নিউইয়র্কের প্রেসনোট : গাফফার চৌধুরীর নিউইয়র্ক সফর ও কিছু প্রশ্ন
- প্রকাশের সময় : ১২:১৬:০৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অগাস্ট ২০১৫
- / ৫৯১ বার পঠিত
অবশেষে ১২ দিনের বিতর্কিত নিউইয়র্ক সফর শেষে লন্ডনে ফিরে গেলেন অমর একুশে গানের রচয়িতা, প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী। সফরের শুরুতেই জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে গত ৩ জুলাই প্রদত্ত তার একক বক্তব্য নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। পরের সপ্তাহে তাকে নিয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য দু’টি সভাও পন্ড হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১২ জুলাই রোববার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দাবীদার একটি মহল তাকে নিয়ে একটি গোপন সভা করে। জেএফকে এয়াপোর্টের সন্নিকটস্থ একটি হোটেলের ছোট্ট বলরুমে আয়োজকরা মৌলবাদীদের ভয়ে এতই ভীত ছিলেন যে, তাদের পছন্দের এবং অতি বিশ্বস্থ লোকজন ছাড়া কাউকেই দুপুর ১২টার আগে জানতেও দেননি গোপন সভার বিষয়ে। পূর্ব নির্ধারিত সফরসূচী অনুযায়ী আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে ১২ জুলাই প্রবাসের একটি সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিলো। জ্যাকসন হাইসস্থ যে স্কুলে উক্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্লাশ চায় সেখানে গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিলো। পরে তা সরিয়ে জুইস সেন্টারে আনা হয়। ঐদিন বেলা দেড়টার দিকে প্রত্যেক মিডিয়ায় জুইস সেন্টারের অনুষ্ঠানটি বাতিল হয়ে গেছে বলে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। অথচ সকাল ১১টা থেকেই জেএফকে এয়ারপোর্টের কাছের ভেনুটিতে গাফফার চৌধুরীর ‘গোপন সভা’র প্রস্তুতি শুরু হয়। কোন সাংবাদিককে অনুষ্ঠান আমন্ত্রন না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু এই গোপন সভার মূল আয়োজকের অতি বিশ্বস্থ ও অনুগত কয়েকজনকে এদিনের সভায় ‘সাংবাদিক’-এর ভূমিকা পালন করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। বিকেল চারটার দিকে এই গোপন সভার খবরটি জানাজানি হয়ে যায়। এতে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর প্রতি অনুরক্ত এবং তার লেখার অনেক পাঠক গোপন সভার খবরে ক্ষুব্ধ এবং নির্ধারিত সময়ের আগে জুইস সেন্টারে গিয়ে হতাশ হন। শুধু তাই নয়, জেএফকে এয়ারপোর্টের কাছে আয়োজিত হলের সভায় সাংবাদিকদের না দেখে গোপন সভার মূল আয়োজক ড. নূরান নবীকে প্রশ্নবানে জর্জিত করেন তারা। শুধু আব্দুল গাফফার চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে ড. নবী ও কথিত আয়োজকদের প্রতি শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করতে বিরত থাকেন বলে পরবর্তীতে সাপ্তাহিক পরিচয়-কে জানান। এর কয়েক ঘন্টা পরেই উক্ত অনুষ্ঠানের প্রেস বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়। সাংবাদিকদের অনুষ্ঠানের দাওয়াত না দিয়ে পরবর্তীতে মিডিয়াগুলোতে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণ করারই শামিল। সেই কারণেই সাপ্তাহিক ঐ গোপন সভার খবর প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। শুধু তাই নয় কোন মিডিয়াকে উক্ত গোপন সভার খবর না জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বেলা ১২টার দিকে নিউইয়র্কের একটি মিডিয়া অফিসে এই খবর পৌছে দেন ড. নবীর একজন বিশ্বস্থ কর্মী। যেই মিডিয়া অফিসের প্রধান সম্পাদক ও একজন সাংবাদিক মিলে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর বাংলাদেশ মিশনে প্রদত্ত বক্তব্যকে ‘টুইষ্ট’ করে ঐ মিডিয়া হাউজের বার্তা সংস্থা কর্তৃক ঢাকার কয়েকটি মিডিয়ায় পাঠানো হয়েছিলো।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো জায়গায় যেখানে বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই সেখানে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর জন্য সেখানে গোপন সভার আয়োজন করতে হবে। আব্দুল গাফফার চৌধুরীর দু’টি সভা পন্ড হওয়ার জন্য অনেকেই যতনা মৌলবাদীদের দায়ী করছেন, তার চেয়ে বেশী দায়ী করছেন গাফফার চৌধুরীর সভার আয়োজকদের। জ্যামাইকার তাজমহল পার্টি সেন্টারের আয়োজকরা একটি ঠুনকো যুক্তিতে তাজমহল কর্তৃপক্ষের কাছে নতি স্বীকার করে। পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলে তাজমহল পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব ছিলো। শুধু তাই নয়, মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিশে ব্রুকলীনে ৫০/৬০জন লোক বসতে পারেন এমন একটি বেসমেন্টে কাকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য সভা আয়োজন করা হয়েছিলো, তাও অনেকই জানতে চান।
বিশ্বস্থ সূত্রে সাপ্তাহিক পরিচয় জানতে পেরেছে, তাজমহল পার্টি সেন্টারে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী পরিবারের ব্যানারে যে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিলো তার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার ভোর তিনটা পর্যন্ত নিউজার্সীর প্লেইন্স বরোতে ড. নূরান নবীর বাসায় আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে আড্ডা চলে। তাজমহল পার্টি সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য সভার একাধিক বিশেষ অতিথি ড. নবীর বাসার আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেয়াই ও নয়া এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে হিন্দুদের জমি দখলের অভিযোগ উত্থাপনকারী একাধিক ব্যক্তিও ঐ আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন। ফেইস বুকে ড. নবীর বাসার আড্ডার ছবি দেখে কেউ কেউ এমনও প্রশ্ন তুলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট আতœীয়ের বিষয়ে হিন্দুর জমি দখলের অভিযোগ উত্থাপনকারী ব্যক্তি কি ড. নবীর প্রশ্রয় পাচ্ছেন? এদিকে ড. নবীর বাসায় আড্ডায় যোগদানকারীদেরকে ব্রুকলীনের সভা (পরবর্তীত পন্ড হওয়া) স্থলেও দেখা যায়নি। এখন প্রশ্ন উঠেছে তাহলে কি তারা জানতেন তাজমহল পার্টি সেন্টারের অনুষ্ঠান হচ্ছে না, ব্রুকলীনের সভাটিও সাজানা?
জনাব আব্দুল গাফফার চৌধুরী নিউইয়র্কের টাইম টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তার নিউইয়র্ক সফরের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি বই লিখা। যে বইয়ে তিনি নিউইয়র্কের কয়েকজনের বক্তব্য প্রকাশ করতে চান। সেই বইয়ে স্থান করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অদৃশ্য বিভাজনকে পূঁজি করে দুই/চারজন হীনমন্যতার কঠিন রোগী আব্দুল গাফফার চৌধুরীকে নিয়ে তামাশায় লিপ্ত হয়েছেন?- এই প্রশ্ন আজ অনেকের। (সাপ্তাহিক পরিচয়)
১৭ জুলাই’২০১৫