপক গোলাম আযম লিখিত কিছু বই ইংরেজী ছাড়াও উর্দু, তামিল ও অহমিয়া ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এ ছাড়া অধ্যাপক গোলাম আযমের জীবনী নিয়ে ইংরেজী ভাষায় একটিসহ ৮টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে ইসলামী ঐক্যের প্রচেষ্টা: ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বর ‘ইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলন’ পুস্তিকায় সকল ইসলামী শক্তিকে এক প্লাটফর্মে সমবেত হওয়ার রূপরেখা প্রদান করেন অধ্যাপক গোলাম আযম। ’৮১ সালের ডিসেম্বরে ঐ রূপরেখা অনুযায়ী ‘ইত্তেহাদুল উম্মাহ’ নামক ব্যাপকভিত্তিক ঐক্যমঞ্চ গঠিত হয়। ১৯৯৪ সালে ইসলামী ঐক্যের অগ্রগতি সম্পর্কে ‘ইসলামী ঐক্য প্রচেষ্টা’ শিরোনামে পুস্তিকা রচিত হয়। ১৯৯৪ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকাস্থ আল ফালাহ মিলনায়তনে ওলামা-মাশায়েখ সম্মেলনে ইসলামী ঐক্য গঠনের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী ও পটিয়া মাদ্রাসার মুহতামিমদ্বয়ের নিকট প্রতিনিধি প্রেরণ করেন। ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে মুহতামিমদ্বয় কর্তৃক চারদফা প্রস্তাব পেশ করেন। ১৯৯৬ সালে চারদফা প্রস্তাাব গ্রহণ করে পত্রের উত্তর প্রদান। ১৯৯৭ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে ইসলামী ঐক্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হয়। ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী মাসে গওহারডাঙ্গা মাদ্রাসার মুহতামিম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীরে শরীয়াত ও মহাসচিবের নিকট পত্র প্রেরণ করা হয়। ১৯৯৮ সালে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ২০ বছর ধরে ইসলামী ঐক্য প্রচেষ্টার ধারাবাহিক বিবরণ দিয়ে ‘ইসলামী ঐক্যমঞ্চ চাই’ নামক পুস্তিকা রচনা।
৫ম বারের মতো কারাবরণ: শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণেই ৫ম বারের মতো কারাগারে গেলেন বর্ষীয়ান জননেতা, ভাষা সৈনিক জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম। এর আগে ভাষা আন্দোলনের সময় দুই বার, ১৯৬৪ সালে একবার, ১৯৯২ সালে একবার আর সর্বশেষ গত ২০১২ সালের ১১ জানুয়ারি  আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আদেশে কারাবরণ করেন এই নেতা। প্রিজন সেলে থাকা অবস্থায়ই তিনি ইন্তেকাল করলেন।
২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর এক সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেই তার কারাবরণের কথা তুলে ধরেন। সে সময় তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় প্রথম আমি রংপুরে গ্রেফতার হই। ভাষা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ততার জন্যই আবারো ১৯৫৫ সালে আমি গ্রেফতার হই। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান সরকার যখন জামায়াতে ইসলামীকে বেআইনী ঘোষণা করে। তখন আমি লাহোরে ছিলাম কেন্দ্রীয় শূরার সভার জন্য। সেখানে আমি আবারো গ্রেফতার হই। এর ২ মাস পর আমাকে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হয়। এ সময় ৫ মাস আমি জেলে ছিলাম। একটা কথা আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই, তাহলো জেলে যাওয়ার পর প্রত্যেক বারই আমি উচ্চ আদালতে রিট করে মুক্ত হই।
সর্বশেষ ১৯৯২ সালে আমাকে গ্রেফতার করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে আমার নাগরিকত্ব বাতিল করে। ১৯৯২ সালে বিএনপি আমাকে বিদেশী নাগরিক হিসেবে গ্রেফতার করে। এ সময় আমি ১৬ মাস জেলে ছিলাম। ১৯৯৩ সালের জুন মাসে বিদেশী নাগরিক হিসেবে যে মামলা করে সরকার, এতে তারা হেরে যায়। উচ্চ আদালতের নির্দেশে আমি মুক্ত হই। কিন্তু তখনও নাগরিকত্ব পুনর্বহালের মামলা বাকী ছিল। এ ব্যাপারে দুই বিচারক দুই রকম রায় দেন। এরপর তা তৃতীয় বিচারপতির কাছে গেলে তিনি আমার পক্ষে রায় দেন। সরকার এর বিরুদ্ধে আপিল করে। এক বছর পর ১৯৯৪ সালের ২২ জুন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ৫ জন বিচারপতির সমন¦য়ে পুর্ণাঙ্গ বেঞ্চে সর্বসম্মতিক্রমে আমার নাগরিকত্ব বহালের আদেশ দেন এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অর্ডারকে বেআইনী ঘোষণা করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর আমি নাগরিকত্ব ফিরে পেলাম।
সেই সাক্ষাৎকারেই আবারো জেলে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেছিলেন, মু’মিনের জন্য নিয়ম হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারবে, কিন্তু তার চেয়ে বেশি কাউকে ভালোবাসতে পারবে না। এটাই আল্লাহর নির্দেশ। আর ভয়, আল্লাহ ছাড়াতো কাউকে ভয় পাওয়া জায়েজই নেই। মু’মিন আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পেতে পারে না। আমি উদ্বিগ্ন নই। আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। মৃত্যুকে ভয় পাবো কেন? মু’মিনতো মৃত্যু কামনা করে। কেননা মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। তাই মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।
ভাষা আন্দোলনের নেতা অধ্যাপক গোলাম আযম: ছাত্র হিসেবে যেমন ছিলেন মেধাবী, তেমনি সাধারণ ছাত্রদের সমস্যা এবং দেশের সমস্যা নিয়েও সচেতন ভূমিকা পালন করতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি ছাত্র জীবন থেকেই। স্বাধীনতা ও দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এই আদর্শবান তরুণ শুধুমাত্র পাঠ্য পুস্তকেই মনোনিবেশ না করে সমাজ সচেতন এবং দেশ প্রেমিক একজন কর্মী হিসেবে ছাত্রাবাসে, ক্যাম্পাসে সর্বত্র ছিলেন সদা তৎপর। ঐ সময় মেধাবী এবং যোগ্যতাসম্পন্ন ছাত্ররাই সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সংগ্রামের ময়দানে নেতৃত্ব দিতেন। তাই ফজলুল হক মুসলিম হলের এই কর্মচঞ্চল যুবক ১৯৪৬-৪৭ সেশনে হলের ছাত্র সংসদেও জেনারেল সেক্রেটারী নির্বাচিত হন। ফজলুল হক হল মুসলিম হলের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী গোলাম আযম সকল প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং রেকর্ড ভোট লাভ করেন। কিন্তু মজার ব্যাপার ছিল তার প্যানেলের আর সবাই নির্বাচনে পরাজিত হন। ভিপি ছিলেন মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী। যিনি পরবর্তীকালে সি,এস,পি অফিসার হয়েছিলেন।
তার যোগ্যতা ও প্রতিভাগুণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর জেনারেল সেক্রেটারী নির্বাচিত হন ১৯৪৭-৪৮ সেশনে। ১৯৪৮-৪৯ সালেও তিনি ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় ডাকসুর সহ-সভাপতি ছিলেন মি. অরবিন্দ বোস।
ভাষা আন্দোলন শুধু আমাদের ইতিহাসেরই এক বিস্ময় নয়, বরং ভাষার জন্য জীবন বিলিয়ে দেয়ার ইতিহাস এটাই প্রথম। বিশ্বের আর কোথাও নিজ ভাষা মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠার জন্য এতবড় ত্যাগ স্বীকারের ঘটনা ঘটেনি। তদানীন্তন পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলা ন্যায়সংগতভাবেই রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু অপরিণামদর্শী ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়েছিলো। বাংলা ভাষাকে সঠিক মর্যাদা প্রদানের দাবিতে পাকিস্তান কায়েম হওয়ার পরের বছরই প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমসহ ইসলামী ভাবধারায় উজ্জীবিত একদল তরুণের প্রচেষ্টায় তমদ্দুন মজলিসের নেতৃত্বে এক আন্দোলন গড়ে ওঠে। গোড়া থেকেই ভাষা আন্দোলনের স্থপতিদের একজন সহযোদ্ধা হিসেবে গোলাম আযম সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
ভাষা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং তৎপর ভূমিকা পালন করেন। সেই সময়কার একটি ঘটনার উল্লেখ করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট এক বামপন্থী নেতা মরহুম মোহাম্মদ তোয়াহা। ঢাকা ডাইজেস্টের সাথে ভাষা আন্দোলনের উপর নেয়া এক সাক্ষাতকারে ১৯৭৮ সালের মার্চ সংখ্যায় তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলার স্বপক্ষে ইশতেহার বিলি করতে ছাত্ররা চকবাজারে জনতা কর্তৃক ঘেরাও হয়। তখন পরিস্থিতি খুবই প্রতিকূল ছিল। ছাত্ররা উত্তেজিত জনতার সামনে অসহায় অবস্থার সম্মুখীন। এসময় গোলাম আযম সাহস করে এগিয়ে যান। তিনি চিৎকার করে জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, আরে ভাই, আমরা কি বলতে চাই, তা একবার শুনবেন তো! এ বলেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের কী উপকার হবে তার উপর ছোটখাট বক্তৃতা দিয়ে উপস্থিত জনতাকে শান্ত করার চেষ্টা করলেন। পরিস্থিতি শান্ত হলো। গোলাম আযম সাহেব তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর জি, এস, ছিলেন। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন মেধাবী। স্বভাবগতভাবে তিনি ছিলেন অমায়িক এবং ভদ্র। ভালো সার্কেলের ছাত্ররা যেমন পরষ্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে, তেমনি আমরা সহজাতভাবে একত্রিত হয়ে ভাষা আন্দোলনে কাজ করেছি।’
বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী তাঁর সাক্ষাৎকারে লিয়াকত আলী খানের সভায় ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে পঠিত স্মারকলিপি সম্পর্কে বলেন, ‘রাষ্ট্রভাষার দাবি সম্বলিত মেমোরেন্ডামের খসড়া তৈরির ভার আমার উপর অর্পিত হয়েছিল। ডাকসুর তৎকালীন জি, এস, গোলাম আযম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম মাঠে তা পাঠ করেন এবং ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে লিয়াকত আলী খানকে প্রদান করেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের পক্ষ থেকে প্রদত্ত এই স্মারকলিপিতে শুধুমাত্র বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবীই করা হয়নি, বরং তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের সার্বিক সমস্যা এবং দাবী এতে প্রতিফলিত হয়। এ স্মারকলিপিতে বৃটিশ প্রবর্তিত গোলামী যুগের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন সাধন করে স্বাধীন জাতির উপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর দাবি জানানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পর্যন্ত এবং কারিগরি, প্রকৌশল, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও কৃষি শিক্ষা বিষয়ে জনগণের যাবতীয় দাবি তুলে ধরা হয়। উচ্চতর শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং মহিলা শিক্ষার ব্যাপারে বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদানের দাবীও ঐ স্মারকলিপিতে জানানো হয়। স্মারকলিপিতে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন, ভূমি সংস্কার, কৃষিতে বৈজ্ঞানিক ও সমবায় পদ্ধতি চালুর দাবি করা হয়। দুর্নীতি ও চোরাচালানী প্রতিরোধে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণেও সরকারকে এগিয়ে আসার আহবান জানানো হয়। শিল্পায়নে সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ব পাকিস্তানীদের অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানানো হয়।
বাংলা চালু এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা প্রবর্তনের যাবতীয় পদক্ষেপের দাবী জনানো হয়। শতকরা ৬২ ভাগ জনগণের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দেয়া না হলে এই অঞ্চলের জনগণের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়ে যাবে। স্মারকলিপিতে রাজনৈতিক নিপীড়ন, অর্থনৈতিক শোষণের উল্লেখ করে সেনাবাহিনী এবং কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরিতে জনগণের রায় নিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল শাসন এবং গণতন্ত্র বিকাশের স্বার্থে অবিলম্বে দেশে সর্বাত্মক সাধারণ নির্বাচন দাবী করা হয়। ইসলাম ছাড়া কম্যুনিজম ও অন্যান্য বিদেশীমন্ত্র প্রত্যাখ্যান করা হয়। বিষয়বস্তুও বিবেচনায় এই স্মারকলিপিটি ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের দাবির প্রতিধ্বনি। নিঃসন্দেহে এই স্মারকলিপিটি শুধু ভাষা আন্দোলনের প্রথম ঐতিহাসিক দলিল।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন যখন নতুন পর্যায়ে প্রবেশ করে এবং ব্যাপকভাবে জনগণ এ আন্দোলনে শরীক হন, তখন কর্মক্ষেত্র থেকেই অধ্যাপক গোলাম আযম সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি যখন রংপুর কারমাইকেল কলেজে অধ্যাপনা করেছিলেন, তখনও সেখানে ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সরকার কর্তৃক গ্রেফতার হন। একই কারণে তিনি ১৯৫৫ সালে পুনরায় গ্রেফতার হন অধ্যাপক গোলাম আযম।  (দৈনিক সংগ্রাম)

Tags: Golam Azam
Previous Post

অধ্যাপক গোলাম আযম আর নেই

Next Post

একজন মনসুর খান

Related Posts

‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার’
মুক্তাঙ্গন

‘পদ্মা সেতু আমাদের অহংকার’

by হক কথা
জুন ২৩, ২০২২
জো বাইডেন কি পারবেন ট্রাম্প যুগের অন্ধকার কাটিয়ে উঠতে
মুক্তাঙ্গন

শ্রদ্ধেয়, আবদুল গাফফার চৌধুরী

by হক কথা
নভেম্বর ২৪, ২০২১
দেশ বনাম রাষ্ট্র
মুক্তাঙ্গন

দেশ বনাম রাষ্ট্র

by হক কথা
অক্টোবর ৯, ২০২১
নেতৃত্বের জন্য বিখ্যাত যেই পরিবার
মুক্তাঙ্গন

নেতৃত্বের জন্য বিখ্যাত যেই পরিবার

by হক কথা
অক্টোবর ১, ২০২১
পঞ্চাশ বছরেও এমন দেখিনি
মুক্তাঙ্গন

এ কোন ডিপ্লোম্যাসি!

by হক কথা
আগস্ট ২১, ২০২১
Next Post

একজন মনসুর খান

সীমিত আয়ের পরিবারের জন্য লং আইল্যান্ড সিটির রিভারসাইডে সম্পূর্ণ নতুন এ্যাপার্টমেন্ট-এর সুযোগ

সর্বশেষ খবর

বন্দি-প্রত্যার্পণ: ইউক্রেনে ফিরলেন ১৪৪ জন সেনা

বন্দি-প্রত্যার্পণ: ইউক্রেনে ফিরলেন ১৪৪ জন সেনা

জুন ৩০, ২০২২
প্রথমবারের মতো চীনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করল ন্যাটো

প্রথমবারের মতো চীনকে ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করল ন্যাটো

জুন ৩০, ২০২২
আনন্দঘন পরিবেশে চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের বনভোজন অনুষ্ঠিত

আনন্দঘন পরিবেশে চবি এলামনাই এসোসিয়েশনের বনভোজন অনুষ্ঠিত

জুন ৩০, ২০২২
জিতলেন গভর্ণর ক্যাথি হকুল : জয়ী ৫ বাংলাদেশী

জিতলেন গভর্ণর ক্যাথি হকুল : জয়ী ৫ বাংলাদেশী

জুন ৩০, ২০২২
মেক্সিকোয় আবার সাংবাদিক হত্যা

মেক্সিকোয় আবার সাংবাদিক হত্যা

জুন ৩০, ২০২২
ইউক্রেনে ১০০ কোটি পাউন্ডের সামরিক সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য

ইউক্রেনে ১০০ কোটি পাউন্ডের সামরিক সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য

জুন ৩০, ২০২২
আম নিয়ে মাধুরীর আক্ষেপ

আম নিয়ে মাধুরীর আক্ষেপ

জুন ৩০, ২০২২
টি-টোয়েন্টি দলে মিরাজ-তাসকিন

টি-টোয়েন্টি দলে মিরাজ-তাসকিন

জুন ৩০, ২০২২
ADVERTISEMENT
হককথা

Editor: ABM Salahuddin Ahmed
Ass. Editor: Samiul Islam

Mailing Address: 87-50 Kingston Pl,
Apt #5H, Jamaica, NY 11432
Contact: +1 347-848-3834
E-mail: hakkathany@gmail.com
Published by WEEKLY HAKKATHA Inc.

আজকের দিন-তারিখ

  • শুক্রবার (রাত ১:০৮)
  • ১লা জুলাই, ২০২২ খ্রিস্টাব্দ
  • ১লা জিলহজ, ১৪৪৩ হিজরি
  • ১৭ই আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ (বর্ষাকাল)

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 ১২৩
৪৫৬৭৮৯১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

হককথা বিশেষ সংখ্যা

  • Terms
  • Policy
  • Contact Us

© 2021 Hakkatha - Develop by Tech Avalon.

No Result
View All Result
  • হক কথা
  • নিউইয়র্ক
  • বাংলাদেশ
  • প্রবাস
  • যুক্তরাষ্ট্র
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলাধুলা
  • বিনোদন
  • তথ্য প্রযুক্তি
  • ক্লাসিফাইড
  • এক স্লিপ
  • আরো খবর
    • ইউএস প্রেসিডেন্ট ইলেকশন
    • ইতিহাসের এই দিনে
    • জাতিসংঘ
    • বিশ্বকাপ ক্রিকেট
    • বিশ্বকাপ ফুটবল
    • মিডিয়া
    • মুক্তাঙ্গন
    • লাইফ স্টাইল
    • সম্পাদকীয়
    • সাক্ষাতকার
    • সাহিত্য
    • স্বাস্থ্য
    • স্মরণ

© 2021 Hakkatha - Develop by Tech Avalon.

ankara escort çankaya escort çankaya escort escort ankara çankaya escort escort bayan çankaya istanbul rus escort eryaman escort escort bayan ankara ankara escort kızılay escort istanbul escort ankara escort ankara grup escort ankara olgun escort çankaya escort çayyolu escort cebeci escort dikmen escort eryaman escort etlik escort gaziosmanpaşa escort keçiören escort kızılay escort sincan escort turan güneş escort ankara escort ankara rus escort ankara escort çankaya escort çayyolu escort dikmen escort eryaman escort gaziosmanpaşa escort incek escort ankara olgun escort kızılay escort keçiören escort cebeci escort ankara rus escort escort çankaya ankara escort bayan istanbul rus Escort atasehir Escort beylikduzu Escort Ankara Escort Ankara genç Escort Ankara masöz Ankara rus Escort Ankara ucuz Escort Ankara vip Escort çankaya Escort keçiören Escort kızılay Escort sınırsız Escort sıhhiye Escort eryaman Escort dikmen Escort malatya Escort kuşadası Escort gaziantep Escort izmir Escort antalya Escort Gaziantep Escort Shell Download