যে ভুলটা মধুর ছিলো!: ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে যৌথভাবে সেরা গায়িকা হয়েছেন রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমিন। তাই দু’জনকেই ডাকা হলো মঞ্চে। দু’জনই এলেন। প্রথমে রুনাকে পদক পরিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ট্রফি আর স্মারকও প্রদান করলেন। এবার সাবিনার পালা। কিন্তু তার পদকে চোখ রেখে প্রধানমন্ত্রী দেখলে তাতে রুনার নাম লেখা! এরপর হাসি ধরে রাখতে পারলেন প্রধানমন্ত্রী। হাসলেন রুনা-সাবিনাও। এই ভুলটা যে মধুর ছিলো তা বোঝা গেলো সবার হাস্যোজ্জ্বল মুখ দেখে।
প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তার পরিয়ে দেওয়া পদক খুলে ফিরিয়ে দেন রুনা। এরপর তাকে তার নাম লেখা পদক পরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর তার কাছ থেকে পদক, ট্রফি আর স্মারক নেন সাবিনা।
‘দেবদাস’ ছবির ‘এ জীবন ধূপের মতো গন্ধ বিলায়’ গানের জন্য রুনা আর ‘ভালোবেসে একবার কাঁদালে না আমাকে’ গানের জন্য সেরা গায়িকা হয়েছেন সাবিনা।
দেশীয় সঙ্গীতাঙ্গনের দুই দিকপাল বলা হয়ে থাকে রুনা ও সাবিনাকে। সত্য সাহার সুরে সত্তর দশকের মাঝামাঝি ‘প্রতিনিধি’ ছবিতে ‘তুমি বড় ভাগ্যবতী’ ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে তারা গেয়েছিলেন। এরপর এনটিভির একটি অনুষ্ঠানে দু’জন মিলে একটি গানে কণ্ঠ দেন। গত বছর ‘দলছুট প্রজাপতি’ ধারাবাহিক নাটকের শিরোনাম-সঙ্গীত গেয়েছেন দু’জনে মিলে। তারা একসঙ্গে সঙ্গীত প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের বিচারকও হয়েছেন। এবার একসঙ্গে পেলেন জাতীয় পুরস্কার।
পুরস্কারের অর্থ দিয়ে দিলেন কবরী: চলচ্চিত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন কবরী। পদক ও স্মারকের পাশাপাশি পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ টাকা। অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি পুরস্কারের টাকা দান করার ঘোষণা দেন। কবরী জানান, পুরস্কারের অর্থ থেকে ৫০ হাজার টাকা বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে দান করবেন। বাকি ৫০ হাজার টাকা নারায়ণগঞ্জের ৪৫ জন সুবিধাবঞ্চিত প্রতিবন্ধীকে দিয়ে দেবেন। সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে কবরী বলেন, ‘আমার এই পুরস্কার মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করছি। চলচ্চিত্রাঙ্গনে দত্তদা (সুভাষ দত্ত) থেকে শুরু করে অনেকের সহযোগিতা পেয়ে দর্শকদের মিষ্টি মেয়ে হতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, প্রবীর মিত্র, সুমিতা দেবীর নাম না বললেই নয়, তাদের সহযোগিতা না থাকলেও কবরী হয়ে উঠতাম না।’
দু’হাত ভরে পেলেন গাজী রাকায়েত: ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে গাজী রাকায়েত পরিচালিত ‘মৃত্তিকা মায়া’ সর্বাধিক ১৭টি বিভাগে পুরস্কার জিতেছে। এর মধ্যে একাই পাঁচটি পুরস্কার জিতেছেন তিনি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করতে তাকে পাঁচবার মঞ্চে যেতে হয়েছে। এ এক অন্যরকম ঘটনা।
প্রথমবার গাজী রাকায়েত পুরস্কার গ্রহণের সময় অন্যান্য বিজয়ীর পুরস্কার নেওয়ার মতোই প্রতিক্রিয়া ছিলো আমন্ত্রিত অতিথিদের মধ্যে। অর্থাৎ সাধারণ করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানানো হয় তাকে। কিন্তু দ্বিতীয়বার থেকেই সোরগোল পড়ে যায় মিলনায়তনজুড়ে। প্রধানমন্ত্রী অভিব্যক্তিতেও এক ধরনের বিস্ময় ধরা পড়ে। এক আসরে একই শিল্পীর এতো পুরস্কার পাওয়ার নজিরবিহীন ঘটনা দেখা গেলো এবার।
গাজী রাকায়েত যে বিভাগগুলোর জন্য পুরস্কার পেয়েছেন তা হলো- সেরা চলচ্চিত্র প্রযোজক, সেরা পরিচালক, সেরা কাহিনীকার, সেরা চিত্রনাট্যকার, সেরা সংলাপ রচয়িতা। এর মধ্যে ‘মৃত্তিকা মায়া’ প্রযোজনা করার জন্য সেরা চলচ্চিত্র প্রযোজক হয়েছেন ফরিদুর রেজা সাগরও।
পুরস্কার গ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নিতে মঞ্চে তার পেছনে অন্য বিজয়ীদের পাশাপাশি বসার কথা ছিলো গাজী রাকায়েতের। কিন্তু এতোবার পুরস্কার পাওয়ায় তিনি বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারেননি! এমনও হয়েছে চেয়ারে বসা মাত্রই ফের তার নাম ঘোষণা করা হয়েছে বিজয়ী হিসেবে। ফটোসেশনে বিজয়ীরা ট্রফি হাতে আলোকচিত্রীদের সামনে দাঁড়ান। কিন্তু রাকায়েতকে দুটি হাতে নিয়ে বাকি তিনটি ট্রফি চেয়ারেই রাখতে হলো।
গাজী রাকায়েতের পাঁচটি পুরস্কারের পাশাপাশি ‘মৃত্তিকা মায়া’ আরও একডজন বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে। এগুলো হলো- সেরা অভিনেতা (তিতাস জিয়া), সেরা অভিনেত্রী (শর্মীমালা), সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (রাইসুল ইসলাম আসাদ), সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (অর্পণা), সেরা খল অভিনেতা (মামুনুর রশীদ), সেরা সম্পাদনা (মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম রাসেল), সেরা শিল্প নির্দেশক (উত্তম গুহ), সেরা চিত্রগ্রহণ (সাইফুল ইসলাম বাদল), সেরা শব্দগ্রাহক (কাজী সেলিম), সেরা পোশাক ও সাজসজ্জা (ওয়াহিদা মলি¬ক জলি), সেরা রূপসজ্জা (আলী বাবুল)।
উল্লেখ্য, ৮ এপ্রিল শনিবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওস্থ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিজয়ীদের মধ্যে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পে গৌরবোজ্জ্বল ও অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এবার মোট ২৫টি শাখায় ২৯ জন শিল্পী ও কলাকুশলীকে পুরস্কার দেওয়া হয়।-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম