নিউইয়র্কে রুনা-সাবিনা’ লাইভ কনসার্ট : গান আর সূরে মুগ্ধ দর্শক-শ্রোতা
- প্রকাশের সময় : ০৫:৪০:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ মে ২০১৬
- / ১৩৯২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বহির্বিশ্বে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের দুই কিংবদন্তী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের ‘লাইভ কনসার্ট’। ১৫ মে রোববার নিউইয়র্কের ইয়র্ক কলেজ মিলনায়তনে এই কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। এই কনসার্টের আয়োজক ছিলো শোটাইম মিউজিক। রোববার সন্ধ্যা ৮টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়ে শেষ হয় রাত ১১টায়। এতে শিল্পীদ্বয়ের সঙ্গীত পরিবেশনার পাশাপাশি নৃত্যও ছিলো। বাংলাদেশের দুই কিংবদন্তি শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের গান আর সূরে মুগ্ধ ছিলো মিলনায়তন ভর্র্তি সহস্র দর্শক-শ্রোতা। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দুটি গান পরিবেশন করে প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী হাফিজুর রহমান। সবশেষে শিল্পী রুনা-সাবিনাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাবিনা ইয়াসমীন। তাঁর গান পরিবেশনার আগে তিনি বাংলাদেশের অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশুদের জন্য তার কর্মকান্ডের সাথে প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। সাবিনার আহ্বানে তাঁর প্রজেক্টের সাথে সম্পৃক্ত প্রবাসী ডা. এহসান এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এরপর সাবিনা তার সূরেলা কন্ঠে একে একে জনপ্রিয় ১৬টি গান পরিবেশন করেন। তার একটি গানের সাথে নতুন প্রজন্মের তিনজন শিল্পী নৃত্য পরিবেশন করেন। গানের ফাঁকে ফাঁকে সাবিনা তার গান, গানের গীতিকার ও সুরকার এবং প্রেক্ষাপটও তুলে ধরেন। ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য, লাবন্য…….’ গান দিয়ে তার পরিবেশনা শুরু করেন। এরপর একে একে গেয়ে যান- ‘আমি রজনী গন্ধা ফুলের মতো গন্ধ বিলিয়ে যাই……’, ‘অশ্রু দিয়ে লেখা এ গান যেন ভুলে যেয়ো না……..’,‘শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে……..’, ‘চিঠি দিও প্রতিদিন চিঠি দিও নইলে থাকতে পারবো না…….’,‘তুমি চোখের আড়াল হও, কাছে কিবা দূরে রও……..’,‘আমি আছি থাকবো ভালোবেসে মরবো, দোহাই লাগে তোমার………’,‘একি সোনার আলোয় জীবন ভরিয়ে দিলে ওগো বন্ধু…………’,‘শুধু গান গেয়ে পরিচয় চলার পথে ক্ষণিক দেখা……….’,‘ইশারায় চেয়ে চেয়ে আমাকে ডেকো না……….’,‘ও আমার রসিয়া বন্ধুরে তুমি কেনো কোমরের বিছা…………..’,‘দু:খ ভালবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়………’,‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা আর তো ভালো……….’,‘সে যে কেনো এলা না কিছু ভালো লাগে না………’ এবং ‘সেই রেল লাইনের ধারে……..’। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে ৩০ লাখ শহীদ স্মরণে শেষ গান ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না………..’।
ইয়র্ক কলেজের মিলনায়তন ভর্তি সর্বস্তরের দর্শক-শ্রোতার মূহুর্মূহ করতালির মধ্য দিয়ে সাবিনা যখন গান পরিবেশন করছিলেন তখন উপস্থাপক সময়ের দিক বিচেনা করে তাঁকে শেষ করার অনুরোধ জানালে সাবিনা বলেন, আমি তো শেষ করতেই চাই কিন্তু দর্শক তো শেষ করতে দিচ্ছেন না। এসময় দর্শক-শ্রোতাদের পক্ষ থেকে আরো গান পরিবেশনের দাবী উঠলেও সাবিনা ইয়াসমিনকে তার পরিবেশনা শেষ করতে হয়। যেন শেষ হয়েও হইলো না শেষ।
সাবিনা ইয়াসমীনের গান পরিবেশন শেষে শোটাইম মিউজিক-এর পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা প্রদান করেন ডিজিটাল ওয়ান ট্রাভেলস-এর প্রেসিডেন্ট বেলাল আহমেদ। এরপর অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেনের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেনে শিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন।
এসময় মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তার শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশের সর্বসেরা সঙ্গীত শিল্পী রুনা-সাবিনা’র প্রতি শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, প্রবাসে এমন শিল্পীদের অনুষ্ঠান দেশের সঙ্গীত তথা শিল্প-সংস্কৃতিকে আরো বিকশিত করবে। এজন্য তিনি এই কনসার্টের আয়োজক ও পৃষ্ঠপোষকদের ধন্যবাদ জানান এবং আগামী দিনে আরো বেশী করে এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
সাবিনা ইয়াসমীনের গান পরিবেশন শেষে একক নৃত্য পরিবেশন করে নতুন প্রজন্মের মডেল মুন। মুনের পরিবেশনা শেষে রাত পৌনে ১০টার দিকে মঞ্চে আসেন রুনা লায়লা। তিনি বাংলা আর উর্দুতে একাধিক গান গেয়ে উপস্থিত দর্শক-শ্রোতার মন কাড়েন। দেশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রুনা প্রথমেই গান ‘প্রতিদিন তোমায় দেখি সূর্যের আগে……….’। এরপর একে একে গেয়ে যান ‘যখন থামবে কোলাহল………..’,‘গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে……….’,‘ষ্টেশনের রেল গাড়িটা মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা………….’,‘বন্ধু তিন দিন তোর বাড়ী গেলাম দেখা পাইলাম না……….’, ‘ও সাধের লাও বানাইলো মোরে বৈরাগী…….’ প্রভৃতি জনপ্রিয় গান। মাঝে পরিবেশন করেন একাধিক উর্দূ গান। অবশ্য রুনার গান পরিবেশনের সময় দর্শক সারি থেকে কেউ কেউ বাংলায়, আবার কেউ কেউ উর্দূ আবার কেউ হিন্দিতে গান পরিবেশনের অনুরোধ জানালে রুনা মৃদু স্বরে বলেন, গান তো গানই। গানে আবার বাংলা-উর্দূ কি?
এদিকে রুনা লায়লার গান পরিবেশনের মাঝে শোটাইম মিউজিক-এর পক্ষ থেকে তাকে সম্মাননা প্রদান করেন উৎসব ডট কম-এর প্রেসিডেন্ট ও সিইও রায়হান জামান। এরপর অনুষ্ঠান আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক, পিপলএনটেক-এর প্রেসিডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার আবু বকর হানিপের হাতে প্ল্যাক তুলে দেন শিল্পী রুনা। এসময় ফারহানা হানিপ আবু হানিপের সাথে ছিলেন। এছাড়া সাপ্তাহিক আজকাল-এর প্রধান সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ জিকো ‘কালার’ শীর্ষক ফ্যাশন ম্যাগাজিন উপহার দেন শিল্পী রুনা লায়লাকে।
সবশেষে রুনা-সাবিনা এক মঞ্চে যৌথভাবে দু’টি গান পরিবেশন করেন। আর এই গান ও লাইভ কনসার্টের মধ্য দিয়ে দেশের বাইরে নিউইয়র্কে রচিত হলো ঐতিহাসিক ঘটনা। কেননা, একই মঞ্চে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সঙ্গীত জগতের দুই কিংবদন্তী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনের ‘লাইভ কনসার্ট’ বিরল ঘটনা হিসেবে দেখছেন তাদের ভক্ত-শ্রোতা আর দর্শকরা।
শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীন তাদের গান পরিবেশনার সময় এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য আয়োজক প্রতিষ্ঠান শোটাইম মিউজিকের কর্নধার আলমগীর খান এবং অনুষ্ঠানটি আয়োজনে সার্বিকভাবে সহযোগিতার জন্য সঙ্গীত শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের প্রশংসা করে তাদের পরিচয় করিয়ে দেন। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনায় ছিলেন বিশিষ্ট উপস্থাপক আবীর আলমগীর ও টাইম টিভি’র নিউজ প্রেজেন্টার শামসুন্নাহার নিম্মি।
এর আগে বিকেল থেকেই ইয়র্ক কলেজ মিলনায়তনে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ঘটতে থাকে। বিকেল ৭টা থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে দর্শক-শ্রোতারা হলে প্রবেশ করেন। মিলনায়তন ভর্তি দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে সর্বস্তরের প্রবাসীদের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।