হোয়াইট হাউজের সামনে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ
- প্রকাশের সময় : ০১:১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬
- / ৭৩২ বার পঠিত
ওয়াশিংটন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নাসিরনগরসহ সারা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, মন্দির ভাংচুর, দখল ও পশু সম্পদমন্ত্রী ছায়েদুল হকের আশালীন মন্তব্যের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-তে হাউজ হোয়াইট হাউজের সামনের (ল্যাফায়েট পার্কে) বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। গত ১১ ডিসেম্বর (নিউইয়র্ক সময়) দুপুরে প্রচন্ড শীত ও বৈরী আবহাওয়াকে উপেক্ষা করে উত্তর আমেরিকার নিউইয়র্ক, নিউজার্সী, কানেকটিকাট, পেনসেলভিনিয়া, মেরীল্যান্ড, ওয়াশিংটন ও ভার্জিনিয়া রাজ্যের বিপুল সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ এই বিক্ষোভ সমাবেশে অংশগ্রহণ করে।
নাসিরনগরসহ সারা বাংলাদেশব্যাপী মন্দির ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বসতবাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন ধরনের হামলা এবং বর্তমান সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর কুরুচিপূর্ণ আপত্তিকর বক্তব্যের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে সারা বিশ্বের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে প্রবাসী নাগরিকরা প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেছেন। প্রতিটি সভাতেই বর্বরোচিত জঘন্য মানবতাবিরোধী হামলার তীব্র নিন্দা ও ঘৃণা প্রকাশ করা হয়। চন্ড শৈত্য প্রবাহের মধ্যেও বিপুল সংখ্যক প্রবাসী নারী- পুরুষ- শিশুরা বিভিন্ন রকমের ব্যানার, ফেস্টুন, প¬্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেয়। সম্মিলিত পূজাা পুনর্মিলনীর আহ্বানে সমাবেশটি মূলধারার মানুষদেরকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি রাজ্যের ডজন খানেক নেতা ও তিনশর মত নেতা-কর্মী। আমন্ত্রিত সকলের উদ্দেশ্যে স্বাগত বক্তব্য রাখেন হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর জে কানাসারা, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উৎসব ব্যানার্জি, ইন্ডিয়া কজ- এর ফাউন্ডার প্রেসিডেন্ট রমেশ গট্টী, হরেকৃষ্ণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি রমেশ জয়পাল, জাস্টিজ ফর হিন্দুজ’র সভাপতি ভিনসেন্ট ব্রুনো, নিউজার্সি কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ড. অরুনা পাল, মেরীল্যান্ড হিন্দু কম্যুনিটি নেতা সত্য বোস, নীলাচল ডি.সি’র সভাপতি প্রাণেশ হালদার, ভাজির্নিয়া হিন্দু কম্যুনটি নেতা দেবপ্রিয় দত্ত, কানেকটিকাট হিন্দু কম্যুনিটি নেতা বিশ্বজিত চৌধুরী, নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের বাসিন্দা মিনু সরকার, জ্যাকসন হাইটসের বাসিন্দা চম্পা সরকার, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি শ্যামল কর, সামু রুদ্র, হিন্দু অ্যাক্টিভিস্ট রবীন্দ্র ঘোষ, বাংলাদেশ পূজা সমিতির সভাপতি অমিত ঘোষ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোশিয়েসনের সভাপতি বিষু গোপ, সম্মিলিত পূজা পুনর্মিলনীর যুগ্ম আহবায়ক ভজন সরকার, সম্মিলিত পূজা পুনর্মিলনীর আহবায়ক নিমর্ল পাল, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃস্টান ঐক্য পরিষদের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, মানবধিকার নেতা শিতাংশু গুহ।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু-বৌদ্ধ- খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নবেন্দু বিকাশ দত্ত। বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা এবং সংখ্যালঘুসহ উপজাতি ও নৃতাত্ত্বিক সম্প্রদায়ের উপর শোষক শ্রেণীর নিমর্ম অত্যাচারের প্রতিবাদে স্মারকলিপি পাঠ করেন মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্টের মুখপাত্র কম্যুনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শুভ রায়।
সমাবেশের আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ কর্মসূচি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মাইনোরিটি রাইটস মুভমেন্টের নেতা ও সম্মিলিত পূজা পুনর্মিলনী পরিষদের মুখপাত্র, কমিনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শুভ রায়।
সমাবেশে বিশিষ্ট মানবিধিকার নেতা শিতাংশু গুহ বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন একটি দৈনন্দিন ঘটনা। আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হিন্দুরা অপেক্ষাকৃত কম নির্যাতিত হতো, এখন সব আমলই সমান। গত সাত বছরে সংখ্যালঘুর ওপর অত্যাচার যেকোন আমলের থেকে খুব একটা কম নয়। বিদায়ী বছরে এমন একটি দিনও হয়ত পাওয়া যাবে না যে দিনকোন না মিডিয়ায় দেশের কোথাও না কোথাও হিন্দু মন্দির বা মূর্তি ভাঙচুর, হিন্দুর জমি দখল, নাবালিকা ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিতকরণ বা দেশত্যাগের হুমকি সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়নি।
সমাবেশে প্রতিবাদী বক্তারা আরো বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী এবং পূর্ববর্তী বিভিন্ন সময়ে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর বেশি হামলা হয়েছে। ২০১২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের রামুসহ কয়েকটি এলাকায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে আক্রমণ চালিয়ে কয়েক শ’ স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়। সরকার সেসব বাড়িঘর ও বৌদ্ধ বিহারের কিছু নির্মাণ করে দিলেও আক্রমণকারী কাউকে শাস্তি দিতে পারেনি। সেবার আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিলো বৌদ্ধ সম্প্রদায়, এবার হিন্দু সম্প্রদায়। কিন্তু এসবের সঠিক বিচার না হওয়ায় এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে এক সপ্তাহের মধ্যে কয়েক দফা হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এজন্য প্রশাসনের উদাসীনতা এবং স্থানীয় এমপি মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হকের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।
অধ্যাপক নবেন্দু বিকাশ দত্ত বলেন, মন্ত্রী ছায়েদুল হক সংখ্যালঘুদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অথচ এই দেশ অসাম্প্রদায়িক দেশ, স্বাধীনতা যুদ্ধে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংখ্যালঘুরা শহীদ হয়েছেন। সব বিছু হারিয়ে নি:স্ব হয়েছে। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সব ধর্মের মানুষ বাংলাদেশে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বসবাস করার ঐতিহ্য ছিলো। কিন্তু কিছু ধর্মান্ধ-মৌলবাদীর মিথ্যা অভিযোগের কারণে বার বার সংখ্যালঘুরদের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সরকার ক্ষমতায় থাকতে একজন মন্ত্রী হিন্দুদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য কীভাবে করে? এতে জাতি বিস্মিত। তিনি সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন বন্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।