যুক্তরাজ্যের নির্বাচন : ৬৫০ আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির ৩৩১টি, লেবার পার্টির ২৩২ আসন : ডাউনিং স্ট্রিটেই থাকছেন ডেভিড ক্যামেরন
- প্রকাশের সময় : ০৭:০৫:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৯ মে ২০১৫
- / ৯৬০ বার পঠিত
লন্ডন: নানা জল্পনা-কল্পনা আর শ্বাসরুদ্ধকর একটি রজনী পার করল ব্রিটিশ জনগণ। শুক্রবার (৮ মে) ভোরের আকাশে উজ্জ্বল সূর্যোদয় যেন ব্রিটিশ রাজনীতিতে আরেক উজ্জ্বল সময়ের আভাস বয়ে আনল। যে সংকটের জন্য অনেকটা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবাই, সে আশংকাকে কাটিয়ে সরকার গঠনের জন্য নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা। ফলে আবারও ৫ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের মসনদে বসছেন দলটির প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। পরাজয় মেনে নিয়ে দলের ভরাডুবির জন্য নিজেকে দায়ী করে পদত্যাগ করেছেন প্রান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড। তিনি ক্যামেরনকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান।
এদিকে বিপুল ভোটের এ জয় কনজারভেটিভ দলের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাই ‘কয়েক প্রজন্মের মধ্যে দলের জন্য এটি মধুরতম বিজয়’ বলে পার্টির সদর দফতরে সমর্থকদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘আজ সত্যিই জয়ের আনন্দ উপভোগের রাত। আমরা আবারও দেশ সেবার সুযোগ পাচ্ছি এই ভেবে আনন্দ করা, গর্ব করার সময়।’
ব্রিটিশ রাজনীতিতে পরাজয়ের কিছু নতুন ইতিহাস রচনা করে বিগত সরকারের ‘কোয়ালিশন পার্টনার’ লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি এ নির্বাচনকে তাদের জন্য বেদনাদায়ক ও শাস্তিমূলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লিবারেল ডেমোক্রেট দলের নেতা নিকক্লেগ। বৃহস্পতিবারের (৭ মে) নির্বাচনে তার দলের প্রভাবশালী এবং কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণকারী বেশ কয়েকজন নেতা পরাজিত হয়েছেন। যারা বিগত ৩০-৩৫ বছর ধরে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এবারের নির্বাচন তাদের সেই ঐতিহ্যকে শুধু ম্লানই করেনি, শেষ বয়সে এসে জনগণের আকাংক্ষার বিপরীতে কাজ করার গ্লানি নিয়ে তাদের এ পরাজয় দলের জন্য মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে এমনই ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ দল খুব অল্প আসনে মেজরিটি নিয়ে একক সরকার গঠনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। মোট ৬৫০ আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ৩৩১ আসন। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তারা ৩০৬টি আসন পায়। সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় লিবারেল ডেমোক্রেট দলের ৫৭ জন এমপির সমর্থন নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিল তারা। সেই সরকার গঠন তাদের জন্য মঙ্গলজনক হলেও বিপর্যস্ত হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেট দল। সরকারের সঙ্গে সে সময় যে তাদের কোয়ালিশনে যাওয়া সঠিক ছিল না, তার উপযুক্ত জবাব দিল দলের সমর্থকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে। দলটি এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ে। তারা শুধু লন্ডন শহরেই ৭টি আসন হারিয়েছে। তাদের দলের প্রভাবশালী নেতা ডেভিড লোয়েস, বিন ক্যাবোল- যিনি বিজনেস সেক্রেটারি ছিলেন কোয়ালিশন সরকারের, সায়মন হিউজ, চালর্স কেনেডি, ডেনি আলেকজেন্ডার পরাজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ হেরেছেন টোরি পার্টির (কনজারভেটিভ), কেউ লেবার পার্টির কাছে। তবে কোয়ালিশন যাদের সঙ্গে করেছিলেন, তাদের কাছেই লিবডেম (লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল) অধিক সংখ্যক আসনে হারেন। অর্থাৎ লিবডেমের নিরাপদ আসনগুলো টোরি দল ছিনিয়ে নিয়েছে।
নির্বাচনের আগে যেসব জনমত জরিপে তৃতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট দল (ইউকিপ) আবির্ভূত হওয়ার আবাস দেখানো হলেও তারা সে আভাসের ধারেকাছে যেতে পারেনি। উগ্র জাতীয়তাবাদী এ দলটি পরিষ্কারভাবেই তাদের নির্বাচনী ইশতিহারে ইমিগ্র্যান্ট নিয়ন্ত্রণ ও ইউরোপ থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়া অর্থমন্ত্রী এডবোলস জেরেমি মারপি এবং প্রভাবশালী নেতা ডগলাস আলেকজেন্ডার নির্বাচনে হেরে গেছেন। ছোট ছোট দলের বড় নেতারা হেরেছেন এই নির্বাচনে। তার মধ্যে ইউকিপের নেতা নাইজেল ফারাজ, রেসপেক্ট পার্টি নেতা জজ গেলওয়ে, গ্রীন পার্টির নেত্রী নেটালি বেনটি হেরে গেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির এক মন্ত্রী ইস্টার মেকভি হেরেছেন লেবার পার্টির এক প্রার্থীর কাছে।
এবারের সংসদ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৭ ভাগ, লেবার পার্টি ৩১ ভাগ, ইউকিপ ১৩ ভাগ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক ৮ ভাগ, স্ক্যাটস ন্যাশনাল পার্টি ৫ ভাগ ভোট পেয়েছে। আর সারা দেশে ভোটের টার্ন ওভার ছিল ৬৬ ভাগ।
নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৩১টি, লেবার পার্টি ২৩২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ৮টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫৬টি, ইউকিপ-১টি, ডিইউপি ৮টি, গ্রীন পার্টি ১টি ও অন্যরা ১৯টি আসন পেয়েছে।
গত নির্বাচনের তুলনায় কনজারভেটিভরা ২৫টি বেশি পেল। লেবার পার্টি গত নির্বাচনের চেয়ে ২৬টি আসন কম পেয়েছে। তবে বেশি আসন হারিয়েছে কোয়ালিশন সরকারের শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। গত সংসদ নির্বাচনে তারা ৫৭টি আসন পেয়েছিল, এবার পেয়েছে ৮টি।
দলের বিজয়ের আভাস পাওয়ার পর স্ত্রী সামান্থাকে নিয়ে ১০নং ডাইনিং স্ট্রিটের বাইরে আসেন ডেভিড ক্যামেরন। সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি এবং দলের সমর্থকদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান।
দলের ভরাডুবিতে মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগের পদত্যাগ : নির্বাচনে আসন হারানো প্রধান দলের নেতারা তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে ইতিমধ্যে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ কাতারে ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির (ইউকেআইপি) প্রধান নিগেল ফ্যারেগ।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল শুক্রবার ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পেয়ে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিতে থাকেন মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগরা। মিলিব্যান্ড সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। নির্বাচনের এ ফল সত্যিই হতাশাজনক। লেবারদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতটি ছিল কঠিন। আমরা ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে যা চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি।’
ইউপিন নেতা নাইজেল ফারাজও দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কনজারভেটিভদের জয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন কনজারভেটিভ দলের নেতা ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা বলা হলেও সব পরিসংখ্যান ওলট-পালট করে একচেটিয়া বিজয় অর্জন করেন তিনি। কনজারভেটিভদের এ বিজয় কিভাবে দেখছেন বিশ্ব নেতারা। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
ডেভিড ক্যামেরনের এ বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুক্রবার এক বার্তায় হোয়াইট হাউস জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে গর্ববোধ করেন। তিনি ক্যামেরনকে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আরনেস্ট সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে এ তথ্য জানান।
ব্রিটেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ম্যাথু বারজুন টুইটারে ক্যামেরনকে শুভ কামনা জানান।
স্পেনের ক্ষমতাসীন পপুলার পার্টি কনজারভেটিভদের এ বিজয় উদযাপন করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানে রাজয় এক টুইটার বার্তায় ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘একটি নির্ধারিত সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য এটি একটি স্বীকৃতি প্রাপ্য।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লদে জানকার বিপুল বিজয়ের জন্য ডেভিড ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, ব্রিটেনের নতুন সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে প্রস্তÍুত। তিনি শিগগিরই ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান।
এক টুইটার বার্তায় ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। তিনি লিখেন ‘ডেভিড ক্যামেরন তোমাকে হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন, চিত্তাকর্ষক বিজয়ের জন্য।’
এছাড়া নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে ও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার স্টাবসহ বিশ্ব নেতারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করায় ডেভিড ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের নির্বাচন : ৬৫০ আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টির ৩৩১টি, লেবার পার্টির ২৩২ আসন : ডাউনিং স্ট্রিটেই থাকছেন ডেভিড ক্যামেরন
গোলাম মোস্তফা ফারুক
লন্ডন: নানা জল্পনা-কল্পনা আর শ্বাসরুদ্ধকর একটি রজনী পার করল ব্রিটিশ জনগণ। শুক্রবার (৮ মে) ভোরের আকাশে উজ্জ্বল সূর্যোদয় যেন ব্রিটিশ রাজনীতিতে আরেক উজ্জ্বল সময়ের আভাস বয়ে আনল। যে সংকটের জন্য অনেকটা মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছিল সবাই, সে আশংকাকে কাটিয়ে সরকার গঠনের জন্য নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভরা। ফলে আবারও ৫ বছরের জন্য যুক্তরাজ্যের মসনদে বসছেন দলটির প্রধান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। পরাজয় মেনে নিয়ে দলের ভরাডুবির জন্য নিজেকে দায়ী করে পদত্যাগ করেছেন প্রান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড। তিনি ক্যামেরনকে জয়ের জন্য অভিনন্দন জানান।
এদিকে বিপুল ভোটের এ জয় কনজারভেটিভ দলের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাই ‘কয়েক প্রজন্মের মধ্যে দলের জন্য এটি মধুরতম বিজয়’ বলে পার্টির সদর দফতরে সমর্থকদের উদ্দেশে মন্তব্য করেছেন উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তিনি বলেন, ‘আজ সত্যিই জয়ের আনন্দ উপভোগের রাত। আমরা আবারও দেশ সেবার সুযোগ পাচ্ছি এই ভেবে আনন্দ করা, গর্ব করার সময়।’
ব্রিটিশ রাজনীতিতে পরাজয়ের কিছু নতুন ইতিহাস রচনা করে বিগত সরকারের ‘কোয়ালিশন পার্টনার’ লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টি এ নির্বাচনকে তাদের জন্য বেদনাদায়ক ও শাস্তিমূলক হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী লিবারেল ডেমোক্রেট দলের নেতা নিকক্লেগ। বৃহস্পতিবারের (৭ মে) নির্বাচনে তার দলের প্রভাবশালী এবং কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণকারী বেশ কয়েকজন নেতা পরাজিত হয়েছেন। যারা বিগত ৩০-৩৫ বছর ধরে বিপুল ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। এবারের নির্বাচন তাদের সেই ঐতিহ্যকে শুধু ম্লানই করেনি, শেষ বয়সে এসে জনগণের আকাংক্ষার বিপরীতে কাজ করার গ্লানি নিয়ে তাদের এ পরাজয় দলের জন্য মহাবিপর্যয় বয়ে আনবে এমনই ধারণা করা হচ্ছে।
নির্বাচনে কনজারভেটিভ দল খুব অল্প আসনে মেজরিটি নিয়ে একক সরকার গঠনে সক্ষমতা অর্জন করেছে। মোট ৬৫০ আসনের মধ্যে তারা পেয়েছে ৩৩১ আসন। এককভাবে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ৩২৬ আসন। ২০১০ সালের নির্বাচনে তারা ৩০৬টি আসন পায়। সেবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় লিবারেল ডেমোক্রেট দলের ৫৭ জন এমপির সমর্থন নিয়ে কোয়ালিশন সরকার গঠন করেছিল তারা। সেই সরকার গঠন তাদের জন্য মঙ্গলজনক হলেও বিপর্যস্ত হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেট দল। সরকারের সঙ্গে সে সময় যে তাদের কোয়ালিশনে যাওয়া সঠিক ছিল না, তার উপযুক্ত জবাব দিল দলের সমর্থকরা মুখ ফিরিয়ে নিয়ে। দলটি এখন বড় ধরনের বিপর্যয়ে। তারা শুধু লন্ডন শহরেই ৭টি আসন হারিয়েছে। তাদের দলের প্রভাবশালী নেতা ডেভিড লোয়েস, বিন ক্যাবোল- যিনি বিজনেস সেক্রেটারি ছিলেন কোয়ালিশন সরকারের, সায়মন হিউজ, চালর্স কেনেডি, ডেনি আলেকজেন্ডার পরাজিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেউ হেরেছেন টোরি পার্টির (কনজারভেটিভ), কেউ লেবার পার্টির কাছে। তবে কোয়ালিশন যাদের সঙ্গে করেছিলেন, তাদের কাছেই লিবডেম (লিবারেল ডেমোক্রেটিক দল) অধিক সংখ্যক আসনে হারেন। অর্থাৎ লিবডেমের নিরাপদ আসনগুলো টোরি দল ছিনিয়ে নিয়েছে।
নির্বাচনের আগে যেসব জনমত জরিপে তৃতীয় রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট দল (ইউকিপ) আবির্ভূত হওয়ার আবাস দেখানো হলেও তারা সে আভাসের ধারেকাছে যেতে পারেনি। উগ্র জাতীয়তাবাদী এ দলটি পরিষ্কারভাবেই তাদের নির্বাচনী ইশতিহারে ইমিগ্র্যান্ট নিয়ন্ত্রণ ও ইউরোপ থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল।
প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির ছায়া অর্থমন্ত্রী এডবোলস জেরেমি মারপি এবং প্রভাবশালী নেতা ডগলাস আলেকজেন্ডার নির্বাচনে হেরে গেছেন। ছোট ছোট দলের বড় নেতারা হেরেছেন এই নির্বাচনে। তার মধ্যে ইউকিপের নেতা নাইজেল ফারাজ, রেসপেক্ট পার্টি নেতা জজ গেলওয়ে, গ্রীন পার্টির নেত্রী নেটালি বেনটি হেরে গেছেন। কনজারভেটিভ পার্টির এক মন্ত্রী ইস্টার মেকভি হেরেছেন লেবার পার্টির এক প্রার্থীর কাছে।
এবারের সংসদ নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৭ ভাগ, লেবার পার্টি ৩১ ভাগ, ইউকিপ ১৩ ভাগ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক ৮ ভাগ, স্ক্যাটস ন্যাশনাল পার্টি ৫ ভাগ ভোট পেয়েছে। আর সারা দেশে ভোটের টার্ন ওভার ছিল ৬৬ ভাগ।
নির্বাচনে ৬৫০টি আসনের মধ্যে কনজারভেটিভ পার্টি ৩৩১টি, লেবার পার্টি ২৩২, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ৮টি, স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি ৫৬টি, ইউকিপ-১টি, ডিইউপি ৮টি, গ্রীন পার্টি ১টি ও অন্যরা ১৯টি আসন পেয়েছে।
গত নির্বাচনের তুলনায় কনজারভেটিভরা ২৫টি বেশি পেল। লেবার পার্টি গত নির্বাচনের চেয়ে ২৬টি আসন কম পেয়েছে। তবে বেশি আসন হারিয়েছে কোয়ালিশন সরকারের শরিক দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি। গত সংসদ নির্বাচনে তারা ৫৭টি আসন পেয়েছিল, এবার পেয়েছে ৮টি।
দলের বিজয়ের আভাস পাওয়ার পর স্ত্রী সামান্থাকে নিয়ে ১০নং ডাইনিং স্ট্রিটের বাইরে আসেন ডেভিড ক্যামেরন। সেখানে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি এবং দলের সমর্থকদের হাত নেড়ে অভিনন্দন জানান।
দলের ভরাডুবিতে মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগের পদত্যাগ : নির্বাচনে আসন হারানো প্রধান দলের নেতারা তাদের ব্যর্থতার দায়ভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়ে ইতিমধ্যে দলীয় প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ কাতারে ইতিমধ্যেই নাম লিখিয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির প্রধান এড মিলিব্যান্ড, ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান ও উপ-প্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী দল ইউকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পার্টির (ইউকেআইপি) প্রধান নিগেল ফ্যারেগ।
বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনের ফলাফল শুক্রবার ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পেয়ে পদত্যাগের ইঙ্গিত দিতে থাকেন মিলিব্যান্ড, ক্লেগ ও ফ্যারেগরা। মিলিব্যান্ড সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা সবাই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। নির্বাচনের এ ফল সত্যিই হতাশাজনক। লেবারদের জন্য বৃহস্পতিবার রাতটি ছিল কঠিন। আমরা ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে যা চেয়েছিলাম তা করতে পারিনি।’
ইউপিন নেতা নাইজেল ফারাজও দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
কনজারভেটিভদের জয়ে বিশ্ব নেতাদের প্রতিক্রিয়া: যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন কনজারভেটিভ দলের নেতা ডেভিড ক্যামেরন। বৃহস্পতিবার নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার কথা বলা হলেও সব পরিসংখ্যান ওলট-পালট করে একচেটিয়া বিজয় অর্জন করেন তিনি। কনজারভেটিভদের এ বিজয় কিভাবে দেখছেন বিশ্ব নেতারা। এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে দ্য টেলিগ্রাফ অনলাইন।
ডেভিড ক্যামেরনের এ বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। শুক্রবার এক বার্তায় হোয়াইট হাউস জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ব্রিটেনের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে গর্ববোধ করেন। তিনি ক্যামেরনকে নিরঙ্কুশ বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আরনেস্ট সংবাদ সংস্থা সিএনএনকে এ তথ্য জানান।
ব্রিটেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ম্যাথু বারজুন টুইটারে ক্যামেরনকে শুভ কামনা জানান।
স্পেনের ক্ষমতাসীন পপুলার পার্টি কনজারভেটিভদের এ বিজয় উদযাপন করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানে রাজয় এক টুইটার বার্তায় ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়ে লিখেছেন, ‘একটি নির্ধারিত সংস্কার প্রচেষ্টার জন্য এটি একটি স্বীকৃতি প্রাপ্য।’
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট জিন ক্লদে জানকার বিপুল বিজয়ের জন্য ডেভিড ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি জানান, ব্রিটেনের নতুন সরকারের সঙ্গে তারা কাজ করতে প্রস্তÍুত। তিনি শিগগিরই ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলেও জানান।
এক টুইটার বার্তায় ক্যামেরনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি। তিনি লিখেন ‘ডেভিড ক্যামেরন তোমাকে হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন, চিত্তাকর্ষক বিজয়ের জন্য।’
এছাড়া নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জন কি, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবে ও ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার স্টাবসহ বিশ্ব নেতারা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করায় ডেভিড ক্যামেরনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।