নিউইয়র্ক ০৮:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ’২০১৫ : দর্শক খরা কাটাতে হবে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫
  • / ৯১৫ বার পঠিত

সফল সমাপ্তি ঘটলো বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকা আয়োজিত ‘নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ ও টুর্নামেন্ট-২০১৫’র। এই লীগ বা টুর্নামেন্টের ছোট-খাটো অঘটন ভুলে গেলে বলতে হবে ভালোভাবেই সমাপ্তি ঘটলো। আলহামদুলিল্লাহ। চলতি বছরের ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্টের কোন টাইটেল স্পন্সর ছিলো না।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে সপ্তাহের প্রতি রোববার লীগের খেলা শেষে ফাইনালে আসলো লীগ/টুর্নামেন্ট। মাঝে পবিত্র রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে প্রায় দেড় মাস লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলাগুলো বন্ধ ছিলো। বিগত ৩ মে রোববারের পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার আবহাওয়ায় মাঠে গড়ায় এবারের লীগ/টুর্নামেন্ট। সিটির এলমহার্টস্থ নিউটাউন অ্যাথলেটিক মাঠে রং বে রং-এর একগুচ্ছ বেলুন উড়ানোর পর ফুটবলে শট মেরে লীগের উদ্বোধন করেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। এবারের লীগে নিউইয়র্কসহ ট্রাইষ্টেটের ১০টি দল অংশ নেয়। দলগুলো হচ্ছে-সোনার বাংলা, ওজোনপার্ক এফসি, ব্রঙ্কস ওয়ায়ির, ব্রঙ্কস ইউনাইটেড, যুব সংঘ, ব্রাদার্স এলায়েন্স, ব্রঙ্কস স্টার, আইসাব এফসি, জ্যাকসন হাইটস বিসি ও সন্দ্বীপ এফসি। এবারের লীগে জ্যাকসন হাইটস বিসি ছিলো নবাগত দল।
চলতি বছরের ফুটবল লীগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি যথাক্রমে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাকডাইস-এর সভাপতি মিসবা আবদীন এবং স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্ব পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত খান বুলবুল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও স্পোর্টস কাউন্সিলের কার্যকরী পরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন খান মিঠুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পবিত্র রমজানের কারণে চলতি ফুটবল লীগ শুরুর পর মাঝখানে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আবার শুরু হয় ফুটবল লীগ। যার সফল সমাপ্তি ঘটছে ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে।
২.
নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের যাত্রা শুরু সাপ্তাহিক ঠিকানা’র বিশেষ স্পন্সরের মাধ্যমে। তখন এই লীগের নাম ছিলো ‘ঠিকানা ফুটবল লীগ’। পরবর্তীতে সোনালী এক্সচেঞ্জ ইন্্ক এই লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসলে লীগের নামকরণ করা হয় ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’ চলাকালীন সময়ে এই লীগের আয়োজন ছিলো জমজমাট। অবশ্য এই জমজমাট আয়োজনের কৃতিত্ব সেই সময়ের স্পোর্টস কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনজুর আহমেদ ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা সহ আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান সেলিম ও মিসবা আবদীন, কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদ কাজী এলিন প্রমুখের নাম না বললেই নয়। পরবর্তীতে এই লীগের টাইটেল স্পন্সর হয়ে আসে এটিএন বাংলা। লীগের নামকরণ করা হয় ‘এটিএন বাংলা-সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’। এরপর হয় ‘এটিএন বাংলা ফুটবল লীগ’। আমার জানা মতে ফুটবল লীগ অব্যাহত রাখার সঙ্কটময় মূহুর্তে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মিসবা আবদীন। এই সময়ে ফুটবল লীগ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্কট দেখা দেয়ায় এগিয়ে আসেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ‘আবদীন ব্রাদার্স’-এর শামসুল আবদীন। লীগের নামকরণ করা হয় ‘আবদীন ব্রাদার্স ফুটবল লীগ’। গত বছর (২০১৪) আবদীন ব্রাদার্স-এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট এন্ড ইয়্যুথ সার্ভিসেস (বাকডাইস)। ফলে লীগের নামকরণ করা হয় ‘বাকডাইস-আবদীন ব্রাদার্স ফুটবল লীগ’। কিন্তু পরবর্তীতে আর এইসব টাইটেল স্পন্সর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্টের কোন টাইটেল স্পন্সর ছিলো না। নিউইয়র্ক ফুটবল লীগকে মাঠে রাখতে, লীগ/টুর্নামেন্টকে বাঁচিয়ে রাখতে সকল পৃষ্ঠপোষক আর স্পোর্টস কাউন্সিলের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
৩.
ফুটবল খেলার কথা হলেই মনে পরে টাঙ্গাইলের জমজমাট ‘ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর কথা। আরো মনে পরে ঢাকা ফুটবল লীগের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আবাহনী-মোহামেডানের কথা, ব্রাদার্স আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দল সহ ওয়ারী, রহমতগঞ্জ প্রভৃতি দলের কথা। সেসব এখন ইতিহাস। ৮০’র দশকের কথা। তখন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন মরহুম খানে আলম খান। নিউইয়র্কের খান টিউটেরিয়ল-এর প্রতিষ্ঠাতা, একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরহুম) ড. মনসুর খানের বাবা খানে আলম খানের অনেক ভূমিকা ছিলো এই টুর্নামেন্ট আয়োজন ও পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতায়। এই মূহুর্তে দিন-তারিখ-বছর মনে না পড়লেও মনে পড়ছে এক টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার কথা। তখন দেশব্যাপী জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাজত্ব। আর ঢাকা ফুটবল লীগের রাজত্ব আবাহানী ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের। ঢাকা ষ্টেডিয়ামে রাজত্ব সালাউদ্দিন, বাদল রায়, আসলাম, কায়সার হামিদ, সাব্বির, জনি, মুন্না, এমিলি, কানন প্রমুখ দেশ সেরা কৃতি ফুটবলারদের। এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব টাঙ্গাইলের আলোচিত আরেক রাজনীতিক মেজর জেনারেল (অব:) মাহমুদুল হাসান। ঐ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান। গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা বলে কথা। টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারী কানায় কানায় পূর্ণ। উৎসবমুখর চারিদিক। দৃশ্যত: ফুটবলের বিশ্বকাপের আসর বইছে টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়ামে। ফাইনাল খেলার প্রতিদ্বন্দ্বি দু’দলেই ঢাকা ষ্টেডিয়ামের একাধিক কৃতি খেলোয়ার। টান টান উত্তেজনায় শুরু হয়েছে খেলা। আক্রমন পাল্টা আক্রমন। দুই দলের দুরন্ত খেলোয়ারদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে কিছুক্ষণ পর পর রেফারীর কড়া হুইসেল। হাজার হাজার দর্শকের করতালি আর ‘গোল গোল গো………ও……ল’-এর চিৎকারে প্রকম্পিত টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়াম। শেষ পর্যন্ত ভালভাবেই শেষ হলো ফাইনাল খেলা। শুরু হলো পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। কিন্তু কি কারণে কি ঘটলো তা বুঝা গেলো না। হঠাৎই দর্শকদের মাঝ থেকে একটি ‘জুতা’র ঢিল এসে পড়লো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে। আবার শুরু হলো হৈ চৈ, গোন্ডগোল। বন্ধ হয়ে গেলো পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন আর টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলোর পরিস্থিতি। কেউ কারো কথা শুনছে না। শেষ পর্যন্ত যা হবার তাই হলো। শুরু হলো দৌড়া-দৌড়ি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হলো টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়াম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছুঁড়লো কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেট। এরই মধ্যে কড়া নিরাপত্তায় পিছন পথে ষ্টেডিয়াম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা সাংবাদিকরা আটকা পড়লাম ক্রীড়া সংস্থার অফিসে। চারিদিকে পুলিশ আর টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজালো ধোয়া। হাজার হাজার দর্শকের এদিক ওদিক ছুটাছুটি। যে যার মতো করে ষ্টেডিয়াম ত্যাগ করছে। কেউ কেউ ষ্টেডিয়ামের উচু দেয়াল টপকে লাফিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্তু হলে ক্রীড়া সংস্থার অফিসের পিছনের দরজা দিয়ে আমরা বাইরে বেরুতেই দেখলাম ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন পার্ক বাজারের এক পাশে রক্ষিত পাঠখড়ি, জ্বালানী কাঠ আর খড়ের স্তুপে কে বা কারা আগুণ ধরিয়ে দিয়েছে। সেই আগুণের লেলিহান ষ্টেডিয়ামের সুউচ্চ দেয়াল টপকিয়ে উর্দ্বাকাশে উঠছে। কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!
৪.
এবারের ফুটবল মাঠে এসে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করেছেন বাংলাশের কৃতি ক্রিকেটার আশরাফুল ইসলাম ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মনিজা রহমান। অপরদিকে গত বছরের মতো এবারের ফুটবল লীগ ও টুর্নামেন্টে খেলার মাঠে প্রিয় মিজান ভাইকে খুউব মিস করেছি। সাপ্তাহিক ঠিকানা’র বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান (মিজান ভাই)। প্রতিবছরই ঠিকানা’র জন্য তিনি নিয়মিত মাঠে আসতেন এবং খেলার খবর কভার করতেন। কিন্তু এবার তাকে মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়াও খেলার মাঠে মিস করেছি সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বর্ণমালার প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান আর ঠিকানা’র জাভেদ খসরু ভাইকে। এরা সবাই একসময় ক্রীড়াঙ্গনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। তবে জাভেদ ভাই চলতি লীগে মাঝে-মধ্যে মাঠে এসেছেন।
নিউইয়র্কে ফুটবল লীগের আসর বসলেই আরেকজন মানুষকে আমি খু-উ-ব মিস করি। তিনি হলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক নতুন প্রবাসী’র সম্পাদক শিকদার হুমায়ুন কবীর ভাইকে। শিকদার ভাই দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে কয়েক বছর আগে স্থায়ীভাবে নিজ জেলা শহর নারায়নগঞ্জ ফিরে সেখানেই বসবাস করছেন। শিকদার ভাই মূলত: ছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিক। নিউইয়র্কে বাসকালে শিকদার ভাই নিয়মিত মাঠে আসতেন, কভার করতেন ফুটবল লীগ আর ক্রিকেট লীগের খবরাখবর। সাপ্তাহিক নতুন প্রবাসী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি সাপ্তাহিক হককথা’য় (অধুনালুপ্ত) যোগ দেন। হককথা অফিসে কাজের সময় তিনি স্ট্রোকের শিকার হন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জ ফিরে যান। আমরা শিকদার হুমায়ুন কবীরের দীর্ঘায়ু এবং সুন্দর জীবন কামনা করছি।
নিউইয়র্কের সম্পাদক-সাংবাদিকদের মধ্যে আরো দু’জনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রতিষ্ঠাতা ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি এম এম শাহীন আর অপরজন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সিইও, সাবেক সম্পাদক, দেশের কৃতি অ্যাথলেটস সাঈদ-উর রব। এই প্রবাসের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদান অসামান্য। তাদের উদ্যোগেই সাপ্তাহিক ঠিকানা’র পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ঠিকানা ফুটবল লীগ’ নামে বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিলের লীগ তথা ‘নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ’ মাঠে গড়ায়।
আর সঙ্গত কারণেই আরো একজনের নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। তিনি হলেন (মরহুম) ফাজলে রশীদ। ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ইংরেজী দৈনিক নিউনেশন-এর সম্পাদক ফাজলে রশীদ ছিলেন ক্রীড়ামোদী মানুষ। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। এই প্রবাসে এসেও দেশ-বিদেশের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতেই সুযোগ পেলেই দেশের খেলাধুলা নিয়ে কথা বলতেন, আলোচনা করতেন। বয়স আর শারীরিক অসুস্থ্যতা সত্ত্বের কয়েক বছর আগে ফুটবল লীগের ফাইনাল খেলায় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে সাথে সাথেই তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং মাঠে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে খেলা উপভোগ ও পুরষ্কার বিতরণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষির্কী। আমরা তাঁর বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করছি।
৫.
একটি কথা না বললেই নয়। যে কথাটি আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি। নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ অব্যাহত রাখতে, আরো আকর্ষনীয় ও প্রতিযোগিতামূলক করতে চাই আরো পৃষ্ঠপোষকতা। লীগ পরিচালনাসহ লীগে অংশগ্রহণকারী দলগুলো যতবেশী কমিউনিটির পৃষ্ঠপোষকতা পাবে নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ আরো শক্তিশালী, আরো জমজমাট, আরো জনপ্রিয় হবে। সেই সাথে কাটাতে হবে মাঠের দর্শক খরা। বলতে দ্বিধা নেই যে, এবারের লীগ/টুর্নামেন্টে ছিলো চরম দর্শক খরা। বিগত লীগ/টুর্নামেন্টে মাঠে এতো দর্শকের অভাব দেখা যায়নি। এই খরা কাটাতে হবে। যেভাবেই হোক ফুটবল দর্শকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। আগের এমন সময় গেছে ফুটবল লীগের খেলায় টিকিট কেটে দর্শক মাঠে এসেছেন। শত-সহ¯্র দর্শর্কের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠতো টুর্নামেন্টগুলো। এজন্য স্পোর্টস কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে। কেননা, অলস সময় বা এদিক-ওদিক সময় না কাটিয়ে কমিউনিটির প্রবীণ-নবীনরা যদি মাঠে আসেন, খেলা দেখেন তাহলেই না স্বার্থকতা পাবে লীগ/টুর্নামেন্টের আয়োজন। পাশাপাশি উৎসাহিত হবেন লীগে অংশগ্রহণকারী দল ও খেলোয়ারবৃন্দ।
আমাদের প্রত্যাশা সবার অংশগ্রহণে নিউইয়র্কের ঘরে ঘরে পৌছেঁ যাক নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের আমেজ। অভিনন্দন রইল লীগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দল সহ সকল দলের সকল খেলোয়ার ও কর্মকর্তাদের প্রতি। অভিনন্দন লন্ডন, কানাডা থেকে আগত খেলোয়ারদেরকেও। কেননা, তাদের ছাড়া এই লীগ জমে উঠতো না, লীগ পরিচালনা সম্ভব হতো না। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকার সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি। বিশেষ করে উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আব্দুর রহিম বাদশা, আতাউর রহমান সেলিম, সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত খান বুলবুল, সহ সভাপতি আব্দুল হাসিম হাসনু ও আনোয়ার হোসাইন, কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদ কাজী এলিন সহ জহির উদ্দিন জুয়েল, জাকির হোসেন, আবু তাহির আসাদ প্রমুখ কর্মকর্তাদের যারা নিয়মিত মাঠে উপস্থিত থেকে সুষ্ঠুভাবে খেলা পরিচালনায় কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাদের আক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এবারের লীগ মাঠেই গড়াতো না। বিশেষ কৃতজ্ঞতা রইল নিউইয়র্কের সকল বাংলা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সকল মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক ও সাংবাদিক আর ডিজাইন স্টুডিও’র সাজ্জাদ হোসাইন ও রিজু মোহাম্মদ-এর প্রতি। যাদের প্রচারণায় নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ ও টুর্ণামেন্ট’২০১৫ উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের নজর কেড়েছে।
লেখক: সম্পাদক, ইউএনএ (নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা)
সম্পাদক, হককথা ডটকম
সাধারণ সম্পাদক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।
০৯ সেপ্টেম্বর’২০১৫

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ’২০১৫ : দর্শক খরা কাটাতে হবে

প্রকাশের সময় : ০৪:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সফল সমাপ্তি ঘটলো বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকা আয়োজিত ‘নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ ও টুর্নামেন্ট-২০১৫’র। এই লীগ বা টুর্নামেন্টের ছোট-খাটো অঘটন ভুলে গেলে বলতে হবে ভালোভাবেই সমাপ্তি ঘটলো। আলহামদুলিল্লাহ। চলতি বছরের ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্টের কোন টাইটেল স্পন্সর ছিলো না।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ মাস ধরে সপ্তাহের প্রতি রোববার লীগের খেলা শেষে ফাইনালে আসলো লীগ/টুর্নামেন্ট। মাঝে পবিত্র রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের কারণে প্রায় দেড় মাস লীগ ও টুর্নামেন্টের খেলাগুলো বন্ধ ছিলো। বিগত ৩ মে রোববারের পড়ন্ত বিকেলে চমৎকার আবহাওয়ায় মাঠে গড়ায় এবারের লীগ/টুর্নামেন্ট। সিটির এলমহার্টস্থ নিউটাউন অ্যাথলেটিক মাঠে রং বে রং-এর একগুচ্ছ বেলুন উড়ানোর পর ফুটবলে শট মেরে লীগের উদ্বোধন করেন জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল শামীম আহসান। এবারের লীগে নিউইয়র্কসহ ট্রাইষ্টেটের ১০টি দল অংশ নেয়। দলগুলো হচ্ছে-সোনার বাংলা, ওজোনপার্ক এফসি, ব্রঙ্কস ওয়ায়ির, ব্রঙ্কস ইউনাইটেড, যুব সংঘ, ব্রাদার্স এলায়েন্স, ব্রঙ্কস স্টার, আইসাব এফসি, জ্যাকসন হাইটস বিসি ও সন্দ্বীপ এফসি। এবারের লীগে জ্যাকসন হাইটস বিসি ছিলো নবাগত দল।
চলতি বছরের ফুটবল লীগের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বিশেষ অতিথি যথাক্রমে বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আজমল হোসেন কুনু, স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনজুর আহমেদ চৌধুরী ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা, কাউন্সিলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বাকডাইস-এর সভাপতি মিসবা আবদীন এবং স্পোর্টস কাউন্সিলের সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান প্রমুখ। উদ্বোধনী পর্ব পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত খান বুলবুল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমিউনিটির পরিচিত মুখ ও স্পোর্টস কাউন্সিলের কার্যকরী পরিষদ সদস্য জসিম উদ্দিন খান মিঠুর অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
পবিত্র রমজানের কারণে চলতি ফুটবল লীগ শুরুর পর মাঝখানে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর বন্ধ থাকে। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পর আবার শুরু হয় ফুটবল লীগ। যার সফল সমাপ্তি ঘটছে ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে।
২.
নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের যাত্রা শুরু সাপ্তাহিক ঠিকানা’র বিশেষ স্পন্সরের মাধ্যমে। তখন এই লীগের নাম ছিলো ‘ঠিকানা ফুটবল লীগ’। পরবর্তীতে সোনালী এক্সচেঞ্জ ইন্্ক এই লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসলে লীগের নামকরণ করা হয় ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ‘সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’ চলাকালীন সময়ে এই লীগের আয়োজন ছিলো জমজমাট। অবশ্য এই জমজমাট আয়োজনের কৃতিত্ব সেই সময়ের স্পোর্টস কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের, বিশেষ করে স্পোর্টস কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনজুর আহমেদ ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাদশা সহ আনোয়ার হোসেন, আতাউর রহমান সেলিম ও মিসবা আবদীন, কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদ কাজী এলিন প্রমুখের নাম না বললেই নয়। পরবর্তীতে এই লীগের টাইটেল স্পন্সর হয়ে আসে এটিএন বাংলা। লীগের নামকরণ করা হয় ‘এটিএন বাংলা-সোনালী এক্সচেঞ্জ ফুটবল লীগ’। এরপর হয় ‘এটিএন বাংলা ফুটবল লীগ’। আমার জানা মতে ফুটবল লীগ অব্যাহত রাখার সঙ্কটময় মূহুর্তে সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় অ্যাথলেট মহিউদ্দিন দেওয়ান এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট মিসবা আবদীন। এই সময়ে ফুটবল লীগ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতার সঙ্কট দেখা দেয়ায় এগিয়ে আসেন কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ‘আবদীন ব্রাদার্স’-এর শামসুল আবদীন। লীগের নামকরণ করা হয় ‘আবদীন ব্রাদার্স ফুটবল লীগ’। গত বছর (২০১৪) আবদীন ব্রাদার্স-এর সাথে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশী আমেরিকান কমিউনিটি ডেভলেপমেন্ট এন্ড ইয়্যুথ সার্ভিসেস (বাকডাইস)। ফলে লীগের নামকরণ করা হয় ‘বাকডাইস-আবদীন ব্রাদার্স ফুটবল লীগ’। কিন্তু পরবর্তীতে আর এইসব টাইটেল স্পন্সর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের ফুটবল লীগ/টুর্নামেন্টের কোন টাইটেল স্পন্সর ছিলো না। নিউইয়র্ক ফুটবল লীগকে মাঠে রাখতে, লীগ/টুর্নামেন্টকে বাঁচিয়ে রাখতে সকল পৃষ্ঠপোষক আর স্পোর্টস কাউন্সিলের সকল কর্মকর্তাদের প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
৩.
ফুটবল খেলার কথা হলেই মনে পরে টাঙ্গাইলের জমজমাট ‘ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট’-এর কথা। আরো মনে পরে ঢাকা ফুটবল লীগের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বি আবাহনী-মোহামেডানের কথা, ব্রাদার্স আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ দল সহ ওয়ারী, রহমতগঞ্জ প্রভৃতি দলের কথা। সেসব এখন ইতিহাস। ৮০’র দশকের কথা। তখন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার ছিলেন মরহুম খানে আলম খান। নিউইয়র্কের খান টিউটেরিয়ল-এর প্রতিষ্ঠাতা, একুশে পদকপ্রাপ্ত (মরহুম) ড. মনসুর খানের বাবা খানে আলম খানের অনেক ভূমিকা ছিলো এই টুর্নামেন্ট আয়োজন ও পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতায়। এই মূহুর্তে দিন-তারিখ-বছর মনে না পড়লেও মনে পড়ছে এক টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার কথা। তখন দেশব্যাপী জেনারেল হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের রাজত্ব। আর ঢাকা ফুটবল লীগের রাজত্ব আবাহানী ক্রীড়া চক্র, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন আর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের। ঢাকা ষ্টেডিয়ামে রাজত্ব সালাউদ্দিন, বাদল রায়, আসলাম, কায়সার হামিদ, সাব্বির, জনি, মুন্না, এমিলি, কানন প্রমুখ দেশ সেরা কৃতি ফুটবলারদের। এরশাদ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব টাঙ্গাইলের আলোচিত আরেক রাজনীতিক মেজর জেনারেল (অব:) মাহমুদুল হাসান। ঐ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলার প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান। গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা বলে কথা। টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়ামের দর্শক গ্যালারী কানায় কানায় পূর্ণ। উৎসবমুখর চারিদিক। দৃশ্যত: ফুটবলের বিশ্বকাপের আসর বইছে টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়ামে। ফাইনাল খেলার প্রতিদ্বন্দ্বি দু’দলেই ঢাকা ষ্টেডিয়ামের একাধিক কৃতি খেলোয়ার। টান টান উত্তেজনায় শুরু হয়েছে খেলা। আক্রমন পাল্টা আক্রমন। দুই দলের দুরন্ত খেলোয়ারদের নিয়ন্ত্রনে রাখতে কিছুক্ষণ পর পর রেফারীর কড়া হুইসেল। হাজার হাজার দর্শকের করতালি আর ‘গোল গোল গো………ও……ল’-এর চিৎকারে প্রকম্পিত টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়াম। শেষ পর্যন্ত ভালভাবেই শেষ হলো ফাইনাল খেলা। শুরু হলো পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। কিন্তু কি কারণে কি ঘটলো তা বুঝা গেলো না। হঠাৎই দর্শকদের মাঝ থেকে একটি ‘জুতা’র ঢিল এসে পড়লো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে। আবার শুরু হলো হৈ চৈ, গোন্ডগোল। বন্ধ হয়ে গেলো পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন আর টাঙ্গাইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তা ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে গেলোর পরিস্থিতি। কেউ কারো কথা শুনছে না। শেষ পর্যন্ত যা হবার তাই হলো। শুরু হলো দৌড়া-দৌড়ি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই রণক্ষেত্রে পরিণত হলো টাঙ্গাইল ষ্টেডিয়াম। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ছুঁড়লো কাঁদানে গ্যাস আর রাবার বুলেট। এরই মধ্যে কড়া নিরাপত্তায় পিছন পথে ষ্টেডিয়াম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেলেন মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমরা সাংবাদিকরা আটকা পড়লাম ক্রীড়া সংস্থার অফিসে। চারিদিকে পুলিশ আর টিয়ার গ্যাসের ঝাঁজালো ধোয়া। হাজার হাজার দর্শকের এদিক ওদিক ছুটাছুটি। যে যার মতো করে ষ্টেডিয়াম ত্যাগ করছে। কেউ কেউ ষ্টেডিয়ামের উচু দেয়াল টপকে লাফিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। পরিস্থিতি কিছুটা শান্তু হলে ক্রীড়া সংস্থার অফিসের পিছনের দরজা দিয়ে আমরা বাইরে বেরুতেই দেখলাম ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন পার্ক বাজারের এক পাশে রক্ষিত পাঠখড়ি, জ্বালানী কাঠ আর খড়ের স্তুপে কে বা কারা আগুণ ধরিয়ে দিয়েছে। সেই আগুণের লেলিহান ষ্টেডিয়ামের সুউচ্চ দেয়াল টপকিয়ে উর্দ্বাকাশে উঠছে। কি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি!
৪.
এবারের ফুটবল মাঠে এসে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করেছেন বাংলাশের কৃতি ক্রিকেটার আশরাফুল ইসলাম ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক মনিজা রহমান। অপরদিকে গত বছরের মতো এবারের ফুটবল লীগ ও টুর্নামেন্টে খেলার মাঠে প্রিয় মিজান ভাইকে খুউব মিস করেছি। সাপ্তাহিক ঠিকানা’র বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান (মিজান ভাই)। প্রতিবছরই ঠিকানা’র জন্য তিনি নিয়মিত মাঠে আসতেন এবং খেলার খবর কভার করতেন। কিন্তু এবার তাকে মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়াও খেলার মাঠে মিস করেছি সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, সাপ্তাহিক বর্ণমালার প্রধান সম্পাদক মাহফুজুর রহমান আর ঠিকানা’র জাভেদ খসরু ভাইকে। এরা সবাই একসময় ক্রীড়াঙ্গনের সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন। তবে জাভেদ ভাই চলতি লীগে মাঝে-মধ্যে মাঠে এসেছেন।
নিউইয়র্কে ফুটবল লীগের আসর বসলেই আরেকজন মানুষকে আমি খু-উ-ব মিস করি। তিনি হলেন নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক নতুন প্রবাসী’র সম্পাদক শিকদার হুমায়ুন কবীর ভাইকে। শিকদার ভাই দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে শারীরিক অসুস্থ্যতার কারণে কয়েক বছর আগে স্থায়ীভাবে নিজ জেলা শহর নারায়নগঞ্জ ফিরে সেখানেই বসবাস করছেন। শিকদার ভাই মূলত: ছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিক। নিউইয়র্কে বাসকালে শিকদার ভাই নিয়মিত মাঠে আসতেন, কভার করতেন ফুটবল লীগ আর ক্রিকেট লীগের খবরাখবর। সাপ্তাহিক নতুন প্রবাসী বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর তিনি সাপ্তাহিক হককথা’য় (অধুনালুপ্ত) যোগ দেন। হককথা অফিসে কাজের সময় তিনি স্ট্রোকের শিকার হন এবং পরবর্তীতে চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে নারায়ণগঞ্জ ফিরে যান। আমরা শিকদার হুমায়ুন কবীরের দীর্ঘায়ু এবং সুন্দর জীবন কামনা করছি।
নিউইয়র্কের সম্পাদক-সাংবাদিকদের মধ্যে আরো দু’জনের কথা না বললেই নয়। তাদের একজন সাপ্তাহিক ঠিকানার প্রতিষ্ঠাতা ও ঠিকানা গ্রুপের চেয়ারম্যান, সাবেক এমপি এম এম শাহীন আর অপরজন সাপ্তাহিক ঠিকানা’র সিইও, সাবেক সম্পাদক, দেশের কৃতি অ্যাথলেটস সাঈদ-উর রব। এই প্রবাসের ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদান অসামান্য। তাদের উদ্যোগেই সাপ্তাহিক ঠিকানা’র পৃষ্ঠপোষকতায় ‘ঠিকানা ফুটবল লীগ’ নামে বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিলের লীগ তথা ‘নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ’ মাঠে গড়ায়।
আর সঙ্গত কারণেই আরো একজনের নাম গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে চাই। তিনি হলেন (মরহুম) ফাজলে রশীদ। ঢাকাস্থ জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং ইংরেজী দৈনিক নিউনেশন-এর সম্পাদক ফাজলে রশীদ ছিলেন ক্রীড়ামোদী মানুষ। ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। এই প্রবাসে এসেও দেশ-বিদেশের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলতেই সুযোগ পেলেই দেশের খেলাধুলা নিয়ে কথা বলতেন, আলোচনা করতেন। বয়স আর শারীরিক অসুস্থ্যতা সত্ত্বের কয়েক বছর আগে ফুটবল লীগের ফাইনাল খেলায় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানালে সাথে সাথেই তিনি আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং মাঠে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসে খেলা উপভোগ ও পুরষ্কার বিতরণ করেন। ২৮ সেপ্টেম্বর তাঁর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষির্কী। আমরা তাঁর বিদেহী আতœার শান্তি কামনা করছি।
৫.
একটি কথা না বললেই নয়। যে কথাটি আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি। নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ অব্যাহত রাখতে, আরো আকর্ষনীয় ও প্রতিযোগিতামূলক করতে চাই আরো পৃষ্ঠপোষকতা। লীগ পরিচালনাসহ লীগে অংশগ্রহণকারী দলগুলো যতবেশী কমিউনিটির পৃষ্ঠপোষকতা পাবে নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ আরো শক্তিশালী, আরো জমজমাট, আরো জনপ্রিয় হবে। সেই সাথে কাটাতে হবে মাঠের দর্শক খরা। বলতে দ্বিধা নেই যে, এবারের লীগ/টুর্নামেন্টে ছিলো চরম দর্শক খরা। বিগত লীগ/টুর্নামেন্টে মাঠে এতো দর্শকের অভাব দেখা যায়নি। এই খরা কাটাতে হবে। যেভাবেই হোক ফুটবল দর্শকদের মাঠে ফিরিয়ে আনতে হবে। আগের এমন সময় গেছে ফুটবল লীগের খেলায় টিকিট কেটে দর্শক মাঠে এসেছেন। শত-সহ¯্র দর্শর্কের উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে উঠতো টুর্নামেন্টগুলো। এজন্য স্পোর্টস কাউন্সিলের কর্মকর্তাদের নতুন করে ভাবতে হবে। ভাবতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দকে। কেননা, অলস সময় বা এদিক-ওদিক সময় না কাটিয়ে কমিউনিটির প্রবীণ-নবীনরা যদি মাঠে আসেন, খেলা দেখেন তাহলেই না স্বার্থকতা পাবে লীগ/টুর্নামেন্টের আয়োজন। পাশাপাশি উৎসাহিত হবেন লীগে অংশগ্রহণকারী দল ও খেলোয়ারবৃন্দ।
আমাদের প্রত্যাশা সবার অংশগ্রহণে নিউইয়র্কের ঘরে ঘরে পৌছেঁ যাক নিউইয়র্ক ফুটবল লীগের আমেজ। অভিনন্দন রইল লীগের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্স আপ দল সহ সকল দলের সকল খেলোয়ার ও কর্মকর্তাদের প্রতি। অভিনন্দন লন্ডন, কানাডা থেকে আগত খেলোয়ারদেরকেও। কেননা, তাদের ছাড়া এই লীগ জমে উঠতো না, লীগ পরিচালনা সম্ভব হতো না। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইল বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকার সকল পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি। বিশেষ করে উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী, আব্দুর রহিম বাদশা, আতাউর রহমান সেলিম, সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসিত খান বুলবুল, সহ সভাপতি আব্দুল হাসিম হাসনু ও আনোয়ার হোসাইন, কোষাধ্যক্ষ ওয়াহিদ কাজী এলিন সহ জহির উদ্দিন জুয়েল, জাকির হোসেন, আবু তাহির আসাদ প্রমুখ কর্মকর্তাদের যারা নিয়মিত মাঠে উপস্থিত থেকে সুষ্ঠুভাবে খেলা পরিচালনায় কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাদের আক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এবারের লীগ মাঠেই গড়াতো না। বিশেষ কৃতজ্ঞতা রইল নিউইয়র্কের সকল বাংলা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সকল মিডিয়ার সম্পাদক/পরিচালক ও সাংবাদিক আর ডিজাইন স্টুডিও’র সাজ্জাদ হোসাইন ও রিজু মোহাম্মদ-এর প্রতি। যাদের প্রচারণায় নিউইয়র্ক ফুটবল লীগ ও টুর্ণামেন্ট’২০১৫ উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের নজর কেড়েছে।
লেখক: সম্পাদক, ইউএনএ (নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা)
সম্পাদক, হককথা ডটকম
সাধারণ সম্পাদক, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাব।
০৯ সেপ্টেম্বর’২০১৫