ঢাকার সেই রাস্তা এ্রখনও ভীতিকর : নিউইয়র্ক টাইমস
- প্রকাশের সময় : ০৯:২৪:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল ২০১৫
- / ৪০১ বার পঠিত
ঢাকা: প্রায় এক মাস আগে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দৃশ্যত অপহরণ করার পর সেই রাস্তায় এখন এক ভয়ার্ত নীরবতা নেমে এসেছে। সেই বাসভবনের কম্পাউন্ডের এক কেয়ারটেকার একদল লোককে দরজা খুলে দিয়েছিলেন এবং অনেক সাংবাদিককেই বলেছিলেন যে তারা নিজেদের পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) বলে পরিচয় দিয়েছিলেন। সেই রাস্তায় তার বন্ধুরা জানাচ্ছেন, তাকে (কেয়ারটেকারকে) আর পাওয়া যাচ্ছে না। সেই বাসভবনের দরজা খুলেছিলেন যে গৃহপরিচারিকা তারও হদিস নেই। ওই অ্যাপার্টমেন্টের মালিক একটি ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপক, তারও নাগাল পাওয়া যাচ্ছে না।
পাশের ভবনের প্রহরী মোজাম্মেল বলেন, ‘অবশ্যই কিছু একটা ঘটেছে কিন্তু সবাই মুখ বুঝে থাকাটাকেই শ্রেয় মনে করছে।’
এ সময় সেই ভবন থেকে একজন এসে সালাহ উদ্দিন সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন না করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন এবং বলে এ ঘটনায় প্রতিবেশীরাও বিপদে আছে।
আধো ইংরেজীতে তিনি বলছিলেন, ‘সবাই ভয়ে আছে।আপনি নিজেও এখন এটা দেখতে পাচ্ছেন।’
তিনি তার নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানান।
গত জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সংঘাতময় অবস্থা থেকে বাংলাদেশের প্রধান দুটি দলই গত সপ্তাহে সরে এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া অবরোধ ও হরতালের ডাক দেন। এরপর থেকে বোমা হামলায় শতাধিক লোক নিহত এবং বিএনপির বহু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তবে রবিবার থেকে উত্তেজনা হ্রাস পেয়েছে। এদিন দুটি দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে না পাঠিয়ে জামিন দেয় আদালত।
খালেদা জিয়া এপ্রিলের শেষে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য তার দলীয় প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন। দৃশ্যত এর মাধ্যমে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন যে আন্দোলন শেষ হয়েছে।
তবে এ সংকট থেকে সোজাসুজি বের হওয়া সহজ হবে না। এর একটি কারণ গত ১০ মার্চ সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজ হওয়া। তার পরিবার এবং দলের নেতারা বলছেন যে তারা নিশ্চিত যে নিরাপত্তা বাহিনীই এ কাজ করেছে।
কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে অপহরণ এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ উপস্থাপন করছে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
সন্ত্রাসবিরোধী এলিট ফোর্স র্যাসবের বিরুদ্ধেও এ অভিযোগ রয়েছে যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অভ্যন্তরীণ শৃংখলা রক্ষার প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
সালাহ উদ্দিন ছিলেন বিএনপির উচ্চ পর্যায়ের দলীয় মুখপাত্র।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, তার নিখোঁজের ঘটনায় অনেকে শঙ্কিত। ‘অবস্থাটা হচ্ছে তিনি নিখোঁজ এবং কেউ তার দায় নিচ্ছে না। আমার কাছে এটা অত্যন্ত ভীতিকর অবস্থা। যে কাউকে মধ্যরাত তুলে নেয়া যায় এবং তারপর সরকার বলবে যে আমাদের কাছে কোনো ধারণা নেই,’ বলছিলেন মাহফুজ আনাম।
অনেক প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকেদের জানিয়েছেন যে সালাহ উদ্দিন যেখানে ছিলেন সেই রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এ ঘটনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যক্ষদর্শী কেয়ারটেকার আখতার আলির সাথে পরবর্তীতে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না অথবা তিনি স্ববিরোধী কথা বলছেন।
সেই রাতে রাস্তায় উপস্থিত দুজন নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন যে তারা সেই ভবনের সামনে র্যা বের একটি গাড়িসহ তারা তিন-চারটি গাড়ি দেখেছেন। সালাহ উদ্দিনের গাড়ির ড্রাইভারের স্ত্রী রেবেকা সুলতানা জানান, সালাহ উদ্দিনের নিখোঁজের দুদিন আগে তার স্বামীকে প্রত্যুষে সশস্ত্র ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার করেন। তারপর তাকে পাশের থানায় সোপর্দ করা হয়। তিনি এখনো জেলেই আছেন। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত শুনানিতে সরকারি আইনজীবী বলেছন, রাষ্ট্রীয় কোনো নিরাপত্তা বাহিনী সালাহ উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেনি।
পুলিশ বলছে, ২০টি মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে অথবা দলকে সংগঠিত করার জন্য তিনি তিনি আত্মগোপনে থাকতে পারেন।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কেউ তাকে নিয়েছে কিনা তা আমরা নিশ্চিত নই। তাকে যখন নিয়ে যাওয়া হয় অথবা তিনি যখন সেই জায়গা ছেড়ে যান তখন কেউ কোনো শব্দ শোনেনি। কেউ জানে না যে সালাহ উদ্দিন সেখানে ছিলেন।’
তিনি বলেন, যখন প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে পুলিশ কর্মকর্তারা জানতে চান তখন তারা অস্বীকার করে বসেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বিরোধী দল ভীতি প্রদর্শন করতে পারে ইঙ্গিত করে মনিরুল বলেন, ‘তারা হয়তো পেট্রোল বোমার ভয়ে শঙ্কিত।’
সালাহ উদ্দিনের স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য হাসিনা আহমেদ বলেন, তিনি প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলেছেন এবং তার কোনো সন্দেহ নেই যে তাকে নিরাপত্তা বাহিনীই গ্রেপ্তার করেছে।
বৃহস্পতিবারের শুনানিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা বলতে চাই যে তিনি জীবিত আছেন, তিনি অবশ্যই জীবিত আছেন।’
ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সহিংসতার মধ্যেই সালাহ উদ্দিন নিখোঁজ হন। বহু সাধারণ মানুষ বোমা হামলায় মারা গেছেন যা বিরোধী নেতাদের নির্দেশে হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপির অনেক সিনিয়র এবং মাঝারি পর্যায়ের নেতার বিরুদ্ধে বোমা হামলা এবং গাড়ি ভাঙচুরের জন ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলটির দুজন যুগ্ম মহাসচিব, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, একজন ভাইস চেয়ারম্যান এবং স্থায়ী কমিটির একজন সদস্যসহ বহু নেতাকর্মী এখন কারাবন্দি।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তিনি জানুয়ারিতে হরতাল ও অবরোধ ঘোষণার মত স্পর্শকাতর দায়িত্বের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন।
তার আগে তার একই দায়িত্বে থাকা দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
হাসিনা আহমেদ জানান, সালাহ উদ্দিন পালিয়ে ছিলেন এবং এক বাসা থেকে অন্য বাসায় থাকতেন। পরিবারের সাথে তার মাঝে মাঝে সাক্ষাত হতো। তাদের ১৭ বছর বয়সী মেয়ে ফারিবা জানায়, কয়েক মাস যাবৎ সে তার বাবাকে দেখেনি।
এর আগে ২০১৩ সালের এপ্রিলে বিএনপির আরেক নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত বছর জানায় যে তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে ১১টি ঘটনার অনুসন্ধান করে দেখেছেন এসব ঘটনায় র্যা বসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর সন্দেহজনকভাবে হত্যা করা হয়েছে।
২০১৪ সালের এপ্রিলে নারায়ণঞ্জে দৃশ্যত চুক্তিভিত্তিক খুনের ঘটনায় (সাত খুন) গত সপ্তাহেই তিন র্যা ব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সরকারি কৌঁসুলিরা।
শুক্রবার নিউইয়র্ক টাইমসে এলেন ব্যারির লেখা Amid Political Confrontations in Bangladesh, a Search for a Missing Opposition Official শীর্ষক প্রতিবেদন।