৪৮ ঘন্টার মধ্যে শওকত মাহমুদকে মুক্তি দিন
- প্রকাশের সময় : ০২:৩১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫
- / ৭৭৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ এবং সাংবাদিক প্রবীর সিকদারের গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাব। প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ শওকত মাহমুদ, প্রবীর সিকদারসহ আটক সকল সাংবাদিকদের আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন। এসময়ের মধ্যে মুক্তি দেয়া না হলে প্রেসক্লাব এর পক্ষ থেকে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
বাংলাদেশের এ দুই সাংবাদিককে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ আগষ্ট) সন্ধ্যায় প্রেসক্লাবের জ্যাকসন হাইটস’র অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিডিয়ার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নিউইয়র্ক-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সভা পরিচালনা করেন।
প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের বলেন, আজকে যেভাবে গণমাধ্যমের ওপর দমন-পীড়ন চলছে তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তিনি বলেন, কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। তাই বলে রাতের আঁধারে প্রতিথযশা সাংবাদিকদের এভাবে আটক করা দেশের গণতন্ত্রের জন্য শুভ নয়। তাদের আদালতের মাধ্যমে নোটিশ দেয়া যেতো পারতো। শওকত মাহমুদের মতো এরকম একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিককে বোমাবাজি কিংবা গাড়ি পোড়ানোর মামলায় আটক করা সত্যি দুঃখজনক। সবচেয়ে আশ্চার্যের বিষয় হলো এ পর্যন্ত বাংলাদেশে যতজন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে তাদের প্রত্যেককের বিরুদ্ধে রয়েছে সরকারের সমালোচনা করার অভিযোগ।
সহ-সভাপতি রিমন ইসলাম বলেন, আমরা এখানে বসে প্রতিবাদ করছি ঠিকই, কিন্তু সরকারের কানে তা যাচ্ছে না। দেশের সাংবাদিকদের ওপর যেভাবে নির্যাতন চলছে, তাতে অনেকেই এখন বাধ্য হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছেন। যা দেশের ভবিৎতের জন্য শুভ ফল বয়ে আনবে না। তিনি বলেন, আমি যতদুর জানি সাগর-রুনির মতো ভয়াবহ হত্যাকান্ডের পরিণতির বিষয়টি দেখিয়ে বেশির ভাগ সাংবাদিককেই ভয় দেখানো হচ্ছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যে নির্বাচনের মাধ্যমে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে। আমি বলবো এ সরকার অবৈধ সরকার। তাই এ সরকারের কাছ থেকে গণতন্ত্র কিংবা স্বাধীন মত প্রকাশ আশা করা যায় না। জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের দু’দিনের মাথায় দু’জন সাংবাদিককে আটক করা হয়েছে। যা দুঃখজনক।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক এবং একুশে টিভির ইউএস প্রতিনিধি ইমরান আনসারি বলেন, আইসিটি অ্যাক্ট তথা তথ্য প্রযুক্তির মতো একটি কালো আইনের ৫৭ ধারায় দু’জন প্রখ্যাত সাংবাদিককে গ্রেফতারই প্রমাণ করে এ সরকার স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর কতটা নগ্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে। শওকত মাহমুদের মতো সাংবাদিক যার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। একই ভাবে প্রবীর শিকদারের পরিবারের মুক্তিযুদ্ধে ত্যাগও সবার জানা। তারপরও এধরণের ঘটনায় জাতিকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধরণ সম্পাদক শেখ সিরাজ বলেন, বাংলাদেশে চলছে সরকারের দ্বিমুখী নীতি। একই আইনে দু’জন সম্পাদককে দু’রকম সাজা। যা হাস্যকর এবং দুঃখজনক। একজন সম্পাদককে আদালতে দাড়িয়ে থাকার ৬ ঘন্টার দন্ড আর আরেকজনকে ১ হাজার ৯৫ দিনের কারাদন্ড। তিনি বলেন, ভিন্ন মত প্রকাশের কারণে বন্ধ হয়েছে বেশ কয়েকটি মিডিয়া। সাগর-রুনি হত্যাসহ সরকারের অপশাসনের বিরুদ্ধ কনস্যুলেট’সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এনটিভির সাংবাদিক আবিদুর রহীম বলেন, এ সরকারের কাছের লোকজন এখন সংখ্যালুঘুদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে। তাদের সম্পত্তি দখল করছে। যার প্রমাণ প্রবীর শিকদারকে গ্রেফতার। তিনি নিজেও তার স্ট্যাটাসে এ তথ্য দেয়ার পরই রাতের আঁধারে আটক হন। সত্যিই এটা দুঃখজনক।
টাইম টেলিভিশনের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ও দ্য রিপোর্ট নিউইয়র্ক প্রতিনিধি শিবলী চৌধুরী কায়েস বলেন, সাংবাদিক সমাজ ও নেতাদের বিভক্তির কারণেই আজকের এ পরিনতি। আমরা যাদের আদর্শ ভেবে গণমাধ্যমকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি, তারাই এখন নিজেদের স্বার্থে বিভাজন সৃষ্টি করছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে এর পরিনতি আরো ভয়াবহ হবে। পট পরির্বতনের ফলে ভিন্ন মতের সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন আর বন্ধ হবে না।
প্রতিবাদ সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক নয়াদিগন্তের বিশেষ প্রতিনিধি শওকত ওসমান রচি, যমুনা টিভির ইউএসএ প্রতিনিধি হাসানুজ্জামান সাকি, টাইম টেলিভিশনের কনসালটেন্ট (বার্তা) পুলক মাহমুদ, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, সময় টিভির আনোয়ার হোসেন বাবু, মাসিক সমীক্ষার রশীদ আহমেদ প্রমুখ।