নিউইয়র্ক ০৮:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

লন্ডনের ব্রিকলেইন ছাড়ছেন বাঙালীরা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অগাস্ট ২০১৫
  • / ৬৮৬ বার পঠিত

লন্ডন: বাড়ি ও দোকান ভাড়া অধিক মাত্রায় বৃদ্ধির কারণে ব্রিটেন টাওয়ার হ্যামলেটের বাঙলা টাউন-খ্যাত ব্রিকলেইন বাঙালীদের হাতছাড়া হতে চলেছে। ষাটের দশক থেকে বাঙালীদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকা সেই ব্রিকলেইন এখন ইউরোপীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত। বাঙালীরা ব্রিকলেইন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন আর সেখানে বসবাস শুরু করেছেন ইউরোপের ধনী দেশগুলোর লোকজন।
ব্রিকলেইন বাঙলা টাউনকে একসময় কারি ক্যাপিটাল হিসেবে আখ্যা দেয়া হতো। এ খ্যাতি শুধু ব্রিটেনজুড়েই ছিল না, সমগ্র ইউরোপে কারি ক্যাপিটাল হিসেবে ব্রিকলেইনের সুনাম ছিল। ইংল্যান্ড ভ্রমণে আসা বিদেশীরা দলে দলে ব্রিকলেইন বেড়াতে আসতেন। দল বেঁধে তারা বাংলাদেশী তথা ভারতীয় খাবারের স্বাদ নিতে রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় করতেন। এতে বাংলাদেশী খাবারের সুনামও ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রমবর্ধমান জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি মেগাসিটি লন্ডনের পাশের ব্রিকলেইনবাসীর ওপরও চেপে বসে। এখানে অধিকাংশ বাংলাদেশীর বসবাস। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যও বাংলাদেশীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ব্রিকলেইনে ১০ বছর আগেও বাংলাদেশীদের অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট ছিল। ছিল বাংলাদেশীদের মালিকানায় ট্রেভল এজেন্সি, শাড়ি কাপড়ের দোকান, জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে এসব রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ হাতবদলে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বর্ধিত ব্যয়ে অনেক বাঙালীই আর রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে না পারায় অন্যদের কাছে তা বিক্রি করে দেন।
ফলে একসময়ে বাংলাদেশী খাবার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত রেস্টুরেন্টগুলো অন্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন কিনে নিয়ে তাদের দেশীয় খাবার দোকান খুলে বসেছেন। এখন তাই সেখানে ইতালিয়ান, ফ্রেন্স ইত্যাদি খাবারের দোকান খোলা হয়েছে। ব্রিকলেইনে গেলে বাংলাদেশী খাবারের ঘ্রাণে প্রাণ জুড়াত, সেখানে এখন পিৎজা বা গ্রিল করা পোড়া খাবারের ঘ্রাণ আসে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা একে একে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী বাঙলা টাউন ইউরোপিয়ান ধনীদের দখলে চলে যাচ্ছে। দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় যেসব বাসাবাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল তা বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত সস্তা এলাকায় আরও বড়সড় বাসা নিয়ে তারা চলে যাচ্ছেন।
লন্ডন বারা অব রেডব্রিজ ব্রিকলেইন এলাকায় কার পার্কিং সুবিধার কড়াকড়ি থাকায় এখানে খেতে আসা লোকজনকে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হয়। বারা অব বাকিং অ্যান্ড ড্যাগেন হ্যাম, বারা অব নিউহ্যাম, এগেঙ কেন্ট এলাকায় বাংলাদেশীরা চলে যাচ্ছেন। এসব এলাকার বাসাবাড়িগুলো টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসাবাড়ি থেকে অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে বড়, সামনে-পেছনে গাড়ি পার্কিং এবং বাগানও রয়েছে। তাই বাংলাদেশীরা পাশের এসব এলাকার দিকে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টগুলো ব্রিকলেইন থেকে সরে যাওয়ায় বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ব্রিটেনের সর্বত্র রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন কর্মচারীর সংকট। দক্ষ সেফ পাওয়াও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বৈধ কাগজপত্রধারীরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অবৈধ কাগজপত্রধারীরা সস্তায় রেস্টুরেন্টের চাকরিতে স্থান করে নিচ্ছেন। মালিকপক্ষও দুপয়সা কমে কর্মচারী পেয়ে কিছুটা সাশ্রয় করে থাকে। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশের রেড রেস্টুরেন্ট থেকে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধরে নিয়ে যাওয়া মালিকপক্ষকে মোটা অংকের জরিমানা করায় এ পথে এখন আর কেউ এগোতে চান না। ফলে কর্মচারী সংকট লেগেই থাকে। ব্রিকলেইন, হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় বেশ কয়েকবার ইমিগ্রেশন পুলিশের রেডের ফলে সেখানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কাউকে চাকরিতে রাখা হয় না। আর যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তারা সব সময় আতংকের মধ্যে কাজ করছেন।
তাছাড়া ব্রিকলেইন বাঙলা টাউনে রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে বাঙালিরা কাস্টমারদের টেনে-হিঁচড়ে তাদের দোকানে নিয়ে যেতেন। অধিক রেস্টুরেন্ট থাকায় শ্বেতাঙ্গ কাস্টমারদের কে কার আগে ডাকবেন, কে নিজেদের দোকানের সস্তা অফারটির কথা জানাবেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগে থাকত। কাস্টমাররা এ দেখে ঘৃণা জানাতেন, প্রতিবাদ করতেন। একসময় আতংকে এলাকায় তারা খাবার খেতে আসা ছেড়ে দেন। এতে রেস্টুরেন্টগুলো আস্তে আস্তে কাস্টমার সংকটে পড়ে। বাধ্য হয়ে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল গ্রাহক টানাটানি বন্ধ করতে বিধিমালা প্রণয়ন করে। (দৈনিক যুগান্তর)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

লন্ডনের ব্রিকলেইন ছাড়ছেন বাঙালীরা

প্রকাশের সময় : ১০:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ অগাস্ট ২০১৫

লন্ডন: বাড়ি ও দোকান ভাড়া অধিক মাত্রায় বৃদ্ধির কারণে ব্রিটেন টাওয়ার হ্যামলেটের বাঙলা টাউন-খ্যাত ব্রিকলেইন বাঙালীদের হাতছাড়া হতে চলেছে। ষাটের দশক থেকে বাঙালীদের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে থাকা সেই ব্রিকলেইন এখন ইউরোপীয় ধনাঢ্য ব্যক্তিদের পদচারণায় মুখরিত। বাঙালীরা ব্রিকলেইন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন আর সেখানে বসবাস শুরু করেছেন ইউরোপের ধনী দেশগুলোর লোকজন।
ব্রিকলেইন বাঙলা টাউনকে একসময় কারি ক্যাপিটাল হিসেবে আখ্যা দেয়া হতো। এ খ্যাতি শুধু ব্রিটেনজুড়েই ছিল না, সমগ্র ইউরোপে কারি ক্যাপিটাল হিসেবে ব্রিকলেইনের সুনাম ছিল। ইংল্যান্ড ভ্রমণে আসা বিদেশীরা দলে দলে ব্রিকলেইন বেড়াতে আসতেন। দল বেঁধে তারা বাংলাদেশী তথা ভারতীয় খাবারের স্বাদ নিতে রেস্টুরেন্টগুলোতে ভিড় করতেন। এতে বাংলাদেশী খাবারের সুনামও ছড়িয়ে পড়ে।
ক্রমবর্ধমান জীবনযাপনের ব্যয় বৃদ্ধি মেগাসিটি লন্ডনের পাশের ব্রিকলেইনবাসীর ওপরও চেপে বসে। এখানে অধিকাংশ বাংলাদেশীর বসবাস। এখানকার ব্যবসা বাণিজ্যও বাংলাদেশীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় ব্রিকলেইনে ১০ বছর আগেও বাংলাদেশীদের অর্ধশতাধিক রেস্টুরেন্ট ছিল। ছিল বাংলাদেশীদের মালিকানায় ট্রেভল এজেন্সি, শাড়ি কাপড়ের দোকান, জীবনযাত্রায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং সম্প্রতি ব্রিটেনের অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাবে এসব রেস্টুরেন্টের অধিকাংশ হাতবদলে অন্য জাতি-গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। বর্ধিত ব্যয়ে অনেক বাঙালীই আর রেস্টুরেন্ট পরিচালনা করতে না পারায় অন্যদের কাছে তা বিক্রি করে দেন।
ফলে একসময়ে বাংলাদেশী খাবার বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত রেস্টুরেন্টগুলো অন্য জাতি-গোষ্ঠীর লোকজন কিনে নিয়ে তাদের দেশীয় খাবার দোকান খুলে বসেছেন। এখন তাই সেখানে ইতালিয়ান, ফ্রেন্স ইত্যাদি খাবারের দোকান খোলা হয়েছে। ব্রিকলেইনে গেলে বাংলাদেশী খাবারের ঘ্রাণে প্রাণ জুড়াত, সেখানে এখন পিৎজা বা গ্রিল করা পোড়া খাবারের ঘ্রাণ আসে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা একে একে রেস্টুরেন্ট ছেড়ে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে ঐতিহ্যবাহী বাঙলা টাউন ইউরোপিয়ান ধনীদের দখলে চলে যাচ্ছে। দাম আকাশছোঁয়া হওয়ায় যেসব বাসাবাড়ি ব্যক্তি মালিকানাধীন ছিল তা বিক্রি করে অপেক্ষাকৃত সস্তা এলাকায় আরও বড়সড় বাসা নিয়ে তারা চলে যাচ্ছেন।
লন্ডন বারা অব রেডব্রিজ ব্রিকলেইন এলাকায় কার পার্কিং সুবিধার কড়াকড়ি থাকায় এখানে খেতে আসা লোকজনকে অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হয়। বারা অব বাকিং অ্যান্ড ড্যাগেন হ্যাম, বারা অব নিউহ্যাম, এগেঙ কেন্ট এলাকায় বাংলাদেশীরা চলে যাচ্ছেন। এসব এলাকার বাসাবাড়িগুলো টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসাবাড়ি থেকে অর্ধেক দামে পাওয়া যাচ্ছে। তুলনামূলকভাবে বড়, সামনে-পেছনে গাড়ি পার্কিং এবং বাগানও রয়েছে। তাই বাংলাদেশীরা পাশের এসব এলাকার দিকে চলে যাচ্ছেন। বাংলাদেশী রেস্টুরেন্টগুলো ব্রিকলেইন থেকে সরে যাওয়ায় বা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আরও কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। ব্রিটেনের সর্বত্র রেস্টুরেন্টগুলোতে এখন কর্মচারীর সংকট। দক্ষ সেফ পাওয়াও অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বৈধ কাগজপত্রধারীরা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। অবৈধ কাগজপত্রধারীরা সস্তায় রেস্টুরেন্টের চাকরিতে স্থান করে নিচ্ছেন। মালিকপক্ষও দুপয়সা কমে কর্মচারী পেয়ে কিছুটা সাশ্রয় করে থাকে। কিন্তু ইমিগ্রেশন পুলিশের রেড রেস্টুরেন্ট থেকে অবৈধ ইমিগ্রান্টদের ধরে নিয়ে যাওয়া মালিকপক্ষকে মোটা অংকের জরিমানা করায় এ পথে এখন আর কেউ এগোতে চান না। ফলে কর্মচারী সংকট লেগেই থাকে। ব্রিকলেইন, হোয়াইট চ্যাপেল এলাকায় বেশ কয়েকবার ইমিগ্রেশন পুলিশের রেডের ফলে সেখানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কাউকে চাকরিতে রাখা হয় না। আর যারা অবৈধভাবে অবস্থান করছেন তারা সব সময় আতংকের মধ্যে কাজ করছেন।
তাছাড়া ব্রিকলেইন বাঙলা টাউনে রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে বাঙালিরা কাস্টমারদের টেনে-হিঁচড়ে তাদের দোকানে নিয়ে যেতেন। অধিক রেস্টুরেন্ট থাকায় শ্বেতাঙ্গ কাস্টমারদের কে কার আগে ডাকবেন, কে নিজেদের দোকানের সস্তা অফারটির কথা জানাবেন তা নিয়ে প্রতিযোগিতা লেগে থাকত। কাস্টমাররা এ দেখে ঘৃণা জানাতেন, প্রতিবাদ করতেন। একসময় আতংকে এলাকায় তারা খাবার খেতে আসা ছেড়ে দেন। এতে রেস্টুরেন্টগুলো আস্তে আস্তে কাস্টমার সংকটে পড়ে। বাধ্য হয়ে টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল গ্রাহক টানাটানি বন্ধ করতে বিধিমালা প্রণয়ন করে। (দৈনিক যুগান্তর)