বাংলাদেশ-ভারত : ওয়ানডে সিরিজ জিতেও শেষ ম্যাচে হারল টাইগাররা : হল না বাংলাধোলাই
- প্রকাশের সময় : ০৬:৫৭:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুন ২০১৫
- / ৮৩০ বার পঠিত
ঢাকা: শুরুর মতো শেষটাও হলে পূর্ণতা পেত সিরিজ। কিন্তু চিত্রনাট্যকারের ছিল অন্য চিন্তা। তিনি ভাবলেন, সবকিছু যদি অংকের মতো মিলে যায় তাহলে কোনো আকর্ষণই থাকে না। সে জন্যই বোধহয় শেষটা বরাদ্দ করলেন তিনি ধোনিদের জন্য। পরপর দুটি ম্যাচ জিতে ওয়ানডে সিরিজ নিজেদের করে নেয়ার পর শেষ ম্যাচে হারল বাংলাদেশ। আগেই ভারতের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। বুধবার (২৪ জুন) মিরপুরে তৃতীয় ও শেষ ওডিআইতে মাশরাফিরা নির্ভার হয়ে খেলতে নেমেছিলেন, নাকি আত্মতুষ্টিতে ভুগেছেন কে জানে। একাদশে পরিবর্তন এনে এবং টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে ম্যাচ শুরু করার পরই টাইগারপ্রেমীদের মন উসখুস করছিল। শেষে সিরিজের যবনিকাপাত হল বাংলাদেশের ৭৭ রানের হারে। দেশের মাটিতে টানা দশটি ওডিআই জেতার পর হারল বাংলাদেশ। আর ভারত নিয়মরক্ষার শেষ ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াল।
৩১৮ তাড়া করতে নামা বাংলাদেশ ১৮ বল বাকি থাকতে থামল ২৪০ রানে। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৩ রান আসে সাব্বির রহমানের ব্যাট থেকে। ৪০ রান করেন ওপেনার সৌম্য সরকার। লিটন দাস ৩৪ ও নাসির হোসেন ৩২ রান করেন। মুশফিকুর ও সাকিবের অবদান যথাক্রমে ২৪ ও ২০ রান। রায়না তিনটি এবং দুটি করে উইকেট নেন কুলকার্নি ও অশ্বিন।
বাংলাদেশ প্রথম ওডিআইতে ৭৯ রান ও দ্বিতীয়টিতে ৬ উইকেটে জিতেছিল। ২-১-এ ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পাশাপাশি তিন ম্যাচে মুস্তাফিজুরের ১৩ উইকেট বাংলাদেশের আরেকটি বড় প্রাপ্তি। এর আগে সিরিজের একমাত্র বৃষ্টিবিঘিœত টেস্ট ম্যাচ ড্র হয়।
টস জিতে বাংলাদেশ ফিল্ডিং নেয়ায় শুরুতেই সমালোচনার ঝড়। ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত ছিল বৃষ্টির কথা মাথায় রেখে। ভারত অধিনায়ক এমএস ধোনি যখন বললেন, ‘আমি টস জিতলেও একই সিদ্ধান্ত নিতাম।’ তখন হয়তো কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন সমর্থকরা। ক্যারিয়ারের শুরুতে একের পর এক চমক দেখিয়ে চলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। কাল তৃতীয় ওয়ানডেতে দুই উইকেট নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট শিকারের নতুন রেকর্ড গড়লেন মুস্তাফিজ। তাসকিন আহমেদের ইনজুরির কারণে চার পেসারের ফর্মুলা থেকে বেরিয়ে স্পিনার আরাফাত সানিকে খেলিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামলেও বাংলাদেশের পরিবর্তন ছিল এ একটাই। সারা দিন আকাশে মেঘের আনাগোনায় বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। শিখর ধাওয়ান (৭৫) ও এমএস ধোনির (৬৯) হাফ সেঞ্চুরিতে সিরিজে প্রথমবার তিনশ’ (৩১৭) পার করে ভারত।
ধাওয়ান তখন হুমকি হয়ে উঠেছেন, সুবাস পাচ্ছেন সেঞ্চুরির। কিন্তু এমন সময়ে পাখির ডানায় ভর করে উড়ন্ত মানব হয়ে ওঠেন নাসির! হাওয়ায় ভেসে ধাওয়ানের যে ক্যাচটি নিলেন, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। বিস্ময়কর। নাসির স্বস্তি ফেরান স্বাগতিক শিবিরে। ৭৫ রানে ফিরে যান ধাওয়ান। রানের গতি কমে যায় ভারতের। ১৫৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় সফরকারীরা। ধাওয়ান অবশ্য ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ৪০ রানেই। সেই নাসিরই তখন দুর্ভাগা বোলার। ধাওয়ানের ব্যাটের কানায় চুমু খেয়ে বলটা লাফিয়ে ওঠে। কিন্তু মুশফিকের জায়গায় কিপিং করা লিটন কুমার ক্যাচটা লুফে নিতে পারেননি।
ধাওয়ানের আগের গল্পটা মুস্তাফিজ ও রোহিত শর্মার দ্বৈরথের। মুস্তাফিজের চতুর্থ ওভারে চতুর্থ বলে একটা বাউন্ডারিও মেরে দিলেন। এক বল পরেই মুস্তাফিজের কাটারে আরেকবার কুপোকাত রোহিত। টানা তিন ম্যাচে মুস্তাফিজের বলে আউট হলেন ভারতীয় ওপেনার। ধাওয়ানের সঙ্গে বিরাট কোহলি নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় থাকলেও সাকিবের বলে ফিরেছেন ২৫ রানে। ধোনি আগের ম্যাচের মতো কাল চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন। রাইডুকে নিয়ে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ ৯৩ রানের জুটিও গড়ে তোলেন। তবে ৪৪ রানে আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হন রাইডু। মাশরাফি বল রাইডুর প্যাডে লেগে উইকেট কিপারের পেছনে গেলে ক্যাচ আউট দিয়ে দেন এনামুল হক। এরই মধ্যে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া ধোনি আরও বিপজ্জনক হওয়ার আগে মাশরাফির একটি স্কোয়ারের শিকার হন (৬৯)। বাউন্ডারি লাইনে ধোনির দুর্দান্ত ক্যাচটি ধরেন মুস্তাফিজুর। ভারতের হয়ে শেষটা করেছেন সুরেশ রায়না। দ্রুত রান তুলে তিনি তিনশ’ পার করেন। ২১ বলে ৩৮ রানে রায়নাকে আউট করে তিন ম্যাচের সিরিজে ১৩ উইকেট পূর্ণ করেন মুস্তাফিজ। ৫৭ রানে দুই উইকেট নিয়ে কালও সেরা বোলার মুস্তাফিজ। সাকিব কিপটে বল করলেও আরাফাত সানি সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগাতে পারেননি। ছয় ওভারে দেন ৪২ রান। শেষ পর্যন্ত ছয় উইকেটে ৩১৭ রানে থামে ভারত। ৭৬ রানে তিন উইকেট নেন মাশরাফি। ভারত ৩১৭/৬ (৫০ ওভার), বাংলাদেশ ২৪০/১০ (৪৭ ওভার)।-দৈনিক যুগান্তর