আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য
- প্রকাশের সময় : ১১:৪১:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
- / ৭৮৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের নির্বাচন ঘিরে ক্লাবের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ক্লাবের নির্বাচন কমিশন এক বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে নির্বাচন কমিশন ক্লাবের স্বার্থে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। গত ১৬ ফেব্রুয়ারী প্রেরীত নির্বাচন কমিশনের তিন সদস্য যথাক্রমে কাজী শামসুল হক (প্রধান নির্বাচন কমিশনার), রাশেদ আহমেদ ও আকবর হায়দার কিরণ (নির্বাচন কমিশনার) যৌথভাবে এই বিবৃতি প্রদান করেন।
নির্বাচন কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়: আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের বিশেষ সাধারণ সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনেরর দায়িত্ব পাওয়ার পর আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। একই সাধারণ সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ কার্যকরী কমিটিরও ৩১ মার্চ, ২০১৭ পর্যন্ত সময় বর্দ্ধিত করা হয়- যাতে নির্বাচন কমিশনকে কমিটি সহযোগিতা করতে পারে।
দায়িত্বপ্রাপ্তির পর আমরা প্রথমেই ১৬ জানুয়ারী কার্যকরী কমিটির সঙ্গে বসেছি এবং তাদের মূল্যবান পরামর্শ শোনেছি। পর্যায়ক্রমে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে বিশেষ করে সদস্যদের সঙ্গেও পরামর্শ করতে চেষ্টা করেছি। অধিকাংশের সঙ্গেই আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং তাদের পরামর্শও শোনেছি।
সাধারণ সভায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা ৩১ মার্চ পর্যন্ত দেয়া হলেও ক্লাবের কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে যথা সম্ভব দ্রুত নির্বাচন সমাধা করতে আমরা মনোযোগী হই। অন্যদিকে মার্চ মাস থেকেই সংবাদ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অর্থাৎ ক্লাবের সদস্যদের কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায়। তাই সে বিবেচনাও সামনে রেখে দ্রুততার সাথে নির্বাচন সমাধা করা প্রয়োজন মনে করেছি। সব বিবেচনায় আমরা (নির্বাচন কমিশন) আগামী ১১ মার্চ নির্বাচন-এর তারিখ নির্ধারণ করেছি। আমরা তফসিলসহ সকল সদস্যকে শিগগিরই তা অবগত করার প্রক্রিয়ায় আছি।
সুন্দর ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে নির্রাচন শেষ করার স্বার্থেই সকল তিক্ততা পরিহার করে আমাদের দায়িত্ব ও সীমার মধ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সে কারণে অনেক জটিলতা সৃষ্টির যে কোন প্রয়াসে আমরা ধৈর্য ধারণ করেছি, নিরব থাকার চেষ্টা করেছি- যাতে নির্বাচনের পথে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, সে বিবেচনায়। কিন্তু আমাদের সকল সদিচ্ছা সৌজন্যতাকে ম্লান করে দিয়েছে গত ১২ ফেব্রুয়ারী মেয়াদবর্ধিত কার্যকরি কমিটির সভাপতির একটি ভুলতথ্য ও বিভ্রান্তিমূলক বিবৃতিতে। যা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ায় সাধারণ্যে আমেরিকা বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে এবং ক্লাবের সাধারণ সভায় সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তকে অমর্যাদা করা হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সভাপতি নাজমুল আহসানের বিবৃতিটি নির্বাচন কমিশন সম্পর্কেও সাধারণ সদস্য ও পাঠকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। সে কারণে কমিশন সম্পর্কে বিবৃতিতে উল্লেখিত ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তি দূর করতে আমরা বাধ্য হয়েছি। নির্বাচন কমিশন মনে করে সভাপতি সাহেবের বিবৃতিটি সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ও তার পদমর্যাদর সঙ্গেও সঙ্গতিহীন।
১.সভাপতি সাহেব তার বিবৃতিতে উল্লেখ করেছেন “গত ১৬ জানুয়ারীর কার্যকরী কমিটির সভায় ১৯ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সভায় উপস্থিত থেকে একমত পোষণ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী শামসুল হক ও কমিশনের সদস্য রাশেদ আহমেদ। কমিশনের রেজুলেশন বুকে তাদের স্বাক্ষর আছে।”
এই বক্তব্যটি সর্বৈব ভুল ও বিভ্রান্তিমূলক। প্রকৃত পক্ষে উল্লেখিত বৈঠকে আমরা উপস্থিত হয়েছিলাম তাদের মতামত পরামর্শ শোনার জন্য। আমাদেরকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ১৯ মার্চ একটি সাধারণ সভার কথা জানান এবং একই তারিখে নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও পরামর্শ দেন। তাদের পরামর্শ আমরা গুরুত্বসহকরে শোনেছি কিন্তু কোন মতামত দেইনি। বলেছি আমরা কমিশনের বৈঠক করে বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেব। তাছাড়া কমিশনের অপর সদস্য আকবর হায়দর কিরন তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের একজন সদস্যের অনুস্থিতিতে সিদ্ধান্ত দেয়া সঙ্গত হবে না বলেও তাদেরকে জানাই। কমিটির উপস্থিত সদস্যগণই তার সাক্ষি। বইতে আমাদের স্বাক্ষর ছিল উপস্থিতির, কার্যকরী কমিটির কোন সিদ্ধান্তের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। কার্যকরী কমিটির আলোচনা ও সিদ্ধান্তে নির্বাচন কমিশনের অংশগ্রহণ বা মত অমতের কোন সুযোগ নেই! আমরা তাদের পরামর্শ শোনেছি, ‘নির্বাচন সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব কমিশনের’ তাও স্পষ্ট করেই জানিয়ে এসেছি। সেদিন কার্যকরী কমিটির সভায় পরবর্তিতে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা আমরা জানি না, জানার কথাও নয়।
তাছাড়া আমাদের আলোচনা হয়েছে কার্যকরী কমিটির সভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবার আগে এবং সভার কাজ শুরু হবার আগেই আমরা তাদের নিকট থেকে সঙ্গত কারণেই বিদায় নিয়ে চলে আসি। আমাদের প্রস্থানের পর সে সভায় কি হয়েছে আমরা জানিনা। রেজুলেশন বুকে কি লেখা হয়েছে তাও আমাদের জনার কথা নয়। সবায় উপস্থিতির স্বাক্ষর সভার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ‘একমত পোষণ’ করা নয়। কারণ সিদ্ধান্ত হয় সভায় আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে এবং পরবর্তি সভায় সেসব সিদ্ধান্ত সেক্রোরী কতৃক পঠিত হয়ে তাতে সদস্যগণের সমর্থনের পর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে থাকে।
উপরন্ত সাধারণ সভা ও নির্বাচন একসাথে একইদিনে করার যে প্রস্তাব সভাপতি সাহেব সেক্রেটারী সাহেব দিয়েছেন তা বাস্তবসম্মত না। কারণ সাধারণ সভা সময়মত শুরু করা যায় শেষ করা যায় না। সমাপ্তিটা অনিশ্চিত- কোন পরিস্থিতিতে শেষ হবে আগে থেকে কিছুই বলা যায় না। অপরদিকে একইভাবে নির্বাচনে ভোট গ্রহণ, গণনা ও ঘোষণায়ও দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। সাধারণ সভার দিনে নবনির্বাচিত কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা ও নতুন কমিটিকে অভিষিক্ত করার প্রস্তাব রাখা যেতে পারে।
২.নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক করার আগেই সভাপতি সাহেব একটি প্রেস রিলিজ দিয়ে নির্বাচনের তারিখ ও নির্বাচন সংক্রান্ত আরো কিছু বিষয় প্রকাশের জন্য বিভিন্ন পত্রিকায় পাঠান। তা আমাদের গোচরে এলে আমরা তাৎক্ষণিক কমিশনের তিন সদস্য বৈঠকে বসে সভাপতি সাহেবকে টেলিফোন করি এবং তিনি (সভাপতি সাহেব) বিজ্ঞপ্তিটি সংশোধন করে পাঠাবেন বলে আমাদেরকে আস্বস্থ করেন। কিন্তু পরে তিনি তা সংশোধন করেননি, সে বিজ্ঞপ্তিটিই হুবহু কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত হতে দেখে আমরা বিস্মিত হই। আমরা বাদ প্রতিবাদ এড়ানোর জন্যই নিরবতা অবলম্বন করেছি। যেহেতু নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কে তখনো আমরা (কমিশন) কোন সিদ্ধান্ত নেই নাই এবং ঘোষণা করে নাই অথচ নির্বাচন সংক্রান্ত খবরটি প্রকাশিত হওয়ায় ক্লাবের সদস্য ছাড়াও সাধারণ পাঠকদের মধ্যে তা ছড়িয়ে গেছে, সেহেতু বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের অবগতির জন্য কমিশনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
৩.নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশরেরই। একমাত্র নির্বাচন পরিচালনার জন্যই কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত। আমাদের দৃঢ়তা, নিরপেক্ষতা ও নির্মোহ ভূমিকায় হস্তক্ষেপ করা বা কোন অযৌক্তিক অবাস্তব প্রস্তাব আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয় কারণেই এই কমিশনকে অকার্যকর ও বিতর্কিত করার ব্যর্থ প্রয়াস। এজন্য যত অপকৌশল অবলম্বন অবলম্বন লক্ষ্য করা যায়।
সাধারণ সভায় দায়িতপ্রাপ্ত কমিশনকে দুএক জন কর্তৃক ‘অব্যাহতি’ দেয়া হাস্যকর! কমিশনকে বিতর্কিত ও অকার্যকর করার জন্য অসত্য, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণাও দু:খজনক। একটি নির্বাচিত কার্যকরি কমিটি যত শিগগীর গঠন করা সম্ভব ততই ক্লাবের জন্য মঙ্গলজনক বলে আমরা মনে করি। সেজন্য বাজারে ছড়ানো নানা গুজব, অপবাদে কর্ণপাত না করে সাধারণ সদস্যদের দেয়া দায়িত্ব ও আস্থার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আসছি।
৪.নির্বাচন কমিশন তফশিল ঘোষণা করার পরই জানা যাবে প্রার্থিতা ও গ্রুপের কথা। অতএব তফশিল ঘোষণা পর্যন্ত সকলকে অপেক্ষা করতে হবে। তার আগেই ‘কোন গ্রুপ’র পক্ষে বা বিপক্ষে বলে কমিশনকে অপবাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই আর তা সঙ্গতও নয়। সভাপতি সাহেব ও সেক্রেটারী সাহেব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কিছু অভিযো করলে সে বিষয়েও কমিশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেয়া হয়। নির্বাচন কমিশনার হলেও সমাজিক, ব্যক্তিগত ও ব্যাবসায়িক প্রয়োজনে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকলে সেটাতে সন্দেহপ্রবণ হওয়া, গ্রুপিং মনে করা বা অকাট্য প্রমাণ ছাড়া গণমাধ্যমে প্রচার দেয়া অনভিপ্রেত। তার পরও আমরা আমাদের চলাফেরা যথাসাধ্য নিয়নন্ত্রিত রেখেছি।
আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই সভাপতি নাজমুল আহসানের অভিযোগ সমূহ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, অবান্তর। সভা বা ‘তথাকথিত সভা’, ‘গ্রুপ’ ‘প্যানেল’ এসব অবান্তর কথা। নির্বাচন কমিশনকে তারিখ বা তফশিল ঘোষণার জন্য সকলের সঙ্গে পরামর্শ করা বা সভা ঢাকার কোন বাধ্য বাধকতা নেই। তা সত্বেও আমরা মতামত নিয়েছি।
৫.কার্যকরী কমিটির সঙ্গে কমিশনের মতবিনিময় সর্ব প্রথমেই হয়েছে। প্রতি মুহূর্তে বা পদে-পদে কার্যকরী কমিটির সঙ্গে কমিশনকে পরামর্শ করতে হবে বা তাদের কথা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে এমন মানসিকতা কাম্য হওয়া উচিৎ নয়। কমিটির কথামত নির্বাচন করতে হলে বিশেষ সাধারণ সভায় নির্বাচন কমিশন গঠন না করে মেয়াদবর্ধিত কার্য়করী কমিটির উপরই দায়িত্ব দেয়া যেত বা হত।
৬.সম্মানিত সদস্যগণকে আস্বস্থ করতে চাই যে অমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে। সদস্যগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হবেন তারাই পরবর্তি কার্যকরী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব নেবেন। কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কারো প্রতিই আমাদের কোন পক্ষপাতিত্ব নেই। ব্যক্তিগত ভালোবাসা বা শত্রুতার ঊর্ধে নির্বাচন পরিচালনা করবো বলে প্রতিজ্ঞা নিয়েছি আমরা। আমাদের এই প্রতিজ্ঞা রক্ষায় ক্লাবের সকল সম্মানিত সদস্যের সহযোগিতা চাই। তফসিল ঘোণার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত আমাদেরকে আপনারা পরামর্শ দেয়ার অধিকার আপনাদের রয়েছে।