বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম স্বাধীনতার অবনতি : বাংলাদেশ ১৪৬ নম্বরে
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৪:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ৫৫১ বার পঠিত
ঢাকা: বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার আরও অবনতি হয়েছে। এক্ষেত্রে গত ৮ বছরের তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। প্যারিসভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ২০১৫’তে এসব কথা বলা হয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবনতি হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। ২০১৪ সালের বিশ্ব গণমাধ্যমের ওপর ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এ সূচকে বিশ্বের ১৮০টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৪। ২০১২ সালে ১৪৪। তবে ২০১৩ ও ২০১২ সালে ওই সূচক তৈরি করা হয় ১৭৮টি দেশের মধ্যে। ২০১১ সালে কোন অবস্থান নির্ধারণ করা হয়নি। ২০১০ সালে অবস্থান ছিল ১২৬তম। এ বছর সূচক নির্ধারণ করা হয় ১২৬টি দেশের মধ্যে। ২০০৯ সালে ১২১তম। এ বছর সূচক করা হয় ১২১টি দেশের মধ্যে। এতে বলা হয়, ২০১৪ সালে এ সূচকে ভারতের অবস্থান চার ধাপ এগিয়ে ১৩৬। পাকিস্তান এক ধাপ পিছিয়ে ১৫৯তম অবস্থানে রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে সংবাদ নিয়ন্ত্রণ ‘যুদ্ধের শক্তিশালী অস্ত্র’ সম্পর্কে বলা হয়, ২০১৪ সালে মধ্যপ্রাচ্য, ইউক্রেন, সিরিয়া ও ইরাকে সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যুদ্ধরত প্রতিটি পক্ষ ভয়াবহ তথ্যযুদ্ধ শুরু করেছে। মিডিয়াকে প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বা তথ্য গোপন করা হয়েছে। মিডিয়া একাধারে কৌশলগত টার্গেটে পরিণত হয়েছে এবং হামলার শিকার হয়েছে। এমনকি তাদের কণ্ঠরোধও করা হয়েছে।
দুই. রাষ্ট্র বহির্ভূত দল: তথ্য লঙ্ঘনকারী: রাষ্ট্রীয় পরিচয় নেই এমন দলগুলো কোন আইন মানে না। তারা নিজেদের স্বার্থ আদায়ের জন্য ন্যূনতম মৌলিক মানবাধিকারও লুণ্ঠন করে। বোকো হারাম থেকে শুরু করে আইএস পর্যন্ত লাতিন আমেরিকার মাদক চোরাচালানকারী থেকে শুরু করে ইতালির মাফিয়া পর্যন্ত উদ্দেশ্য ভিন্ন হতে পারে কিন্তু কাজের পদ্ধতি একই। সেটা হলো, ভয় আর প্রতিহিংসা ব্যবহার করে সাংবাদিক আর ব্লগারদের কণ্ঠরোধ করা, যারা তাদের পেছনে তদন্ত করার সাহস দেখিয়েছে বা তাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
তিন. ব্লাসফেমি: ধর্মীয় সেন্সরশিপের রাজনৈতিক ব্যবহার: যেসব দেশে ধর্ম আইনকে কাঠামো দেয় সেসব দেশে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সুরক্ষার স্বার্থে ধর্মদ্রোহিতা ব্যবহার করাটা সরকারের সমালোচনা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে খুব কার্যকর একটি প্রক্রিয়া। বিশ্বের অর্ধেকের বেশি দেশে ব্লাসফেমির অপব্যবহারে তথ্য স্বাধীনতা হুমকির মুখে।
চার. প্রতিবাদ কর্মসূচী কভার করার ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জটিলতা: কোন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সাংবাদিকদের কি প্রতিবাদকারী আর পুলিশের অভিন্ন শত্রু হিসেবে দেখা যায়? এ বছর রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্সের দুঃখের উপসংহার এটা। ২০১৪ সালে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী কভার করতে গিয়ে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা।
পাঁচ. ‘ইউরোপিয়ান মডেলে’র ক্ষয়: ২০১৪’র তুলনায় এ বছর সূচকে ইইরোপীয় ইউনিয়নে আরও বেশি অবনতি হয়েছে। এতে তাদের গণতান্ত্রিক মডেলের সীমাবদ্ধতা উন্মোচিত হয়েছে। দৃষ্টি পড়েছে ক্ষয় রোধে বিদ্যমান প্রক্রিয়ার ব্যর্থতার ওপর। তথ্য স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আপস করতে কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট আকাংক্ষায় ইইউ প্লাাবিত হয়েছে বলে মনে হয়েছে। এর ফলে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ইইউ রাষ্ট্রগুলো সূচকে ১ম অবস্থান থেকে শুরু করে ১০৬ পর্যন্ত রয়েছে। এরকম ব্যাপ্তি নজিরবিহীন।
ছয়. ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ মিথ্যা যুক্তি: গণতন্ত্রের দেশগুলো প্রয়ই জাতীয় নিরাপত্তার নামে নানা পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। সত্যিকারের বা মিথ্যা হুমকির মুখোমুখি হয়ে সরকারগুলো নিয়মিত আইনের পূর্ণ ভান্ডার নিয়ে স্বতন্ত্র কণ্ঠগুলো বন্ধ করতে নিবৃত্ত হয়। এমন ঘটনা কর্তৃত্বপরায়ণ এবং গণতান্ত্রিক উভয় ধরনের সরকারের ক্ষেত্রেই দেখা যায়।
সাত. অধিকতর তথ্য নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী শাসকগোষ্ঠী: এ ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার রয়েছে, পূর্ব ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে। এদের বেশিরভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছে জীবন্ত হয়ে ওঠা কার্টুন চরিত্রগুলো, যারা হাসির পাত্রে পরিণত হতো, যদি তারা সংবাদ ও তথ্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চর্চা না করতো। ২০১৪ সালে তারা গণমাধ্যমের ওপর কর্তৃত্ব আরও জোরদার করেছে যা অনেক বছর ধরে চলে আসছে। সূচকের সর্বশেষ ২০টি দেশের নৈপুণ্য আগের বছরের তুলনায় আরও অবনতি হয়েছে। (দৈনিক মানবজমিন)