নিউইয়র্ক ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রবাসে দেশের রাজনীতি কার স্বার্থে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মার্চ ২০১৫
  • / ১০৪৪ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি কি প্রবাসী বাংলাদেশীদের কোন কল্যাণে আসছে? এ প্রশ্নের জবাব স্পষ্টত একটাই। তা হলো, না। বরঞ্চ দেশের রাজনীতি নিয়ে এই বিদেশের মাটিতে নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদের কারণে বাংলাদেশীরা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। তাদের মধ্যে যে কথাটি ব্যাপক উচ্চারিত, যে অভিমত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সর্বদাই ব্যক্ত করছেন তা হচ্ছে এখানে দেশের রাজনীতি করা অহেতুক।
তাদের এই মনোভাবেরই জোরালো প্রতিধ্বনি ঘটালেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা তার সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায়। তিনি বললেন, প্রবাসে দেশের রাজনীতি করার কোন মানে নেই, কোন অর্থও নেই। প্রবাসী বাংলাদেশীদের এদেশীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
নিউইয়র্কে দীর্ঘ দিন অবস্থানের অভিজ্ঞতা থেকে সাদেক হোসেন খোকার এ উপলব্ধি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, বিদেশের মাটিতে বসে বিএনপি-আওয়ামী লীগ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ করার কোন অর্থ হয় না। প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে হানাহানি, দ্বিধাবিভক্তি দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। এসব বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটি সহজ সত্যকে তুলে ধরেছেন জনাব খোকা। দেশীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব কোন্দলে লিপ্ত এই প্রবাসের বাংলাদেশীরা বাস্তবিকই আজ তীব্র অনৈক্যের শিকার। এ অনৈক্য আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সমস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এদেশীয় কোন জাতীয় ইস্যুতেও আজ তারা এক হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। তাই তো প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদেশ বিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা বাংলাদেশী ড. নীনা আহমেদের কন্ঠে আক্ষেপ শুনি, ঐক্যবদ্ধ না থাকায় বাংলাদেশী কম্যুনিটি এদেশের অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার মাটিতে হানাহানির কারণে বাংলাদেশীদের মর্যাদা যে দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে এ বাস্তবতাকে আজ আর অস্বীকার করা যাবে না। তাদের ভাবমূর্তি এদেশে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের এই পরবাসে যেখানে সবার একাত্ম হয়ে বাস করার কথা, পরষ্পরের সুখ-দুঃখে সবার অংশ নেয়ার কথা, সেখানে আমরা তৈরি করেছি এক বৈরী পরিবেশ। আমরা হয়ে উঠেছি পারষ্পরিক প্রতিপক্ষ, নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলেছি বিভেদের দেয়াল। আর এই অবস্থা সৃষ্টির মূলে কাজ করছে শুধুই মাত্র দেশীয় রাজনীতি। আমরা এখানে গঠন করেছি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে চির বৈরী দুই শাসক দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির শাখা। আর দেশের মতো এখানেও আমরা লিপ্ত হয়েছি পারষ্পরিক বিবাদ-সংঘাতে।
এ পরিস্থিতির উদ্ভব অনেক আগে হলেও দিনে দিনে তা তিক্ততর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিবাদ এখানে এখন এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি বিএনপি সমর্থক এক ব্যক্তির সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য হামলা ও দৈহিক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে গেল। কিন্ত পারষ্পরিক এই কোন্দল থেকে কেউ কি কোনভাবে লাভবান হতে পারছে? হতে পারে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় জনা কয়েক উচ্চ পর্যায়ের নেতা সরকারের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছেন। কিন্ত আর সবাই? মাঠ পর্যায়ে যারা লড়াকু ভূমিকায় রয়েছেন তারা নিজেদের ভাগ্যে কি জুটিয়েছেন জানি না, তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় তারা শুধু কমিউনিটির বিরোধকেই বিস্তার করে চলেছেন, প্রবাসীদের জন্য কল্যাণকর কিছুই করতে পারেননি।
আমেরিকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহ দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসারীদের কর্মকান্ড যেমন প্রবাসীদের কোন কল্যাণ সাধন করছে না তেমনি দেশের মানুষ বা দেশে তাদের মূল দলগুলোও তাদের কার্যকলাপ থেকে কোন সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। তারা কি নির্বাচনের সময় ভোট দিয়ে তাদের দলকে জয়ী করার ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখতে পারছেন? তাই যদি না পারেন তাহলে কোন উদ্দেশে তারা এখানে তাদের দলের জন্য প্রাণপাত করে চলেছেন?
বিবাদ-বিভাজন শুধু দুই বিবদমান প্রতিপক্ষের মধ্যেই নয়, দলগুলোর নিজ নিজ সংগঠনের মধ্যেও তা বড় তীব্রভাবে বিরাজমান। এই কোন্দলের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোন কমিটি গঠন হতে পারছে না দীর্ঘদিন ধরে। কমিটি নেই তাই দলীয় নেতাদের কোন পরিচিতিও নেই। দলের নেতারা সবাই তাদের পরিচয় দেন সাবেক হিসাবে। সাবেক সভাপতি, সাবেক সম্পাদক ইত্যাদি হচ্ছে তাদের এখনকার পরিচয়। সাবেক হয়েও তারা তাদের পারষ্পরিক বৈরীতা অব্যাহত রেখেছেন। নেতারা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে গঠন করে নিয়েছেন খন্ড খন্ড গ্রুপ এবং এই গ্রুপ নিয়েই তারা হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। একই ইস্যুতে তারা পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি দিচ্ছেন, পৃথক পৃথক স্থানে তারা সে কর্মসূচি পালন করছেন। আর এই মুহূর্তে তারা বিএনপির কোন অবস্থানে না থাকা সত্ত্বেও এ সবই তারা করছেন বিএনপির নামেই। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এ তারা করতে পারেন কিনা। বিএনপি নামের সংগঠন নিজেই যেখানে অস্তিত্বহীন সেখানে সেই অস্তিত্বহীন সংগঠনের নামে কোন তৎপরতা চালানো সঙ্গত কিনা? যারা সাবেক হিসাবে বিএনপির ঝান্ডা বহন করে চলেছেন তাদের প্রতি দলীয় হাই কমান্ডের মনোভাব কতটা ইতিবাচক তারও কোন স্পষ্ট চিত্র এখন আমাদের সামনে নেই। প্রতিটি বিবদমান গ্রুপই দাবী করে চলেছে তারা হাই কমান্ডের সমর্থনপুষ্ট। হাই কমান্ড বলতে মূলত সবাই তাকিয়ে আছে তারেক জিয়ার অনুগ্রহের দিকে। সবগুলো গ্রুপের নেতারাই বারবার ছুটছেন তার কাছে। কিন্ত এখনও পর্যন্ত কারো ভাগ্যেই শিকা ছিড়ছে না। সংগঠন হিসাবে বিএনপির কোন সংগঠিত অবস্থান তিন বছর ধরেই নেই। নেতারা সবাই সাবেক পরিচয়ে অকূল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। নেতাদের মত দলও এখন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক হয়ে গেছে।
দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিবাদ-বিভেদের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। তাদের নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ড. সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি করে কমিটি গঠনের পর তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দল এক তিক্ত রূপ নিয়েছে। তার নেতৃত্ব প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এবং তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রথমবারের মত ভিন্ন নামে ড. প্রদীপ করের নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামী লীগ গঠনের প্রয়াসও লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বর্তমান মুহূর্তে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি ড. সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মোটামুটি এক ‘বিদ্রোহী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ ভূমিকায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে তার পেছনে সমর্থন রয়েছে নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের একজন শীর্ষ কূটনীতিকের। তাদের কারণেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সম্মানে আয়োজিত ড. সিদ্দিকুর রহমানদের সংবর্ধনা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছিলেন ড. সিদ্দিক নিজেই।
দিন কয়েক আগে জাকারিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। তার এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান স্বাক্ষরিত দলের এক বিজ্ঞপিÍতে এই ঘোষণা দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খোদ জাকারিয়া চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সংগঠন এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন এখতিয়ার নেই। তাই জাকারিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন অধিকার তাদের নেই।
জাকারিয়া চৌধুরীকে কেন্দ্র করে ড. সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সাথে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের বিবাদ এখন জটিল হয়ে উঠেছে। তবে এ বিরোধ নতুন নয়। অনেক দিন আগে থেকেই তাকে এবং তার ভাই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা নিজাম চৌধুরীকে নিয়ে দলের ভেতরে প্রবল বিতর্ক উঠেছিল। সে সময় নিজাম চৌধুরীকে জামায়াতের লোক ও রাজাকার এবং একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তাদের পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি মহল থেকে এই সব অভিযোগ সংবলিত লিফলেটও ছাড়া হয়েছিল।
দেশীয় রাজনীতির নামে এমন নি¤œ পর্যায়ের কোন্দলে লিপ্ত আমাদের প্রবাসী রাজনীতিকরা। মান মর্যাদা-শ্রদ্ধাবোধ তো দূরের কথা পরষ্পরের চরিত্র হরণে কলুষিত হচ্ছে আমাদের কমিউনিটি। এমন অবস্থা এই দেশে বসবাসকারী অধিকাংশ বাংলাদেশীর কাম্য নয়। তারা এমন অবস্থার অবসান চান। সাদেক হোসেন খোকার মত তাদেরও বক্তব্যÑ এই প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করার কোন অর্থ নেই। রাজনীতি নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের উচিৎ এদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া। (সাপ্তাহিক আজকাল)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

প্রবাসে দেশের রাজনীতি কার স্বার্থে

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মার্চ ২০১৫

নিউইয়র্ক: প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি কি প্রবাসী বাংলাদেশীদের কোন কল্যাণে আসছে? এ প্রশ্নের জবাব স্পষ্টত একটাই। তা হলো, না। বরঞ্চ দেশের রাজনীতি নিয়ে এই বিদেশের মাটিতে নিজেদের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদের কারণে বাংলাদেশীরা বিরক্ত, ক্ষুব্ধ। তাদের মধ্যে যে কথাটি ব্যাপক উচ্চারিত, যে অভিমত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সর্বদাই ব্যক্ত করছেন তা হচ্ছে এখানে দেশের রাজনীতি করা অহেতুক।
তাদের এই মনোভাবেরই জোরালো প্রতিধ্বনি ঘটালেন বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা তার সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায়। তিনি বললেন, প্রবাসে দেশের রাজনীতি করার কোন মানে নেই, কোন অর্থও নেই। প্রবাসী বাংলাদেশীদের এদেশীয় রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
নিউইয়র্কে দীর্ঘ দিন অবস্থানের অভিজ্ঞতা থেকে সাদেক হোসেন খোকার এ উপলব্ধি অবশ্যই প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, বিদেশের মাটিতে বসে বিএনপি-আওয়ামী লীগ, ছাত্রদল-ছাত্রলীগ করার কোন অর্থ হয় না। প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে হানাহানি, দ্বিধাবিভক্তি দেশের জন্য সম্মানজনক নয়। এসব বিভক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তিনি বাংলাদেশিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একটি সহজ সত্যকে তুলে ধরেছেন জনাব খোকা। দেশীয় রাজনীতির দ্বন্দ্ব কোন্দলে লিপ্ত এই প্রবাসের বাংলাদেশীরা বাস্তবিকই আজ তীব্র অনৈক্যের শিকার। এ অনৈক্য আজ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে সমস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এদেশীয় কোন জাতীয় ইস্যুতেও আজ তারা এক হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। তাই তো প্রেসিডেন্ট ওবামার বিদেশ বিষয়ক অন্যতম উপদেষ্টা বাংলাদেশী ড. নীনা আহমেদের কন্ঠে আক্ষেপ শুনি, ঐক্যবদ্ধ না থাকায় বাংলাদেশী কম্যুনিটি এদেশের অনেক সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দেশের রাজনীতি নিয়ে আমেরিকার মাটিতে হানাহানির কারণে বাংলাদেশীদের মর্যাদা যে দারুণভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে এ বাস্তবতাকে আজ আর অস্বীকার করা যাবে না। তাদের ভাবমূর্তি এদেশে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের এই পরবাসে যেখানে সবার একাত্ম হয়ে বাস করার কথা, পরষ্পরের সুখ-দুঃখে সবার অংশ নেয়ার কথা, সেখানে আমরা তৈরি করেছি এক বৈরী পরিবেশ। আমরা হয়ে উঠেছি পারষ্পরিক প্রতিপক্ষ, নিজেদের মধ্যে গড়ে তুলেছি বিভেদের দেয়াল। আর এই অবস্থা সৃষ্টির মূলে কাজ করছে শুধুই মাত্র দেশীয় রাজনীতি। আমরা এখানে গঠন করেছি দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে চির বৈরী দুই শাসক দল আওয়ামী লীগ আর বিএনপির শাখা। আর দেশের মতো এখানেও আমরা লিপ্ত হয়েছি পারষ্পরিক বিবাদ-সংঘাতে।
এ পরিস্থিতির উদ্ভব অনেক আগে হলেও দিনে দিনে তা তিক্ততর হচ্ছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি বিবাদ এখানে এখন এক উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সম্প্রতি বিএনপি সমর্থক এক ব্যক্তির সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের প্রকাশ্য হামলা ও দৈহিক লাঞ্ছনার ঘটনাও ঘটে গেল। কিন্ত পারষ্পরিক এই কোন্দল থেকে কেউ কি কোনভাবে লাভবান হতে পারছে? হতে পারে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় জনা কয়েক উচ্চ পর্যায়ের নেতা সরকারের কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা আদায় করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করে নিয়েছেন। কিন্ত আর সবাই? মাঠ পর্যায়ে যারা লড়াকু ভূমিকায় রয়েছেন তারা নিজেদের ভাগ্যে কি জুটিয়েছেন জানি না, তবে নিঃসন্দেহে বলা যায় তারা শুধু কমিউনিটির বিরোধকেই বিস্তার করে চলেছেন, প্রবাসীদের জন্য কল্যাণকর কিছুই করতে পারেননি।
আমেরিকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহ দেশীয় রাজনৈতিক দলগুলোর অনুসারীদের কর্মকান্ড যেমন প্রবাসীদের কোন কল্যাণ সাধন করছে না তেমনি দেশের মানুষ বা দেশে তাদের মূল দলগুলোও তাদের কার্যকলাপ থেকে কোন সুবিধা ভোগ করতে পারছে না। তারা কি নির্বাচনের সময় ভোট দিয়ে তাদের দলকে জয়ী করার ক্ষেত্রে কোন অবদান রাখতে পারছেন? তাই যদি না পারেন তাহলে কোন উদ্দেশে তারা এখানে তাদের দলের জন্য প্রাণপাত করে চলেছেন?
বিবাদ-বিভাজন শুধু দুই বিবদমান প্রতিপক্ষের মধ্যেই নয়, দলগুলোর নিজ নিজ সংগঠনের মধ্যেও তা বড় তীব্রভাবে বিরাজমান। এই কোন্দলের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপির কোন কমিটি গঠন হতে পারছে না দীর্ঘদিন ধরে। কমিটি নেই তাই দলীয় নেতাদের কোন পরিচিতিও নেই। দলের নেতারা সবাই তাদের পরিচয় দেন সাবেক হিসাবে। সাবেক সভাপতি, সাবেক সম্পাদক ইত্যাদি হচ্ছে তাদের এখনকার পরিচয়। সাবেক হয়েও তারা তাদের পারষ্পরিক বৈরীতা অব্যাহত রেখেছেন। নেতারা নিজ নিজ সমর্থকদের নিয়ে গঠন করে নিয়েছেন খন্ড খন্ড গ্রুপ এবং এই গ্রুপ নিয়েই তারা হাজির হচ্ছেন বিভিন্ন কর্মসূচিতে। একই ইস্যুতে তারা পৃথক পৃথকভাবে কর্মসূচি দিচ্ছেন, পৃথক পৃথক স্থানে তারা সে কর্মসূচি পালন করছেন। আর এই মুহূর্তে তারা বিএনপির কোন অবস্থানে না থাকা সত্ত্বেও এ সবই তারা করছেন বিএনপির নামেই। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক এ তারা করতে পারেন কিনা। বিএনপি নামের সংগঠন নিজেই যেখানে অস্তিত্বহীন সেখানে সেই অস্তিত্বহীন সংগঠনের নামে কোন তৎপরতা চালানো সঙ্গত কিনা? যারা সাবেক হিসাবে বিএনপির ঝান্ডা বহন করে চলেছেন তাদের প্রতি দলীয় হাই কমান্ডের মনোভাব কতটা ইতিবাচক তারও কোন স্পষ্ট চিত্র এখন আমাদের সামনে নেই। প্রতিটি বিবদমান গ্রুপই দাবী করে চলেছে তারা হাই কমান্ডের সমর্থনপুষ্ট। হাই কমান্ড বলতে মূলত সবাই তাকিয়ে আছে তারেক জিয়ার অনুগ্রহের দিকে। সবগুলো গ্রুপের নেতারাই বারবার ছুটছেন তার কাছে। কিন্ত এখনও পর্যন্ত কারো ভাগ্যেই শিকা ছিড়ছে না। সংগঠন হিসাবে বিএনপির কোন সংগঠিত অবস্থান তিন বছর ধরেই নেই। নেতারা সবাই সাবেক পরিচয়ে অকূল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছেন। নেতাদের মত দলও এখন যুক্তরাষ্ট্রে সাবেক হয়ে গেছে।
দেশের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগের মধ্যেও বিবাদ-বিভেদের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। তাদের নিজেদের মধ্যে বারবার সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ড. সিদ্দিকুর রহমানকে সভাপতি করে কমিটি গঠনের পর তাদের অভ্যন্তরীন কোন্দল এক তিক্ত রূপ নিয়েছে। তার নেতৃত্ব প্রথম থেকেই চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে এবং তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে প্রথমবারের মত ভিন্ন নামে ড. প্রদীপ করের নেতৃত্বে পাল্টা আওয়ামী লীগ গঠনের প্রয়াসও লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া বর্তমান মুহূর্তে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ কমিটি ড. সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মোটামুটি এক ‘বিদ্রোহী’র ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এ ভূমিকায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী। বলা হয়ে থাকে তার পেছনে সমর্থন রয়েছে নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশ সরকারের একজন শীর্ষ কূটনীতিকের। তাদের কারণেই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সম্মানে আয়োজিত ড. সিদ্দিকুর রহমানদের সংবর্ধনা ভন্ডুল হয়ে গিয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছিলেন ড. সিদ্দিক নিজেই।
দিন কয়েক আগে জাকারিয়া চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ড. সিদ্দিকুর রহমান। তার এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান স্বাক্ষরিত দলের এক বিজ্ঞপিÍতে এই ঘোষণা দেওয়ার পর এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন খোদ জাকারিয়া চৌধুরী ও মহানগর আওয়ামী লীগ। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সংগঠন এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কোন এখতিয়ার নেই। তাই জাকারিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কোন অধিকার তাদের নেই।
জাকারিয়া চৌধুরীকে কেন্দ্র করে ড. সিদ্দিকের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সাথে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের বিবাদ এখন জটিল হয়ে উঠেছে। তবে এ বিরোধ নতুন নয়। অনেক দিন আগে থেকেই তাকে এবং তার ভাই যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা নিজাম চৌধুরীকে নিয়ে দলের ভেতরে প্রবল বিতর্ক উঠেছিল। সে সময় নিজাম চৌধুরীকে জামায়াতের লোক ও রাজাকার এবং একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে তাদের পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল। তাদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের একটি মহল থেকে এই সব অভিযোগ সংবলিত লিফলেটও ছাড়া হয়েছিল।
দেশীয় রাজনীতির নামে এমন নি¤œ পর্যায়ের কোন্দলে লিপ্ত আমাদের প্রবাসী রাজনীতিকরা। মান মর্যাদা-শ্রদ্ধাবোধ তো দূরের কথা পরষ্পরের চরিত্র হরণে কলুষিত হচ্ছে আমাদের কমিউনিটি। এমন অবস্থা এই দেশে বসবাসকারী অধিকাংশ বাংলাদেশীর কাম্য নয়। তারা এমন অবস্থার অবসান চান। সাদেক হোসেন খোকার মত তাদেরও বক্তব্যÑ এই প্রবাসে দেশের রাজনীতি নিয়ে মাতামাতি করার কোন অর্থ নেই। রাজনীতি নিয়ে যারা আগ্রহী তাদের উচিৎ এদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া। (সাপ্তাহিক আজকাল)