সিঙ্গাপুর যেভাবে বিশ্বসেরা
- প্রকাশের সময় : ১২:২০:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ ২০১৫
- / ৮৫৯ বার পঠিত
ঢাকা: লি কুয়ান ইউ। কেবল রাষ্ট্রনায়কের অভিধা তার জন্য বেমানান। তিনি একজন আধুনিক রাষ্ট্র প্রকৌশলী। জাতি¯্রষ্টা। স্বপ্নদর্শী জাদুকর। তার স্পর্শেই তৃতীয় বিশ্বের পুচকে নগররাষ্ট্র, একসময়ের ঘুমন্ত বন্দরনগরী সিঙ্গাপুর হয়ে উঠেছে প্রথম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র। জীর্ণ কাঙাল দ্বীপাঞ্চলকে কেবল ইচ্ছাশক্তি দিয়েই বানিয়েছেন বিশ্ব বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রে। লি কুয়ানের দৃঢ় সংকল্প, ইস্পাত কঠিন চরিত্র, উপলব্ধ বাস্তবতার কাংখিত পদক্ষেপে মাত্র ২৭৭ বর্গমাইলের ছোট্ট ভূমিই আজ বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম পরাশক্তি।
১৯২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন লি কুয়ান ইউ। পড়াশোনা করেছেন ক্যামব্রিজে। ১৯৬৫ সালের ৯ আগস্ট মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর স্বাধীন হওয়ার পর দেশটির হাল ধরেন তিনি। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ দায়িত্ব নিয়েই বুঝেছিলেন, দেশের উন্নয়ন করতে হলে রাজনৈতিক স্থিরতা থাকা প্রয়োজন। যে কোনো কাজ তিনি পূর্ণতা ও সর্বোচ্চ নিখুঁতভাবে করায় বিশ্বাসী ছিলেন। সিঙ্গাপুর ছিল তার দক্ষতা পরীক্ষার ল্যাবরেটরি। চীনা সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মালয় ও ভারতীয় সংখ্যালঘু বাসিন্দাদের মধ্যে শান্তি ও সহাবস্থান বজায় রেখেছিলেন লি কুয়ান। তার প্রাথমিক লক্ষ্যই ছিল ‘পরিচ্ছন্ন সবুজ’ সিঙ্গাপুর গঠন।
বর্তমান সিঙ্গাপুর এশিয়ার অন্যতম বাসযোগ্য দেশ। লি কুয়ান নিষিদ্ধ করেছিলেন জিউকবক্স, চুইংগাম ও প্লেবয়। শীর্ষ মেধাবীদের সরকারি চাকরিতে উৎসাহিত করতে কর্মকর্তাদের বেতন বাড়িয়েছিলেন বেসরকারি খাতের চেয়েও বেশি। বর্তমানে দেশটির মন্ত্রীদের বেতন ১০ লাখ ডলার যা যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি। সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান একনায়কতন্ত্র চালু করেছিলেন। বিরোধী মত খুব একটা গুরুত্ব দিতেন না- এমন নানা অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিকে মোটেই প্রশ্রয় দিতেন না তিনি। বর্তমানে সিঙ্গাপুর পৃথিবীর অন্যতম দুর্নীতিমুক্ত দেশ।
অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ কমাতে লি কুয়ান ‘দুইয়ে থামো’ নামে একটি পরিবার পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। পরে প্রয়োজনের আলোকে তা উন্মুক্ত করেন। মেধাবী সন্তান পেতে ‘গ্র্যাজুয়েট মা’ নামের আরেকটি প্রকল্প চালু করেন। সিঙ্গাপুরে একসময় যুবকদের বৃহৎ অংশ অবিবাহিত হয়ে গেল, লি কুয়ান তখন ব্যাচেলরদের জোড়া করে দিতে ‘রোমান্সিং সিঙ্গাপুর’ উদ্বোধন করেন।
নিজের সম্পর্কে লি কুয়ান তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘আমি অত্যন্ত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ। আমি কোনোকিছু করার সিদ্ধান্ত নিলে, জীবন দিয়ে তা করার চেষ্টা করি। সারা দুনিয়া তার বিরুদ্ধে গেলেও আমি তা করে ছাড়ি। যদি আমার কাছে তা সঠিক মনে হয়। আমি মনে করি, এটাই নেতার কাজ।’ দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট, কার্জ/যুগান্তর,ঢাকা।