নিউইয়র্ক ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

শান্তিরক্ষা মিশনে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ৫ দেশের সাথে দুই বাংলাদেশী : ২০১৫ সালে অভিযুক্ত ৬৯

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৬
  • / ১০৮১ বার পঠিত

ঢাকা: মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শিশুদের যৌন নির্যাতনে জড়িত শান্তিরক্ষীদের জাতীয়তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ৫টি দেশের অভিযুক্ত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে রয়েছে দুই বাংলাদেশী। বলা হয়েছে, সম্ভবত অর্থের বিনিময়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল তারা। বাংলাদেশী দুজন শান্তিরক্ষীসহ অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে। বাকি আটজন গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মরক্কো, নাইজার ও সেনেগালের শান্তিরক্ষী। জাতিসংঘের দুই সিনিয়র কর্মকর্তা ২৯ জানুয়ারী শুক্রবার দেশগুলোর নাম প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তরফে প্রথম এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলো।
নিউইয়র্কে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশের সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন জাতিসংঘের ফিল্ড সাপোর্ট বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্থনি ব্যানবুরি। তিনি জানান, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষী বাহিনীর হাতে যৌন হয়রানির অভিযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯টি। ২০১৪তে এ সংখ্যা ছিল ৫১। এসব অভিযোগের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ছাড়াও ইউরোপিয়ান সেনাদের হাতেও ১০-১৬ বছর বয়সী শিশু নির্যাতনের অভিযোগের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
অ্যান্থনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের অভিযোগ যখন সামনে আসে তখন যেসব মানুষ জাতিসংঘের জন্য, শান্তি-নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন- তারা কতটা ক্ষুব্ধ আর অপমানিত বোধ করেন সেটা অনুমান করাটা দুরূহ। বিশেষ করে এসব অভিযোগ যদি শিশুদের নিয়ে হয়। এটা বোধগম্য হওয়া অত্যন্ত কঠিন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে অ্যান্থনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে, তাদের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিহত করতে জাতিসংঘ সম্ভ্যাব্য সকল কিছু করছে।’ বাংলাদেশের দুই শান্তিরক্ষীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করার পর তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তে কাজ করছেন বাংলাদেশের একজন তদন্ত কর্মকর্তা। অ্যান্থনি আরও ঘোষণা দেন যে, নতুন একটি ওয়েবসাইটে অচিরেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের একটি রিপোর্ট আসবে। এতে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ উল্লেখ করা হবে। আগামী মাসে এটা প্রকাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এতে যৌন নির্যাতনের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয়তা, প্রতিটি অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ, তদন্তের অগ্রগতি এবং গৃহীত কোনো শাস্তির পদক্ষেপ প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্যাতনের অভিযোগের সময় অনুযায়ী ভুক্তভোগী প্রত্যেকেই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। উল্লিখিত ৫টি দেশের মোট ১০ জন এসব অপরাধ ঘটিয়েছে। আর, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং নাইজার সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোয় জাতিসংঘ নিজেদের তদন্ত শুরু করেছে কেননা দেশ দুটি তদন্ত পরিচালনায় জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এদিকে, এসব নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ অত্যন্ত মারাত্মক। জরুরিভিত্তিতে এগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বেশিরভাগ ঘটেছে ২০১৪ সালে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এসব অভিযোগ সামনে আসে। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘের একটি যৌথ দল সম্প্রতি কয়েকটি মেয়ের সাক্ষাৎকার নেয়। বিদেশী সেনাদের হাতে হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
জেইদের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, চারজন মেয়ে বলেছে, তাদের নির্যাতনকারী ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন অপারেশন (ইইউএফওআর/সিএআর) এর হয়ে কাজ করা কন্টিনজেন্ট এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দুজন মেয়ে বলেছে, ইইউএফওআর সেনারা তাদের ধর্ষণ করেছে। অপর দুই মেয়ে বলেছে, অন্যান্য ইইউএফওআর সেনাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের অর্থ দেয়া হয়েছে।
যৌন নির্যাতনে জড়িত কিছু সেনাদের জাতীয়তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, তিনজন মেয়ে বলেছে, তাদের ধারণা নির্যাতনকারীরা ছিল জর্জিয়ান ইইউএফওআর কন্টিনজেন্টের সদস্য। যে সময়ে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তখন তাদের বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৬’র মধ্যে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীরা অপর একটি মেয়ে ও ছেলের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালে ফরাসী সাঙ্গারিস সেনাদের হাতে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে ৭ ও ৯। মেয়েটি বলেছে, এক বোতল বানি ও কুকিজের বিনিময়ে তার কাছ থেকে অন্যায় সুযোগ নেয়া হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত নয়- এমন সেনাদের হাতে নির্যাতনের ৬টি ঘটনার প্রত্যেকটি ঘটেছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙগুইয়ের নিকটে বাস্তচ্যুত মানুষদের জন্য স্থাপিত এমপোকো ক্যাম্পে। হাই কমিশনার জেইদ গত সপ্তাহে এসব ঘটনা ইউরোপীয়, জর্জিয়ান ও ফরাসী কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেন। দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ হাইকমিশনের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত জবাব দিয়ে জানায়, যে তারা ইতিমধ্যে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বা সংশ্লিষ্ট বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলো হস্তান্তর করেছে। জেইদ রাদ আল হুসেইন আরও বলেন, এসব অনেক বেশি অপরাধ শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে। দোষীরা পূর্ণ দন্ডমুক্তি উপভোগ করেছে। এটা শুধু আরও সহিংসতায় অনুপ্রাণিত করে। এসব অপরাধ তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ভুক্তভোগীদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর। আরও নতুন নতুন ঘটনা সামনে আসছে। এতে আরও নতুন নতুন দেশের কন্টিনজেন্টের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হচ্ছে। এটাও স্পষ্ট যে, বিদেশী সকল সেনাবাহিনীকে, সেটা জাতিসংঘের হোক বা অন্য কোনো সংস্থার হোক- এমন নির্যাতন প্রতিহত করতে অবশ্যই কঠোরতর এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ চালু করতে হবে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্য কাজ করছে ১৫টির মতো শান্তিরক্ষী মিশনে। এসব মিশনে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের কাজে বাংলাদেশের অনেক সুনাম হচ্ছিল। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সেনাদের কাজের সুনাম করা হচ্ছিল জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মহল থেকে। আর এ সুনামের কারণেই মূলত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এখন শিশুদের যৌন নির্যাতনের মতো অভিযোগ, সেটাও যদি আবার জাতিসংঘের কাছ থেকে আসে সেটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।(দৈনিক মানবজমিন)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

শান্তিরক্ষা মিশনে যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত ৫ দেশের সাথে দুই বাংলাদেশী : ২০১৫ সালে অভিযুক্ত ৬৯

প্রকাশের সময় : ১১:২২:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০১৬

ঢাকা: মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শিশুদের যৌন নির্যাতনে জড়িত শান্তিরক্ষীদের জাতীয়তা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ৫টি দেশের অভিযুক্ত শান্তিরক্ষীদের মধ্যে রয়েছে দুই বাংলাদেশী। বলা হয়েছে, সম্ভবত অর্থের বিনিময়ে অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করেছিল তারা। বাংলাদেশী দুজন শান্তিরক্ষীসহ অভিযোগ আনা হয়েছে মোট ১০ জনের বিরুদ্ধে। বাকি আটজন গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মরক্কো, নাইজার ও সেনেগালের শান্তিরক্ষী। জাতিসংঘের দুই সিনিয়র কর্মকর্তা ২৯ জানুয়ারী শুক্রবার দেশগুলোর নাম প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের তরফে প্রথম এই ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হলো।
নিউইয়র্কে আয়োজিত এই সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশের সময় আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন জাতিসংঘের ফিল্ড সাপোর্ট বিষয়ক সহকারী মহাসচিব অ্যান্থনি ব্যানবুরি। তিনি জানান, ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে শান্তিরক্ষী বাহিনীর হাতে যৌন হয়রানির অভিযোগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯টি। ২০১৪তে এ সংখ্যা ছিল ৫১। এসব অভিযোগের এক-তৃতীয়াংশই এসেছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র থেকে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ছাড়াও ইউরোপিয়ান সেনাদের হাতেও ১০-১৬ বছর বয়সী শিশু নির্যাতনের অভিযোগের কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।
অ্যান্থনি বলেন, ‘আমি মনে করি এ ধরনের অভিযোগ যখন সামনে আসে তখন যেসব মানুষ জাতিসংঘের জন্য, শান্তি-নিরাপত্তার জন্য কাজ করেন- তারা কতটা ক্ষুব্ধ আর অপমানিত বোধ করেন সেটা অনুমান করাটা দুরূহ। বিশেষ করে এসব অভিযোগ যদি শিশুদের নিয়ে হয়। এটা বোধগম্য হওয়া অত্যন্ত কঠিন।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে অ্যান্থনি বলেন, ‘ভুক্তভোগীদের সহায়তা করতে, তাদের জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিহত করতে জাতিসংঘ সম্ভ্যাব্য সকল কিছু করছে।’ বাংলাদেশের দুই শান্তিরক্ষীর প্রসঙ্গ উল্লেখ করার পর তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্তে কাজ করছেন বাংলাদেশের একজন তদন্ত কর্মকর্তা। অ্যান্থনি আরও ঘোষণা দেন যে, নতুন একটি ওয়েবসাইটে অচিরেই জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের একটি রিপোর্ট আসবে। এতে যৌন হয়রানি ও নির্যাতন প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থাসমূহ উল্লেখ করা হবে। আগামী মাসে এটা প্রকাশ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো এতে যৌন নির্যাতনের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয়তা, প্রতিটি অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ, তদন্তের অগ্রগতি এবং গৃহীত কোনো শাস্তির পদক্ষেপ প্রকাশ করা হবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, নির্যাতনের অভিযোগের সময় অনুযায়ী ভুক্তভোগী প্রত্যেকেই ছিল অপ্রাপ্তবয়স্ক। উল্লিখিত ৫টি দেশের মোট ১০ জন এসব অপরাধ ঘটিয়েছে। আর, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং নাইজার সংশ্লিষ্ট ঘটনাগুলোয় জাতিসংঘ নিজেদের তদন্ত শুরু করেছে কেননা দেশ দুটি তদন্ত পরিচালনায় জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
এদিকে, এসব নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ অত্যন্ত মারাত্মক। জরুরিভিত্তিতে এগুলোর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।
যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলোর বেশিরভাগ ঘটেছে ২০১৪ সালে। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এসব অভিযোগ সামনে আসে। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে জাতিসংঘের একটি যৌথ দল সম্প্রতি কয়েকটি মেয়ের সাক্ষাৎকার নেয়। বিদেশী সেনাদের হাতে হয়রানি বা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
জেইদের কার্যালয়ের (ওএইচসিএইচআর) তথ্য অনুযায়ী, চারজন মেয়ে বলেছে, তাদের নির্যাতনকারী ছিল ইউরোপীয় ইউনিয়ন অপারেশন (ইইউএফওআর/সিএআর) এর হয়ে কাজ করা কন্টিনজেন্ট এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দুজন মেয়ে বলেছে, ইইউএফওআর সেনারা তাদের ধর্ষণ করেছে। অপর দুই মেয়ে বলেছে, অন্যান্য ইইউএফওআর সেনাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাদের অর্থ দেয়া হয়েছে।
যৌন নির্যাতনে জড়িত কিছু সেনাদের জাতীয়তা এখনও স্পষ্ট না হলেও, তিনজন মেয়ে বলেছে, তাদের ধারণা নির্যাতনকারীরা ছিল জর্জিয়ান ইইউএফওআর কন্টিনজেন্টের সদস্য। যে সময়ে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তখন তাদের বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৬’র মধ্যে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীরা অপর একটি মেয়ে ও ছেলের সাক্ষাৎকার নিয়ে জানতে পেরেছে, ২০১৪ সালে ফরাসী সাঙ্গারিস সেনাদের হাতে তারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তাদের বয়স ছিল যথাক্রমে ৭ ও ৯। মেয়েটি বলেছে, এক বোতল বানি ও কুকিজের বিনিময়ে তার কাছ থেকে অন্যায় সুযোগ নেয়া হয়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত নয়- এমন সেনাদের হাতে নির্যাতনের ৬টি ঘটনার প্রত্যেকটি ঘটেছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী বাঙগুইয়ের নিকটে বাস্তচ্যুত মানুষদের জন্য স্থাপিত এমপোকো ক্যাম্পে। হাই কমিশনার জেইদ গত সপ্তাহে এসব ঘটনা ইউরোপীয়, জর্জিয়ান ও ফরাসী কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করেন। দেশগুলোর কর্তৃপক্ষ হাইকমিশনের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত জবাব দিয়ে জানায়, যে তারা ইতিমধ্যে উত্থাপিত অভিযোগগুলো নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে বা সংশ্লিষ্ট বিচারিক কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়গুলো হস্তান্তর করেছে। জেইদ রাদ আল হুসেইন আরও বলেন, এসব অনেক বেশি অপরাধ শাস্তির বাইরে থেকে যাচ্ছে। দোষীরা পূর্ণ দন্ডমুক্তি উপভোগ করেছে। এটা শুধু আরও সহিংসতায় অনুপ্রাণিত করে। এসব অপরাধ তদন্ত করে বিচার নিশ্চিত করা এবং ভুক্তভোগীদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর। আরও নতুন নতুন ঘটনা সামনে আসছে। এতে আরও নতুন নতুন দেশের কন্টিনজেন্টের সংশ্লিষ্টতা প্রকাশ হচ্ছে। এটাও স্পষ্ট যে, বিদেশী সকল সেনাবাহিনীকে, সেটা জাতিসংঘের হোক বা অন্য কোনো সংস্থার হোক- এমন নির্যাতন প্রতিহত করতে অবশ্যই কঠোরতর এবং আরও কার্যকর পদক্ষেপ চালু করতে হবে।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ এ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে আট হাজার সদস্য কাজ করছে ১৫টির মতো শান্তিরক্ষী মিশনে। এসব মিশনে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে তাদের কাজে বাংলাদেশের অনেক সুনাম হচ্ছিল। শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশী সেনাদের কাজের সুনাম করা হচ্ছিল জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মহল থেকে। আর এ সুনামের কারণেই মূলত বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। এখন শিশুদের যৌন নির্যাতনের মতো অভিযোগ, সেটাও যদি আবার জাতিসংঘের কাছ থেকে আসে সেটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য বিব্রতকর বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।(দৈনিক মানবজমিন)