নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত একাধিক পত্রিকার সম্পাদক ও মিডিয়া কর্মীরা বলেছেন, নিউইয়র্কে বাংলা সংবাদপত্র এখনও শিল্পে পরিণত হয়নি। অভিবাসী সমাজে বাংলাদেশী কমিউনিটির গোড়াপত্তনে সংবাদপত্রগুলো মূখ্য ভূমিকা রাখলেও এখানে সংবাদপত্রগুলো নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। সংবাদপত্রগুলোকে সহযোগিতার জন্য কমিউনিটির ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশাজীবীদের সহযোগিতার আহবান জানান বক্তারা। বক্তারা আরো বলেন, কমিউনিটি সাংবাকিতাই টিকে থাকবে। দিনে দিনে সাধারণ পাঠক কমিউনিটি সাংবাদিকতার প্রতি সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ইতিমধ্যে ৬০ মিলিয়ন লোক কমিউনিটি সংবাদপত্র নিয়মিত পাঠ করছেন। মিডিয়াকর্মীরা বলেন, নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটি বাড়ছে। এই কমিউনিটিতে সাংবাদিকতার দায়িত্বশীলতাও বাড়ছে।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের (এবি প্রেসক্লাব) অভিষেক অনুষ্ঠানে ‘কমিউনিটি সাংবাদিকতা ও দায়িত্বাবোধ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। গত ৩০ এপ্রিল রাতে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসস্থ বেলোজিনা পার্টি হলে প্রেসক্লাবের অভিষেক, আলোচনা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আলোচনা সভায় অতিথি হিসাবে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত ১০টি সাপ্তাহিকের সম্পাদক বক্তব্য রাখেন, যা অতীতে দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি দর্পণ কবীর এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শওকত ওসমান রচি। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন সামুন্নাহার নিম্মি। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে আরো বক্তব্য রাখেন আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, সাপ্তাহিক দেশবাংলা ও বাংলা টাইমস সম্পাদক ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, সাপ্তাহিক বর্ণমালা সম্পাদক মাহফুজুর রহমান, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক জন্মভূমি সম্পাদক রতন তালুকদার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশী বিজনেস এসোসিয়েশনের সভাপতি ও আজকাল পত্রিকা প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো এবং এটর্নী মঈন চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রবীণ সাংবাদিক মঈনুদ্দিন নাসের, ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম, বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সেক্রেটারী (প্রেস) নূরে এলাহী মিনা, সাপ্তাহিক ঠিকানা’র নির্বাহী সম্পাদক জাভেদ খসরু, খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপার্সন নাঈমা খান ও সাপ্তাহিক জনতার কণ্ঠ সম্পাদক শামসুল আমল।
অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রয়াত আবৃত্তি শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরিফ, কবি সাজ্জাদ কাদির ও সাংবাদিক ওমর ফারুকের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে নাজমুল আহসান বলেন, সংবাদ প্রকাশে আমি কতোটুকু ফেয়ার সেটাই আমার কাছে বড় বিষয় বলে মনে করি। কমিউনিটির প্রতি দায়িত্ববোদের কারণে এখনো আমি সাংবাদিকতায় আছি। তিনি আরো বলেন, প্রবাসে প্রেসক্লাবে বিভাজনের সঙ্গে সাংবাদিকতার বিভাজনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের বিবেকবান হওয়াটা জরুরি।
মনজুর আহমদ বলেন, কমিউনিটির প্রয়োজনেই এখানে পত্রিকা প্রকাশ হয় এবং তা চলে। প্রবাসেও বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপ রয়েছে। প্রবাসে পত্রিকাগুলো পাঠক তৈরি করেছে। তিনি বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, কমিউনিটিতে বাংলা সংবাদপত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি পত্রিকার মালিকদের সাংবাদিক দিয়ে বিজ্ঞাপনের কাজ না করার অনুরোধ জানান।
ডা. ওয়াজেদ এ খান বলেন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশী কমিউনিটিতে সব কিছুতেই বিভক্তি। এর ভালো এবং খারাপ দু’টি দিকই আছে। তিনি দেশের বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে প্রবাসের সংবাদপত্রগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা করার আহবান জানান।
ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান বলেন, নিউইয়র্কে ফ্রি পত্রিকা আমি শুরু করেছিলাম। এখানকার বিজ্ঞাপনদাতারা বিল পরিশোধ করতে গড়িমসি করে। এই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার।
মাহফুজুর রহমান বলেন, আমরা কমিউনিটিকে অনেক সেবা দেই, কিন্তু কমিউনিটি আমাদের কিছু দিতে পারে না। প্রবাসের অনেক বিত্তশালী, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবী আছেন, তারা সংবাদত্রে বিজ্ঞাপন দেন না। তাদের মানসিকতা বদলালে প্রবাসে কমিউনিটি সাংবাদিকতা সৃজনশীল হবে। সাংবাদিকদের বিভক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে কোনা বিভাজন নেই। আজকরে মঞ্চ-ই এর প্রমাণ।
রতন তালুকদার বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে প্রবাসে কোনো বাধা নেই, যেমন বাংলাদেশে আছে। কিন্তু প্রবাসে আমাদের  কণ্ঠ চেপে ধরেন এখানকার বিজ্ঞাপনদাতারা। তিনি আরো বলেন, প্রবাসের পাঠক ১ ডলার খরচ করে পত্রিকা কিনতে চান না। তা না হলে এখানকার পত্রিকাগুলো ফ্রি হতো না।
আবু তাহের বলেন, প্রবাসে ঘর ঝাড়– দেওয়া থেকে শুরু করে লেখালেখি এবং বিলি সমস্ত কাজ করতে হয় একজন সাংবাদিককে। সাংবাদিকরা অনেক কষ্ট-ত্যাগ স্বীকার করে প্রবাসে সাংবাদিকতা পেশায় রয়েছেন। তিনি আরো বলেন, অনেকে হাজার হাজার ডলার খরচ করেন অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে চান না। এ কারণে বাংলা সংবদপত্রগুলো ধুঁকে চলছে।
জাকারিয়া মাসুদ জিকো বলেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে থ্যাংকসলেস জব। সাংবাদিকদের  কেউ ধন্যবাদ দেয় না। সবাই সমালোচনা করেন। তিনি আরো বলেন, প্রবাসের মিডিয়া পুরোপুরি নিরাপদ, তা নয়। এখানেও কিছু লিখলে দেশেও এর জবাব দিতে হতে পারে। তাই চাইলেই আমরা যা ইচ্ছা তাই সরকারের সমালোচনা করতে পারি না।
মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, আমি বিভাজন চাই না। আমাদের মধ্যে বিভাজন হলেও আমরা ভলো কাজে সবাই একত্রিত হয়ে কাজ করি। শেষ কথা হলো সবাই কমিউনিটিজ জন্য কাজ করছি।
এটর্নী মঈন চৌধুরী বলেন, প্রবাসে  যারা সংবাদিকতা করেন তাদের স্যালুট জানাই। তারা নিজে পরিশ্রম করে আমাদের সংবাদ পরিবেশন করেন। তাদের কষ্টের কথা আমরা অনেকে বিবেচনা করি না। অথচ তারা সমাজ গঠনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের বহুজাতিক কোম্পানীগুলোকে এখানকার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেয়ার অনুরোধ জানান।
মনোয়ার ইসলাম বলেন, নিউইয়র্কে সাংবাদিকতার যে সংজ্ঞা দেয়া হয় তা মূল সাংবাদিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। প্রবাসে একা সম্পাদককেই সমস্ত কাজ করতে হয়। এ জন্য তাদেরকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের কমিউনিটির প্রচার ও প্রসারের জন্য যে কাজ করছেন তা অনবদ্য।
নাঈম খান বলেন, সাংবাদিকদের মধ্যে ঐক্য থাকলে আমাদের ভালো লাগবে।
মঈনুদ্দিন নাসের বলেন, কমিউনিটি সংবাদপত্র ছাড়া অন্যান্য মিডিয়া টিকবে বলে আমি মনে করি না। অগ্রবর্তী ধারার সাথে সম্পৃক্ততার জন্য সাধারণ মানুষ একমাত্র কমিউনিটি সংবাদপত্রের উপর নির্ভশীল। তাই তাদের দায়িত¦বোধ আরো বাড়ানোর অনরোধ জানাই।
অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব ও বিউটি দাস। নিউইয়র্ক বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তি, সুধীজন, পেশাজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ‘বাতিঘর’ নামে একটি দৃষ্টিনন্দন ম্যাগাজিন প্রকাশ করা হয়।-প্রেস বিজ্ঞপ্তি।