নিউইয়র্ক ০৭:৫১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

অস্ট্রেলিয়ায় টাইগার মিলনের এইসব দিনরাত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫
  • / ১১৮৯ বার পঠিত

সিডনি (অষ্ট্রেলিয়া) : টাইগার মিলন এখন অস্ট্রেলিয়ায়! বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের পিছু পিছু চলে এসেছেন টিম বাংলাদেশের আন্তরিক, অন্ধ এক সমর্থক। বাঘের সাজ পোশাকে গ্যালারিতে দৌড়ে লাল সবুজ জাতীয় পতাকা উচিয়ে তিনি সাপোর্ট দেন দলকে। প্রতিনিধিত্ব করতে দেশকে। কিন্তু দলতো জানেনা তাদের এই সমর্থকের জীবন চলে কী করে। জানা সম্ভবও না। বাংলাদেশের মাঠের-গ্যালারীর এখন এমন দু’জন টাইগার সমর্থক আছেন। একজন টাইগার মিলন, অপরজন টাইগার শোয়েব আলী। মিলন এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়েছেন। শোয়েব আলী পাননি। মিলনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে গেছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের। মিলনের দায়িত্ব তারা নিয়ে নিয়েছেন। তার আর এদেশে পুরো বিশ্বকাপ চলাকালীন থাকা-খাওয়া-চলাফেরার কোন সমস্যা হবেনা।
মিলনের পুরো নাম ফাহিমুল হক। টাইগার মিলন নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে তার আসল নাম। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে বাড়ি। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার করেছেন। মিলনরা চার ভাই এক বোন। বড়ভাই থাকেন আমেরিকায়। এর পরেরজন টুকটাক ব্যবসা করেন। ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে জেমস পার্লার নামের একটি সেলুনের ব্যবসা আছে মিলনের। তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসাটি দেখেন ছোট ভাই। ক্রিকেট দলের প্রতি ভালোবাসায় এভাবে ছূটে বেড়ানোকে পাগলামো মনে করে রাগে কথা বলেন না তার মেঝো ভাই! কিন্তু এ যে এক অদ্ভূত নেশা! কোন বাধাই যে মানেনা!
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর কারন এক সময় ক্রিকেট খেলতেন ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগের লীগে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দলে। দলে উইকেট কিপারের পাশাপাশি ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ভূমিকা ছিল তার! একবার অসুখে পড়ে খেলার পাঠ চুকে গেলেও বাংলাদেশ দলের একজন অন্ধ সমর্থকের ভূমিকাটি বাদ দেয়া যায়নি। বাংলাদেশ দলের পিছুপিছু দেশের বাইরে প্রথম যান শ্রীলংকায়। বাঘ সেজে লাল সবুজ পতাকা হাতে তার বাঘের হুংকারে টাইগার মিলন নামটি তার তখনই চালু হয়ে যায়।
এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলের খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া আসতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তার সিডনি আসার টিকেট কিনতে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা লেগেছে। মিলন বলেন অনেক দিনে মাসে মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমিয়েছেন এ টাকা! কতদিন যে ঢাকায় এখানে সেখানে যেতে পায়ে হেঁটে গেছেন! এভাবে বাঁচিয়েছেন রিকশা ভাড়ার টাকা! কিন্তু সিডনি এসেতো কাউকে চেনেন না, জানেন না! সিডনি এয়ারপোর্টে নেমে ট্রেনে করে আসেন সেন্ট্রাল স্টেশনে। এক বাংলাদেশী ভাইর সঙ্গে পরিচয় হলে তাকে সমাদর করে কোক খেতে দেন। তার ফোনে কথা বলেন পরিচিত এক ভাবীর সঙ্গে। সেই ভাবীই তাকে স্টেশনে এসে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান তার বাসায়। সেখানে পরিচয় হয় অস্ট্রেলিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি মইদুজ্জামান সুজন, সাবেক সাধারন সম্পাদক অপু সারোয়ার, যুবলীগ নেতা মোসলেউর রহমান খুশবু এদের সঙ্গে। এরপর থেকে তিনি তার এই খুশবু ভাইর বাসায় থাকছেন সিডনিতে। তারাই তাকে তাদের সঙ্গে ক্যানবেরা নিয়ে এসেছেন। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের খেলার সময় গ্যালারিতে ঢুকে হালুম হালুম শুরু করতেই তার প্রতি নজর পড়ে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার। এখানকার নানা মিডিয়ার ফটো এলবামে গেলে মিলবে টাইগার মিলনের ছবি!
ক্যানবেরা থেকে খুশবুদের সঙ্গেই মিলন আবার ফিরে আসেন সিডনি। এখান থেকে তার ব্রিসবেন যাবার ট্রেনের টিকেট খুশবুরাই তাকে কিনে দিয়েছেন। বিমানের টিকেট না পেয়ে ট্রেনের প্রথম শ্রেনীর টিকেট কেনা হয়েছে ২৮০ ডলারে! বিশাল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সিডনি থেকে ব্রিসবেন ট্রেনে যেতে তার চৌদ্দ ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে! এত কষ্ট, ধকল সামাল দিয়ে ব্রিসবেন গেলেন মিলন, কিন্তু বৃষ্টির কারনে খেলাটি হলোনা। কিন্তু সেখানেও তিনি নজরে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায়! গ্যালারিতে পতাকা দুলিয়ে তার হালুম হালুম গর্জন নৃত্যের ছবি স্থানীয় মিডিয়া ছাড়াও এজেন্সির কল্যাণে চলে গেছে সৌদি মিডিয়া পর্যন্ত। খেলা না হলেও ব্রিসবেনে তিনি ভালো আছেন। একদল প্রবাসী বাংলাদেশী তাকে পেয়ে তাদের বাসায় নিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে ঘুরছেন আর দেখছেন অপরুপ ছবির মতো সাজানো এক শহর ব্রিসবেন।
২২ ফেব্রুয়ারী রোববার ব্রিসবেন থেকে ফোনে যোগাযোগ করেন মিলন। মেলবোর্নে তার জন্য একটি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ করেন। বললেন, ফোন নাম্বারটি সিডনির অপু সারোয়ারের কাছে পেয়েছেন। মেলবোর্নে এক সুহৃদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তার সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে সময় লাগেনা। প্রবাসে এটি বাঙ্গালীদের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট-চরিত্র। এরজন্যে জায়গামতো পৌঁছে যেতে বা যোগাযোগ করতে পারলে বিদেশে কোথাও ঠেকে থাকেনা কোন বাংলাদেশী। মেলবোর্নের ব্যবস্থাটি হয়ে যেতে মিলনকে ফোনে খবরটি দিতে গেলে তিনি আবেগাক্রান্ত হয়ে বলেন, আপনি আমাকে চেনেন না, জানেন না। এভাবেইতো বাংলাদেশীদের অকুন্ঠ ভালোবাসা-সমর্থন পাবার কারনে আমি দেশের দল আর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায় এভাবে ছুটে বেড়াতে পারছি।
আগামী ২৬ জানুয়ারী মেলবোর্নে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশের। এর আগেই মেলবোর্ন পৌঁছে যাবেন মিলন। এ কে এম ইমরান নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশী তাকে সেখানে রিসিভ করা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, মাঠে নেয়া-আনার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশের পরবর্তী খেলা নিউজিল্যান্ডের নেলসনে। আপাতত: সে খেলা দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত তার নেই। কারন অস্ট্রেলিয়ায় তাকে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয়েছে। কাজেই নিউজিল্যান্ড গেলে ৯ মার্চ এডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা দেখা তার আর হবেনা! বাংলাদেশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় খেলাগুলো দেখা থেকে বঞ্চিত হবার ঝুঁকিও তিনি নিতে চাইছেন না।
দল নিয়ে মিলনের আরো কিছু কথা: দলের বিশেষ কোন খেলোয়াড় না, সব খেলোয়াড়কেই তাকে ভালো লাগে। দল হারলে কেমন লাগে? মিলনের উত্তর, আমার দায়িত্বতো দলকে জেতানো। সেজন্যে দলকে উৎসাহিত করতে বলে বলে চার-ছক্কায় বা উইকেটে হালুম হালুম বলে দলকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি। দল হারলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তখন ভাবি আমি মনে হয় দলকে সঠিকভাবে উৎসাহিত-সাপোর্ট দিতে পারি। এরপর আবার নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করি। ভাবি, খেলায়তো হারজিত আছেই। আর দল জিতলে যে কী খুশি লাগে তা বলে বোঝাতে পারবোনা। নিজেকে তখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়। মিলনের আশা এই বিশ্বকাপে অনেক ভালো করবে বাংলাদেশ। অনেক ভালো ভালো প্লেয়ার আছে আমাদের দলে।
নিজের বাঘ সাজার টি-শার্ট, পেন্টে বাঘের রং করে নিয়েছেন মিলন। খেলার আগে শুধু মুখে রং মাখেন। এটি একা একাই মাখেন-মেকাপ নেন। এতে তার বেশি সময় লাগেনা। খেলার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন মুখের রং! স্মরনীয় দুটি ঘটনা জানতে চাইলে বলেন, একবার বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি তাকে ফোন করেছেন। ফোনে আমি পাপন বলছি’ বলতে মিলন জানতে চান, কোন পাপন? জবাব আসে তুমি ক’জন পাপনকে চেনো? মিলন তখন বুঝতে পারেন, এই পাপনই সেই পাপন! এরপর আবেগাক্রান্ত মিলন বলেন, স্যার আপনি যে আমাকে ফোন করেছেন, তা কোন দিন ভুলতে পারবো না। আরেকটি ঘটনা ঘটেছে এবার দেশ থেকে আসার সময়। বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল। মিলনকে চিনতে পেরে আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরেন, একশ ডলার উপহার দেন! মিলন বলেন, এভাবেইতো দেশের মানুষের ভালোবাসায় ক্রিকেটকে ভালোবেসে দলের সঙ্গে একাত্ম থাকতে পারছি। এই আমাদের মিলন। তার অস্ট্রেলিয়ার জীবনের সব দায়িত্ব আমাদের।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

About Author Information

অস্ট্রেলিয়ায় টাইগার মিলনের এইসব দিনরাত

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৫

সিডনি (অষ্ট্রেলিয়া) : টাইগার মিলন এখন অস্ট্রেলিয়ায়! বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলের পিছু পিছু চলে এসেছেন টিম বাংলাদেশের আন্তরিক, অন্ধ এক সমর্থক। বাঘের সাজ পোশাকে গ্যালারিতে দৌড়ে লাল সবুজ জাতীয় পতাকা উচিয়ে তিনি সাপোর্ট দেন দলকে। প্রতিনিধিত্ব করতে দেশকে। কিন্তু দলতো জানেনা তাদের এই সমর্থকের জীবন চলে কী করে। জানা সম্ভবও না। বাংলাদেশের মাঠের-গ্যালারীর এখন এমন দু’জন টাইগার সমর্থক আছেন। একজন টাইগার মিলন, অপরজন টাইগার শোয়েব আলী। মিলন এই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পেয়েছেন। শোয়েব আলী পাননি। মিলনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে গেছে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশীদের। মিলনের দায়িত্ব তারা নিয়ে নিয়েছেন। তার আর এদেশে পুরো বিশ্বকাপ চলাকালীন থাকা-খাওয়া-চলাফেরার কোন সমস্যা হবেনা।
মিলনের পুরো নাম ফাহিমুল হক। টাইগার মিলন নামের আড়ালে হারিয়ে গেছে তার আসল নাম। মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়িতে বাড়ি। বাবা স্কুল শিক্ষক ছিলেন। রিটায়ার করেছেন। মিলনরা চার ভাই এক বোন। বড়ভাই থাকেন আমেরিকায়। এর পরেরজন টুকটাক ব্যবসা করেন। ঢাকার শান্তিনগর মোড়ে জেমস পার্লার নামের একটি সেলুনের ব্যবসা আছে মিলনের। তার অনুপস্থিতিতে ব্যবসাটি দেখেন ছোট ভাই। ক্রিকেট দলের প্রতি ভালোবাসায় এভাবে ছূটে বেড়ানোকে পাগলামো মনে করে রাগে কথা বলেন না তার মেঝো ভাই! কিন্তু এ যে এক অদ্ভূত নেশা! কোন বাধাই যে মানেনা!
ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা জন্মানোর কারন এক সময় ক্রিকেট খেলতেন ঢাকার দ্বিতীয় বিভাগের লীগে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর দলে। দলে উইকেট কিপারের পাশাপাশি ওপেনিং ব্যাটসম্যানের ভূমিকা ছিল তার! একবার অসুখে পড়ে খেলার পাঠ চুকে গেলেও বাংলাদেশ দলের একজন অন্ধ সমর্থকের ভূমিকাটি বাদ দেয়া যায়নি। বাংলাদেশ দলের পিছুপিছু দেশের বাইরে প্রথম যান শ্রীলংকায়। বাঘ সেজে লাল সবুজ পতাকা হাতে তার বাঘের হুংকারে টাইগার মিলন নামটি তার তখনই চালু হয়ে যায়।
এবার বিশ্বকাপ ক্রিকেটে দলের খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া আসতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সে তার সিডনি আসার টিকেট কিনতে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা লেগেছে। মিলন বলেন অনেক দিনে মাসে মাসে ১০ হাজার টাকা করে জমিয়েছেন এ টাকা! কতদিন যে ঢাকায় এখানে সেখানে যেতে পায়ে হেঁটে গেছেন! এভাবে বাঁচিয়েছেন রিকশা ভাড়ার টাকা! কিন্তু সিডনি এসেতো কাউকে চেনেন না, জানেন না! সিডনি এয়ারপোর্টে নেমে ট্রেনে করে আসেন সেন্ট্রাল স্টেশনে। এক বাংলাদেশী ভাইর সঙ্গে পরিচয় হলে তাকে সমাদর করে কোক খেতে দেন। তার ফোনে কথা বলেন পরিচিত এক ভাবীর সঙ্গে। সেই ভাবীই তাকে স্টেশনে এসে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান তার বাসায়। সেখানে পরিচয় হয় অস্ট্রেলিয়া ছাত্রলীগের সভাপতি মইদুজ্জামান সুজন, সাবেক সাধারন সম্পাদক অপু সারোয়ার, যুবলীগ নেতা মোসলেউর রহমান খুশবু এদের সঙ্গে। এরপর থেকে তিনি তার এই খুশবু ভাইর বাসায় থাকছেন সিডনিতে। তারাই তাকে তাদের সঙ্গে ক্যানবেরা নিয়ে এসেছেন। ক্যানবেরার মানুকা ওভালে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের খেলার সময় গ্যালারিতে ঢুকে হালুম হালুম শুরু করতেই তার প্রতি নজর পড়ে অস্ট্রেলিয়ান মিডিয়ার। এখানকার নানা মিডিয়ার ফটো এলবামে গেলে মিলবে টাইগার মিলনের ছবি!
ক্যানবেরা থেকে খুশবুদের সঙ্গেই মিলন আবার ফিরে আসেন সিডনি। এখান থেকে তার ব্রিসবেন যাবার ট্রেনের টিকেট খুশবুরাই তাকে কিনে দিয়েছেন। বিমানের টিকেট না পেয়ে ট্রেনের প্রথম শ্রেনীর টিকেট কেনা হয়েছে ২৮০ ডলারে! বিশাল অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের সিডনি থেকে ব্রিসবেন ট্রেনে যেতে তার চৌদ্দ ঘন্টার বেশি সময় লেগেছে! এত কষ্ট, ধকল সামাল দিয়ে ব্রিসবেন গেলেন মিলন, কিন্তু বৃষ্টির কারনে খেলাটি হলোনা। কিন্তু সেখানেও তিনি নজরে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মিডিয়ায়! গ্যালারিতে পতাকা দুলিয়ে তার হালুম হালুম গর্জন নৃত্যের ছবি স্থানীয় মিডিয়া ছাড়াও এজেন্সির কল্যাণে চলে গেছে সৌদি মিডিয়া পর্যন্ত। খেলা না হলেও ব্রিসবেনে তিনি ভালো আছেন। একদল প্রবাসী বাংলাদেশী তাকে পেয়ে তাদের বাসায় নিয়ে গেছেন। তাদের সঙ্গে ঘুরছেন আর দেখছেন অপরুপ ছবির মতো সাজানো এক শহর ব্রিসবেন।
২২ ফেব্রুয়ারী রোববার ব্রিসবেন থেকে ফোনে যোগাযোগ করেন মিলন। মেলবোর্নে তার জন্য একটি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থার অনুরোধ করেন। বললেন, ফোন নাম্বারটি সিডনির অপু সারোয়ারের কাছে পেয়েছেন। মেলবোর্নে এক সুহৃদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তার সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করতে সময় লাগেনা। প্রবাসে এটি বাঙ্গালীদের বিশেষ একটি বৈশিষ্ট-চরিত্র। এরজন্যে জায়গামতো পৌঁছে যেতে বা যোগাযোগ করতে পারলে বিদেশে কোথাও ঠেকে থাকেনা কোন বাংলাদেশী। মেলবোর্নের ব্যবস্থাটি হয়ে যেতে মিলনকে ফোনে খবরটি দিতে গেলে তিনি আবেগাক্রান্ত হয়ে বলেন, আপনি আমাকে চেনেন না, জানেন না। এভাবেইতো বাংলাদেশীদের অকুন্ঠ ভালোবাসা-সমর্থন পাবার কারনে আমি দেশের দল আর ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসায় এভাবে ছুটে বেড়াতে পারছি।
আগামী ২৬ জানুয়ারী মেলবোর্নে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে খেলা বাংলাদেশের। এর আগেই মেলবোর্ন পৌঁছে যাবেন মিলন। এ কে এম ইমরান নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশী তাকে সেখানে রিসিভ করা, থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, মাঠে নেয়া-আনার দায়িত্ব নিয়েছেন। বাংলাদেশের পরবর্তী খেলা নিউজিল্যান্ডের নেলসনে। আপাতত: সে খেলা দেখতে যাবার সিদ্ধান্ত তার নেই। কারন অস্ট্রেলিয়ায় তাকে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা দেয়া হয়েছে। কাজেই নিউজিল্যান্ড গেলে ৯ মার্চ এডিলেডে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা দেখা তার আর হবেনা! বাংলাদেশ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে গেলে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় খেলাগুলো দেখা থেকে বঞ্চিত হবার ঝুঁকিও তিনি নিতে চাইছেন না।
দল নিয়ে মিলনের আরো কিছু কথা: দলের বিশেষ কোন খেলোয়াড় না, সব খেলোয়াড়কেই তাকে ভালো লাগে। দল হারলে কেমন লাগে? মিলনের উত্তর, আমার দায়িত্বতো দলকে জেতানো। সেজন্যে দলকে উৎসাহিত করতে বলে বলে চার-ছক্কায় বা উইকেটে হালুম হালুম বলে দলকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করি। দল হারলে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তখন ভাবি আমি মনে হয় দলকে সঠিকভাবে উৎসাহিত-সাপোর্ট দিতে পারি। এরপর আবার নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করি। ভাবি, খেলায়তো হারজিত আছেই। আর দল জিতলে যে কী খুশি লাগে তা বলে বোঝাতে পারবোনা। নিজেকে তখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হয়। মিলনের আশা এই বিশ্বকাপে অনেক ভালো করবে বাংলাদেশ। অনেক ভালো ভালো প্লেয়ার আছে আমাদের দলে।
নিজের বাঘ সাজার টি-শার্ট, পেন্টে বাঘের রং করে নিয়েছেন মিলন। খেলার আগে শুধু মুখে রং মাখেন। এটি একা একাই মাখেন-মেকাপ নেন। এতে তার বেশি সময় লাগেনা। খেলার পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন মুখের রং! স্মরনীয় দুটি ঘটনা জানতে চাইলে বলেন, একবার বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এমপি তাকে ফোন করেছেন। ফোনে আমি পাপন বলছি’ বলতে মিলন জানতে চান, কোন পাপন? জবাব আসে তুমি ক’জন পাপনকে চেনো? মিলন তখন বুঝতে পারেন, এই পাপনই সেই পাপন! এরপর আবেগাক্রান্ত মিলন বলেন, স্যার আপনি যে আমাকে ফোন করেছেন, তা কোন দিন ভুলতে পারবো না। আরেকটি ঘটনা ঘটেছে এবার দেশ থেকে আসার সময়। বিজনেস ক্লাসের যাত্রী ছিলেন শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ সোহেল। মিলনকে চিনতে পেরে আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরেন, একশ ডলার উপহার দেন! মিলন বলেন, এভাবেইতো দেশের মানুষের ভালোবাসায় ক্রিকেটকে ভালোবেসে দলের সঙ্গে একাত্ম থাকতে পারছি। এই আমাদের মিলন। তার অস্ট্রেলিয়ার জীবনের সব দায়িত্ব আমাদের।