শ্রীলংকার সাথে বাংলাদেশের আত্মঘাতী হার
- প্রকাশের সময় : ০৮:৩৪:০০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
- / ১০৮৭ বার পঠিত
ঢাকা: যাচ্ছেতাই ফিল্ডিং ও বাজে বোলিংয়ের পর কান্ডজ্ঞানহীন ব্যাটিং। প্রত্যাশার বেলুন চুপসে দেয়ার জন্য আর কি চাই! তিন বিভাগেই সীমাহীন ব্যর্থতায় বাংলাদেশের এমসিজি অভিষেকটা হল দুঃস্বপ্নের মতোই। যে ম্যাচটিকে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার সিঁড়ি বানাতে চেয়েছিলেন মাশরাফিরা, সেটাকেই জ্বলে ওঠার মঞ্চ বানিয়ে আত্মবিশ্বাসের রসদ বাড়িয়ে নিল শ্রীলংকা। সেজন্য বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত লংকানদের। ১৬ কোটি মানুষকে হতাশ করে ভ্রাতৃপ্রতিম দেশটির প্রতি যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন এনামুল হকরা, তার কোনো তুলনাই হয় না! স্কোরকার্ড বলবে কাল মেলবোর্নে নিদারুণ একপেশে ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশ হেরেছে ৯২ রানে। অপরাজিত সেঞ্চুরী করেছেন তিলকারতেœ দিলশান (১৬১*) ও কুমার সাঙ্গাকারা (১০৫*)। কিন্তু সত্যিটা হল- দিলশান, সাঙ্গাকারারা ছিলেন উপলক্ষমাত্র, বাংলাদেশ হেরেছে বাংলাদেশের কাছেই। কখনও ক্যাচ মিস, কখনও স্টাম্পিং মিস, কখনওবা ব্যাটসম্যানদের আত্মঘাতী শট- এমন ভুলেভরা ম্যাচে জয় আশা করাটাই অন্যায়।
ধারে-ভারে, অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে থাকা শ্রীলংকাকে বলেকয়ে হারানোর মতো দিন এখনও আসেনি বাংলাদেশের। হারটা তাই অপ্রত্যাশিত নয়। হারের ধরনটাই আসলে পীড়াদায়ক। এক উইকেটে শ্রীলংকা যখন ৩৩২ রানের পাহাড় গড়ে ফেলে, ম্যাচটা আসলে তখনই শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ব্যাট হাতে আরেকটু কি ভালো করা যেত না? ৩৩৩ তাড়া করতে নেমে শুরুতেই খেই হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ যখন ২৪০ রানে অলআউট হয়, তখনও তিন ওভারের খেলা বাকি। ব্যর্থতার ভিড়ে সাব্বির রহমানের ফিফটিই (৫৩) একমাত্র প্রাপ্তি। এই হারে আত্মবিশ্বাস কিছুটা টলে গেলেও শেষ আটের সমীকরণটা বদলায়নি। স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাকি তিন ম্যাচের দুটিতে জিততে হবে। সেটা কঠিন হলেও অসম্ভব কিছু নয়। তবে মাশরাফিদের নিশ্চিত করতে হবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে পরের ম্যাচে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি যেন না হয়। এই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেই কাল এক উইকেটের অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়েছে আফগানিস্তন। বিশ্বকাপে যা তাদের প্রথম জয়।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলংকাকে শুরুতেই কাঁপিয়ে দেয়ার দারুণ এক সুযোগ এসেছিল। প্রথম ওভারেই অধিনায়ক মাশরাফির বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন লাহিরু থিরিমান্নে। কিন্তু সহজ ক্যাচটি অবিশ্বাস্যভাবে মুঠোবন্দি করতে ব্যর্থ হন এনামুল হক। সেই শুরু। এরপর ইনিংসজুড়েই চলেছে ক্যাচ মিস আর বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া। দু’বার জীবন পাওয়া থিরিমান্নে (৫২) যখন ফিফটি পূর্ণ করে রুবেল হোসেনের বলে তাসকিনের ক্যাচে পরিণত হন, ততক্ষণে উদ্বোধনী জুটিতে উঠে গেছে ১২২ রান। এরপর ক্যারিয়ারের ৪০০তম ওয়ানডে খেলতে নামা সাঙ্গাকারাকে নিয়ে রান উৎসবে মাতেন দিলশান। দু’বার জীবন পাওয়া সাঙ্গাকারা ক্যারিয়ারের ২২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরী পূর্ণ করেন মাত্র ৭৩ বলে। শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। সাঙ্গাকারার সঙ্গে ২১০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়া দিলশান অপরাজিত থাকেন ১৬১ রানে। তিনিও একবার জীবন পেয়েছেন।
বাজে ফিল্ডিং ও বোলিংয়ের শাস্তি হিসেবে কাঁধে ৩৩২ রানের বোঝা নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই পথ হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই লাসিথ মালিঙ্গার নিরীহ এক বলে বোল্ড তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় উইকেটে ৪০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন এনামুল হক (২৯) ও সৌম্য সরকার (২৫)। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। মুমিনুল হক (১) ও মাহমুদউল্লাহ (২৮) বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ। ১০০ রান তুলতেই নেই পাঁচ উইকেট। এরপর মূলত হারের ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যে খেলেছে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব ও মুশফিকের ৬৪ রানের জুটিটা বেশ জমে উঠেছিল। ব্যক্তিগত ৪৬ রানে সাকিবকে লংঅনে মালিঙ্গার ক্যাচ বানিয়ে এই জুটি ভাঙেন ম্যাচসেরা দিলশান। এরপর ৩৬ রান করে মুশফিক ফিরে আসার পর একাই লড়েছেন সাব্বির। মালিঙ্গার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন সাব্বির। ৩৫ রানে তিন উইকেট নিয়ে শ্রীলংকার সবচেয়ে সফল বোলার মালিঙ্গা। (দৈনিক যুগান্তর)