মফস্বল সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা
- প্রকাশের সময় : ০৯:১৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ এপ্রিল ২০১৬
- / ১৪৯১ বার পঠিত
হাবিব খান: সাংবাদিকতার নামে মফস্বলে যা কিছু হচ্ছে তা যদি সাধারন পাঠকদের বোঝানো যেত। জানি আমি এটা পারবোনা—তাহলে মফস্বল সাংবাদিকতার স্বরূপ অনেকটাই উন্মোচন হতো। অনেক মফস্বল সাংবাদিক তাদের সংবাদ প্রকাশের/প্রচারের জন্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকা বা টিভি চ্যানেলের কর্তব্যরতদেরকে মাঝে মধ্যে মিষ্টি, শাড়ী, বিভিন্ন প্রজাতির দেশী সুস্বাদু মাছ, সুগন্ধি চাল, বিকাশ, ফ্ল্যাক্সিলোড ইত্যাদি পাঠানোর রীতির প্রচলন রেখেছেন। দেশের হাতে গোনা কয়েকটা পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল তাদের মফস্বল সাংবাদিকদের কিছু ভাতা দিয়ে থাকেন। একজন মফস্বল সাংবাদিকই ভাল জানেন যে তিনি তার প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মানী ভাতা নামক অসম্মানীটা কত টাকা পান।
জেলা-উপজেলা-মফস্বল সাংবাদিকরা অল্প দিনেই বাড়ি গাড়ির মালিক হয়ে যান। কিছু কিছু তথাকথিত সাংবাদিকের জন্য এই কথাটি প্রযোজ্য। তবে এমনও সাংবাদিক আছেন যারা নিজের পকেটের টাকা বাবার পকেটের টাকা খরচ করে বছরের পর বছর ধরে মফস্বল সাংবাদিকতায় যুক্ত রয়েছেন।
কেউ লিখতে পারুক আর না পারুক সেটা দেখার বিষয় নয়, তারঁ পকেট যদি ভারি থাকে, আর যদি সে সেটা জায়গামত ঢালতে পারে তাহলেই স্বনামধন্য পত্রিকা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মফস্বল সাংবাদিক হয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। নামে বেনামে বিভিন্ন পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিকরা অফিস পাড়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘুর ঘুর করে। অফিসে অফিসে বসে খোশগল্প, চা পান, সিগারেট খাওয়ার প্রতিযোগীতা চালিয়ে যান পাল্টা দিয়ে। কতিপয় সাংবাদিকদের কাছে জিম্মি হতে হয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। এতে করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কাজের বেঘাত ঘটলেও কর্মকর্তারা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না।
যারা ভাবছেন মফস্বল সাংবাদিকতায় আসবেন তাঁদেরকে আরেকটু ভেবে চিন্তে পা ফেলতে হবে। মফস্বল সাংবাদিকতায় প্রাপ্তি বলে কিছু নেই। এখানে সম্মান কুড়াতে এসে নিজের অজান্তেই অসন্মানের বোঝা মাথায় নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এখানকার সাংবাদিক নেতারা সাংবাদিকদেরকে বিভিন্নভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অনেকক্ষেত্রেই তারা সফলও হন। এরকম ভূঁড়ি ভূঁড়ি ঘটনার উদাহরন আছে মফস্বলে।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার প্রত্যেক জেলা ও উপজেলা প্রতিনিধি তাঁর কর্ম এলাকার দূর্ঘটনা, উন্নয়ন, অনিয়ম, খেলাধুলা, অর্থনীতিসহ বিভিন্ন প্রকার সংবাদ পরিবেশন করে থাকেন। পত্রিকায় বিভাগ ভিত্তিক আলাদা আলাদা রিপোর্টার থাকলেও মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিটি বিষয়েই প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। এতে করে যে শ্রম দিতে হয় তার বিনিময়ে তেমন কিছুই পাননা মফস্বলের মূল ধারার সাংবাদিকেরা। কিছু অসাধু ব্যক্তি টাকা পয়সা দিয়ে নিয়োগ নিয়ে আসে এবং ওই ব্যক্তিরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়ার ফন্দি তৈরি করে আর্থিক সুবিধা নিয়ে থাকে। সুষ্টু সাংবাদিকতা চর্চায় এই বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার জন্য সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেওয়া উচিত। যারা সংশ্লিষ্ট অফিস থেকে বেতন ভাতা পান তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি ও যাদের বেতনভূক্ত করা হয়নি তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একজন সাংবাদিকের শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক হওয়া উচিত। সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে অপসাংবাদিকতা রোধ হবে। পাশাপাশি তাদেরকে সাংবাদিকতার বূনিয়াদী প্রশিক্ষনসহ বেশি বেশি প্রশিক্ষনের মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্বি করার ব্যবস্থা করতে হবে। তখন হয়ত পথে ঘাটে, অফিস আদালতে এতো সাংঘাতিক (সাংবাদিক) খুঁজে পাওয়া যাবেনা আর প্রকৃত সাংবাদিকের সন্মানও থাকবে অটুট। সাধারন মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারতো।
লেখক: ঢাকার ইংরেজী দৈনিক দ্য নিউ এজ-এর টাঙ্গাইল জেলা প্রতিনিধি।