নিউইয়র্ক ১০:৪৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

গভর্ণরের প্রতিনিধিসহ স্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের কাছে ছয়টি বিল পাশের দাবী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০১৬
  • / ১০৬০ বার পঠিত

আলবেনী: বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসী গ্রুপ (বাগ)-এর উদ্যোগ ও আয়োজনে পঞ্চমবারের মতো নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে পালিত হলো ‘বাংলাদেশ লবি ডে’। ১ মার্চ মঙ্গলবার দিনব্যাপী আনুষ্ঠিতব্য লবি ডে-তে বাংলাদেশী ও মুসলিম কমিউনিটি তথা আমেরিকানদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান ছয়টি দাবী নিয়ে গভর্ণন এন্ড্রু কুমোর প্রতিনিধি ছাড়াও ষ্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বীগণদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে বসে দাবীগুলোর সমর্থনে আলোচনা এবং তা আইনে পরিণত করার জন্য জোর দাবী জানানো হয়। এসব বৈঠকে নিউইয়র্কের আইন প্রণেতারা এসব দাবীর যুক্তিকতা শুনে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
এবারের লবি ডে-তে বাগ’র দাবীগুলোর মধ্যে ছিলো: রিলিজিয়াস গার্ব, নিউইয়র্ক ষ্টেট ও সিটি ইউনিভার্সিটিতে ঈদ হলিডে, পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল ফুড সরবরাহ, ইনভার্নমেন্টাল জাস্টিস, নিউইয়র্ক ষ্টেট ড্রীম অ্যাক্ট ও মুসলিম আমেরিকান কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা। দাবীগুওলো বাস্তবায়নের জন্য বাগ’র নেতৃত্বে দেড় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল আলবেনীতে গিয়ে এসব দাবী-দাওয়া নিয়ে গভর্ণনের প্রতিনিধি ও হাউজ স্পীকার ছাড়াও ষ্টেট সিনেটর এবং অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেন। বেলা ১১টা থেকে অপরাহ্ন চারটা পর্যন্ত অন্তত পক্ষে ৮০ জন সিনেটর-অ্যাসেম্বীম্যান অথবা তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে বলে বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান। বাগ-এর প্রতিনিধি দল পৃথক পৃথক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ষ্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে উল্লেখিত দাবী-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন। এসব বৈঠকে মুসলিম নারী আর নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। খবর ইউএনএ’র।
Lobby day-2ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া ইউএনএ প্রতিনিধিকে আরো বলেন, উল্লেখিত ছয়টি দাবী বিষয়ে ছয়টি বিল নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলী হাউজে উত্থাপিত হয়েছে। এখন বিলগুলো পাসের জন্য আমাদের শক্ত লবি দরকার। সেই লক্ষ্যেই বাগ লবি ডে পালন করছে। তিনি বলেন, ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘রিলিজিয়াস গার্ব বিল-এস০৩২৬৩’-এর স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর জেমস সেন্ডার্স, কো স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর লিরয় কমরী। আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২০৪৪৯ এর স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘ঈদ হলিডে বিল ইন ইউনিভার্সিটি-এস০০৯১৪-এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর টনি আভেলা আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২৬৬৩এ’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘হালাল ফুড বিল ইন স্কুল-এস০০৩৫৩’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর রুবীন দিয়াজ।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘ইনভার্নমেন্টাল জাস্টিস অ্যাক্ট বিল-এস০১৩৮৫এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর পার্কার আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২০৪৪৯ এর স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান পিপলেস-স্টকস।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘নিউইয়র্ক ষ্টেট ড্রীম অ্যাক্ট বিল-এস০১২৫১এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর জোসে পেরেলটা আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০৪৮৩১’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ফ্রান্সিসকো পি ময়া।
এবং ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘মুসলিম আমেরিকান কাউন্সিল বিল-এস০২৬২০’র স্পন্সর হচ্ছের সিনেটর কেভিন পার্কার আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০৭১৩৯’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান লুইস আর সেপুলভেদা।
Lobby day-3বাগ’র অন্যতম বোর্ড ডিরেক্টর ও মূলধারার রাজনীতিক সাবুল উদ্দিন ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, ১ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ, জ্যাকসন হাইটস এবং ব্রুকলীন থেকে বাগ-এর প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি গাড়ী আলবেনীর উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন এবং সফল লবি ডে শেষে রাত ৯টার দিকে নিউইয়র্ক ফিরে আসে। তিনি বলেন এবারের লবি ডে-তে দেশ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। এদের মধ্যে স্কুল-কলেজে পড়–য়া নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য।
সকাল ১১টার দিকে বাগ-এর প্রতিনিধি দল আলবেনী পৌছার পর পরই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পূর্ব নির্ধারিত অ্যাপয়েন্ট মোতাবেক ষ্টেট সিনেটর এবং অ্যাসেম্বলীম্যান ও অ্যাসেম্বলীওম্যানদেও সাথে তাদেও দাবী-দাওয়া সংক্রান্ত বিল নিয়ে বৈঠকে মিলত হন। এসময় ব্যস্ততার কারণে যেসব সিনেটর ও অ্যাসেম্বীমান বা অ্যাসেম্বলীওম্যান প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে মিলিত হতে পারেননি, তাদের পক্ষে সিনেটর/অ্যাসেম্বলীম্যানদেও প্রতিনিধি বা অফিস স্টাফরা অংশ নেন। বৈঠকে দাবীগুলো পাশের যুক্তিকতা তুলে ধরার পর সিনেটর/অ্যাসেম্বীম্যানগণ দাবীগুলো পাসের জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় কোন কোন সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানগণ বিলগুলোর কো স্পন্সর হওয়ারও আশ্বাস দেন। তারা বিলগুলো পাসের যুক্তিকতা শুনে বলেন- এগুলো সিনেট ও অ্যাসেম্বলী হাউজে পাসের দাবী রাখে। তারা বাংলাদেশী কমিউনিটি তথা মুসলিম কমিউনিটির প্রশংসা করে বলেন নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভূমিকা সবার দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি আমেরিকা গড়ায় সুন্দর অবদান রাখছেন।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশী নারী প্রতিধিরা কর্মক্ষেত্রসহ চলাফেরায় তাদের সমস্যা এবং হিজাব পড়ার সুফল-কুফল তুলে ধরেন। এছাড়া নতুন প্রজন্মেও প্রতিনিধিরা স্কুল-কলেজে হালাল ফুড সরবরাহ করার সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরেন। তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হালাল ফুড সরবরাহ না করায় অনেক মুসলিম শিক্ষার্থীরা না খেয়ে থেকে শারীরিকভাবে দূর্বল পড়ছে। ফলে তারা লেখা-পড়ায় ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারে না।
বৈঠকগুলোতে বাগ-এর কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের দাবীগুলো শুধু বাংলাদেশী-আমেরিকান বা বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির জন্য নয়। আমাদের দাবী নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সমগ্র মুসলিম কমিউনিটি সহ সকল ধর্মের মানুষের জন্য।
বাগ-এর নেতৃত্বে লবি ডে’র প্রতিনিধিরা ক্যাপিটাল ভবনের ১০৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেয়ার পর সেখানে অ্যাসেম্বলী হাউজ স্পীকার ক্যারল হ্যাস্টি সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাগ-এর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশী-আমেরিকানদের স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তাকে লবি ডে’র দাবীগুলো তুলে ধরেন বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাগ-এর প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশী-আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি ডা. এম বিল্লাহ, বাগ-এর সেক্রেটারী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, অন্যতম পরিচালক সাবুল উদ্দিন প্রমুখ। বাগ-এর বোর্ড অব ট্রাষ্টির চেয়ারম্যান ও মজলিস আস শুরা নিউইয়র্ক-এর সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল আজিজ ভূইয়া, বাগ বোর্ড মেম্বার ড. জাহাঙ্গীর কবীর, শাহানা মাসুম, জুয়েল মোহাম্মদ ভূইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সিনেটর জোসে পেরেল্টা ও মার্টিন ডিলান, অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার, ডেভিট ওয়েপ্রীন, ফ্রান্সিসকো পি ময়া, কার্ল ই হিস্ট, পামেলা হ্যারিস, ফিল র‌্যামস প্রমুখ ১০৪ নম্বর কক্ষে এসে বাংলাদেশী প্রতিনিধিদলের সদস্যদেও সাথে সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসনময় অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার ও ডেভিট ওয়েপ্রীনের পক্ষ থেকে বাগ-কে প্রক্লেমোশন প্রদান করা হয়। বাগ কর্মকর্তাদেও হাতে প্রক্লেমোশনটি হস্তান্তর করেন অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার।
এদিকে ঐদিন বেলা সাড়ে বারোটার দিকে অ্যাসেম্বলী হাউজের অধিবেশনের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ করা হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে অংশ বিশেষ পাঠ করার পাশাপাশি তা ইংজেীতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এছাড়া বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হওয়া সিনেট হাউজের অধিবেশনও পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে অংশ বিশেষ পাঠ করার পাশাপাশি তা ইংজেীতে অনুবাদ করেন মওলানা ফায়েকুজ্জামান। উভয় অধিবেশনের শুরুতে বাগ-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা অধিবেশন কক্ষে এবং লবি ডে’র প্রতিনিধি বাংলাদেশীরা দর্শক গ্যালারীতে আসন নিয়ে অধিবেশন শুরুর পর্ব প্রত্যক্ষ করেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর উভয় অধিবেশনে বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একাধিক অ্যাসেম্বলীম্যান ও সিনেটরগণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বেলা তিনটার দিকে গভর্ণর এন্ড্রু কুমোর অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিদেতর সাথে গভর্ণর হাইজে বাগ প্রতিনিধি দল বৈঠকে মিলিত হয়ে লবি ডে’র দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। ডেপুটি গভর্ণর সহ গভর্ণও অফিসের ৮জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল চার দিকে ১০৪ নম্বর কক্ষে আয়োজিত লবি ডে’র সমাপনী অনুষ্ঠানে বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া, সেক্রেটারী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আব্দুল আজিজ, ড. জাহাঙ্গীর কবীর, মেহেরুন্নেসা জোবায়দা মেরী প্রমুখ। এসময় বাগ-এর পক্ষ থেকে তিনজনকে তাদের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশী তথা মুসলিম কমিউনিটির দাবী আদায়ে বাগ ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর আলবেনীতে ‘বাংলাদেশ লবি ডে’ পালন করে আসছে। আর এই লবি ডে ছাড়াও আলবেনীতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ডে’ পালন সহ মুসলিম কমিউনিটির দাবীর প্রেক্ষিতে ইতিধ্যেই নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ঈদ হলিডে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডি ব্লাজিও।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

গভর্ণরের প্রতিনিধিসহ স্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের কাছে ছয়টি বিল পাশের দাবী

প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০১৬

আলবেনী: বাংলাদেশী আমেরিকান এডভোকেসী গ্রুপ (বাগ)-এর উদ্যোগ ও আয়োজনে পঞ্চমবারের মতো নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীতে পালিত হলো ‘বাংলাদেশ লবি ডে’। ১ মার্চ মঙ্গলবার দিনব্যাপী আনুষ্ঠিতব্য লবি ডে-তে বাংলাদেশী ও মুসলিম কমিউনিটি তথা আমেরিকানদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট প্রধান প্রধান ছয়টি দাবী নিয়ে গভর্ণন এন্ড্রু কুমোর প্রতিনিধি ছাড়াও ষ্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বীগণদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠকে বসে দাবীগুলোর সমর্থনে আলোচনা এবং তা আইনে পরিণত করার জন্য জোর দাবী জানানো হয়। এসব বৈঠকে নিউইয়র্কের আইন প্রণেতারা এসব দাবীর যুক্তিকতা শুনে তা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
এবারের লবি ডে-তে বাগ’র দাবীগুলোর মধ্যে ছিলো: রিলিজিয়াস গার্ব, নিউইয়র্ক ষ্টেট ও সিটি ইউনিভার্সিটিতে ঈদ হলিডে, পাবলিক স্কুলগুলোতে হালাল ফুড সরবরাহ, ইনভার্নমেন্টাল জাস্টিস, নিউইয়র্ক ষ্টেট ড্রীম অ্যাক্ট ও মুসলিম আমেরিকান কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা। দাবীগুওলো বাস্তবায়নের জন্য বাগ’র নেতৃত্বে দেড় শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী প্রতিনিধি দল আলবেনীতে গিয়ে এসব দাবী-দাওয়া নিয়ে গভর্ণনের প্রতিনিধি ও হাউজ স্পীকার ছাড়াও ষ্টেট সিনেটর এবং অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেন। বেলা ১১টা থেকে অপরাহ্ন চারটা পর্যন্ত অন্তত পক্ষে ৮০ জন সিনেটর-অ্যাসেম্বীম্যান অথবা তাদের প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক করা হয়েছে বলে বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান। বাগ-এর প্রতিনিধি দল পৃথক পৃথক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ষ্টেট সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয়ে উল্লেখিত দাবী-দাওয়া নিয়ে কথা বলেন। এসব বৈঠকে মুসলিম নারী আর নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। খবর ইউএনএ’র।
Lobby day-2ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া ইউএনএ প্রতিনিধিকে আরো বলেন, উল্লেখিত ছয়টি দাবী বিষয়ে ছয়টি বিল নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেট ও অ্যাসেম্বলী হাউজে উত্থাপিত হয়েছে। এখন বিলগুলো পাসের জন্য আমাদের শক্ত লবি দরকার। সেই লক্ষ্যেই বাগ লবি ডে পালন করছে। তিনি বলেন, ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘রিলিজিয়াস গার্ব বিল-এস০৩২৬৩’-এর স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর জেমস সেন্ডার্স, কো স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর লিরয় কমরী। আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২০৪৪৯ এর স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘ঈদ হলিডে বিল ইন ইউনিভার্সিটি-এস০০৯১৪-এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর টনি আভেলা আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২৬৬৩এ’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘হালাল ফুড বিল ইন স্কুল-এস০০৩৫৩’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর রুবীন দিয়াজ।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘ইনভার্নমেন্টাল জাস্টিস অ্যাক্ট বিল-এস০১৩৮৫এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর পার্কার আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০২০৪৪৯ এর স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান পিপলেস-স্টকস।
ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘নিউইয়র্ক ষ্টেট ড্রীম অ্যাক্ট বিল-এস০১২৫১এ’র স্পন্সর হচ্ছেন সিনেটর জোসে পেরেলটা আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০৪৮৩১’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান ফ্রান্সিসকো পি ময়া।
এবং ষ্টেট সিনেটে উত্থাপিত ‘মুসলিম আমেরিকান কাউন্সিল বিল-এস০২৬২০’র স্পন্সর হচ্ছের সিনেটর কেভিন পার্কার আর অ্যাসেম্বলী বিল-এ০৭১৩৯’র স্পন্সর হচ্ছেন অ্যাসেম্বলীম্যান লুইস আর সেপুলভেদা।
Lobby day-3বাগ’র অন্যতম বোর্ড ডিরেক্টর ও মূলধারার রাজনীতিক সাবুল উদ্দিন ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, ১ মার্চ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টায় জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউ, জ্যাকসন হাইটস এবং ব্রুকলীন থেকে বাগ-এর প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি গাড়ী আলবেনীর উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করেন এবং সফল লবি ডে শেষে রাত ৯টার দিকে নিউইয়র্ক ফিরে আসে। তিনি বলেন এবারের লবি ডে-তে দেশ শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। এদের মধ্যে স্কুল-কলেজে পড়–য়া নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধির অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য।
সকাল ১১টার দিকে বাগ-এর প্রতিনিধি দল আলবেনী পৌছার পর পরই বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পূর্ব নির্ধারিত অ্যাপয়েন্ট মোতাবেক ষ্টেট সিনেটর এবং অ্যাসেম্বলীম্যান ও অ্যাসেম্বলীওম্যানদেও সাথে তাদেও দাবী-দাওয়া সংক্রান্ত বিল নিয়ে বৈঠকে মিলত হন। এসময় ব্যস্ততার কারণে যেসব সিনেটর ও অ্যাসেম্বীমান বা অ্যাসেম্বলীওম্যান প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে মিলিত হতে পারেননি, তাদের পক্ষে সিনেটর/অ্যাসেম্বলীম্যানদেও প্রতিনিধি বা অফিস স্টাফরা অংশ নেন। বৈঠকে দাবীগুলো পাশের যুক্তিকতা তুলে ধরার পর সিনেটর/অ্যাসেম্বীম্যানগণ দাবীগুলো পাসের জন্য আশ্বাস প্রদান করেন। এসময় কোন কোন সিনেটর ও অ্যাসেম্বলীম্যানগণ বিলগুলোর কো স্পন্সর হওয়ারও আশ্বাস দেন। তারা বিলগুলো পাসের যুক্তিকতা শুনে বলেন- এগুলো সিনেট ও অ্যাসেম্বলী হাউজে পাসের দাবী রাখে। তারা বাংলাদেশী কমিউনিটি তথা মুসলিম কমিউনিটির প্রশংসা করে বলেন নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে তাদের ভূমিকা সবার দৃষ্টি কেড়েছে। বাংলাদেশী-আমেরিকান কমিউনিটি আমেরিকা গড়ায় সুন্দর অবদান রাখছেন।
বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশী নারী প্রতিধিরা কর্মক্ষেত্রসহ চলাফেরায় তাদের সমস্যা এবং হিজাব পড়ার সুফল-কুফল তুলে ধরেন। এছাড়া নতুন প্রজন্মেও প্রতিনিধিরা স্কুল-কলেজে হালাল ফুড সরবরাহ করার সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরেন। তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হালাল ফুড সরবরাহ না করায় অনেক মুসলিম শিক্ষার্থীরা না খেয়ে থেকে শারীরিকভাবে দূর্বল পড়ছে। ফলে তারা লেখা-পড়ায় ভালোভাবে মনোনিবেশ করতে পারে না।
বৈঠকগুলোতে বাগ-এর কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের দাবীগুলো শুধু বাংলাদেশী-আমেরিকান বা বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির জন্য নয়। আমাদের দাবী নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সমগ্র মুসলিম কমিউনিটি সহ সকল ধর্মের মানুষের জন্য।
বাগ-এর নেতৃত্বে লবি ডে’র প্রতিনিধিরা ক্যাপিটাল ভবনের ১০৪ নম্বর কক্ষে অবস্থান নেয়ার পর সেখানে অ্যাসেম্বলী হাউজ স্পীকার ক্যারল হ্যাস্টি সশরীরে উপস্থিত হয়ে বাগ-এর কর্মকর্তা ও বাংলাদেশী-আমেরিকানদের স্বাগত জানান এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসময় তাকে লবি ডে’র দাবীগুলো তুলে ধরেন বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া। এসময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাগ-এর প্রধান উপদেষ্টা ও বাংলাদেশী-আমেরিকান ডেন্টাল এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকার সভাপতি ডা. এম বিল্লাহ, বাগ-এর সেক্রেটারী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, অন্যতম পরিচালক সাবুল উদ্দিন প্রমুখ। বাগ-এর বোর্ড অব ট্রাষ্টির চেয়ারম্যান ও মজলিস আস শুরা নিউইয়র্ক-এর সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল আজিজ ভূইয়া, বাগ বোর্ড মেম্বার ড. জাহাঙ্গীর কবীর, শাহানা মাসুম, জুয়েল মোহাম্মদ ভূইয়া, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ রহিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও সিনেটর জোসে পেরেল্টা ও মার্টিন ডিলান, অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার, ডেভিট ওয়েপ্রীন, ফ্রান্সিসকো পি ময়া, কার্ল ই হিস্ট, পামেলা হ্যারিস, ফিল র‌্যামস প্রমুখ ১০৪ নম্বর কক্ষে এসে বাংলাদেশী প্রতিনিধিদলের সদস্যদেও সাথে সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এসনময় অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার ও ডেভিট ওয়েপ্রীনের পক্ষ থেকে বাগ-কে প্রক্লেমোশন প্রদান করা হয়। বাগ কর্মকর্তাদেও হাতে প্রক্লেমোশনটি হস্তান্তর করেন অ্যাসেম্বলীম্যান মাইক মিলার।
এদিকে ঐদিন বেলা সাড়ে বারোটার দিকে অ্যাসেম্বলী হাউজের অধিবেশনের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে পাঠ করা হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে অংশ বিশেষ পাঠ করার পাশাপাশি তা ইংজেীতে অনুবাদ করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এছাড়া বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শুরু হওয়া সিনেট হাউজের অধিবেশনও পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এসময় পবিত্র কোরআন থেকে অংশ বিশেষ পাঠ করার পাশাপাশি তা ইংজেীতে অনুবাদ করেন মওলানা ফায়েকুজ্জামান। উভয় অধিবেশনের শুরুতে বাগ-এর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তারা অধিবেশন কক্ষে এবং লবি ডে’র প্রতিনিধি বাংলাদেশীরা দর্শক গ্যালারীতে আসন নিয়ে অধিবেশন শুরুর পর্ব প্রত্যক্ষ করেন। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের পর উভয় অধিবেশনে বাংলাদেশীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে একাধিক অ্যাসেম্বলীম্যান ও সিনেটরগণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া বেলা তিনটার দিকে গভর্ণর এন্ড্রু কুমোর অনুপস্থিতিতে তার প্রতিনিধিদেতর সাথে গভর্ণর হাইজে বাগ প্রতিনিধি দল বৈঠকে মিলিত হয়ে লবি ডে’র দাবী দাওয়া তুলে ধরেন। ডেপুটি গভর্ণর সহ গভর্ণও অফিসের ৮জন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বিকেল চার দিকে ১০৪ নম্বর কক্ষে আয়োজিত লবি ডে’র সমাপনী অনুষ্ঠানে বাগ-এর চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কামাল ভূইয়া, সেক্রেটারী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ছাড়াও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আব্দুল আজিজ, ড. জাহাঙ্গীর কবীর, মেহেরুন্নেসা জোবায়দা মেরী প্রমুখ। এসময় বাগ-এর পক্ষ থেকে তিনজনকে তাদের কর্মকান্ডের স্বীকৃতি স্বরূপ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশী তথা মুসলিম কমিউনিটির দাবী আদায়ে বাগ ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর আলবেনীতে ‘বাংলাদেশ লবি ডে’ পালন করে আসছে। আর এই লবি ডে ছাড়াও আলবেনীতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে ‘বাংলাদেশ ডে’ পালন সহ মুসলিম কমিউনিটির দাবীর প্রেক্ষিতে ইতিধ্যেই নিউইয়র্ক সিটির পাবলিক স্কুলগুলোতে ঈদ হলিডে পালনের ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডি ব্লাজিও।